শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাড়া জাগানো ভাগ্যবান-ভাগ্যবতী

সাইফ ইমন

সাড়া জাগানো ভাগ্যবান-ভাগ্যবতী

সৌভাগ্য খুঁজে ফিরে অনেকেই। সৌভাগ্য  তো সোনার হরিণ। কারও হাতে ধরা দেয়, কারও হাতে দেয় না। তাই সোনার হরিণের পেছনে ছুটে চলায় থেমে নেই কেউ। অনেকে আবার রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। তাদের কেউ কেউ লটারি ধরেন। যদি ধরা দেয় সোনার হরিণ তবে আর পায় কে! এক রাতেই কোটিপতি! লটারি ধরে জিতে গেলে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়া মোটেই রূপকথা নয়।  বিশ্বজুড়ে এমন নজির কম নয়। লটারি জেতার অবিশ্বাস্য সব ঘটনা নিয়েই আজকের রকমারি— 

 

ফ্রেন সেলাকের হাতের মুঠোয় ভাগ্য

ফ্রেন সেলাককে কী বলবেন, ভাগ্যবান নাকি অন্য কিছু? আসলে এটা নির্ভর করছে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। তিনি পেশায় একজন মিউজিক টিচার এবং জাতীয়তায় ক্রোয়েশিয়ান। ১৯২৯ সালে জন্ম নেওয়া এই মিউজিকম্যান তার জীবনে ভাগ্য নিয়ে এসেছেন হাতের মুঠোয় ভরে। কেননা তিনি কখনো পড়েছেন প্লেন দুর্ঘটনার কবলে আবার কখনো পড়েছেন ট্রেন দুর্ঘটনায়, বাস দুর্ঘটনায়। এমনকি তার গাড়িতেও ধরে গিয়েছিল ভয়াবহ আগুন। এত কিছুর পরেও তিনি দিব্যি বেঁচে আছেন। জীবন পার করছেন সম্পূর্ণ সুস্থ-সবল অবস্থাতেই। ২০০৩ সালে তিনি লটারিতে ১ মিলিয়ন ডলার জিতে আবারও প্রমাণ করেন তিনিই বিশ্বসেরা ভাগ্যবান ব্যক্তি। এর আগে প্লেন দুর্ঘটনায় তিনি খড়ের গাদার ওপর পড়ে রক্ষা পান। যেখানে ওই প্লেনের ১৯ জন যাত্রী মারা যান। একবার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে সোজা গিয়ে পড়েন এক লেকের ওপর। ১৭ জন মানুষ সেই দুর্ঘটনায় মারা যায়।  কিন্তু ফ্রেন সেলেক ঠিকই বেঁচে যান তখন। আবার একদিন ফ্রেন সেলেকের চলন্ত গাড়িতে ধরে যায় ভয়াবহ আগুন। তাতে কী! কিছুই হয়নি ফ্রেন সেলেকের।

 

‘পাওয়ার বল’ জেতা ব্যাপার নয়

২০০৫ সালে ঘটে পাওয়ার বল ড্রইংয়ে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। ২০০৫ সালের ৩১ মার্চ রাতের ঘটনা এটি। সেদিন কর্তৃপক্ষের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। কারণ, দু-চার কিংবা পাঁচ নয়, একেবারে ১১০ জন ব্যক্তি দাবি করে তারা প্রত্যেকে ১ লাখ ডলার থেকে ৫ লাখ ডলার পর্যন্ত জয় করেছেন। পার্থক্য এই ১১০ জন ব্যক্তির দাবি তারা বোনাস খেলে এই জয় পায়।

কিন্তু আসলে পাঁচজন ব্যক্তিই ঘুরেফিরে বারবার বোনাস খেলেছিল। মূল ঘটনা এখানে নয়। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, এই পাঁচজনই একই সংখ্যা নির্বাচন করেছিল।

যেটি বাস্তবে প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। বিজ্ঞানের প্রোবাবিলিটির অংক যারা জানেন তারাও স্বীকার করবেন এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। কিন্তু খুব কম সম্ভাবনাও তো সম্ভাবনার মধ্যেই পড়ে। যা মানতে পারেনি হাউসটির কর্তৃপক্ষ। তারা ধারণা করে এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে জানা যায়, ওই পাঁচ ব্যক্তির নির্বাচন করা ৬টি সংখ্যা মিলে যায়।  তা লেখা ছিল ফরচুন কুকিতে। কোম্পানিটি দিনে ৪০ লাখ কুকি উৎপাদন করে। ওই পাঁচজন কুকি থেকে সংখ্যাগুলো নির্বাচন করে।

 

স্ক্র্যাচ করেই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার

জন গিনথারকেই বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী নারী। কেনইবা বলা হবে না। তিনি যে স্ক্র্যাচ টিকিটের মাধ্যমে জয় করেছেন মিলিয়ন মিলয়িন ডলার। বিভিন্ন সময়ে মোট চারবার এই ডলার জিতেন জন গিনথার। সর্বপ্রথম তিনি ১৯৯৩ সালে একটি স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষে পান প্রায় সাড়ে ৫ মিলিয়ন ডলার। এর ঠিক এক যুগ পরে তিনি আবার জয় করেন ২ মিলিয়ন ডলার। আরও দুই বছর পর তিনি আবারও জয় করেন লটারি। এবার পান ৩ মিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ ২০০৮ সালে লটারি জিতেন। এবারের অর্থের সংখ্যাটা অনেক বিশাল। যা ১০ মিলিয়ন ডলার। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সবই সত্যি।

অনেকেই দাবি করেছেন গিনথার নিশ্চয়ই কোনো চিটিং করেছেন। তাদের দাবি, গিনথার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি করেছেন

পরিসংখ্যানে। ফলে, তিনি সংখ্যাতত্ত্বের অনেক হিসাব-নিকাশের ফাঁকফোকর অনেক বেশি জানেন। এমন কোনো ফন্দি তিনি বের করেছেন যার ফলে এত ডলার তিনি জয় করতে পেরেছেন। ঘটনার সত্যতার পেছনে শক্ত কোনো যুক্তি কখনই দাঁড় করাতে পারেনি কেউ।  সবার মনে একটাই প্রশ্ন, একজন মানুষ কী করে এতটা ভাগ্যবতী হতে পারে!

 

লটারি ধরলেই ডলার-বৃষ্টি

২০১৪ সালের এপ্রিলে ক্রিস্টোফার কেইলিন শিকাগোতে একটি ক্রসওয়ার্ড লটারির জিনে ২৫ হাজার ডলার জিতে নেন। তিনি শখের লটারি প্লেয়ার। মাঝেমধ্যে নিজের ভাগ্য পরখ করতে লটারি ধরে থাকেন। সত্যিই যখন ভাগ্য তার সহায় হলো তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে হবু স্ত্রীকে নিয়ে পুরো শহরে আনন্দে মেতে থাকেন। এ সময় পথে তিনি গ্যাস স্টেশনে নামলে কী মনে করে যেন আরও একটি ক্রসওয়ার্ড টিকিট কিনেন। খুবই মজার ব্যাপার এবারও ভাগ্য তার সঙ্গেই ছিল। এবার তিনি জয় করেন ১ হাজার ডলার।

এর কিছু দিন পর অফিসে যাওয়ার পথে একই দোকান থেকে তিনি আবারও ক্রসওয়ার্ড স্ক্র্যাচ টিকিট কিনেন। পরে অফিসে গিয়ে আবিষ্কার করেন তিনি আবারও ২৫ হাজর ডলার জিতেছেন। খুশিতে আত্মহারা ক্রিস্টফার টিকিট ভাঙিয়ে যখন ক্যাশ করতে গেলেন মূল ঘটনা ঘটল তখনই। তিনি আসলে ২৫ হাজার ডলার নয়, তিনি জিতেছেন ২,৫০,০০০ ডলার। একটা শূন্য কিন্তু পরের সংখ্যায় বেশি আছে!  

 

একেই বলে লটারি ভাগ্য

২০০৭ সালের ১১ জুলাই ডেরেক লেডনার এবং তার স্ত্রী ইংল্যান্ডের কনকর্ন ওয়ালে লটারি ধরেন। তারা সর্বমোট পাঁচটি টিকিট নেন। যার মধ্যে একটি টিকিট দিয়ে তারা লটারি পেয়ে যান। এতে তারা আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি প্লট শেয়ার করেন। ফলে তারা ব্যাপক উৎসাহী হয়ে পরের সপ্তাহে আবারও লটারির টিকিট ধরেন। কিন্তু এবার আর ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। ঘটনা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। হেরে যাওয়ার পর লেডনার টিকিট নিজের ওয়ারেটে রাখতে গিয়ে অবাক হয়ে আবিষ্কার করেন ওয়ারেটে আরও একটি টিকিট আগে থেকেই রয়েছে। তিনি টিকিটটি বের করে আরও বেশি অবাক হয়ে যান। কারণ টিকিটটি ১১ তারিখের। শুধু তাই নয়, টিকিটের গায়ে লেখা সংখ্যাটি ১১ তারিখের লটারি জয়ী সংখ্যা। যা তারা সেদিন লক্ষ করেননি।  ফলে পাঁচটি লটারির টিকিটের মধ্যে তারা সর্বমোট ২টি লটারি জিতে নেন।  

 

ওয়ালিদ আবুরুমির ‘লাকি থ্রি’

২০০৪ সাল থেকে শুরু হয় ওয়ালিদ রুমির সৌভাগ্য। এ বছর স্ক্র্যাচকার্ডে তিনি ৫ লাখ ডলার জয় করেন। মজার বিষয় এর ঠিক পরের বছর একই সংখ্যা ব্যবহার করে ৭১ হাজার ডলার জেতেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে এসে তিনি একই সংখ্যা ব্যবহার করে জয় করেন ১০ হাজার ডলার। আসলে শুরুটা ছিল অন্যরকম। একদিন ওয়ালিদ এক কনভিনিয়েন্স স্টোরের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন হঠাৎ তিনটি সংখ্যা তার নজরে আসে। সংখ্যাগুলো ৭, ১ ও ৫। পরে কিছু দিন যাবৎ তিনি ওই সংখ্যাগুলোই চারপাশে দেখতে থাকেন। দেখা গেছে তিনি ঘড়িতে সময় দেখতে তাকিয়েছেন তখনই বাজে ৭টা বেজে ১৫ মিনিট। তার জন্ম তারিখ জুলাই মাসের ১৫ তারিখ। অদ্ভুত ব্যাপার আরও আছে। এরপর তিনি ১৮৪টি লটারির টিকিট কেনেন।

আরও অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, তিনি তার সব টিকিট হারিয়ে ফেলেন। তিনি কীভাবে তা হারালেন তা  কখনো বের করতে পারেননি।  টিকিটগুলো ক্রয়ের রসিদ দেখিয়ে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারতেন কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে তিনি সে পথে পা বাড়াননি।

 

স্বপ্নেই জেতেন লটারি

স্বপ্নে পাওয়া ওষুধের ক্যানভাস আমরা রাস্তাঘাটে প্রায়ই দেখতে পাই। আবার অনেকে আছে যারা বিশ্বাস করে এই ওষুধে কাজ হয়। টরেন্টোর মেরি ওলেন্সের ঘটনা সবচেয়ে আলাদা ও বিস্ময়কর। ৮৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা কিছু সংখ্যা দেখতে পান স্বপ্নে। পরদিন সকালে তিনি ঘুম থেকে উঠেই লটারির টিকিট কিনেন ওই সংখ্যা অনুযায়ী।

আত্মবিশ্বাস ছিল ওলেন্সের যে, তিনি জিতবেনই এবং পরদিন আবারও টিকিট কিনে আনেন। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই বৃদ্ধা ব্যর্থ হননি। হ্যা, তিনি দুটো টিকিটেই জয় করেছিলেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। তিনি মোট ৮ মিলিয়ন ডলার জেতেন। তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো তিনি এই ডলার দিয়ে কী করবেন।

তখন হেসে জবাব দেন তিনি পুরো টাকা দিয়ে নেশা করবেন আর তরুণ ছেলেদের পেছনে ব্যয় করবেন। তিনি নিছক মজা করে এটা বললেও আসলে যা করেছেন তাও কম অদ্ভুত নয়।  কারণ তিনি প্রথমেই নিজের হেয়ারকাটের স্টাইল এবং ওয়ারড্রোব কেনার প্ল্যান করেন। 

 

সেরা রিচার্ড লুস্টিগ

লটারি মানেই ভাগ্যের খেলা। লটারি মানেই সুযোগ। কিন্তু না এটা বিশ্বাস করতে নারাজ রিচার্ড লুস্টিগ। তিনি মনে করেন লটারি জেতার সিস্টেম আছে। কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই নাকি লটারি জেতা সম্ভব। অবশ্য তিনি এটা সম্ভব করেছেন। একবার-দুবার নয়, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তিনি জেতেন সাতটি আলাদা আলাদা লটারি। মোট ১০,৫২,২০৫ ডলার জেতেন রিচার্ড। এর মধ্যে দুটো লটারিতে তিনি ৮,৫৬০ ডলার জেতেন। তার সবচেয়ে বড় জয়টি হচ্ছে ৮৪২১৫২.৯১ ডলার। যেটা তিনি জয় করেন ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে।

রিচার্ড নিজে নিজে কিছু পদ্ধতি বের করেছেন যা ব্যবহার করে নাকি লটারি জয় করা খুবই সম্ভব। তিনি একটি বই রচনা করেন। খুব সম্ভবত এমন বইয়ের পেছনেই ছুটবে সবাই। তাই সারা জীবন কষ্ট করে পড়াশোনা করে চাকরি করে অথবা ব্যবসা করে কেন সময় নষ্ট! রিচার্ডের লেখা বইটি পরে আত্মস্থ করে শুধু লটারি খেললেই তো চলে।  এমন কথা দাবি করতেই পারেন।   

সর্বশেষ খবর