রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

শৈশবের উৎসব

♦ শহর ছেড়ে চার সন্তানকে নিয়ে থাকেন নিউজিল্যান্ডের প্রত্যন্ত গ্রামে
♦ ঘরে নেই টিভি, স্মার্টফোন, ভিডিও গেম বা ইলেকট্রনিক বিনোদন যন্ত্র
♦ কোনো স্কুলে পড়ান না তাদের, ইচ্ছামতো খেলা, ঘরের কাজ করে তারা
♦ সন্তানদের শৈশবের ছবি তুলে মা জিতেছেন আইপিএ অ্যাওয়ার্ড

শৈশবের উৎসব

কবি পাবলো নেরুদা জীবনের আনন্দ খুঁজে পেয়ে বলেছেন, ‘শৈশবের প্রতিটি দিনই উৎসবের দিন।’ শৈশব কখনো মলিন হয় না। ব্যস্ত শহুরে জীবনে শিশুসন্তানরা আলো-বাতাস-পানির স্পর্শ, মাটির মমতা থেকে দূরে সরে এসেছে। তাদের শৈশব বন্দী হয়ে গেছে ইট-পাথরের ঘরে, টিভি অথবা স্মার্টফোনের পর্দায়। শৌখিন ফটোগ্রাফার নিকি বুন শৈশবের রং মাখতে ফিরে গেছেন নিউজিল্যান্ডের মায়াভরা গ্রামে। সেখানেই তার সন্তানরা বেড়ে উঠছে প্রকৃতির কোলে। নেই স্মার্টফোন, ফাস্টফুড কিংবা শহুরে জাঁকজমক। কেমন কাটছে তার সন্তানদের শৈশব— তুলে ধরেছেন ফটোগ্রাফিতে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ছবিগুলো দেখে আপ্লুত হয়েছেন।  নিকি বুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন তার ফটোগ্রাফি ও গ্রাম্য আবহে, ইলেকট্রনিক বিনোদন যন্ত্র ছাড়া তার সন্তানদের বেড়ে ওঠার চমৎকার গল্প।  লিখেছেন— তানভীর আহমেদ

 

মায়ের নাম নিকি বুন

ফটোগ্রাফার নিকি বুন। নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণে এক ছোট দ্বীপে তিনি, তার স্বামী ও চার সন্তান থাকেন। নিকি বুন সাইকোথেরাপিস্ট। শখের বশে ছবি তোলেন। নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ছয় বছর সাইকোথেরাপিস্ট হিসেবে কাজ শেষে  ফিরে যান গ্রামে। দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকে সেখানেই থাকছেন। শহর থেকে দূরে ওই গ্রামের চারপাশে রয়েছে বন, পাহাড়, সমুদ্রতীর— ১০ একর জমির ওপর তাদের কাঠের ছোট ঘর। নেই আধুনিক শহুরে জীবনের কোলাহল, প্রযুক্তি যন্ত্র। টিভি, স্মার্টফোন, ভিডিও গেম নেই। ফাস্টফুড নেই। ছিমছাম পরিবেশে তার সন্তানরা মানিয়ে নিয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে। তারা খোলা মাঠে দৌড়ে খেলা করে। নদীতে মাছ ধরে, গোসল করে। প্রথাগত স্কুলে তাদের পড়াননি। তাদের শৈশব আধুনিক সভ্যতায় মোড়ানো নয়। শৈশব আনন্দে ঠাসা। সন্তানদের সেই শৈশব উৎসবের ছবি তুলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলেন নিকি বুন। তার ‘চাইল্ডহুড ইন দ্য র’ দেশে দেশে প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়াও গ্রাম্য পরিবেশে তিনি ও তার সন্তানদের সাধারণ জীবনযাত্রার ছবি তুলেছেন ডিসকভারি, হোম লাইফ, ওয়াইল্ড অ্যান্ড ফ্রি, অন বিং ইলেভেন শিরোনামে। এই ছবিগুলোর বদৌলতে তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০১৫ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন থেকে উইনার ডেইলি ডোজেন, ২০১৬ সালে ক্যাপচার ইমার্জিং ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার, ২০১৬ সালে ডেইলি লাইফের ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছেন।  এবিসি নিউজ অনলাইন, প্যাটাপিক্সেল, মোজি ম্যাগাজিন, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন, শ্যাডো অ্যান্ড লাইট ম্যাগাজিন, এফইলেভেন ম্যাগাজিন, পোলিশ ম্যাগাজিন ফটোপলিস, ফিচারশট, ক্রিয়েটিভ বুম, ক্যাপচার ম্যাগাজিনে তাকে নিয়ে স্টোরি প্রকাশিত হয়।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিকি বুন

“ মি চেয়েছি আমার সন্তানরা প্রকৃতির সত্যিকারের রূপ দেখুক, সেখানেই বেড়ে উঠুক 

 

আপনার পরিবার ও সন্তানদের কথা বলুন—

: আমার চার সন্তান। এদের বয়স ৭ থেকে ১৩ বছর। এরিয়েন ৭, অ্যান্টন ৯, রেবেকা ১২ ও কার্টের বয়স ১৩। নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণে প্রত্যন্ত এক দ্বীপে থাকি আমরা। আমরা খুব সৌভাগ্যবান, আমাদের বাড়ি সমুদ্র উপকূল, নদী, বন ও পাহাড় দিয়ে ঘেরা।

 

ফটোগ্রাফি ছাড়াও আপনি কী করেন?

: আমি কয়েক বছর ধরে ফটোগ্রাফিতে মনোযোগী হয়েছি। শখের বসে আমার সন্তান ও প্রকৃতির ছবি তুলতে শুরু করি। এমনিতে আমি পড়াশোনা করেছি সাইকোথেরাপি নিয়ে। এখন পুরোদস্তুর গৃহিণী। সন্তানদের লালন-পালন করেই আমার ব্যস্ত সময় কাটে।

 

আপনার তোলা ধারাবাহিক ছবি ‘চাইল্ডগুড ইন দ্য র’ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। শৈশব নিয়ে এই ধারাবাহিক ছবির পরিকল্পনা মাথায় এলো কী ভেবে?

: তেমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না। মা হিসেবে শখের বসেই আমার সন্তানদের ছবি তুলতে শুরু করি। আমি চাইছিলাম তাদের আনন্দময় শৈশবের স্মৃতিটুকু ফ্রেমবন্দি করে রাখতে। সে ভেবেই শুরু। তাদের প্রকৃতির কাছাকাছি, শহুরে জীবনের বাইরে এসে ভিন্ন জীবনযাত্রায় লালন-পালন করাটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন এসেছে— তবে আমি চেয়েছি আমার সন্তানদের তাদের মতো করেই বড় করতে, সশিক্ষিত করতে। শৈশবের আনন্দ খুঁজে পেতে স্বাধীন উচ্ছ্বল জীবনের কোনো তুলনা হয় না। আমি চেয়েছি তারা প্রকৃতির সত্যিকারের রূপ দেখুক, জানুক। তারা এই শৈশবে আনন্দ পেয়েছে, ব্যথা পেয়েছে— তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে জীবনটাকে উপভোগ করার।

 

আপনার সন্তানরা কোনো প্রথাগত স্কুলে পড়াশোনা করে?

: আমার বড় সন্তান ছয় বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। এ ছাড়া আর কেউই স্কুলে পড়াশোনা করছে না। আমি ঘরেই তাদের অংক ও সাহিত্য বিষয়ে পড়াই। তারা নিজে থেকেই প্রকৃতির চারপাশ থেকে প্রতিনিয়ত শিখছে। নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা তাদের স্বশিক্ষিত করে তুলছে।

 

তাদের ভবিষ্যৎ কীভাবে দেখছেন?

: আমার সন্তানরা যেভাবে বেড়ে উঠছে, স্বশিক্ষিত হচ্ছে তাতে আমি খুশি। তাদের যদি প্রথাগত স্কুল-কলেজে পড়াশোনার প্রয়োজন পড়ে তবে অবশ্যই তারা পড়বে। আর আমার ফটোগ্রাফি নিয়ে আমার পরিকল্পনা একটাই— শুধু ছবি তুলে যাব, দেখা যাক সামনে কী আছে।

 

আপনি কী ধরনের ক্যামেরায় ছবি তোলেন?

: এখন আমি ফাইভডি মার্ক থ্রি দিয়ে ছবি তুলছি। ৩৫ মিমি আমার প্রিয় লেন্স। আমার ছবি তোলার সঙ্গী এরাই।

 

বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের তরুণরা ফ্রিল্যান্স ও শৌখিন ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। স্যোসাল মিডিয়ায় তারা আপনার ছবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ—

: সত্যি! এটা জেনে দারুণ লাগছে। আমার ছবি তাদের ভালো লেগেছে জেনে আমি ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি।

 

শৌখিন তরুণ ফটোগ্রাফারদের জন্য কিছু বলুন—

: নতুন করে কিছু বলব না। শুধু ছবি তুলে যাও। আরও ছবি তোলো। আরও ছবি তোলো। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলব, যত ছবি তুলেছি তত নতুন কিছু শিখেছি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

: আপনাকে ও বাংলাদেশ প্রতিদিনকেও ধন্যবাদ। বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকে সাক্ষাৎকার দেওয়াটা আমার জন্য সত্যি চমৎকার ও আনন্দময় এক অভিজ্ঞতা।  আমি মন থেকে প্রত্যাশা করি, একদিন বাংলাদেশ ঘুরে আসব।

 

‘বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের কথা খুব ভালো করেই জানি’

 

ব্রাইটসাইড ডটকম নিকি বুনের তোলা ছবিগুলো ফেসবুকে শেয়ার করলে বাংলাদেশের তরুণ ফটোগ্রাফাররা তার ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে নিকি বুনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল,  বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?

তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন...

 

আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক শুনেছি। কখনো বাংলাদেশে না গেলেও যতটুকু জানি, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে অপূর্ব একটি দেশ। ওখানকার সংস্কৃতি, খাবার ও বিশেষ করে ক্রিকেটের কথা কে না জানে? আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের কথা খুব ভালো করেই জানি।  আমি বাংলাদেশ ঘুরে আসতে চাই। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমাকে আকর্ষণ করে।  সময়, সুযোগ মিললে বাংলাদেশে অবশ্যই বেড়াতে আসব।

 

নিকি বুনের চার সন্তান— এরিয়েন, অ্যান্টন, রেবেকা ও কার্ট। নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে থেকেও তারা বেড়ে উঠছে প্রত্যন্ত গ্রামে। নিকি বুন বলেন, আমার সন্তানরা ইচ্ছামতো খেলছে, প্রকৃতি থেকে শিখছে। শহুরে জাঁকজমক নেই বলে তারা মোটেই আক্ষেপ করে না।

 

মায়ের চিঠি

 

আমরা নিউজিল্যান্ডের প্রত্যন্ত এক গ্রামে থাকি। আমাদের বাড়ির ১০ একর জমির চারপাশে রয়েছে নদী, সমুদ্র উপকূল, বন আর পাহাড়। এখানে এসেছি যেন আমার সন্তানরা শৈশবের উৎসবে বেড়ে ওঠে। তারা কোনো স্কুলে পড়েনি। তাদের টিভি নেই, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র নেই। অনেকের কাছে আমার এই সাদামাটা জীবন ঠিকঠাক লাগবে না। কিন্তু এখানেই আমার সন্তানরা স্বর্গীয় উচ্ছলতায় বেড়ে উঠছে। আমি তাদের শৈশব ক্যামেরাবন্দি করে রাখছি। তারা প্রকৃতির সঙ্গে জীবনটাকে বেঁধে নিয়েছে। তাদের খেলায় বিধিনিষেধ নেই। আনন্দ কুড়িয়ে নিতে তাদের শৈশবই যথেষ্ট। এটাই সত্যিকারের জীবন। তাদের মাঝে আমি আমার শৈশবের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। শৈশবে স্বাধীনতার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে? আমি চাই আমার সন্তানেরা তাদের শৈশব উপভোগ করুক স্বাধীনভাবে। আমি বিশ্বাস করি, তারা যেভাবে বেড়ে উঠছে— এটা তাদের প্রাপ্য, এটাই তাদের জীবন। তারা কাদায় মাখামাখি করে, জলে লাফায়। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ তারা দৌড়ে বেড়ায়। এই বন্য, উচ্ছল, স্বাধীন শৈশবই তাদের চাই। প্রকৃতির বিশালত্ব তারা উপভোগ করছে। মা হয়ে আমি চাই, তাদের হৃদয়ও যেন প্রকৃতির মতো বিশাল হয়।

 

ছবিগুলো খুব ব্যক্তিগত।  তবু চাই, সবাই যেন আমার সন্তানদের অমূল্য শৈশবের আনন্দে শামিল হোন।

ইতি

নিকি বুন

 

নেই স্মার্টফোন, ভিডিও গেম, টিভির মতো বিনোদন যন্ত্র

নিকি বুনের ভাষায়— আমাদের ঘরে টিভি নেই। একটা পুরনো মডেলের কম্পিউটার রয়েছে। ওটা আসলে আমার ছবি সংরক্ষণ ও ই-মেইল যোগাযোগের কাজেই লাগে। আমার সন্তানরা আইফোন, আইপ্যাড, কম্পিউটার এসব সম্পর্কে জানলেও এসব ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের প্রতি আগ্রহী নয়। তারা ঘরের বাইরে খেলাধুলা করতেই ভালোবাসে। তারা নিজেদের মতো করেই বেড়ে উঠছে। তারা বই পড়তে খুব পছন্দ করে। আমাদের গৃহপালিত পশু রয়েছে, খামার রয়েছে।  তারা ঘরের বাইরে ছোটখাটো হাতের কাজ করতেও ভালোবাসে।

 

স্কুলটা ঘরেই

নিকি বুনের চার সন্তান রয়েছে। তারা কোনো স্কুলে পড়াশোনা করে না। নিউজিল্যান্ডের প্রত্যন্ত দ্বীপে তারা বেড়ে উঠছে। ঘরেই তাদের পড়ান মা নিকি বুন। অংক ও সাহিত্য বিষয়ে ঘরেই পড়ছে তারা। বড় সন্তান ছয় বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হলেও পড়েছিল এক বছর। এখন নিকি বুন তার চার সন্তানকে ঘরেই পড়াচ্ছেন। হোমস্কুলিং বা ঘরে বাবা-মায়ের কাছে পড়াশোনা কত দিন চালিয়ে যাবেন এ নিয়ে বারবার প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। নিকি বুন বলেছেন তিনি এ ব্যাপারে নমনীয়। এ নিয়ে তিনি কঠোর নন। প্রয়োজন পড়লে তার সন্তানেরা স্কুল-কলেজে প্রথাগত পড়াশোনাও করবে। সাত থেকে তের বছর বয়সী তার সন্তানেরা পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতার ওপর নিজেদের মতো করেই সব কিছু শিখছে। তারা স্বশিক্ষিত হয়ে উঠছে বলেই সন্তুষ্ট তিনি। নিকি বুনের সন্তানরা গৃহপালিত পশু ও খামারে নিজেদের মতো করে কাজ করতে ভালোবাসে। এই দায়িত্ব তারা ভালোমতোই সামলাচ্ছে। তারা সামাজিকতাও শিখছে।  তারা কর্মঠ ও দায়িত্ববান হয়ে উঠছে বলেই জানান নিকি বুন।

 

সন্তানদের ছবি তুলে ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড জয়

নিকি বুন ইউনিভার্সিটি শেষ করে সাইকোথেরাপিস্ট হিসেবেই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর খণ্ডকালীন উপার্জনের পেশা হয়ে ওঠে সাইকোথেরাপিস্ট হিসেবে। নিউজিল্যান্ডের প্রত্যন্ত গ্রামে সন্তানদের দেখভাল করাটাই এখন তার পেশা। ফটোগ্রাফার হিসেবে তার নামযশ কিন্তু একেবারেই নতুন। ২০১৫ সালের দিকে তার তোলা ছবিগুলো বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হতে শুরু করে। শখের বশেই ছবি তোলা শুরু করেন। ঘরে থাকা ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে বাইরে গিয়ে নিজের সন্তানদের ছবি তুলতে থাকেন। তারা কোথায় যাচ্ছে, কী নিয়ে খেলছে— তাদের উন্মুক্ত পরিবেশে খেলার আনন্দ তাকেও নাড়া দেয়। তারা কাদায় মাখামাখি করে, সমুদ্র তীরে দৌড়ায়, গৃহপালিত পশুদের যত্ন নেয়। প্রকৃতির সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্কের স্মৃতি তুলে রাখতেই ছবি তোলা শুরু। তখন তিনিও ভাবেননি, এই ছবিগুলো এত প্রশংসিত হবে। তার ‘চাইল্ডগুড ইন দ্য র’ এবং ‘ওয়াইল্ড অ্যান্ড ফ্রি’ শিরোনামে ধারাবাহিক ছবিগুলোতে স্বাধীন, আনন্দময় শৈশবের ছবিগুলোই জায়গা পেয়েছে। এসব ছবি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রতিযোগিতায় আলোচিত হয়েছে। ছবি বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা ছাড়াও সেরা ছবির তালিকায় এসব ছবি মনোনীত হয়েছে, কোনো কোনোটি জিতে নিয়েছে সেরা ছবির সম্মান। ২০১৬ সালে তিনি আইপিএ (ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড) জিতে নিয়ে সবাইকে চমকে দেন। পিপল : চিলড্রেন বিভাগে তার ছবিগুলো নির্বাচিত হয়, নিকি বুন সেরা ফটোগ্রাফার হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। বিভিন্ন ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিন তার তোলা ছবি ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করার পর বিশ্বজুড়ে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম সারির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘নন-প্রফেশনাল’ ফটোগ্রাফার হয়েও দুর্দান্ত সব ছবি তোলার জন্য তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। গত বছর তিনি নিউজিল্যান্ডের ইনস্টিটিউট অব প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার কনফারেন্সে বক্তব্য দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।  নিকি বুনের তোলা ছবিগুলোয় তার সন্তানদের শৈশব উৎসবের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। শহুরে পরিবেশের বাইরে, আধুনিক ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের নেশামুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা তার সন্তানদের সাবলীল শৈশব সত্যি মনজুড়ানো।

 

নিকি বুনের নতুন ফটো সিরিজ ‘অন বিয়িং ইলেভেন’

নিকি বুন ফটোশপ ব্যবহার করেন না। কিছু ক্ষেত্রে লাইটরুম ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছেন। তার পরবর্তী ফটোসিরিজ নিয়ে তিনি বলেন, আমার বড় মেয়ের কিশোরী হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে ছবি সাজাচ্ছি। ওর ১১ বছর বয়সে, শৈশব ছেড়ে কৌশরে পা রাখার সময়ের ছবিগুলো অনেককে চমকে দেবে।  ‘অন বিয়িং ইলেভেন’ শিরোনামে ছবিগুলো প্রকাশ করব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর