শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধারাবাহিক উপন্যাস

অটোমান সূর্য সুলতালন সুলেমান পর্ব ৩৩

রণক ইকরাম

অটোমান সূর্য সুলতালন সুলেমান পর্ব ৩৩

মুসলিম শাসকদের মধ্যে যেমন শীর্ষে, তেমনি পৃথিবীর ইতিহাসেও অন্যতম সেরা শাসক তিনি। সুলতান সুলেমান খান। অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান। সুলতান সুলেমানকে নিয়ে অনেক গল্প লেখা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে আলোচিত-সমালোচিত টিভি সিরিয়াল মুহতাশিম ইউজিয়েল। আমাদের এ উপন্যাসের ভিত্তি সেই টিভি সিরিজ বা উপন্যাস নয়। মূলত ইতিহাসের নানা বইপত্র ঘেঁটে সুলতান সুলেমানের আমলটি তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিহাসাশ্রয়ী এ উপন্যাসের মূল ভিত্তি অটোমানদের ইতিহাস। বাকিটুকু লেখকের কল্পনা। উপন্যাসের শুরুর দিকে যুবরাজ সুলেমানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন পাঠক। সিংহাসনে তখন সুলেমানের বাবা সুলতান প্রথম সেলিম। সুলতান সেলিমের সর্বশেষ বিজয়, অসুস্থতা ইত্যাদি পথপরিক্রমায় অটোমান সুলতান হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন সুলেমান খান। এর মধ্যেই হেরেম সংস্কৃতি, প্রাসাদ, প্রশাসনসহ নানা দিক উঠে এসেছে। সুলেমান খানের ক্ষমতা গ্রহণের পর নতুন সূর্যোদয়ের দিকে হাঁটতে শুরু করে অটোমান সাম্রাজ্য। সে যাত্রায় পীরে মেহমুদ পাশাকে সপদে বহাল রেখে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন সুলতান। সবার প্রত্যাশার বাইরে পারগালি ইব্রাহিমকে বানিয়েছেন নিজের খাসকামরা প্রধান। সুলেমান রোডস অভিযানে সাফল্যের পর ফিরে এসেছেন। হুররেম খাতুন সন্তানসম্ভবা। পদ হারাতে চলেছেন পীরে পাশা।  রকমারির প্রতি শনিবারের এ বিশেষ আয়োজনে আজ ছাপা হলো ৩৩তম পর্ব।

 

[পূর্ব প্রকাশের পর]

মুস্তফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন মাহীদেভরান। এরপর পুত্রের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘তুমি এখন যাও মুস্তফা। আমি তোমার বাবার সঙ্গে একটু কথা বলব।’

‘জি আচ্ছা।’

বলেই কুর্নিশ করে সেখান থেকে চলে গেল মুস্তফা।

‘জাঁহাপনা, বেয়াদবি মাফ করবেন। আপনার উচিত একটু বেশি করে মুস্তফার খোঁজ রাখা।’

‘তুমি অযথাই চিন্তা করো মাহীদেভরান। মুস্তফা এখন আর সেই ছোট্টটি নেই। ও এখন বড় হয়েছে।’

‘না সুলতান। ও এখনো ছোটই। ওর বাবা হিসেবে আপনি ওকে আরেকটু সময় দিতে পারেন। হাজার পণ্ডিত হাজার শিক্ষকের কাছ থেকেও সে যেটা শিখতে পারবে না, আপনার কাছ থেকে অল্পতেই সেটা শিখে নিতে পারে। আপনি তাকে আরেকটু সময় দিলে সে আরও বেশি যোগ্য হয়ে উঠবে জাঁহাপনা।’

মাহীদেভরানের এ কথাটা অযৌক্তিক লাগল না সুলেমানের। সে নিজে পিতৃস্নেহ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হয়েছে। ভালোবাসার বদলে বাবা সেলিম খানকে কেবল ভয়ই পেয়েছে। মুস্তফার ক্ষেত্রে এটা যত কম হবে ততই ভালো। এরপরও স্ত্রীর কথার মৃদু প্রতিবাদ করলেন সুলেমান।

‘ঠিক আছে। আমি আরেকটু সময় দেব ওকে। কিন্তু মাহীদেভরান, তুমি বোধ হয় ওকে একটু বেশি বেশিই চোখে চোখে রাখছে।’

‘আমি আর কী করব জাঁহাপনা? মুস্তফা ছাড়া আমার আর কে আছে? কী আছে? কী নিয়ে ব্যস্ত থাকব আমি?’

মাহীদেভরানের প্রবল দীর্ঘশ্বাস। ক্রমশ ভিতরে ঢুকতে থাকা চোখ দুটো ছলছল করছে। যেন সেখানে হাজার হাজার অব্যক্ত ব্যথা। সেদিকে সুলতানের খেয়াল নেই।

‘তাই বলে তুমি মুস্তফার শৈশবের আনন্দ মাটি করতে পার না। আর তা ছাড়া কদিন পরেই ওর ঘাড়ে দায়িত্বের বোঝা চাপবে।’

‘আমি খুব চিন্তায় আছি সুলতান। প্রায় প্রতিদিনই সে নতুন নতুন আঘাত নিয়ে ঘরে ফেরে। গত সপ্তাহে সে ঘোড়ার থেকে পড়ে গিয়েছিল। একটার পর একটা অঘটন ঘটিয়ে চলেছে। ওর যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে আমার কী হবে? আমার তো আর সন্তান নেই জাঁহাপনা। মুস্তাফাই আমার সব। ওর কিছু হয়ে গেলে আমিই হয়তো আর বাঁচতে পারব না।’

‘একজন শাহজাদার জীবনে এসব নিত্য-নৈমত্তিক ব্যাপার। একজন সুলতানকে একজন ভালো রাষ্ট্রপরিচালক হওয়ার পাশাপাশি একজন ভালো যোদ্ধাও হতে হয়। মুস্তাফা এখন যে আঘাতগুলো পাচ্ছে এগুলোই তাকে শক্ত করে গড়ে তুলবে। এসব নিয়ে আলাদা করে ভাবার কোনো অবকাশ নেই।’ ‘মুস্তফার ক্ষেত্রে না হয় এসব সত্য আর আমার ক্ষেত্রে? আমি কেন বারবার বঞ্চিত হই সুলতান?’

মাহীদেভরানের দুচোখে রাজ্যের শূন্যতা। কিন্তু সুলেমানকে বিরক্ত মনে হলো।

সে বিরক্তি লুকিয়ে সুলতান বললেন, ‘এসব নিয়ে কথা বলার সময় এটা নয়। আমি অটোমান সুলতান। ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। তোমার এই অবস্থার জন্য তুমিই দায়ী। আর কেউ নয়।’

‘তাহলে ঐ লালচুলো মেয়েটা? ওই রুশ মেয়েটাই সব কিছুর জন্য দায়ী। জাঁহাপনা আপনি বুঝতে পারছেন না ও এই হারেমের ওপর ওর একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এমনকি আপনার উপরও।’

মাহীদেভরানের স্পষ্ট ইঙ্গিত এমন যে, হুররেম ভবিষ্যৎ সুলতানের মা হতে চায়।

‘কেন? হারেমের ওপর আধিপত্য তুমি চাও না?’

‘না। আমি কেবল আপনার সেবা করতে চাই। আপনার পাশে থাকতে চাই।’

‘তাহলে শুধু চুপ থাকো। সব বিষয়ে নাক গলাতে এসো না।’

আর কিছু না বলে সেখান থেকে হেঁটে চলে গেলেন সুলতান। মাহীদেভরান আরেকবার ভগ্ন হৃদয়ে সে পথের দিকে তাকিয়ে আছেন।

 

মুস্তফা খেতে বসেছে। প্রতিদিন এ সময়টাতে অন্য সব খাবারের সঙ্গে স্যুপ খায় সে। আজ অনেক ক্ষুধা লেগেছে মুস্তফার। মনে হচ্ছে সব খেয়ে ফেলতে পারবে। সামনেই প্রিয় স্যুপের বাটি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আজ সেদিকে খুব একটা আকর্ষণ অনুভব করছে না। বরং অন্য খাবারের দিকেই ঝুঁকল সে। মসলা দিয়ে রান্না করা ছোট ছোট কাটা মাংস, খিচুড়ি জাতীয় এক খাবার খুব আরাম করে খেল সে। খাওয়া শেষে গোলাপ জলে হাত ধুলো। হঠাৎ মনে হলো স্যুপটা একটু চেখে দেখা দরকার। দু চামচ খেয়েই আবার চামচটা রেখে দিল। ভালো লাগছে না। পেট একেবারে ভরা। এখন আর কিছু খাওয়া সম্ভব না।

খাওয়া শেষ করার পর কিছুক্ষণ হাঁটতে হয়। এতে নাকি খাবার সহজে হজম হয়। মুস্তফা তাই অন্দরে হাঁটছিলেন একা একাই। আর ভাবছিলেন তার বাবার ঐশ্বর্য মায়ের বেদনা। সেই সঙ্গে হুররেমের কথাও মনে এলো। এই মহিলাকে সবচেয়ে রহস্যময় মনে হয় মুস্তফার। যদিও ওর মা মাহীদেভরান বারবার বলেছেন ওই ডাইনিটার কাছে না ঘেঁষতে, এরপরও মুস্তফা সুযোগ পেলেই হুররেম খাতুনের কাছে যায়। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে নয়। এমনি এমনি। কারণ একজন মানুষকে বুঝতে হলে তাকে কাছ থেকে দেখতে হয়। জানতে হয়। নতুবা স্পষ্ট ধারণা করা প্রায় অসম্ভব। এরপরও মুস্তফার ধারণাটা পরিষ্কার নয়। তবে এটা নিশ্চিত যে এই মহিলা খুব ভালো অভিনয় জানেন। আবার সে মুস্তফার ভালো চায় না এটাও অনুভব করা যায়। কিন্তু সেটা আড়াল করার জন্য সব সময় ভণিতা করেন।

