শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

কী আছে পেন্টাগনে ?

তানভীর আহমেদ

কী আছে পেন্টাগনে ?

যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রতিরক্ষাবিষয়ক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু পেন্টাগন। এটি বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত ও গোপনীয় স্থান

পেন্টাগন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর। বলা হয়, এখান থেকেই পুরো বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব সন্ত্রাসীবিরোধী যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, সেসবের মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এই পেন্টাগন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জেনিয়া অঙ্গরাজ্যের আর্লিংটনে (৪৮ এন রোটারি  রোড, আর্লিংটন, ভার্জেনিয়ায় অবস্থিত। এর চিঠি লেখার ঠিকানা ওয়াশিংটন, ডিসি ২০৩০১। পেন্টাগনের গঠন পঞ্চভুজাকৃতির বলে এমন নাম রাখা হয়েছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অফিস ভবন। পেন্টাগনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ সালে। শেষ হয় ১৫ জানুয়ারি, ১৯৪৩ সালে। এখানে মোট জমির পরিমাণ ৫৮৩ একর। ভবনটির উচ্চতা ২৪ মিটার। পেন্টাগনে রয়েছে মোট সিঁড়িপথ ১৩১টি, এস্কেলেটর ১৯টি, এলিভেটর ১৩টি, বিশ্রাম কক্ষ ২৮৪টি এবং জানালা রয়েছে ৭৭৫৪টি। পেন্টাগনে মধ্যবর্তী চত্বরে রয়েছে পাঁচ একর জমি। মধ্যবর্তী খোলা চত্বর অনানুষ্ঠানিকভাবে গ্রাউন্ড জিরো নামে পরিচিত। স্নায়ুযুদ্ধের সময় এই ডাকনাম সৃষ্টি হয়েছিল। তখন গ্রাউন্ড জিরো ছিল নিউক্লিয়ার মিসাইলের নিশানা। এখনো এই চত্বরের গ্রাউন্ড জিরো ক্যাফে নামে একটি স্নাক্স বার আছে। স্থাপনা হিসেবে পেন্টাগনের যতটা গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব এখানে উপস্থিত কর্তাব্যক্তিদের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ প্রায় সব নেতৃত্বস্থানীয় কর্তাব্যক্তির অফিস এটি। পেন্টাগনের গুরুত্বপূর্ণ অফিসকক্ষে অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউ যেতে পারেন না। পেন্টাগনে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ বললেই চলে। এর ভিতরে ছবি তোলা ও ভিডিও করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কেউ যদি ছবি বা ভিডিও করতে চায় তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়। পেন্টাগনের ভিতরের ছবি তাই অনেকেই দেখতে পারেন না। শুধু সেমিনার হল এবং বিভিন্ন প্রেসের কর্মকাণ্ডের জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকেই এর কাজ চালানো হয়।

 

গোপনীয়তা কাকে বলে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নিরাপত্তা কার্যালয়টি রয়েছে পেন্টাগনে। যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রতিরক্ষাবিষয়ক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ধরা হয় পেন্টাগনকে। এখান থেকেই প্রতিরক্ষা বিষয়ক বাহিনীগুলোর সমন্বয় এবং বিভিন্ন গোপন সংস্থার কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এগুলো গোপনীয় বিষয় ও সিদ্ধান্ত। পেন্টাগন নিয়ে যা বলা হয়, তার বেশির ভাগই শুধু মানুষের ধারণা। পেন্টাগনের এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো সম্বন্ধে বাইরের পৃথিবীকে মোটেও জানানো হয় না। ন্যাশনাল সিকিউরিটি এবং ইউএস আর্মড ফোর্স সরাসরি এ পেন্টাগন থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। পেন্টাগনের ভিতরেই প্রধান প্রতিরক্ষা কার্যালয় থাকায় এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণের অকল্পনীয়। পেন্টাগনে অসংখ্য অফিস রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। রয়েছে সৈনিক, নাবিক, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীতে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তা। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর পাশাপাশি মেরিন রিজার্ভ হিসেবেও রয়েছে অনেকে। এদের সবার অফিস এই পেন্টাগনে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা আরও কিছু গোপন সংস্থা অফিসও রয়েছে পেন্টাগনে। এদের মধ্যে ডিফেন্স ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি, ডিফেন্স অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি, ডিফেন্স লজিস্ট্রিক এজেন্সি, মিসাইল ডিফেন্স এজেন্সি, পেন্টাগন ফোর্স প্রোটেকশন এজেন্সি ছাড়াও আরও অনেক সংস্থা রয়েছে।

গোপন সুড়ঙ্গ!

পেন্টাগনের নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে কাউকে চমকে দেবে। কিছু কিছু ধারণা অবিশ্বাস্যও বটে। অনেকেই দাবি করেন, আপদকালীন পেন্টাগন থেকে শহরের অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য মাটির নিচে সুড়ঙ্গ রয়েছে। সেই সুড়ঙ্গের নকশাও তুলে এনেছেন কেউ কেউ। এসব সুড়ঙ্গ দিয়ে আমেরিকার মূল শহরের যে কোনো জায়গায় চলে যাওয়া যায় সহজেই। কিন্তু এই সড়কগুলো শুধু পেন্টাগনের নিজস্ব গোপন বিষয়। এসব সড়কে সাধারণ মানুষ চলাচল করা দূরে থাক ঠিকানা পর্যন্ত জানে না অনেকে। পেন্টাগন থেকে বের হওয়ার জন্য টানেলগুলোর শুরুর দরজা চেনার উপায় নেই। কিছু কিছু টানেলের দরজা রয়েছে নেতৃত্বস্থানীয় কর্তাদের টেবিলের নিচ দিয়ে কিছু টানেলের দরজা রয়েছে দেয়ালের পেছনে লুকানো। এসব তথ্য পুরোপুরি ঠিক জানে না কেউ। তবে হোয়াইট হাউসের টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি মানচিত্র থেকে জানা যায়, পেন্টাগনের সঙ্গে কীভাবে যোগ আছে পুরো শহর। ইচ্ছে করলেই যে কেউ পেন্টাগন থেকে সিআইএর সদর দফতর, হোয়াইট হাউস, এফবিআই সদর দফতর, নাসার সদর দফতরে যাওয়া সম্ভব। এসব গোপন সুড়ঙ্গ শুধু আপদকালীন সময়েই ব্যবহার করা হয়। এই গোপন সুড়ঙ্গগুলো সব সময়ই আইনশৃঙ্খলা কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব।

 

বিতর্কিত ব্ল্যাক বাজেট

পেন্টাগনের ব্ল্যাক বাজেট নিয়ে বহু সমালোচনা রয়েছে। এ নিয়ে ঠিক কোনো তথ্য কারও কাছেই নেই। বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্লেষকরা পেন্টাগনের ব্ল্যাক বাজেট নিয়ে তাদের ধারণা প্রকাশ করেছেন। এসবের ভিত্তি না থাকলেও মানুষের কৌতূহল থেমে নেই। কেউ কেউ বলেন, পেন্টাগনের ব্ল্যাক বাজেটের পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়ে অনেক বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশই খরচ হয় আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ও বিভিন্ন গোপন মিশনের জন্য। আমেরিকার অর্থনীতির সিংহ ভাগ গোপনে খরচ করার জন্য ব্ল্যাক বাজেট সবচেয়ে বড় খাত। বাজেটের আরেকটি অংশ ব্যয় হয় গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য। এই কার্যক্রম আমেরিকার ভিতরেই নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও কাজে লাগানো হয়। এ ছাড়া আরও কিছু খাতে এই বড় অঙ্কের বাজেট কাজে লাগে। বিভিন্ন স্পেশাল অভিযানের জন্য রাখা হয় বাজেটের একটি অংশ। সুপার সিক্রেট ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি নামে একটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয় এই বাজেট দিয়েই। নাসাকে দিয়ে পরিচালিত মানুষের অজানা বিভিন্ন উপগ্রহ তৈরি উেক্ষপণের কাজেও ব্ল্যাক বাজেট রয়েছে বলে অনেক ধারণা পোষণ করেন।

 

পেন্টাগনে হামলা

নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার পর ৯/১১ হামলায় আক্রান্ত হয়েছিল টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগন। আমেরিকান এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট ৭৭ সরাসরি আঘাত করে পেন্টাগনে। এ বিমানটিতে ছিল পাঁচজন ছিনতাইকারী।

সকাল ৯:৩৭ মিনিটে পেন্টাগনে বিমানটি আঘাত করার পরপরই আগুন লেগে যায়। ভিডিও ফুটেজে এই দৃশ্য থেকে হতবাক হয়ে পড়ে বিশ্ববাসী। ভবনের দক্ষিণ দিকে আঘাত করার পরপরই সেখানে ছুটে যায় অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা।

তবে কিছুক্ষণের মধেই পেন্টাগনের একাংশ ধসে পড়ে। পেন্টাগনের ইতিহাসে এটি ছিল অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। বর্তমানে পেন্টাগনে হামলায় নিহতের স্মরণে সেখানে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ‘পেন্টাগন মেমোরিয়াল’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর