শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

শহর গড়তে গিয়ে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল

আনিসুল হক
মেয়র, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

শহর গড়তে গিয়ে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল

ছবি : জয়ীতা রায়

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র আনিসুল হক বললেন, আমাদের রাজনীতি শহর গড়ার রাজনীতি। শহর গড়তে গিয়ে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, বিদেশি কূটনীতিকরা আমাদের মানুষকে আমাদের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে দিচ্ছেন না। এটা আর হতে দেওয়া যাবে না। আমরা এমনভাবে ফুটপাথ তৈরি করেছি যাতে একজন অন্ধ মানুষ বা প্রতিবন্ধী মানুষ নির্বিঘ্নে চলতে পারেন। সারা বিশ্ব থেকে লোকজন আমাদের রাস্তা ফুটপাথ দেখতে আসবেন। শহর অনেক নিরাপদ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহর বদলে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু মেয়র একা কোনো কাজ করছেন না। আমরা সবাই মিলে একটি শক্তিশালী ডিএনসিসি পরিবার গড়ে তুলেছি। আমার স্টাফরা মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেন। কাউন্সিলররা ২৪ ঘণ্টা এসএমএস দিয়ে কোথায় কী ঘটছে আমাকে জানান। আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, কে কোন কাজ করছেন তার সব আমি জানি। ২০১৫ সালের ৬ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে শপথ নেন আনিসুল হক। কয়দিন পরই তার দায়িত্ব পালনের দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই সময়ে সিটি মেয়র নগর উন্নয়নে কী করলেন আর ভবিষ্যতে কী করবেন তার বিস্তারিত বললেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে। রবিবার দুপুরে গুলশানে মেয়র কার্যালয়ে সিটি মেয়র আনিসুল হকের সাক্ষাৎকার নেন শিমুল মাহমুদ ও জয়শ্রী ভাদুড়ী।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনার দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় দুই বছর হতে চলল। সিটি এলাকাকে যেভাবে সাজাতে চেয়েছিলেন তার কতটা পূরণ হলো?

আনিসুল হক : দুই বছর হতে চলল সত্যি। দুই বছরে যে অনেক কিছু করে ফেলেছি তা দাবি করতে পারব না। তবে কিছু কাজ করেছি। সাধারণ মানুষ দেখছে। আমরা যতটুকু বুঝতে পারি মানুষ অখুশি নয়। বেশ কিছু প্রশংসা পাচ্ছি। তবে অনেক যে তৃপ্ত তা নয়। কাজ করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছি সাধারণ মানুষের কথায়। কিছু কিছু ভুলও করছি আবার শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করছি। শহর প্রতিদিনই কিছু না কিছু বদলাচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : টঙ্গী থেকে শুরু করে রাজধানীর সব এলাকাতেই তীব্র যানজট। এই যানজট লাঘবে কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

আনিসুল হক : আসলে যানজট নিরসনের জন্য যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে তার একটিরও দায়িত্বে মেয়র নেই। মেয়রের কোনো প্রতিষ্ঠান গাড়ির লাইসেন্স দেয় না, সব জায়গার রাস্তার দেখাশোনা করে না, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে না। সুতরাং যানজট নিরসনে সরাসরি মেয়রের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তবু মানুষের প্রত্যাশার জায়গা থেকে উদ্যোগ নিচ্ছি। এ উদ্যোগের মধ্যে আছে রাস্তা প্রশস্তকরণ। ঢাকা শহরের উত্তরা, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার ড্রেনের কাজ করেছি, পুরো রাস্তা পিচঢালা করেছি, রাস্তার ভিতরে থাকা শত শত ইলেকট্রিক পুল সরিয়েছি। দখলমুক্ত করে ফুটপাথ প্রশস্ত করেছি। আর এই কাজের কারণে যানজট কিছুটা কমেছে। তবে যে শহরে তিন লাখ গাড়ি চলতে পারে সেখানে চলাচল করে ১১ লাখ, ২৮ হাজার রিকশার লাইসেন্স আছে অথচ চলাচল করে ১০ লাখ। যে শহরে  কোটির অধিক মানুষ বসবাস করে সেই শহরে যানজট নিরসন খুব কঠিন কাজ।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : গাজীপুর থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত ইউলুপের কথা শুনেছিলাম। সে কাজের কী অবস্থা?

আনিসুল হক : এটাকে আমরা ইউলুপ না বলে এখন ইউটার্ন বলেছি। কারণ, ইউলুপ তৈরি করলে তা সড়কের ওপর দিয়ে করতে হয়। কিন্তু আমরা এটা করছি রাস্তার লেভেলে। গাজীপুর থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত ৬০টি রাইট টার্ন আছে। সেগুলো বন্ধ করার জন্য ইউটার্ন করা হচ্ছে। কারণ, আমরা দেখেছি যেখানে রাইট টার্ন থাকে সেখানে চারদিক থেকে জট লাগে। এটা আমাদের একটু সময় লাগছে এ জন্য যে, বিআরটি, এমআরটি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনেক প্রোগ্রাম আছে। পাশাপাশি সরকারি কাজে টাকার ব্যাপারে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। আমরা টঙ্গী থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত ১২টি ইউটার্নের ক্লিয়ারেন্স পেয়ে গেছি। এগুলো আমরা এক মাসের মধ্যে শুরু করব। গাজীপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত এক পাশে ১১টি ও অন্য পাশে ১০টি। প্রশাসনিক কাজ ও পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পেলে সেগুলোর কাজ শুরু হবে। রাস্তা বড় করে এই ইউটার্নগুলো আমরা তৈরি করছি যেন গাড়ি আটকে না থাকে। এগুলো ৫-৬ মাসের মধ্যে শেষ হলে যানজট অনেকটা কমে যাবে বলে আশা করি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : শহরের মধ্যে বাস টার্মিনাল যানজট বাড়াচ্ছে কি-না?

আনিসুল হক : একটি বাস টার্মিনালে অনেক জায়গা লাগে। রাজধানীর মহাখালীতে যেটা আছে তা আসলে বাস রাখার জায়গা, কোনো পরিকল্পিত টার্মিনাল নয়। আমরা পরিকল্পনা করছি, বহুতল ভবন করে বাস টার্মিনাল করব। এর বাইরে তেজগাঁও যে ট্রাক টার্মিনাল আছে তাদের জন্য জায়গা লাগবে। জায়গা পাওয়া এত সহজ নয়। কাজ করার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন সেটাও লাগবে। সুতরাং, এটি একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার পেছনে আমরা কাজ করছি। আশা করি, এটা খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজধানীর সড়কে চার হাজার নতুন বাস নামানোর কথা শুনেছিলাম। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতটা এগোলেন?

আনিসুল হক : এটা আরেকটা বড় কাজ। সিটি করপোরেশন এলাকাতে ৬ হাজার ৩০০ বাস চলে, ছোট-বড় ১৬৯টি রুট আছে। আর ১৭০টি কোম্পানি এই বাসগুলোর মালিক। এগুলোর মধ্যে অনেক বাসই পুরনো এবং এই বাসগুলো রাস্তায় প্রতিযোগিতা করে, একজন আরেকজনের ঘাড়ের ওপর তুলে দেয়। আর এই হানাহানিতে রাস্তাঘাটে বাঁধে যানজট। আমরা এখন চেষ্টা করছি এই বাসগুলোকে ৬-৭টি রুটে আনতে। এরপর রেড রুট ও গ্রিন রুট এরকম বিভিন্ন রুটে ভাগ করে দিতে। এরপর সব কোম্পানিকে ৬-৭টি হোল্ডিং কোম্পানিতে আনতে পারলে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা আর থাকবে না। দিন শেষে যা লাভ হবে শেয়ার ভাগ করে সবাই নিজের অংশ বুঝে নেবে। তখন রাস্তার এই প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এটিও একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ। এর পেছনেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল কাজ করছে। আমি কৃতজ্ঞ বাস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বের প্রতি। তারা আমাদের সঙ্গে নীতিগতভাবে এক হয়েছেন। গত এক বছরে আমরা ২৫টির ওপরে মিটিং করেছি। নীতিগতভাবে তারা সম্মত হয়েছেন আমাদের সঙ্গে কাজ করতে। কিন্তু কাজটি অনেক জটিল। এখানে রুট নির্ধারণ করা, বাসের সঙ্গে সমন্বয় করা, ইলেকট্রনিক টিকিটিং সিস্টেম তৈরি করা, এই নীতিকে সর্বসম্মতভাবে কার্যকর করা একটা মহাযজ্ঞ। তার ওপর চার হাজার নতুন বাস রাস্তায় নামানো। এই বাস যারা কিনবেন তাদের দাবি খুবই অল্প সুদে সেগুলোর জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা। এরপর মেয়াদোত্তীর্ণ দুই হাজার বাস রাস্তা থেকে তুলে দেওয়া এবং টার্মিনাল নির্মাণ করা, ওয়ার্কশপ তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমি এই কাজগুলোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা নিয়েছি এবং সে অনুযায়ী কাজ করছি। কাজে সমস্যা আছে কিন্তু হাল ছাড়িনি। কিন্তু এ কাজটি মেয়রের নয়। তবে যদি গুছিয়ে আনতে পারি তখন প্রধানমন্ত্রী যে বিভাগকে হস্তান্তর করতে বলবেন তাদের হাতে তুলে দেব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে আপনি চীন ঘুরে এলেন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা দেখে। বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির বিষয়টি কি আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

আনিসুল হক : ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য জমা হয়। ফলের মৌসুমে এটা অনেক বেড়ে যায়। বৃষ্টির মৌসুমেও তা আরও বেড়ে যায়। মেয়র হিসেবে এটা আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই বর্জ্যগুলো নিয়ে গিয়ে আমিনবাজারের ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়। ল্যান্ডফিল যেভাবে তৈরি হয়েছিল সেটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। বর্জ্য যেভাবে পরিশোধন করার কথা ছিল তা হয়নি। এই ল্যান্ডফিল এখন অগ্ন্যুৎপাতে পরিণত হয়েছে। শহর পরিচ্ছন্ন করতে যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। সোসাইটি এবং নাগরিকদের সঙ্গে এক হয়ে কাজগুলো করছি। গুলশান সোসাইটি নিজ উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ করেছে। ৯৮টি রাস্তা তারা পরিষ্কার করছে। নিকেতন, গুলশান, বনানী, বারিধারা— চারটি সোসাইটির সঙ্গে আমরা কাজ করছি। গুলশানের ৯৮টি রাস্তা সোসাইটির দায়িত্বে। প্রতিদিনই শহর একটু একটু করে পরিষ্কার হচ্ছে। তবে কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য একটু অসুবিধা হচ্ছে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খুবই টেকনিক্যাল কাজ এবং ব্যয়বহুল। বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এর খরচ ৫-৬ গুণ বেশি। তবে এটা করা সম্ভব। আমরা সারা পৃথিবীতে এগুলো দেখেছি। এটা দীর্ঘমেয়াদি কাজ, কয়েক বছরের কার্যক্রম নিতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কূটনৈতিক এলাকার ফুটপাথ পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করেছেন আপনি। আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কয়েকটি দূতাবাস তাদের দখল করা জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। সেখানে সড়ক সম্প্রসারণে চ্যালেঞ্জগুলো কী?

আনিসুল হক : খুবই কষ্টের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বাইরের দেশের কূটনৈতিক যারা আমাদের দেশে বসবাস করছেন তারা আমাদের ফুটপাথ দখল করে রেখেছেন। আমাদের নাগরিকদের তাদের দূতাবাসের সামনে দিয়ে হাঁটতে দেন না। এটা বেদনাদায়ক। তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা আমরা দেব, কিন্তু ফুটপাথ থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে। পৃথিবীর কোনো জায়গা এখন নিরাপদ নয়। আগে অনেকে আমাদের পাত্তাই দিচ্ছিল না। পরবর্তীতে প্রচণ্ড চাপে পড়ে আমাদের কথা অনুযায়ী স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছে। রাশিয়ান দূতাবাস, আমেরিকান ক্লাব ফুটপাথ তো দখল করেছেই, রাস্তাও দখল করেছিল। আমাদের মানুষকে আমাদের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে দিচ্ছে না। এটা আর হতে দেওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নগরীতে টয়লেট আধুনিকায়নে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। বিদ্যমান পেট্রল পাম্পগুলোতে নতুন টয়লেট করার কথা রয়েছে। টয়লেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানাবেন।

আনিসুল হক : আধুনিক টয়লেট নগরীর একটি অপরিহার্য পরিসেবা। এর খুব অভাব এই শহরে। আমরা চাই নাগরিক সেবায় শত শত টয়লেট তৈরি করতে। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা পাচ্ছি না। এ পর্যন্ত ১২টি অত্যাধুনিক টয়লেট করেছি। ফাইভ স্টার হোটেলের টয়লেটের চেয়েও সুন্দর প্রতিটি টয়লেট। নগরীর পেট্রল পাম্পেও মালিকদের কনভিন্স করছি টয়লেটের জায়গা দিতে। পেট্রল পাম্পগুলোকে বুঝিয়ে বেশ কিছু পাবলিক টয়লেট তৈরি করেছি। জায়গা দিলে আমরা আরও পাবলিক টয়লেট তৈরি করে দেব। 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাস্তাঘাট প্রশস্ত হয়েছে। মানুষের চলাচলে স্বস্তি এসেছে। 

আনিসুল হক : গুলশান-বারিধারা-উত্তরায় রাস্তা ভালো হয়েছে, জনমানুষ বলছে। আমরা রাস্তার কাজ করতে গিয়ে শত শত বিদ্যুৎ পুল তুলে ফেলেছি। আমরা এমনভাবে ফুটপাথ তৈরি করেছি যাতে একজন অন্ধ মানুষ বা প্রতিবন্ধী মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবেন। তার পড়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। এটাই আমরা সারা শহরে করব। সারা বিশ্ব থেকে লোকজন আমাদের রাস্তা ফুটপাথ দেখতে আসবেন। সারা শহরে এলইডি লাইট লাগাব। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাঁচ হাজার এলইডি বাতি, ৫ হাজার ২০০ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসাব। আমি মনে করি, এতে শহর অনেক নিরাপদ হয়ে যাবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গাছ লাগানো হয়েছে, পুলিশ কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের স্থানীয় এমপি মো. রহমত উল্লাহর সহায়তায়। সোসাইটি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৭ লাখ টাকা তুলে এগুলো করা হয়েছে। পুলিশ ও সোসাইটিগুলোর সঙ্গে মেয়র অফিস ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। আমাদের প্ল্যান হলো, ২০১৮ সালের মধ্যে ডিএনসিসি এলাকার কোনো রাস্তার কাজ বাকি থাকবে না। শুধুু তাই নয়, আমরা ‘নগর’ নামে একটি অ্যাপস চালু করেছি। এতে ডিএনসিসির সব তথ্য আছে। নাগরিক নিরাপত্তা কাজ করবে এই অ্যাপস। নাগরিকদের যে কোনো বিপদে-আপদে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে শুরু করে অ্যাপস থেকে ৫ সেকেন্ডে বার্তা পৌঁছে যাবে স্বয়ং মেয়রের কাছে। 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দুই বছরের মেয়াদে আপনার চ্যালেঞ্জের কাজগুলো সম্পর্কে বলবেন।

আনিসুল হক : কয়েকটি কাজ আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে করেছি। শহরের মধ্যে তেজগাঁও, সাতরাস্তা অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে আমার এবং ছয় সহকর্মীর জীবন বিপন্ন হয়েছে। ঘরে ফিরে যেতে পারব কিনা জানতাম না। স্ত্রী টিভির সামনে বসে নামাজ পড়ছে আর কাঁদছে, আর ফোন করছিল। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাহস নিয়ে এগিয়ে গেছি। আগে এক রাস্তা পার হতে যে সময় লাগত তার চেয়ে কয়েক ভাগ কম সময়ে ১০টি রাস্তা পার হওয়া সম্ভব। ৫০ বছর আগের দখল করা সাবেক গভর্নর মোনায়েম খাঁর জমি অবমুক্ত করেছি, রাজধানীর গুলশানের ৯৪ নম্বর সড়কের ‘গামকা’ কার্যালয় সরিয়ে দিয়েছি। এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের কারণে গুলশানের ওই সড়কের আশপাশের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছিল। এ প্রতিষ্ঠানে আসা লোকজন রাস্তায় বসে থাকত বলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হতো।  

মিরপুর এলাকার একটি রাস্তা বড় করতে গিয়ে প্রায় ২০০ বাড়ি ও দোকানদারকে হটাতে হয়েছে। মরিয়ম টাওয়ারের পেছনে ৫০০-৭০০ ফুট জায়গা কেস করে দখল করে রাখা হয়েছিল। এ জন্য রাস্তার কাজ করা যায়নি। 

এটি নিয়ে বছরের পর বছর মামলা চলেছে। বর্তমানে আদালতের বাইরে একটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এ জায়গাটি আমরা নিয়ে নেব। আমাদের সঙ্গে রাজউকের সমঝোতা হয়েছে। আমরা ওই জায়গাটা কাজে লাগাব। তাহলে গুলশানে একটি প্যারালাল রাস্তা দাঁড়িয়ে যাবে। এ কাজটি করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এ কাজগুলো গোছাতে অনেক সাহস দেখাতে হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাদের গ্রিন সিটি গড়ার কাজ কত দূর এগুলো।

আনিসুল হক : আমরা উত্তরায় গত বছর ৩১ হাজার ৯০০ গাছ লাগিয়েছি। এবারও লাগাব। স্কুল-কলেজে চারা বিতরণ করছি। এজন্য দুটি সংস্থাকে এক্সিম ব্যাংকের সৌজন্যে গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেই গাড়িতে তারা গাছের চারা, মাটি, টবসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু বিতরণ করছে। ফুটওভার ব্রিজগুলোর অনেকটিতেই গাছ লাগানো হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। গ্রিন সিটি তো আর এক দিনে হয় না। তাই তিন-চার বছর লাগবে পুরোপুরি গ্রিন হিসেবে গড়ে তুলতে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে নগর উন্নয়ন কাজে অনেক সমস্যা হয়। সমন্বয় বাড়াতে মেয়রের অফিস কী কাজ করছে?

আনিসুল হক : আমরা প্রতিটি সেবা সংস্থার সঙ্গে মিটিং করেছি। রাজউক ও ওয়াসার সঙ্গে অনেক বৈঠক করেছি। পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করছি। সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করতে আমাদের বৈঠক অব্যাহত রয়েছে। সব বিভাগেরই সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমরা এগোচ্ছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র হলেও কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ছাপ নেই আপনার। এতে রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করার সুবিধা পাওয়া যায়। আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন বিষয়টিকে।

আনিসুল হক : আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমার রাজনীতি হলো শহর গড়ার রাজনীতি। তিনি আমাকে সেই দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার সঙ্গে এখানে কারও বিরোধ নেই। অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত কারও কারও সঙ্গে মতদ্বৈধতা হয়। সে ক্ষেত্রে আইনগত জায়গায় আমি থাকার চেষ্টা করি। তাতে হয়তো কারও বিরাগভাজন হয়েছি। তবে আমি মনে করি, দীর্ঘমেয়াদে সবাই বুঝবেন, আমি বা আমরা (কাউন্সিলর, যাদের সাহায্য ও সমর্থনে মেয়র চলেন) একটি পরিবার। আর আমরা এ কাজগুলো করে যাচ্ছি তারই শহর উন্নয়নের জন্য। রাজনৈতিক চাপ এবং প্রভাবমুক্ত থেকে আমার কাজ করার একমাত্র শক্তি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে তার জোরাল নির্দেশনা রয়েছে। প্রথম দিকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাপ থাকলেও এখন মেয়রের অফিসে কোনো চাপ নেই।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি কি আর কিছু বলতে চান?

আনিসুল হক : আপনারা মেয়রের প্রশংসা করছেন। কিন্তু মেয়র একা কোনো কাজ করছেন না। মেয়রের প্রশংসার দাবিদার তার কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সবাই মিলে আমরা শক্তিশালী ডিএনসিসি পরিবার গড়ছি। আমাদের স্টাফরা মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করছেন। কাউন্সিলররা দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় এসএমএস দিয়ে কী ঘটছে আমাকে জানান। আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি কাজ চলছেই। কে কোন কাজ করছেন তার সব আমি জানি। মেয়রের অফিসে যারা কাজ করেন তাদের এক গ্লাস পানিও কেউ খাওয়াতে পারেন না।

সর্বশেষ খবর