শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভালোবাসা কারে কয়

তানভীর আহমেদ

ভালোবাসা কারে কয়

এখন তাদের দুজনের বয়স যোগ করলে দাঁড়ায় ১৯৩ বছর। বয়সটা কেন যোগ করা হলো, জানেন? শুনুন তবে— ৯০ বছরের তরুণ ফরেস্ট ৮৩ বছরের তরুণী রোজকে বললেন, ‘হে সুন্দরী, আমাকে বিয়ে করবেন?’ রোজ হেসেই খুন। বুড়ো বলে কি! রোজ দুষ্টুমি করে বলল, ‘আপনার বয়স যেদিন ১০০ বছর হবে সেদিন বিয়ে করব।’ ফরেস্ট কিন্তু দমল না। বলল, ‘মহারানীর যা ইচ্ছা...’

 

ভালোবাসা কী? ভালোবাসার অনুভূতিতে এলোমেলো হোন না— এমন কেউ নেই। ভালোবাসার গল্পগুলো তাই আমাদের ছুঁয়ে যায়। ভালোবাসার বয়স নেই। নেই নিয়ম। নেই সীমানা। ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়। মানুষে মানুষে ভালোবাসার বহু সোনালি গল্প তাই পুরনো হয় না। এমনই এক ভালোবাসার গল্প বুনেছেন ফরেস্ট ল্যান্সে ও রোজ পোলার্ড।

১৯৮৩ সাল। এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে দুজনের পরিচয়। সেখানে এক সঙ্গে নাচলেন তারা, হইহুল্লোড় করলেন। ততদিনে জীবনে নানা রঙ দেখা হয়েছে দুজনেরই। ফরেস্টের বয়স প্রায় ৭০। অন্যদিকে রোজের বয়স প্রায় ৬৩। ফরেস্ট দুবার স্ত্রী হারিয়েছেন। রোজেরও একবার বিয়ে হয়েছিল। অসুস্থতায় ভুগে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর আর সংসার করেননি।

দুজনের রসায়ন বেশ জমে উঠল। আলাপ আর আড্ডায় দুজনেই দিন পার করেন। বয়স তো থেমে নেই। এখন প্রেম-বিয়ের চেয়ে বরং সঙ্গটাই আনন্দদায়ক।

ফরেস্টের বাড়ি থেকে রোজের বাড়ি ৬৪ কিলোমিটার দূরে। তবু এই বয়সে ঝিমিয়ে পড়ার মানুষ নন তারা। প্রতিদিনই তারা দেখা করেন। পার্কে বসে সুখ-দুঃখের গল্প করেন। জীবনের মজার অভিজ্ঞতা লেনদেন হয় মন থেকে মনে। সন্ধ্যা পেরোতেই রোজের বাড়ি ফেরার তাড়া। তবে রাতটা পেরোতে দেরি— ফরেস্ট পরদিন সকালে ঘড়ির কাঁটা দুপুর ছোঁয়া আগেই রোজের বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে হাজির! কোনো কোনো দিন রোজ চমকে দেন ফরেস্টকে। সুস্বাদু কেক বানিয়ে আনেন ফরেস্টের জন্য। ফরেস্টও কম যান না, গিফট শপে ঢুঁ মারেন। কিশোরী-তরুণীদের উপযোগী গিফট কেনেন। দোকানি শুরুর দিকে চোখ কপালে তুলত, বুড়ো বয়সে ভীমরতি ছাড়া আর কি! দিনে দিনে দোকানিও বুঝে গেল, আরে এ তো প্রেম, আহা!

 

২০০৩ সাল। ২০ বছর পেরিয়েছে। ফরেস্ট একদিন রোজকে নিয়ে গেলেন ক্যাপিস্ট্রোনো সমুদ্র সৈকতে। ৯০ বছরের তরুণ ফরেস্ট ৮৩ বছরের তরুণী রোজকে বললেন, ‘হে সুন্দরী, আমাকে বিয়ে করবেন?’ রোজ হেসেই খুন। বুড়ো বলে কি! রোজ দুষ্টুমি করে বলল, ‘আপনার বয়স যেদিন ১০০ বছর হবে সেদিন বিয়ে করব।’ ফরেস্ট কিন্তু দমল না। বলল, ‘মহারানীর যা ইচ্ছা।’

তারপর কী হলো জানেন? ফরেস্টের ১০০তম জন্মদিনে স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার আলোকসজ্জায় সাজানো হলো। গোটা এলাকার মানুষ উপচে পড়ল সেখানে। হ্যাঁ, ১০০ বছরের ফরেস্টের সঙ্গে ৯৩ বছরের রোজের বিয়েটা মহা ধুমধামে হয়েই গেল। তারা কেক কাটলেন, নাচলেন। সমুদ্র তীরে হানিমুনে গেলেন সবার ভালোবাসা সিক্ত হয়ে। পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক দম্পতি হয়ে তারা বিশ্ববাসীর নজর কাড়লেন ভালোবাসার বদান্যতায়। তখনকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাও তাদের শুভেচ্ছা জানাতে ভুল করেননি। তো যা বলছিলাম, ভালোবাসা কী— এবার বোঝা গেল?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর