বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলা সন-পঞ্জিকা

বাংলা সন-পঞ্জিকা

সময়ের হিসাব রাখতেই বড় পরিসরে দরকার হয় পঞ্জিকার। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্ম, আচার ভেদে রয়েছে নিজস্ব পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার। বাংলা পঞ্জিকা পূর্বে জ্যোতির্বিদ্যার গ্রন্থ হিসেবে ব্যবহূত হতো। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অব্দের প্রচলন দেখা যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন অব্দের উদ্ভব হয়। যেমন— মল্লাব্দ, শকান্দ, লক্ষনাব্দ, পালাব্দ, নশরত, শাহী সন, চৈতন্যাব্দ ইত্যাদি লক্ষণীয় বিষয়, এসব অব্দ প্রচলনের পেছনে রাজ-রাজড়ার নাম জড়িত রয়েছে। বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বাঙালি জাতির নাম। এখন পঞ্জিকায় বর্ষফল, মাসফল, রাশিফল প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। বাংলায় পঞ্জিকা প্রকাশের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। ধারণা করা হয়, রঘুনন্দন প্রথম পঞ্জিকা গণনা করেন। এর পর মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে পঞ্জিকা গণনা আরও প্রসারিত হয়। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা প্রথম মুদ্রিত হয়। এরপর ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে পঞ্জিকা সংস্কার করে মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা। ১৯৫৭ সালে ভারত সরকারের অধীনে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সভাপতিত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে পঞ্জিকার সংস্কার হয় এবং এই সংস্কারপ্রাপ্ত পঞ্জিকা বা বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকাই ভারতের রাষ্ট্রীয় পঞ্চাঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত হয়।

১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ (সুব বাঙালি) মুঘল সাম্রাজ্যের শাসনভুক্ত হয়। তখন খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে হিজরি সনের পরিবর্তে ঋতুভিত্তিক সৌর সনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তখনকার প্রচলিত হিজরি সনকে ‘ফসলি সন’ হিসেবে চালু করার মাধ্যমে বর্তমান বাংলা সন বঙ্গাব্দের জন্ম হয়। সন শব্দটি আরবি থেকে আগত, অর্থ—বর্ষ, বর্ষপঞ্জি-বছরের দিনক্ষণের বিবরণ। সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৯) নির্দেশে এবং বিজ্ঞ রাজ জ্যোতিষী ও পণ্ডিত আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজীর গবেষণার ফলে বাংলা সনের উৎপত্তি। বাংলা সন বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব সন। এর উৎপত্তি ও বিকাশের ইতিহাস সমুজ্জ্বল। এই সনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের ঐতিহ্যগত আবেগ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর