রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

জিরো থেকে হিরো

আবদুল কাদের

জিরো থেকে হিরো

বিখ্যাত সফল ব্যক্তিরা তাদের জীবনের শুরুতে অনেক কষ্ট করেছেন। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন। অনেকে সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন এক সময়। কিন্তু কঠিন পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ে তারা পরবর্তীতে সাফল্যের শিখরে পৌঁছান। এক একজন হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণীয় তারকা। জয় করে নেন গোটা বিশ্ব। তাদের সেই কষ্ট, পরিশ্রম আর অর্জনের গল্পগুলো আমাদের উৎসাহ জাগায়। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়...

 

 

♦ আলবার্ট আইনস্টাইন

►► পড়াশোনায় ছিলেন মারাত্মক দুর্বল। আত্মভোলা, হেঁয়ালিপনা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। কোনো কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসতেন। অহেতুক কথা বলায় ছিলেন পটু। ফেল করেছেন বারবার। পরবর্তীতে পৃথিবীকে অবাক করেন থিওরি অব রিলেটিভিটি দিয়ে। সবশেষে নোবেলও জেতেন।

 

বিখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্ব ও ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্রের আবিষ্কারক আলবার্ট আইনস্টাইন। জার্মানির ছোট্ট শহরে এই জগত্খ্যাত মানুষটির জন্ম। ছেলেবেলায় তিনি ছিলেন প্রচুর হেঁয়ালি। ইঞ্জিনিয়ার পিতা কখনো ভাবেননি আইনস্টাইন হবেন বিখ্যাত ব্যক্তি। গত্বাঁধা পড়াশোনার নিয়ম তার একদমই ভালো লাগত না। মায়ের আদেশে স্কুলে গেলেও পড়াশোনায় ছিলেন মারাত্মক দুর্বল। কোনো কিছুই মনে রাখতে পারতেন না তিনি। ক্লাসের শেষ বেঞ্চটি ছিল তার ঠিকানা। অহেতুক কথা বলায় ছিলেন পটু। ফেল করেছেন বারবার। শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রায়ই অভিযোগ আসত তিনি পড়াশোনায় অমনোযোগী, আনমনা। ক্লাসে কেউ তার সঙ্গী ছিল না। মায়ের কাছ থেকেই জগত্খ্যাত শিল্পীদের সুর শুনতেন। বেহালায় সেই সুর তুলতেন। বলতে গেলে বেহালাই ছিল তার সারা জীবনের সঙ্গী। আইনস্টাইন শুরু থেকেই দর্শনের বই পাগল ছিলেন। ১৫ বছর বয়সেই নিউটনের বিখ্যাত রচনা শেষ করে ফেলেন। পাশাপাশি পড়তেন বিখ্যাত গ্যেটে, শিলার, শেকসপিয়র। পিতার ব্যবসায় মন্দার কারণে চাকরি শুরু করেন। এক অফিসে ক্লার্কের চাকরি নিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে খাতায় সমাধান করতেন অঙ্কের জটিল সব তত্ত্ব। স্বপ্ন দেখতেন প্রকৃতির রহস্য ভেদের। আইনস্টাইনের ছিল না কোনো ল্যাবরেটরি, ছিল না যন্ত্রপাতি। তবুও নিজ চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে গবেষণা চালিয়ে যান। এক সময় গবেষণায় বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে পেলেন নোবেল পুরস্কার। আত্মভোলা ছেলেটিই হন বিখ্যাত।

 

♦ টমাস আলভা এডিসন

►► তিনি ছিলেন ক্লাসের সবচেয়ে দুর্বল ছাত্র। এ জন্য অবশ্য স্কুল থেকে বহিষ্কৃতও হন। আবার এই বহিষ্কৃৃত ছেলেটিই মাত্র ১১ বছর বয়সে জ্ঞান-বিজ্ঞানে পণ্ডিত হয়ে ওঠেন। গোটা পৃথিবী আলোকিত করেন তার বিখ্যাত আবিষ্কারে।

 

বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। বিজ্ঞানের যুগে যিনি বিজ্ঞান বিপ্লবের সরদার। বৈদ্যুতিক বাতি, কিন্টোগ্রাফ ও ফোনোগ্রাফ আবিষ্কারক। বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন পরিশ্রমী। পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা থাকায় এডিসনের ছেলেবেলা ছিল আনন্দের। স্কুলের গত্বাঁধা পড়াশোনা ভালো লাগত না। পড়াশোনায় অমনোযোগী আর শিক্ষকের বকাঝকায় দিন কাটত তার। একদিন এক শিক্ষককে পেছন হতে ‘বোকা’ বলেন। ফলাফল তিন মাসেই স্কুলজীবনের সমাপ্তি। এরপর থেকে মা-ই ছিলেন তার শিক্ষক। মাত্র ১১ বছর বয়সেই জ্ঞানে-বিজ্ঞানে পণ্ডিত হয়ে ওঠেন। প্রচুর বই পড়ে ফেলেন এই বয়সে। সে থেকেই পড়াশোনাকে কাজে লাগানো শুরু। পরিবারের অনুমতিতে পত্রিকার হকার, স্টেশনে সিগন্যাল দেওয়ার কাজ করেন। কিছুদিন পর টেলিগ্রাফি রপ্ত করেন। নানা উদ্ভাবন আর আবিষ্কারে ডুবে থাকতেন তিনি। দিনে সামান্য ঘুমিয়ে সারা রাত গবেষণায় মেতে থাকতেন। কাজের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যন্ত্র তৈরি করেন। গোটা পৃথিবী আলোকিত করেন তার বিখ্যাত আবিষ্কারে।

 

♦ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

►► প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি। শব্দগুলো লিখতেন উল্টো করে। পড়ালেখায় ছিলেন শূন্যের কোঠায়। বেশিরভাগ সময়ই ঘরের বাইরে কাটাতেন। উড়োজাহাজ আবিষ্কারের ৪০০ বছর আগে উড়োজাহাজের মডেল এঁকেছিলেন এই কিংবদন্তি।

 

রং-তুলির কারিগর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। রহস্যেঘেরা ছবি মোনালিসার জনক। বিখ্যাত এই মানুষটির পিতৃপরিচয় নেই। ধারণা করা হয় তিনি মেসার পিয়েরো ফরুওসিনো ডি আন্তোনিও দ্য ভিঞ্চি এবং স্থানীয় দাসী ক্যাটরিনার অবৈধ সন্তান। বাবা ছিলেন বিত্তশালী আর মা ছিলেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা দাসী। জীবনের প্রথম ৫ বছর কাটান আনসিয়ানোর একটি ছোট্ট গ্রামে। ঘরোয়াভাবে লেখাপড়া করলেও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছিল না তার। শব্দগুলো লিখতেন উল্টো করে। প্রকৃতির প্রতি ভীষণ ভালো লাগা থেকেই ভিঞ্চি বেশিরভাগ সময়ই বাইরে কাটাতে পছন্দ করতেন। বাউণ্ডুলে প্রকৃতির ভিঞ্চি ১৪ বছর বয়সে ডেল ভেরোচ্চির শিক্ষানবিস হিসেবে ছবি আঁকা শুরু করেন। এখান থেকেই তার প্রতিভার প্রকাশ ঘটে। ভিঞ্চি ছিলেন রেনেসাঁ যুগের অত্যন্ত মেধাবী একজন। সে সময়ই তিনি উড়োজাহাজ অঙ্কন করেছিলেন। তার ৪০০ বছর পর উড়োজাহাজের আবিষ্কার ঘটে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ছিলেন একাধারে যন্ত্রবিদ, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, চিত্রশিল্পী, প্রযুক্তিবিদ, ভাস্কর্য স্থপতি ও শরীরবিদ্যাবিদ।

 

♦ নেলসন ম্যান্ডেলা

►► কয়েদি নম্বর ৪৬৬৬৪। ২৭ বছর জেলে থাকার পরও তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছেন। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিঘাতের স্বীকার হন। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জনপ্রিয় সফল রাষ্ট্রনায়ক।

 