আপন মনেই হাসলো মুস্তফা। নিজের ঘরের সামনেই হাঁটছিল শাহজাদা। হঠাৎ করেই পেটের পীড়া অনুভব করল। তুমুল জ্বালাপোড়া। পেটের মধ্যে হাত রেখে নুইয়ে পড়লেন শাহজাদা। আশপাশে কাউকে খুঁজে পেলেন না। ব্যথায় কাতরাতে লাগলেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তীব্র চিৎকার দিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন শাহজাদা। জ্ঞান হারিয়েছেন তিনি।

চারদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল। হেকিম মালিদ আগা স্পষ্ট জানিয়েছেন শাহজাদার খাবারে বিষ ছিল। তবে এখন শাহজাদা শঙ্কামুক্ত। একটু পর পর শাহজাদাকে সিরাপ খাওয়ানো হচ্ছে। এর আগে চার-পাঁচ দফা বমি করানো হয়েছে মুস্তফাকে। মালিদ আগা নিজে বসে থেকে সুলতানের সেবা করছেন।

খবর পেয়ে মাহীদেভরান, সুলতান সুলেমানসহ অন্য সবাই ছুটে এসেছেন।

সুলতানের হুঙ্কারে কেঁপে উঠল গোটা প্রাসাদ। খাবারের সঙ্গে জড়িতদের ডাক পড়ল। তিনজনের প্রাণদণ্ডের নির্দেশ হলো। এর পেছনের ঘটনা খুঁজে বের করারও নির্দেশ দিলেন সুলতান। জানিয়ে দিলেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি একদম বরদাশত করবেন না তিনি।

মাহীদেভরান মুস্তফার পাশে বসে নীরবে কাঁদছেন। সেদিক তাকিয়ে আরেকবার বিরক্ত হলেন সুলতান। আজকাল কেন যেন মাহীদেভরানকে দেখলেই মেজাজ খারাপ হয় সুলতানের।

‘মাহীদেভরান এভাবে কাঁদছ কেন?’

‘কী করব সুলতান? শাহাজাদা মুস্তফা ছাড়া আমার আর কী আছে? সেই শাহাজাদাকেই আমার কাছ থেকে সরিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আর আপনি বলছেন আমি কাঁদব না! কী বলছেন সুলতান?’

‘না তুমি কাঁদবে না। এটা কান্নার সময় নয়। তা ছাড়া হেকিম বলেছেন, শাহজাদা এখন আশঙ্কামুক্ত। সে সুস্থ। এখন কেমন লাগছে বাবা?’

মুস্তফার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন সুলতান।

‘ভালো।’

বলে মাথা নাড়লেন ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব শাহজাদা। সে বুঝতেই পারছে না তার সঙ্গে এসব কী ঘটছে।

‘এই তো আমার বীর ব্যাটা। এসব কিছু নয়। একজন সুলতানকে এর চেয়ে বড় বড় ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়। আগামীতে সবকিছুতে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বুঝতে পেরেছ?’

আরেকবার মাথা নাড়ে মুস্তফা। এখনো শরীরে ভীষণ জড়তা অনুভব করছে। খুব দুর্বল দুর্বল লাগছে নিজেকে। এমনকি চোখ মেলে রাখতেও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বাবার সামনে চোখ বন্ধ করে রাখতে ইচ্ছে করছে না।

মাহীদেভরানের খুব ইচ্ছে করছে সুলতানকে কটা কথা শুনিয়ে দেওয়ার। সব ষড়যন্ত্র যে ওই রুশ ডাইনিটার এটাও বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সুলতানের মেজাজ দেখে আর কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না। তা ছাড়া এখানে শাহজাদা আছেন। হেকিম আছেন। রক্ষীরাও আছেন। এদের সামনে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলা একদমই অনুচিত।

পুত্রের সামনে এগিয়ে গিয়ে ছোট্ট করে কপালে একটা চুমু খেলেন সুলতান সুলেমান। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেন। এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লেন। বের হওয়ার সময় হেকিমকে বললেন, শাহাজাদার চিকিৎসায় যেন কোনো ত্রুটি না হয়।

 

নিজে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও নাতি মুস্তফাকে দেখতে ছুটে এসেছেন আয়েশা। শাশুড়িকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন মাহীদেভরান।

‘সুলতানা আমি কী অন্যায় করেছি বলুন। কেন বারবার আমার সঙ্গেই এসব হচ্ছে?’

‘কেঁদো না মাহীদেভরান। এটা হতেই পারে মনটাকে শক্ত করো।’

মাহীদেভরানকে আরও কিছু বোঝালেন আয়েশা। ঘরের অন্যদের বের করে দিয়ে একান্তে কিছু বলতে চাইলেন মাহীদেভরান। আয়েশার ইশারায় রক্ষী, হাকিম আর বৃদ্ধ মনজিলা খাতুন সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।

‘কী বলতে চাও মাহীদেভরান?’

‘সুলতানা। আপনি কী জানেন এসব কার ষড়যন্ত্র?’

‘কার ষড়যন্ত্র? তুমি কিভাবে জান?’

‘আমি জানি। আমি ভালো করেই জানি এসব ওই রুশ ডাইনিটার ষড়যন্ত্র। ও এই হারেমের একচ্ছত্র অধিপতি হতে চায়। ও কিছুতেই চায় না আমার মুস্তফা সুলতান হওয়ার দিকে এগিয়ে যাক। ও নিজে সুলতানের মা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। এ কারণেই সে আমার শাহজাদাকে মেরে ফেলতে চাইছে।’

‘কিন্তু মাহীদেভরান এটা তোমার ধারণা। ধারণা নিয়ে এরকম কোনো অভিযোগ আনা একদমই ঠিক নয়। আর তা ছাড়া তুমি যাকে অভিযুক্ত করছ সে নিজেও কিন্তু সুলতানের স্ত্রী। তোমার উচিত আরও সতর্ক হওয়া। সেই সঙ্গে এ ধরনের কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখা।’

‘কিন্তু সুলতানা এসব কথা আমি আরও আগেই আপনাকে জানিয়েছিলাম। আপনাকে বলেছিলাম, হুররেম খাতুন শাহজাদাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবে। কী আপনাকে বলিনি আমি?’

‘হ্যাঁ

বলেছো।

কিন্তু সেটাও তোমার

ধারণা থেকেই

 বলেছো। তোমার কাছে কিন্তু প্রমাণ নেই।’

‘কিন্তু সুলতানা হুররেম খাতুনকে কোনো শাস্তি না দলে শাহজাদার ওপর আবার আঘাত আসতে পারে। আমি নিশ্চিত সে আবার মুস্তফাকে হত্যার চেষ্টা করবে। তাই যেভাবেই হোক ওকে আটকাতে হবে।’

এবার কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেন সুলতানা। তারপর বললেন,

‘মাহীদেভরান। মাথা ঠাণ্ডা করো। বোঝার চেষ্টা করো আমি নিজেও কোনো ঝামেলা চাই না। আবার আমি নিজে চাই, শাহজাদা মুস্তফাই আগামীর সুলতান হিসেবে সিংহাসনে আসুক। কিন্তু এসবের সঙ্গে হুররেম খাতুনকে আটকানোর বিষয়টি একদমই যায় না।’

‘কিন্তু কেন সুলতানা?’

‘কারণ সুলতান।’

‘কিন্তু আপনি তো সুলতানের মা। এই সম্রাজ্যের সমান ক্ষমতাশালী একজন।’

‘সেটা ঠিক। কিন্তু কাগজে কলমে।’

‘তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনি অক্ষম। সুলতান আপনার অবাধ্য?’

এই প্রথম শাশুড়ির সঙ্গে এভাবে কথা বলছেন মাহীদেভরান।

‘না সেটা বলছি না। তবে হুররেম খাতুন সম্পর্কে যতবার বলতে গেছি, ততবারই ধাক্কা খেয়েছি। সুলতান ওর বিষয়ে কোনো সমালোচনা সহজভাবে নিতে পারে না।’

‘তাহলে উপায়?’

‘হুররেমের মতো কৌশলী হতে হবে।’

‘সেটা কী?’

‘আমি তোমাকে পরে বুঝিয়ে দেব। তবে সবার আগে তুমি সুলতানের কাছাকাছি ফিরে আসার চেষ্টা কর।’

‘কিন্তু সুলতান তো আমাকে সময়ই দিতে চান না।’

‘সেই সময়, সমীহ আদায় করতে না পারলে তোমার ব্যর্থতা কাটানো যাবে না।’

‘আমি চেষ্টা করব।’

‘সফল হতেই হবে। তোমার জন্য। শাহাজাদার জন্য। এই অটোমান সাম্রাজ্যের জন্য সফল তোমাকে হতেই হবে।’

‘ইনশাআল্লাহ।’

দুজনেরই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল।

 

[পরবর্তী পর্ব আগামী শনিবার]

সর্বশেষ খবর