রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্বসেরা কাগজের সম্পাদক

তানিয়া জামান

বিশ্বসেরা কাগজের সম্পাদক

জেরার্ড বেকার  [দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল]

জেরার্ড বেকার একজন ব্রিটিশ লেখক ও জনপ্রিয় কলামিস্ট। ২০১৩ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ডো জোনসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রধান সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন বেকার। তিনি পড়াশোনা করেন ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড কর্পাস ক্রাইস্ট কলেজে। বেকার প্রথমে ব্যাংকার হিসেবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে কর্মজীবন শুরু করেন। বছরখানেকের মাথায় তিনি হয়ে ওঠেন লয়েডস ব্যাংকে ল্যাটিন আমেরিকার বিশ্লেষক। এরপর ১৯৮৮-৯৪ মেয়াদকালে ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় বিবিসির প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন রেডিও ও টেলিভিশনে বিশ্ব অর্থনীতি করেসপন্ডেন্ট হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার।  এরপর বেকার ১৯৯৪-২০০৪ সালে কাজ করেন ফাইনান্সিয়াল টাইমসে। কর্মজীবনের নানা চড়াই-উত্রাইয়ের মধ্য দিয়েই হয়ে ওঠেন দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এডিটর ইন চিফ।

 

মার্টিন ব্যারন [দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট]

মার্টিন ব্যারনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর। বিখ্যাত এই আমেরিকান সাংবাদিক ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ২০০১ থেকে ২০১২ পর্যন্ত দ্য বোস্টন গ্লোবের এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ফ্লোরিডায় অভিবাসন প্রাপ্ত ইসরাইলি ইহুদি পরিবারে জন্ম ব্যারনের। পড়াশোনা করেন বারকেলি প্রিপারেটরি স্কুলে। ছাত্রজীবন থেকেই ছোটদের পত্রিকা স্টুডেন্ট পেপারে কাজ করতেন তিনি। ব্যারন লিহাই ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যাট্রিকুলেটেড পাস করেন এবং সেখানে তিনি দ্য ব্রাউন অ্যান্ড হোয়াইট স্টুডেন্ট পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন।  পেশাগত জীবনের শুরুটা হয়েছিল দ্য মিয়ামি হেরাল্ডের মাধ্যমে। এরপর দ্য লস অ্যাঞ্জেলস, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য হেরাল্ড পত্রিকায় কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি গ্লোব পত্রিকায়ও ছিলেন।

 

সিনা ইডা [আশাহি শিম্বুন]

জাপানের সবচেয়ে পুরনো ও সর্বাধিক প্রকাশিত পত্রিকা আশাহি শিম্বুন। এটি প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল ১৮৭৯ সালের জানুয়ারিতে। অন্য সব পত্রিকার মতো এটিও পরিচালিত হয় একটি ম্যানেজিং বোর্ডের মাধ্যমে। আর সেই বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান সিনা ইডা। সিনা ইডা বোর্ড প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন ২০১৩ সালের জুনে। এর আগে সিনা ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আশাহি শিম্বুন পাবলিশিং কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একই কোম্পানির ডিরেক্টর পদে দায়িত্ব পালনেও ছিল অসামান্য ভূমিকা। পরবর্তীতে সিনা ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে পদোন্নতি পান।  এর আগে আশাহি শিম্বুন পাবলিশিং কোম্পানির ব্যুরো ম্যানেজার হিসেবেও কর্মরত ছিলেন তিনি। ব্যুরো ম্যানেজারে তার কর্মকাল ছিল ২০০৫-০৯। কর্মজীবনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি একই কোম্পানিতে আছেন।

 

জয়দীপ বোস [টাইমস অব ইন্ডিয়া]

ভারতের তৃতীয় বৃহৎ সংখ্যক প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয় পরিচালক জয়দীপ বোস। পদবি হিসেবে এটি মিডিয়া প্লাটফর্মে টাইমস গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সম্পাদকীয় নির্দেশনার ইতিহাসে এটিই প্রথম সৃষ্ট পদ। ২০০৮ সালের ১২ মে তিনি এই দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এই পদে উন্নীত হওয়ার পর তিনি পত্রিকাটিকে আরও বিস্তৃত আকারে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার স্বপ্ন দেখেন। তখন তিনি সম্পাদকীয় লেখার মান উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। সে সময় তার পত্রিকায় তিনি সিনিয়রদের প্রাধান্য দেন। বাড়িয়ে দেন তাদের বেতন। সবার সহযোগিতায় কোম্পানিকে দাঁড় করান দেশের প্রথম সারিতে। পেশায় তুখোড় জয়দীপের এই অগ্রগতিতে সবাই সন্তুষ্ট। ভারতের পাবলিশিং সিইও রবি ধরওয়ালের দাবি মতে, সম্পাদকীয় দক্ষতার গুণেই জয়দীপ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে একটি প্রশংসিত স্থানে নিয়ে গেছে। পত্রিকার এমন সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়াকে তিনি তারুণ্যদীপ্ত বলেও অভিসিক্ত করেন। কাজের প্রতি অসীম মনোযোগী জয়দীপ বোস বলেন, যদি কেউ আপন উৎসাহ থেকে পত্রিকার এডিটরিয়াল কোয়ালিটিকে অর্জন করতে পারে তবে তাকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।  কর্ম দক্ষতায় জয়দীপ হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণীয় একজন।

 

মেরেডিথ আর্টলে [সিএনএন নিউজ]

সিএনএন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের বর্তমান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মেরেডিথ আর্টলে। সিএনএন.কম, সিএনএনআই.কম, সিএনএন পলিটিক্স, সিএনএন মানি বিষয়ক সব ধরনের নতুন সিদ্ধান্ত, প্রোগ্রাম ও প্রচার বিষয়ে রয়েছে তার কর্তৃত্ব। তিনি সিএনএন-এর গ্লোবাল টিমের ২৫০ এর বেশি দক্ষ রিপোর্টারকে পরিচালনা করছেন। প্রযোজনা এবং সম্পাদকের ভূমিকা পালন করছেন বিশ্বের এই টপ ডিজিটাল ব্র্যান্ডের। মেরেডিথের নেতৃত্বে সিএনএন ডিজিটাল রূপ পায়। বর্তমানে যে কোনো মোবাইল কিংবা ডেক্সটপের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান থেকে সিএনএনের আপডেট পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও নানা ঘটনার ভিডিও আপলোড পদ্ধতি তিনি চালু করেন। যারা সব সময় সংবাদে চোখ রাখতে আগ্রহী তাদের সিএনএন-এর ফলোয়ার করেন।  তিনি তাদের কাছে পৌঁছে দেন নিত্য নতুন নিউজ আপডেট। এর আগে তিনি আটলান্টায় ডিজিটাল এডিটরিয়াল সহায়তা দিতেন।

 

ডারিন গোডসার [দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড]

দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের চিফ-ইন-এডিটর ডারিন গোডসার। ২০১৩-এর ৩০ জুলাই তিনি এই দায়িত্ব লাভ করেন। একই পদে সিন আইলমারের অবসরের পর তিনি এই দায়িত্ব পান। এর আগে ২০১১ সালে পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণের চিফ-ইন-এডিটর পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগে ১০ মাসের জন্য ডেপুটি এডিটর হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দ্য ন্যাশনাল টাইমস, ফেয়ারফ্যাক্স মিডিয়া, সিডনি টাইমস হেরাল্ডে এডিটর হিসেবে নিজের ভূমিকা রেখেছেন। ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, সিডনি থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন ২০০০ সালে। সাংবাদিকতায় তার অদম্য আগ্রহের কারণেই ছাত্রাবস্থায় পত্রিকায় করেসপন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। পড়াশোনা চলাকালীন ১৯৯৪-৯৬-এ সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর বেশ কিছু দিন তিনি নিজেকে সাংবাদিকতা থেকে দূরে রাখেন।  এরপর ২০০৬ সালে আবার দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড ও ফেয়ারফ্যাক্স মিডিয়ায় যোগ দেন এবং কর্মদক্ষতার গুণে মাত্র দুই বছর পর এডিটর হয়ে ওঠেন।

 

ক্যাথরিন ই ভাইনার [দ্য গার্ডিয়ান]

ব্রিটিশ সাংবাদিক ও নাট্যকার ক্যাথরিন ই ভাইনার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭১ সালে। ২০১৫ সালের ১ জুন দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রথম নারী এডিটর-ইন-চিফ নির্বাচিত হন তিনি। প্রথমদিকে ভাইনার অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকাকেন্দ্রিক দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার ওয়েব অপারেশনে কাজ করতেন। তার বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক। শিক্ষক বাবার মেধাবী সন্তান ভাইনার ছিলেন স্কুল জীবন থেকেই প্রথম স্থান অধিকারী। তার প্রথম লেখা গার্ডিয়ান পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়। তাছাড়া অর্জনের ঝুড়িতে ছিল লোকাল পত্রিকা রিপন গেজেটে কাজ করার অভিজ্ঞতা। পরবর্তীতে ভাইনার অক্সফোর্ডের পেমব্রোক কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায় দ্য গার্ডিয়ানের ওমেন্স পেজ আয়োজিত প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। সে সময় দ্য গার্ডিয়ানের এডিটর লুইসি ছুন ভাইনারকে নিয়ে আসে এখানে।  তারপর ইতিহাস।

 

ডিন বাকেট [দ্য নিউইয়র্ক টাইমস]

১৯৫৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার লুইসিয়ানা রাজ্যের নিউ অর্লিন্সে জন্মগ্রহণ করেন দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এডিটর ডিন বাকেট। তিনি নিউ অর্লিন্সের সম্ভ্রান্ত ক্রেওলি পরিবারের সন্তান। বিখ্যাত পুলিত্জার পুরস্কারপ্রাপ্ত আমেরিকান এই সাংবাদিক ২০১৪ সালের ১৪ মে থেকে এক্সিকিউটিভ এডিটর পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত একই পত্রিকায় ম্যানেজিং এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমন একটি উচ্চপদে তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান এডিটর। ১৯৭৪ সালে বাকেট সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন সেন্ট অগাস্টিন স্কুল থেকে। পরের দুই বছর তিনি কলাম্বিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজিতে পড়াশোনা করেন। তবে সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে পড়াশোনা চালাতে ব্যর্থ হন বাকেট।  এর আগে নিউ অর্লিন্সে থাকাকালীন বাকেট দ্য টাইমস পিকায়ুনে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন।

 

আবদুল্লাহমিত বিলিচি [জামান]

তুর্কি পত্রিকা জামানের এক্সিকিউটিভ এবং এডিটর-ইন-চিফ আবদুল্লাহমিত বিলিচি। এ ছাড়াও তিনি জামানের ইংরেজি ভার্সন টুডেস জামান পত্রিকার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার। বিলিচি ১৯৭০ সালে তুর্কির এরজুরুম এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ফেইথ ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যানেজমেন্টে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থায় সাংবাদিকতার প্রতি আকর্ষণ ছিল তার। সাংবাদিকতার শুরুতে জামানের করেসপন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এরপর ১৯৯৫-৯৭ পর্যন্ত আকশিয়ুন ম্যাগাজিনে এডিটরের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯৮-২০০১ সাল পর্যন্ত জামান পত্রিকায় আন্তর্জাতিক নিউজ সম্পাদনা করতেন। তারপর টানা ছয় বছর এই অভিজ্ঞ সাংবাদিক চায়না নিউজ এজেন্সির সাধারণ পরিচালকের ভূমিকা পালন করেন।  নিজের লেখা আর কলমের জাদু তাকে ২০১৫ সালেই জামান পত্রিকায় এডিটর-ইন-চিফ এর সফলতা এনে দেয়।

 

জেমস স্টিফেনসন [বিবিসি]

২০১৪ এর নভেম্বরে জেমস স্টিফেনসন বিবিসি নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের নিউজ এডিটরের দায়িত্ব লাভ করেন। এর আগে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজের হেড অব নিউজ এডিটর ছিলেন। তখন তিনি ১৫০ জনের বেশি প্রোডাকশন স্টাফ ও প্রেজেন্টারের নেতৃত্ব দেন। জেমস ২০০৯-১৩ সাল পর্যন্ত বিবিসি নিউজ বুলেটিন সিক্স অ্যান্ড টেন-এর দায়িত্ব পালন করেন। তখন ২০১০ সালের নির্বাচন এবং লন্ডন অলিম্পিকের খবর গুরুত্ব পেয়েছিল। ২০০৭-০৯ সাল পর্যন্ত এই দাপুটে সাংবাদিক ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের ব্যুরো চিফ।  তখন তিনি ওই অঞ্চলের সাতটি অফিসের দায়িত্ব একা পালন করেন।

 

জাফর আব্বাস [ডন]

পাকিস্তানি পত্রিকা ডনের বর্তমান এডিটর জাফর আব্বাস। ২০১০-এর অক্টোবরে তিনি এই দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সাংবাদিকতা বিষয়ে জাফর আব্বাসের রয়েছে প্রখর অভিজ্ঞতা। করাচির দ্য স্টার পত্রিকার মধ্য দিয়ে আব্বাসের কর্মজীবনের যাত্রা শুরু। ১৯৮৮ সালে ছিলেন মান্থলি হেরাল্ড পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার। কর্ম দক্ষতায় মাত্র চার বছরের মাথায় স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট হয়ে ওঠেন। এর ছয় বছর পর আব্বাস দ্য হেরাল্ডের ব্যুরো চিফ হন। এরপর ১৯৯০-০৬ পর্যন্ত ডন মিডিয়ায় তিনি ভিন্নধর্মী একাধিক অ্যাসাইনমেন্টে কাজ করেন।  মাঝে তিনি খালিজ টাইমসের করেসপন্ডেন্ট হিসেবেও কাজ করেছেন।

সর্বশেষ খবর