একটা সময় ছিল সাদা-কালো চামড়ার মানুষের মধ্যে বিভেদ ছিল প্রকট। সে সময় পাল্টে দেন আফ্রিকার এক কৃষ্ণাঙ্গ। নেলসন ম্যান্ডেলা। সব কৃষ্ণাঙ্গকে একত্র করে অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেন। ১৯৫৬ সালে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকার জন্য তাকে ঘন ঘন কারাবরণ করতে হয়। তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাজীবনে তার কয়েদি নম্বর ৪৬৬৬৪। জীবনের ২৭ বছর কারাগারে রাজবন্দী হিসেবে ছিলেন। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ে পিছপা হননি। অবশেষে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হয়। কৃষ্ণাঙ্গরা ন্যায্য অধিকার পায়। আফ্রিকার জনপ্রিয় সফল রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠেন। ১৯৯৪ সালে কৃষ্ণাঙ্গদের নেলসন ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের অবসানে ভূমিকা রাখার জন্য ১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারও পান। নেলসন ম্যান্ডেলা জীবনে বেশিরভাগ সময়ই মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন। তিনি বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ।

 

♦ বিল গেটস

►► মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে সফল ড্রপ আউট। কিন্তু পরীক্ষায় ১৬০০ নম্বরে পেতেন ১৫৯০। কিন্তু ৩২ বছর পর একই ভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গেটসই হন প্রধান বক্তা।

 

লেকসাইড স্কুলে গ্র্যাজুয়েশন করে ভর্তি হন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেশিদিন টেকেননি। সে সময় গেটস স্যাট পরীক্ষায় ১৬০০ এর মধ্যে পান ১৫৯০। বাবা-মার ইচ্ছা ছিল ছেলে আইনজীবী হবে। কিন্তু পড়াশোনার চেয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের প্রতিই তার আগ্রহ ছিল বেশি। আইন নিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে তিনি সময় দিতেন কম্পিউটার প্রোগামিং-এ। এমনও অনেক দিন-রাত কেটেছে প্রোগ্রামিংয়ের কাজ নিয়ে। গেটসের প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করে স্কুল থেকেই তাকে প্রোগ্রামিং অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দেয়। কম্পিউটার সেকশনে বসেই গেটস তার প্রথম প্রোগ্রাম টিক-টেক-টয় তৈরি করেন। গেম খেলার জন্য প্রোগ্রামটি ব্যবহার করে তিনি সবাইকে চমকে দেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালের কিছু প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করে তাক লাগিয়ে দেন। প্রোগ্রামিং গবেষণায় তিনি এমনভাবে ডুবে থাকতেন যে, নাওয়া-খাওয়াও ভুলে যেতেন। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ড্রপ আউট। ড্রপ আউটের ৩২ বছর পর হার্ভার্ডের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা হন বিল গেটস।

 

♦ স্টিভ জবস

►► পরিচয় দেওয়ার মতো কোনো পিতৃপরিচয় ছিল না তার। ছিল না থাকার ঘর। বন্ধুদের রুমের মেঝেতে ঘুমোতেন। একটু ভালো খাবারের আশায় সাত মাইল হেঁটে যেতেন মন্দিরে। তিনি বিখ্যাত অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস।

 

টেক বিশ্বের তাক লাগিয়ে দেওয়া স্টিভ জবস বিখ্যাত অ্যাপল কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিস্কোয় জন্ম নেওয়া মানুষটির পিতৃপরিচয় দেওয়ার মতো কোনো পরিচয় ছিল না। পল ও ক্লারা জবস তাকে ছেলেবেলায় দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন। তার প্রকৃত বাবা-মা জোয়ান ক্যারোল ও আব্দুল্লাহ ফাতাহ জান্দালি। দত্তক বাবা-মা ব্যয়বহুল রিড কলেজে জবসকে পড়াশোনা করতে পাঠান। তবে সেখানে তার পড়াশোনায় মন বসত না। প্রথম সেমিস্টারেই ঝরে পড়েন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা হয়নি তার। অনেক কষ্ট আর ত্যাগের জীবন পার করেন তিনি। তার থাকার মতো কোনো ঘর ছিল না। বন্ধুদের ঘরের মেঝেতে থাকতেন। মানুষের ব্যবহূত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে পাঁচ সেন্ট আয় করে খাবার কিনতেন। একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য প্রতি রবিবার রাতে সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতেন। শত দারিদ্র্যের মাঝে থেকেও স্পেসশিপের মতো একটি ক্যাম্পাসের স্বপ্ন দেখতেন জবস। বর্তমানের বিখ্যাত অ্যাপেল কোম্পানিটি বাস্তব স্বপ্নের প্রতিফলন।

 

♦ ওয়াল্ট ডিজনি

►► তিনি বিখ্যাত কার্টুনিস্ট। তিনি মিকিমাউস, ডোনাল্ড ডাক এর জন্মদাতা। পড়াশোনায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হওয়ায় পড়াশোনার অর্জনটা একেবারেই শূন্য। সেই অমনোযোগী ছাত্রটি জীবনে ২২ টা একাডেমিক পুরস্কার জেতেন।

 

মানুষটি বিখ্যাত কার্টুনিস্ট। মিকিমাউস ও ডোনাল্ড ডাক-এর জনক। ডিজনিকে অনেকে না চিনলেও মিকি মাউসের কথা তো সবারই মনে আছে! বিখ্যাত এই কার্টুনিস্টের হাত ধরেই নির্মিত হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত বহু অ্যানিমেশন মুভি। তার নির্মিত অ্যানিমেটেড কার্টুন মুভিগুলো শিশুদের কল্পনার জগতে নিয়ে যেত। সেই ভাবনা থেকেই শিশুদের জন্য ডিজনিল্যান্ড তৈরি করেন। ওয়াল্ট ডিজনির ছেলেবেলা কাটে দরিদ্রতায়। খুব বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। ডিজনির বাবা ব্যবসা শুরু করার পর, যখন তার ১৬ বছর বয়স তখন স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু পড়াশোনায় মন বসাতে পারেননি তিনি। স্কুলে পড়াশোনার সময় স্কুলের ম্যাগাজিনের আর্ট এডিটরের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেই থেকে কার্টুনের চর্চা। ১৯২৮ সালে প্রথম মিকিমাউস আত্মপ্রকাশ করেছিল। প্রথম কার্টুনটির নাম ছিল ‘স্টিমবোট হুইল’। মিকিমাউসের ভূমিকায় কণ্ঠ দেন ওয়াল্ট। তিনি শুধু একজন কার্টুনিস্টই ছিলেন না, ছিলেন সফল শিল্পী, সফল চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার, কণ্ঠস্বরদানকারী।

 

♦ পাবলো পিকাসো

►► তিনি বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। রং-তুলির রসায়নে পারদর্শী হলেও  শব্দের খেলায় ছিলেন নির্বোধ। ৭ সংখ্যাকে বলতেন উল্টো নাক! স্প্যানিশ ভদ্রলোক একাধারে একজন কবি, লেখক, পেইন্টার, কেমিস্ট, স্টেজ ডিজাইনার ও ভাস্কর।

 

স্পেনে তখন গৃহযুদ্ধ  চলছিল। গোয়ের্নিকা শহরে জার্মান বাহিনী বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দেয়। চারদিকে তখন ধ্বংস আর ধ্বংস। ভয়াবহ সেই ধ্বংস ক্যানভাসে বন্দী করেন এক শিল্পী। নাম তার পাবলো পিকাসো। তার জীবনের শুরু সহজ ছিল না। ছেলেবেলা উত্তর স্পেনের আন্দালুসিয়ার মালাগায় কাটান। পুরো নাম পাবলো রুইজ পিকাসো। বাবাও ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী। পিকাসোর মুখের প্রথম শব্দই ছিল; ‘পিজ’। স্প্যানিশ শব্দটির অর্থ পেন্সিল। মাত্র ৮ বছর বয়সেই ক্লাসিক্যাল চিত্রাঙ্কন রপ্ত করে ফেলেন। তবে পিকাসো রং-তুলির রসায়নে পারদর্শী হলেও শব্দের খেলায় ছিলেন অজ্ঞ। ৭ সংখ্যাকে বলতেন উল্টো নাক! ছেলেবেলা স্পেনে কাটালেও কৈশোরে ফ্রান্সে পাড়ি জমান। নিছক শিল্পীসত্তা নয়, ভাস্কর্য নির্মাণ, স্টেজ তৈরি, পত্রিকা অলঙ্করণ ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন কবি। তার বিখ্যাত তিনটি কাল ‘দ্য রোজ পিরিয়ড’, ‘দ্য ব্লু পিরিয়ড’ এবং ‘দ্য কিউবিস্ট পিরিয়ড।’ তখন তার অঙ্কনে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখা যায়। পরিশ্রমী ও প্রত্যয়ীর জন্য হয়ে ওঠেন সর্বশ্রেষ্ঠ ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী।

 

♦ মাও সে তুং

►► বাবা ছিলেন মুদি দোকানদার। সে সুবাদে বাবার সঙ্গেই মুদি দোকানদারি করতেন। অভাবের তাড়নায় স্কুল শেষ করেই থেমে যেতে হয়েছিল। সেই ব্যক্তিই পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন চীনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিরাট বিপ্লবী নেতা।

 

নয়া চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুং। সীমাহীন দারিদ্র্যের মধ্যে থেকে বড় হয়েছেন এই বিপ্লবী নেতা। মাও-এর বাবা মাও জেন শেং ছিলেন গরিব মুদি দোকানি। ক্ষেত-খামারে ফসল ফলিয়ে তা বিক্রি করতেন। মাত্র ৭ বছর বয়সেই বাবার সঙ্গে কাজে লেগেছিলেন এই বিপ্লবী নেতা। অভাবের কারণে বাবার সঙ্গে মুদি দোকানদারি করতেন। মাও-এর বয়স যখন ১৩ বছর, তখন স্কুল শেষ করেই থেমে যেতে হয়েছিল। তবে, রাজনীতি, সমাজতন্ত্র ও দর্শন শাস্ত্রে তার কৃতিত্ব অনন্য। গরিব পরিবারে জন্ম নেওয়া মুদি দোকানির ছেলেটি কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফলে অর্জন করে নেন চীনের মানুষের ভালোবাসা। আধুনিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় তাকে। তিনি গেরিলা সংগঠক, চীনা বিপ্লবী, মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও অবিসংবাদিত রাজনৈতিক নেতা। ১৯৪৯ সালে মাও ক্ষমতায় এসে চীনকে সমাজতন্ত্রের আদর্শে গড়তে উদ্যোগী হন। মাও প্রথম জীবনে বিশ্বাস করতেন যে, দারিদ্র্য দূর করার জন্য পরিশ্রমের বিকল্প নেই। মাও-এর রাষ্ট্রনীতি চীনকে আমূল বদলে দেয়।

 

♦ ম্যাক্সিম গোর্কি

►► মাত্র ১১ বছর বয়সে এতিম হন। এক সময় ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। জীবনের প্রতি হতাশ হয়ে একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। বিখ্যাত ‘আমার বিদ্যালয়’ লেখার জন্য জগিবখ্যাত। আশ্চর্য বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাননি।

 

বিশ্বসাহিত্যের কৃতী পুরুষ ম্যাক্সিম গোর্কি। তিনি কঠোর বাস্তবতা ও সব প্রকার অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষকে বিদ্রোহী করে তোলার লক্ষ্যে নিজেকে প্রত্যক্ষভাবে লিপ্ত করার জন্য হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন। মাত্র ৪ বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়েছেন। এরপর নানা-নানির আশ্রয়ে চলে যান। পিতৃহীন ছেলেটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও বেশিদূর এগুতে পারেননি। ১১ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে পড়েন এই সাহিত্যিক। বাস্তব দুনিয়ার মুখোমুখি হওয়া শুরু এখান থেকেই। হাঁটতে থাকলেন পৃথিবীর পথে পথে। রুটির দোকানে, বিস্কিটের কারখানা, বাগানের মালী, স্টিমারের হেঁসেলে বয় বেয়াড়াগিরি, মাছের আড়ত এমনকী কামারশালা, জুতার দোকানেও কাজ করেছেন। এত কিছুর পরও তিনি থেমে যাননি। ১৬ বছর বয়সে কিছু বন্ধুবান্ধব, যাদের সংস্পর্শে স্বপ্রণোদিত শিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত হন। পড়েন অসংখ্য সাহিত্য ও রচনা। আভিজাত্যহীন প্রতিভাকে তুলে ধরেন বিশ্বের বুকে। দুনিয়ার দেশে দেশে গোর্কি সাহিত্য রসিকদের কাছে প্রাতঃস্মরণীয় নাম।

 

♦ সনাথ জয়সুরিয়া

►► বাবা ছিলেন একজন জেলে। অভাবের সংসারে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাছ ধরতেন। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। সেই জেলের ছেলেই হয়ে ওঠেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট সুপারস্টার। এক সময় ক্রিকেট বিশ্ব মাতান তিনি।

 

সনাথ তিরান জয়সুরিয়া, শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেট দলের সুপারস্টার। খ্যাতিমান তারকা হলেও তার ছেলেবেলা কেটেছিল গরিবি হালতে। শ্রীলঙ্কার মাতারায় একটি জেলে পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। বাবা দানস্তান সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দারিদ্র্যের টানাপড়েনে পরিবার এতটাই অসহায় ছিল যে, বাবা ছেলেকে নিয়ে মাছ ধরতে যেতেন। সেদিন কি কেউ ভেবেছিল যে সেই জেলের ছেলেই হবে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট সুপারস্টার! ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রখর। ৯ বছর বয়সে টেনিস বল হাতে নিয়ে মাঠে ছুটে যেতেন। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় সনাথ জয়সুরিয়া। সময়ের পরিক্রমায় তিনি এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। ক্রিকেটীয় জীবনে যেমন হ্যারিকেন ছিলেন ব্যক্তিজীবনেও ছিলেন দুরন্ত। জাতিসংঘের গুডউইল দূত হয়েছেন। ২০১০ সালে মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেন। পোস্টাল সার্ভিসের প্রতিমন্ত্রী হন। বর্তমানে তিনি শ্রীলঙ্কার জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক।

 

♦ জন মেজর

►►অভাবের তাড়নায় করেছিলেন কুলিগিরি। একদিন বাসের কন্ডাক্টরের কাজের জন্য গেলে তাকে বের করে দেওয়া হয়। অঙ্কে পারদর্শী ছিলেন বলে বাসের কন্ডাক্টর হতে পারেননি, পরবর্তীতে তিনিই হন ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী।

 

দুনিয়াজোড়া খ্যাতির শীর্ষে ছিল ব্রিটিশরা। সেই ব্রিটিশ রাজ্যের অধিপতি ছিলেন জন মেজর। বাবা ছিলেন সার্কাস দলের সামান্য কর্মী। দারিদ্র্য আর অভাবের তাড়নায় বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। অঙ্ক আর অর্থনীতিতে ছিলেন একেবারেই দুর্বল। অর্থাভাবে অষ্টম শ্রেণিতেই আটকে যায় তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছাড়েন তিনি। ১৯ বছর বয়সে বাবাকে হারান। শুরু হয় কর্মজীবন। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কেরানি দিয়ে চাকরি শুরু করেন। সেখানে সুবিধা করতে পারেননি। এভাবে একের পর এক চাকরি করেন। কোনোটিতেই সুবিধা করতে পারেননি। অভাবের তাড়নায় কুলিগিরি করেছেন। একদিন বাসের কন্ডাক্টরের কাজের জন্য গেলে, তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। অঙ্কে দুর্বল থাকায় তাকে কন্ডাক্টরের চাকরি দেওয়া হয়নি। অঙ্কে পারদর্শী নন বলে চাকরি হয়নি, কিন্তু সেই যুবকই পরবর্তীতে গ্রেট ব্রিটেনের অর্থনীতির হাল ধরেন। কে জানত! সেই যুবকটিই হবে ভবিষ্যতের ব্রিটিশ রাজ্যের রাষ্ট্রনেতা। পরবর্তীকালে তিনি হন গ্রেট ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী।

 

 

♦ ক্রিশ্চিয়ানা রোনালদো

►► জন্মের সময় তার বাবা-মা এতই গরিব ছিলেন যে, তার নাম রেজিস্ট্রি করাতেই দুদিন দেরি হয়। তখন কি কেউ জানত! সেই ছেলেটিই হবে বর্তমান বিশ্বের ফুটবল কিংবদন্তি! তিনি রোনালদো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং দানশীল খেলোয়াড়। দানশীলতার জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।

 

জন্ম পর্তুগালের মাদেইরোতে। জন্মের সময় বাবা-মা এতই গরিব ছিলেন যে, তার জন্মের পর নাম রেজিস্ট্রি করাতেই দুদিন সময় লেগে যায়। ছেঁড়া জামা-কাপড় পরে কেটেছে ছেলেবেলা। বাবা একটি ফুটবল দলে কাজ করতেন। সেই দল থেকেই তার ফুটবল খেলা শুরু। ছেলেবেলায় তার নাম ছিল ‘ক্রাই বয়’। তার পাস থেকে তার বন্ধুরা গোল দিতে ব্যর্থ হলে সে কেঁদে ফেলত। সেই ছেলেটিই আজ বিশ্বের সেরা ধনী ও দানশীল খেলোয়াড়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর