মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভাষা-সংস্কৃতির অরক্ষিত দেয়াল রক্ষায় সতর্ক হতে হবে

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

ভাষা-সংস্কৃতির অরক্ষিত দেয়াল রক্ষায় সতর্ক হতে হবে

ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষার মাস। এক সময় এ মাসটা আমাদের জন্য ছিল শোকের মাস, ভাষা ও ভাষাশহীদদের জন্য ভালোবাসার মাস। এখন শোক আর ভালোবাসা কতটা আছে জানি না, তবে এখন ফেব্রুয়ারি আমাদের বাণিজ্যেরও মাস।

এই বইমেলা উপলক্ষ করে নতুন নতুন বই প্রকাশের একটা ধুম লেগে যায়। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, নবপ্রযুক্তি ইত্যাদি সব রকমের বই। শুধু কলকাতার বই নয়, কলকাতার বইমেলার সঙ্গেও আমরা এখন টেক্কা দিতে পারি। গুণে এবং সংখ্যায় না হলেও সৌষ্ঠবে এবং বিক্রিবাট্টায়। ভাষা-মাসের এটাও একটা লাভজনক দিক। লেখক এবং প্রকাশক দুই পক্ষই তাতে লাভবান হন। আমরা গর্বিত হই, বাংলাদেশের বইয়ের বাজারের সম্প্রসারণ এবং বাংলা বইয়ের ক্রেতা ও পাঠকের দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি দেখে।

এটা একটা ব্যারোমিটার, যা দেখে বোঝা যায় বাংলাদেশে বাঙালি নব্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি কত দ্রুত বেড়ে উঠছে। কত দ্রুত কলকাতার প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনুকরণমুক্ত হতে চাচ্ছে। আগে, পাকিস্তান আমলে, ঢাকায় ছিল কলকাতার বইয়ের বৈধ-অবৈধ ব্যবসার রমরমা। আমাদের শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বা শামসুদ্দীন আবুল কালামের অসাধারণ উপন্যাস ও গল্পের বইগুলো রেখে ঢাকায় পাঠক হুমড়ি খেয়ে পড়ত কলকাতার নীহাররঞ্জন গুপ্তের মতো বাজারি লেখকদের বইগুলো কেনা ও পড়ার জন্য। এখন চোখ ফিরেছে ঘরের লেখকদের দিকে।

ভাষার মাসের বাণিজ্যে এটা আমাদের একটা বড় লাভ। অর্থাত্ আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক মেরুদণ্ডটা তৈরি হচ্ছে। এখন বইমেলায় বিক্রি হয় হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন অথবা সদ্য খ্যাতি অর্জন করা নতুন কোনো কথাশিল্পীর বই। আমাদের কাব্য-ভোক্তারা এখন আর ‘সুনীল-শক্তির’ কবিতার নামে মুহ্যমান নয়। তবে বই নিয়ে বাণিজ্যের বেলায় কলকাতার বই-প্রকাশকদের চেয়ে ঢাকার একশ্রেণির বই প্রকাশকের বুদ্ধি (কুবুদ্ধি) একটু বেশি মনে হয়। এ জন্য প্রকাশকদের লোভের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক শাসকদের অধিকাংশের জ্ঞান, শিক্ষা এবং বুদ্ধিবৃত্তির স্থূলতা (ক্ষেত্রবিশেষে অভাব) মূলত দায়ী। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে এসে দেখেছি (বিএনপির শাসনামল) জেনারেল জিয়া, এমনকি তাঁর স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কেও বই লেখা ও প্রকাশ করার জন্য লেখক ও প্রকাশকের অভাব হয়নি। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশে এসে দেখেছি, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কাঁড়ি কাঁড়ি বই প্রকাশিত হচ্ছে। হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কেও। বইগুলো মানে উন্নত হলে কথা ছিল না। কিন্তু অধিকাংশ বই-ই ট্র্যাশ। তাড়াহুড়া করে ছাপা হয়েছে বইমেলায় বিক্রি হওয়ার চেয়েও সরকারের বই ক্রয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য। তালিকাভুক্ত বইগুলোর কয়েক হাজার কপি ভালোমন্দ বিচার ছাড়াই একসঙ্গে বিক্রি হয়ে যাবে। তাতে বইয়ের পঠিত বিষয়টি মানোন্নত হোক আর না হোক লেখক-প্রকাশক দুইয়ের পকেটেই লাভের কড়ি আসবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কিছু ভালো বই প্রকাশ হওয়া আমাদের জাতীয় স্বার্থেই প্রয়োজন। কিছু ভালো বই যে প্রকাশিত হয়নি তা নয়। কিন্তু এ বইগুলোর স্বীকৃতি তেমন নেই। ফলে কাটতিও কম। তার বদলে বাজারি বই হুড়মুড় করে বেরোচ্ছে। সাড়ম্বরে তার মোড়ক উন্মোচন উত্সব হচ্ছে। সে বই বইমেলায় বিক্রি হোক বা না হোক সরকারি বই ক্রয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুড়ি-মুড়কি বিক্রির মতো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। পাঠকদের মেধা ও মনন এবং শিক্ষার্থী পাঠকের জ্ঞান ও শিক্ষার উপযোগী এসব বই নয়। তবু সরকারি অর্থে এর একটা বিরাট অংশ ক্রয় করা হয়। এই ধরনের বই লেখানো এবং প্রকাশ করা নিয়ে একশ্রেণির অভিজাত প্রকাশক সম্পর্কেও দুর্নীতির যে অভিযোগ কানে আসে, তাতে ভাষার মাসের পবিত্রতার ব্যাপারেও আমরা কতটা সচেতন সে সম্পর্কে মনে প্রশ্ন জাগে।

ভাষার মাসে একশ্রেণির ভাষাপ্রেমিকের মধ্যে ভাষাভক্তিও বাড়ে। তাঁরা একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন ৮ বা ৯ ফাল্গুন বলা হবে না তা নিয়ে বিতর্ক তোলেন। আমাকে প্রায়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, আপনি কেন ৮ ফাল্গুন না লিখে ভাষার গানে একুশে ফেব্রুয়ারি কথাটি ব্যবহার করেছেন? আমি তাঁদের বোঝাতে গিয়ে ক্লান্ত হই। একুশে ফেব্রুয়ারি কথাটা আমি প্রথম ব্যবহার করিনি। কথাটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভাষার আন্দোলন থেকে জন্ম নিয়েছে। জনগণ তাকে গ্রহণ করেছে। আমিও ভাষার গানে তাকে ব্যবহার করেছি। আমার অন্য কিছু করার সুযোগ ছিল না, সাধ্যও ছিল না। একুশে ফেব্রুয়ারি কথাটি এখন বাংলা হয়ে গেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি বলা হলে তাবত্ বিশ্বের বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে মানুষ বুঝে নেয় এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের তারিখ। অন্য কোনো নামে এর নতুন পরিচিতি সম্ভব নয়। তা ছাড়া এখন তো আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের নাম একুশে ফেব্রুয়ারি।

সে ভাষাই দ্রুত সমৃদ্ধি লাভ করে, জীবন্ত ভাষা হিসেবে থাকে, যার গ্রহণ-শক্তি যত বেশি। বাংলা ভাষা যে এত নির্যাতন ও নিপীড়নের মুখেও অস্তিত্ব হারায়নি, তার মূল কারণ তার গ্রহণ-শক্তি। সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, টার্কিশ, ইংরেজি, ফরাসি, তামিল, হিন্দি, উর্দু এমন কোনো ভাষা নেই যা থেকে বাংলা ভাষা শব্দ ও কথা আহরণ করেনি। টেলিভিশন, টেলিফোন, রেডিও, হাসপাতাল, চা, আনারস, খবর ইত্যাদি সব কথাই তো বিদেশি ভাষা থেকে গৃহীত এবং এখন বাংলা কথা হিসেবেই জনমুখে প্রচলিত। নবপ্রযুক্তির অসংখ্য বিদেশি শব্দ, কথা ও নাম এখন বাংলা হয়ে গেছে। তাকে তরজমা করে বলা হলে কেউ বুঝবে না। আমাদের ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক মাসের নামটিও তাই বিদেশি ভাষা থেকে গৃহীত। কিন্তু বাংলা হয়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা লাভ করেছে।

রাজনৈতিক আন্দোলনে উগ্রতা অনেক সময় অপরিহার্য; হয়তো কোনো কোনো সময় উপকারীও। কিন্তু সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অতি-উগ্রতা ক্ষতিকর। যেটা বাংলা ভাষা আন্দোলনের শেষদিকে দেখা গিয়েছিল। সত্তর-একাত্তর সালের দিকে একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখটি সমাগত হলেই দেশের বিভিন্ন শহরে— বিশেষ করে ঢাকা শহরে দোকানপাটের ইংরেজি সাইনবোর্ড, নিয়ন সাইন ভাঙার ব্যাপক তাণ্ডব দেখা যেত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের দু-এক বছরও এ তাণ্ডব চলেছে। মুখ্যত স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই এটা করতেন।

এ সময় বিখ্যাত মানবতাবাদী পণ্ডিত শিবনারায়ণ রায় এসেছিলেন ঢাকায়। তিনি তখন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন। তিনি ঢাকায় ইংরেজি সাইনবোর্ড ভাঙার তাণ্ডব দেখে ঢাকায় এক ছাত্র সমাবেশে বলেছিলেন, ‘ইংরেজি সাইনবোর্ড ভেঙে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠাদান করা যাবে না। বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠাদান করতে হলে তাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে আজ তোমরা ইংরেজি সাইনবোর্ড ভাঙবে, কাল তা ব্যবহারিক প্রয়োজনে দ্বিগুণ শক্তিতে তোমাদের দোকানপাটে উঠে আসবে। এই সম্ভাবনা যদি ঠেকাতে চাও, তাহলে ইংরেজি সাইনবোর্ড না ভেঙে বাংলা ভাষার চর্চায় মন দাও। তাকে কেবল সাহিত্যের ভাষায় সীমাবদ্ধ না রেখে সব কাজকর্মের ব্যবহারিক ভাষা করে তোল। দেখবে মানুষ ব্যবহারিক প্রয়োজনেই বাংলাকে ব্যবহার করছে, দোকানপাটের সাইনবোর্ড বাংলায় লিখছে। নইলে কেবল বাহুবল দ্বারা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।’

শিবনারায়ণ রায়ের এই সতর্কবাণীটি সত্য হতে বেশি দিন লাগেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সরকারের দাপ্তরিক ভাষা রূপে ব্যবহারের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা পালিত হয়নি। ইংরেজি এখনো বহাল রয়েছে। ঢাকা শহরে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যয়বহুল অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন স্কুল গজিয়ে ওঠে এবং নিউইয়র্কের ফ্যাশনে গড়ে ওঠা বহুতল বিপণি-শোভিত ঢাকা শহরে এখন ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ড ও নিয়ন সাইনের আধিক্য চোখে পড়ার মতো।

এটা শুধু ভাষাচর্চা ও ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের উপেক্ষা ও অবহেলার ফল নয়, এটা বিশ্বায়নের ফল। বাংলা ভাষা বিশ্বায়নের গ্রামে পড়েছে। এ বিশ্বায়নের ফলে আমরা যে আবার ইংরেজি ভাষার খপ্পরে পড়েছি তাতে আমি শঙ্কিত নই। ইংরেজ তার ভৌগোলিক সাম্রাজ্য হারিয়েছে; কিন্তু ভাষার সাম্রাজ্য অটুট রেখেছে। কারণ ইংরেজি ভাষা শুধু সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয়, বিজ্ঞান ও নবপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ। ব্যবহারিক ভাষা হিসেবেও তার কোনো তুলনা নেই। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এখনো তার প্রভাবে উন্নত হতে পারে।

ইংরেজিকে অনুসরণ করে বাংলা অতীতে যেমন সাহিত্যে সমৃদ্ধ হয়েছে, তেমনি বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভাষা হিসেবে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। তাহলে আমাদের সরকারি কাজে, রাষ্ট্রীয় কাজে, ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে বাংলা ব্যবহারের বাধাগুলো দূর হবে। শিক্ষার সব পর্যায়ে তাকে মাধ্যম করে তোলার বর্তমান অসুবিধাগুলো তখন দূর হবে। অবশ্য সে জন্য অপেক্ষা করার নীতি গ্রহণের দরকার নেই। সরকারের উচিত সব দাপ্তরিক কাজে (ফরেন করেসপন্ডেন্স ছাড়া) বাংলা ভাষা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা। ক্রমাগত ব্যবহার দ্বারাই কোনো ভাষা ব্যবহারিক ভাষা হয়ে উঠতে পারে।

আমি বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষার প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত নই। শঙ্কিত এ ভাষা ব্যবহারের উগ্রতা নিয়ে। এককালে ইংরেজি বর্জনের উগ্রতায় আমরা নিজের ভাষা এবং নিজেদের ক্ষতি করেছি। তেমনি এখন নিজেদের মাতৃভাষাকে উপেক্ষা ও অবহেলায় দূরে ফেলে রেখে এবং অতিরিক্ত ইংরেজিপ্রীতি দ্বারা যে ইংরেজি ভাষা গড়ে তুলছি তার সুদূরপ্রসারী ক্ষতির কথাটা ভেবে দেখছি না। কেবল আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব ভাষা-মাস পালন দ্বারা আমরা সে ক্ষেত্রে সামাল দিতে পারব না।

কোনো ভাষা যখন সাম্রাজ্য বিস্তারের বাহন হয়ে দাঁড়ায় তখন তাকে ভয় করা দরকার। ইংরেজি আজ আমাদের কাছে শাসকের সাম্রাজ্য রক্ষার ভাষা নয়; বরং আধুনিক জগত্ ও তার জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে আমাদের সংযোগের সেতু। তাই বাংলাদেশে ইংরেজির সঙ্গে একটা ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক রক্ষা আমাদের এখনো প্রয়োজন। উর্দু ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গেও আমাদের কোনো দিন বিরোধ ছিল না এবং এখনো নেই। কিন্তু উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের অবাঙালি শাসকরা যখন আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি ধ্বংস করার এবং তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার বাহন করার চেষ্টা করেছে, তখন তাকে প্রতিহত করতে হয়েছে। আজ উর্দু ভাষার সঙ্গে বাঙালির কোনো বিরোধ নেই।

কিন্তু এই একুশ শতকে আমাদের ভাষা আন্দোলনের অর্জনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যদি আমরা দিগন্তে আবার ঘনায়মান আরেকটি উদীয়মান ভাষা সাম্রাজ্যের আগ্রাসন সম্পর্কে সতর্ক না হই। এটি হিন্দি ভাষা। উত্তর ভারতের আধিপত্যবাদী শাসক শ্রেণির ভাষা হিসেবে এখন তা ভারতের অন্যান্য ভাষা ও ভাষা গোষ্ঠীগুলোর আপত্তি ও বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে সমগ্র উপমহাদেশে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এই আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য এক ধরনের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা।

বাংলাদেশে আমার আশঙ্কা, উর্দু ভাষার সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে সাফল্যের সঙ্গে রুখে দিতে পারলেও আমরা হিন্দি ভাষার আধিপত্যবাদী আগ্রাসনকে রুখে দিতে পারছি না। বিশ্বায়নের অনুকূল স্রোত এখন এই নতুন ভাষা সাম্রাজ্যবাদের সহায়। ফিল্ম, টেলিভিশন, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অবাধ প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সুযোগে এবং উপমহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের শাসকদের ভাষা হওয়ার ফলে এই ভাষা এখন প্রতিবেশী ছোট দেশগুলোর ন্যাশনাল বেরিয়ার বা জাতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে অদৃশ্য জীবাণুর মতো আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি, এমনকি প্রাত্যহিক জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রবেশ করছে। এটা সংস্কৃতির মেলবন্ধন নয়, এটা স্পষ্টভাবে একটি আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির আগ্রাসন। আমরা হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সমমর্যাদাভিত্তিক সম্প্রীতি চাই। কিন্তু তার আধিপত্যবাদী যে আগ্রাসী চেহারাটি উপমহাদেশে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাকে ভয় পাই।

ভাষার মাসে আমাদের ভাষা-সংস্কৃতির অরক্ষিত সীমান্ত দেয়ালগুলো রক্ষায় সতর্ক হতে হবে। নইলে এত বছরের ভাষা সংগ্রামের সব অর্জন কেবল আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব ভাষা-মাস পালন দ্বারা রক্ষা করা যাবে না। আমরা একটি যুদ্ধে জিতেছি, আরেকটি যুদ্ধ সামনে। তাতেও জয়ী হতে হবে।

লেখক : একুশের প্রভাতফেরির গানের রচয়িতা,

লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক

সর্বশেষ খবর