শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প যুগ

তানভীর আহমেদ

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প যুগ

ক্যাসিনো ব্যবসায়ী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

যত সমালোচনাই হোক না কেন, ট্রাম্প এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তার নির্বাচনী স্লোগান ছিল, মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন। আসলেই কি তিনি তা পারবেন?

রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনেকে চেনেন ধনকুবের বলেই। নিউইয়র্ক, ম্যানহাটনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের জাঁকজমকপূর্ণ শহরগুলোতে দামি গাড়ি-বাড়ি নিয়ে বিলাসী জীবন ট্রাম্পের। টাকার পাহাড় যার তাকে নিয়ে আলোচনা কম হয় না। টাকার পাহাড় জমিয়ে একের পর এক আকাশছোঁয়া দালান বানিয়েছেন। জুয়ার লাইসেন্স নিয়ে খুলেছেন ক্যাসিনো। বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজক হয়ে নজর কাড়েন তিনি। তাছাড়া ট্রাম্পও কম যান না, সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখানো সুন্দরীদের নিয়ে নানা স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়েন। আবার রেসলিং ম্যাচে নেমে পড়েন। সিনেমার পর্দাতেও তাকে দেখা যায় হুটহাট। টিভিতে টকশো মাতিয়ে তোলেন। ব্যক্তিগত বিমানে চড়েন। প্রাসাদতুল্য বাড়িতে থাকেন। হলিউড তারকাদের সঙ্গে খাতির তার। চলেন প্রথমসারির ধনী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। এটুকু দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায় লোকজনের। এ পর্যন্তই তার পরিচয়। না, এখন সব ছাপিয়ে বলতে হচ্ছে, সেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। এটাই এখন প্রথম পরিচয় তার। হোয়াইট হাউসে থাকবেন, প্রেসিডেন্ট অফিসে বসে চালাবেন দেশ। আর কে না জানে, আমেরিকা দেশটি বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বড় একটি ফ্যাক্টর। অথচ গত বছরের ডিসেম্বরেও কে ভেবেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার? অনেকেই ভাবেননি। অনেকে তখনো জেনে উঠতে পারেননি, কে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোনো রাজনৈতিক চর্চা না থাকলেও রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে তিনি লড়াই করেন হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে। নির্বাচনে সব ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করে জয় পান ট্রাম্প। যখন তিনি নির্বাচনে নাম লেখাবেন বলে ঘোষণা দিলেন তখনো কেউ ভাবতে পারেনি এই ব্যবসায়ী মনোনয়ন পেতে পারেন! কিন্তু বিগত মনোনয়ন পূর্ব বছরগুলোতে আড়ালে বেশ বড়সড় ঘটনা ঘটে। রিপাবলিকান পার্টিতে বড় পরিমাণের অনুদান নিয়ে রীতিমতো প্রভাব রাখতে শুরু করেন। আর ফলাফল তো দেখা গেল। তবে নির্বাচনে নেমে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়েছে ট্রাম্পকে।

নির্বাচনপূর্ব প্রচারণার সময় থেকেই নানা সমালোচনায় ডুবে ছিলেন। বিশেষ করে কর ফাঁকি মামলা, বর্ণ বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, নারীদের নিয়ে অশালীন মনোভাব, মুসলিম অভিবাসীদের নিয়ে কটূক্তি কিনা করেছেন। এরই মধ্যে যোগ হয়েছে নারী কেলেঙ্কারি। যৌন হয়রানির অভিযোগে কয়েক নারী কয়েক দফায় ভুগিয়েছেন তাকে। সেসব ফুটে উঠেছে নির্বাচনপূর্ব তিন ধাপের বিতর্কে। আরেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। তাছাড়া এ ধরনের পদে নির্বাচনে লড়াইয়ের কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তো নেই-ই। তবু সবাইকে চমকে দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। টাইম ম্যাগাজিন তাকে ২০১৬ সালের টাইম ম্যাগাজিনের ‘পার্সন অব দ্য ইয়ার’ বা সেরা ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত করে লিখেছে, ‘প্রেসিডেন্ট অব দ্য ডিভাইডেড আমেরিকা।’ বাংলায় যার মানে দাঁড়ায়, বিভক্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। শিরোনাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তাকে নির্বাচিত করে যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভ দেখা দেয়। বিক্ষোভকারীদের রোষানল থেকে বাঁচতে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে বালুর ট্রাক রাখে পুলিশ। যারা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন এমন কিছু ভোটার আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি আমার ভোট ফেরত নিতে চাই, ট্রাম্পকে আর সমর্থন করি না।’ তবে সেসব ভালোই সামলেছেন। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হয়ে অনেকটাই সুর বদলাতে শুরু করেন। আগ্রাসী মনোভাবও কমিয়েছেন যা বিভিন্ন বক্তব্যে ফুটে ওঠে। যে হিলারির ই-মেইল বিতর্কে জেলে পুরতে চেয়েছেন সেখান থেকে ফিরে এসেছেন। অবৈধ অভিবাসীদের নিয়েও নতুন করে ভাবছেন। এখন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণাও দিয়েছেন। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই ট্রাম্পের রাজনৈতিক দর্শন ও তার রাজনীতিতে উত্থানকে সময়ের একটি বড় বিবর্তন হিসেবে দেখা যায়। বাস্তবতা তাই বলে। ট্রাম্প অবিশ্বাস্যভাবে এ অবস্থানে এসেছেন। টাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ইলেকট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা তার জয়ে আবার কর্ম উদ্দীপনা ফিরে পেয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম নিউইয়র্কে ১৯৪৬ সালে। তার বাবা ছিলেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। পৈতৃক ব্যবসায়ই মনোযোগ দেন তিনি। বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ ডলার ধার করে ব্যবসায় নামেন তিনি। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় সফলতার দেখা পান ম্যানহাটনে এসে। তারপর টাকার পাহাড় গড়ে তোলা শুরু। এই ধনকুবের ব্যবসায়ীর আরও পরিচয় আছে। ব্যবসায়ী ছাড়াও তিনি মিস ইউনিভার্সের স্পন্সর ছিলেন দীর্ঘদিন। এখান থেকেই তার পরিচয় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়িক সংকটেও পড়েছেন তিনি। বেশ কয়েকবার নিজেকে দেউলিয়াও ঘোষণা করেছেন। ব্যবসায়িক ঝামেলায় জড়িয়ে মামলা ঠুকেছেন এবং মামলা খেয়েছেনও। সব মিলিয়ে তার ৯০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে। তাকে নিয়ে যত সমালোচনাই হোক না কেন ট্রাম্প এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তার নির্বাচনী স্লোগান ছিল, মেক

আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন। প্রশ্ন হচ্ছে, ওবামা বিশ্ববাসীর কাছে একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছিলেন, ট্রাম্প কি তা পারবেন?

 

ধনাঢ্য ব্যবসায়ী

ট্রাম্পকে রাজনীতিবিদ বলা চলে না। তারচেয়ে বরং ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবেই খ্যাতি রয়েছে তার। তার বাবা ছিলেন ধনকুবের ব্যবসায়ী। সে ব্যবসায় নেমে বিপুল অর্থ-সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। ম্যানহাটনে এসে ভাগ্য গড়েন ট্রাম্প। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় তিনি রীতিমতো একচ্ছত্র অধিপতি। এখন তার রয়েছে ৫৮ তলা একটি বহুতল ভবন (ট্রাম্প টাওয়ার), স্পোর্টস ক্লাব, শেয়ারবাজারে পুঁজি। সবমিলিয়ে ৯০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ সম্পদের মালিক তিনি। তার বার্ষিক বেতন প্রায় ২৭ কোটি ডলার। ১৯৪৬ সালে জন্ম নেওয়া ট্রাম্প পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ। তার বাবা ছিলেন

জার্মান অভিবাসী। দুরন্তপনা ও চঞ্চলতার কারণে ট্রাম্পকে সামরিক বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করা হয়। ১৯৬৮ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন স্কুল অব বিজনেস থেকে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করে বাবার ব্যবসায় যোগ দেন।

 

সুন্দরীদের নিয়ে লাইমলাইটে

ব্যবসায়ী হিসেবে নাম কুড়ানো ছাড়াও ডোনাল্ড ট্রাম্প মিস ইউনিভার্সের স্পন্সর ছিলেন দীর্ঘদিন। এই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অর্থ ঢেলে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। ১৯৯৬ সাল থেকে এ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানের হাতে। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে মিস ইউএসএ। এ ছাড়া মিস স্টেটস সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজন করেও মিডিয়ার নজর কাড়েন। সুন্দরী মডেলদের সঙ্গে তার প্রেম ও অন্তরঙ্গতাও মিডিয়ার আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই নয়, এপ্রেনটিস্ট নামের একটি রিয়েলিটি টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন ট্রাম্প। কিছুটা জনপ্রিয়তাও তৈরি হয়। এ ছাড়া রেসলিং ম্যাচ উপস্থাপনা করেছেন। টিভি সিরিয়ালে ও সিনেমাতেও তাকে দেখা গেছে। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে মিডিয়াপাড়ায় ভালোই চলাচল রয়েছে তার।

 

যেভাবে গড়েন টাকার পাহাড়

বাবার ব্যবসায় নেমেই ধনকুবের বনে যান ট্রাম্প। মধ্যবিত্তের সাদ ও সাধ্যের মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট বানাতেন তিনি। বাবা ফ্রেডরিক ছিলেন ধনী। অবশ্য ট্রাম্প যখন ব্যবসায় নামেন তখন হাতে তেমন টাকা ছিল না। বাধ্য হয়েই বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ ডলার ধার করেন। তিনিও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ই টাকা ঢালেন। তার আরেক ভাই ফ্রেড অবশ্য বাবার ব্যবসায় মন দেননি। তিনি পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলে ট্রাম্পের হাতে বাবার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই চলে আসে। ১৯৭১ সালে ট্রাম্প কোম্পানির নাম বদলে ফেলেন। তখন নাম রাখা হয় ‘ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’। পারিবারিক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ বুঝে নিয়েই তিনি ব্রুকলিন ও কুইন্স থেকে প্রকল্প সরিয়ে ম্যানহাটনে বড় বড় ভবন নির্মাণে জোর দেন। এখানে এসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। ট্রাম্প এরপর একের পর এক বড় নির্মাণে হাত দেন। নির্মাণ করেন গ্র্যান্ড হায়াত হোটেল। ১৯৭৯ সালে ট্রাম্প ম্যানহাটনের ফিফথ এভিনিউয়ের বিখ্যাত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান টিফানি অ্যান্ড কোম্পানির অফিস সংলগ্ন এলাকায় জমি ইজারা নিয়ে ২০ কোটি ডলারের ৫৮তলা ট্রাম্প টাওয়ার নির্মাণ করেন। ১৯৭৭ সালে নিউ জার্সিতে জুয়ার ব্যবসা আইনি বৈধতা পেলে সেখানে টাকা ঢালেন ট্রাম্প। ১৯৮০ সালে তিনি আটলান্টিক সিটিতে জমি কেনেন। ১৯৮৪ সালে  সেখানে নির্মাণ করেন ২৫ কোটি ডলারের ট্রাম্প প্লাজা। কিছুদিন পর হলিডে ইনের শেয়ার কিনে নেন এবং ওই প্লাজায় নির্মাণ করেন হোটেল ও ক্যাসিনো। অল্প সময়ের মধ্যে ট্রাম্পের হাতে আসে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো হোটেল তাজমহল। ব্যবসায়িক এই যাত্রায় তাকেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ১৯৭৩ সালে রাজ্য সরকার ট্রাম্প, তার বাবা ও তাদের কোম্পানির বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষের অভিযোগ আনে।  এরই মাঝে দেউলিয়া ঘোষণা করেন নিজেকে।

 

ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া

ট্রাম্পের স্ত্রী সুন্দরী মেলানিয়া হোয়াইট হাউসের ফার্স্ট লেডি। তাকেই হোয়াইট হাউসের অতিথিদের আপ্যায়ন, দেখা সাক্ষাৎ, বিনোদন ও রাষ্ট্রীয়, সামাজিক উৎসবের দেখভাল করতে হবে।

মেলানিয়া পেশায় মডেল। অলঙ্কার ও ঘড়ির নকশা করেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন তিনি। তিনি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ মডেল হয়েছেন। তার নগ্ন ছবি প্রকাশ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে মিডিয়ায়।

 

 

তিন বিয়েকাণ্ড

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ইভানা ট্রাম্প। প্রেমের সূত্র ধরেই ধনকুবের ট্রাম্পকে বিয়ে করে সবাইকে বেশ অবাক করে দেন ইভানা। ১৯৯২ সালে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্প বিয়ে করেন মারলা ম্যাপলসকে। ঘরে প্রথম স্ত্রী রেখে চুটিয়ে প্রেম করেন ট্রাম্প। তবে ইভানার সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রেমের পরিণতি দেন তিনি। ট্রাম্পের তৃতীয় ও বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া পেশায় মডেল।

 

হোয়াইট হাউসের কথা

আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হচ্ছে হোয়াইট হাউস। প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সরকারি বাসভবন ছিল পেনসিলভেনিয়ায়। জর্জ ওয়াশিংটনই প্রথম প্রেসিডেন্টের জন্য স্থায়ী ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং ১৭৯০ সালে হোয়াইট হাউস নামে এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওয়াশিংটন ডিসির পটোম্যাক নদীর ১০ বর্গমাইলের মধ্যে অবস্থিত এ ভবনে ১৮০০ সালে আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস এবং তার স্ত্রী এবিগেইল অ্যাডামস প্রথম বসবাস শুরু করেন। হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন ক্ষমতাসীন অবস্থায় তিনজন প্রেসিডেন্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের বিয়ের অনুষ্ঠান শুধু হোয়াইট হাউসে হয়। দুবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পায় হোয়াইট হাউস। সময়ের ব্যবধানে হোয়াইট হাউসের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ৬ তলাবিশিষ্ট হোয়াইট হাউসে মোট ১৩২টি কক্ষ রয়েছে। হোয়াইট হাউসে ১৮৪৫ সালে ক্যামেরায় প্রথম ছবি তোলা হয় প্রেসিডেন্ট জেমস কে পোকের। হোয়াইট হাউস আঙিনায় প্রথম মোটরযানে আরোহণ করেন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট প্রথম উড়োজাহাজে চড়ে পানাম সফরে যান।

 

গুপ্তচর ও হামলা

১৯১২ সালে মাইকেল উইন্টার নামের এক ব্যক্তি কয়েকবার হোয়াইট হাউসে হানা দেন। প্রথমবার নিরাপত্তা গেট অতিক্রম করার সময় রক্ষীরা ছেড়ে দিলেও কয়েক মিনিট পরই লোকটি আবারও অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। এবার আর ছাড় দেওয়া হয়নি। হোয়াইট হাউসে অনুপ্রবেশের সময় প্রথম গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটে ১৯৭৬ সালের ২৭ জুলাই। চেস্টার প্লাম্মার নামে এক ট্যাক্সিচালক হোয়াইট হাউসের ৮ ফুট দেয়াল টপকানোর চেষ্টা করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের গুপ্তচর তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। ১৯৮৫ সালের ২০ জানুয়ারি সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান তার দ্ব্বিতীয় মেয়াদের জন্য শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় একটি মেরিন ব্যান্ড দলের সঙ্গে রবার্ট লট্টা হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন। তিনি গুপ্তচরদের হাতে ধরা পড়ার আগে ১৪ মিনিট এক্সিকিউটিভ রেসিডেন্সে অবস্থান করেছিলেন। ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে ফ্রান্সিস্কো মার্টিন ডুরান ভবনটি লক্ষ্য করে ২৯ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এ সময় তিনিও গ্রেফতার হন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তখন দফতরেই ছিলেন।

 

ভূত!

হোয়াইট হাউসে নাকি ঘুরে বেড়ায় অশরীরী আত্মা। ভবনটিতে নাকি আব্রাহাম লিংকনের ভূতকেও ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এ জন্যই হয়তো প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যান তার স্ত্রীকে লিখেছিলেন, ‘আমি পৃথিবীর এক জঘন্য জায়গায় থাকি’। এখানকার কর্তাদের অনেকের সন্দেহ, প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসের চিলেকোঠায় আছেন। কিন্তু তিনি তো অনেক আগেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অফিসে মারা যান। আবার বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্টের জীবনে উঠে এসেছে ওভাল অফিসের চিলেকোঠার ভৌতিক ছায়া। ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যানের দেহরক্ষী শুনতে পান, ‘আই অ্যাম ডেভিড বার্ন’। কে বা কারা এরকম শব্দ করত আজও রহস্য। তবে শোনা যায়, হোয়াইট হাউসের জমির মালিক ছিলেন এই ডেভিড বার্ন।

 

আগুন

মূলত ঘটনাটির সূত্রপাত ১৮১২ সালে। আমেরিকানরা ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ব্রিটিশদের তো বটেই, কানাডা এবং রেড ইন্ডিয়ান জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় মার্কিনিরা। যুদ্ধটি ইঙ্গ-আমেরিকান যুদ্ধ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিকরা এই যুদ্ধকে আমেরিকার দ্বিতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবেও চিহ্নিত করেন। সে বছর মার্কিন বাহিনী কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ইয়র্ক শহরে হামলা করেছিল।

মূলত সূত্রপাত এখান থেকেই। এর প্রতিশোধ নিতেই ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রবেশ করে। প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউসে আগুন লাগিয়ে দেয়। সে সময় ভবনটি হোয়াইট হাউস নামে নয়, প্রেসিডেন্ট প্যালেস হিসেবে পরিচিত ছিল। তখন ছিল চতুর্থ প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের রাজ।

 

অশ্রুজলে ওবামার বিদায়

প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে শুরু হয়েছিল এক বালকের জীবনের গল্প। তিনি বারাক ওবামা। ২০০৮ সালে  তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন। তারপর দ্বিতীয় মেয়াদেও নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়েন তিনি। যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে পুরোপুরি সরিয়ে আনতে না পারলেও আগ্রাসী মনোভাব ছিল না ওবামার। তাই বিশ্বব্যাপী তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। বিদায়ী ভাষণে কাঁদেন তিনি, কাঁদান বিশ্ববাসীকে। সে ভাষণে তিনি বলেন, জীবন, স্বাধীনতা ও আনন্দে থাকার অধিকার সবার সমান। আমাদের এভাবে থাকাই আরও সুন্দর ঐক্য গড়ে তুলবে।

 

ছবিতে ট্রাম্প কাহিনী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর