রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্বসেরা বিমানবন্দর

তানভীর আহমেদ

বিশ্বসেরা বিমানবন্দর

আকাশপথে নিরাপদ ও দ্রুত ভ্রমণ, মালামাল পরিবহনে বিমানের ব্যবহার বাড়ছে। কোটি কোটি যাত্রীর কথা বিবেচনা করে দেশে দেশে উন্নত করা হচ্ছে বিমানবন্দরগুলো। কার্গো সার্ভিসের পাশাপাশি বরাবর গুরুত্ব পাচ্ছে যাত্রী সুবিধা ও নিরাপত্তা। আধুনিক বিমানবন্দরগুলোতে মিলছে অল্প সময়ে যাত্রী ও তার লাগেজ বিমানে তুলে দেওয়া এবং নামিয়ে আনার সুবিধা। আরও রয়েছে, টয়লেট, বিশ্রাম কক্ষ, খাবার, কেনাকাটা, বিনোদন কক্ষ, ইন্টারনেটসহ নানা সুবিধা। হাসিমুখে যাত্রীদের সার্বিক সহায়তা প্রদানে আন্তরিক বিমানকর্মীরা এই বিমানবন্দরগুলোকে করেছে বিশ্বসেরা—

 

সিঙ্গাপুর চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

পাশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক ঝলক সিঙ্গাপুর চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিলাসবহুল তো বটেই, যাত্রীসেবা প্রদানেও সেরা এটি। বিশ্বের ১৩তম ব্যস্ত এই বিমানবন্দর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ট্রানজিট পয়েন্ট। প্রতি সপ্তাহে এখান থেকে কমপক্ষে ২০০ ঠিকানায় উড়ে যায় বিমান। অন্তত ৫ হাজার বিমান নামে এই বিমানবন্দরে। ৮০টি আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন কোম্পানি এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে। এ তো গেল হিসাব-নিকাশ। চাঙ্গি বিমানবন্দর আধুনিক প্রযুক্তি সহায়তা ও নির্মাণশৈলীতে সবাইকে ছাড়িয়ে। বিমানবন্দরের আধুনিকায়নে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ এটি। এই বিমানবন্দরকে বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল বিমানবন্দর। এখানে যাত্রীদের জন্য রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা থিয়েটার, মাল্টিমিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট হল। স্পা সেন্টার, বিশ্রামাগার। ঘুমানোর জন্য রয়েছে আরামদায়ক কাউচ। স্থাপত্যশৈলীতেও অনন্য এটি। বিমানবন্দরের ভিতরে রয়েছে ‘জুয়েল মাউন্টেইন ফলস’। রাতের বিমানবন্দর যে কারও চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। দূর থেকে এই বিমানবন্দরের কাচের দেয়াল ঝলমল করে। ভিতরের ছাদ যেন তারার ঝালর মোড়ানো। আর তাদের যাত্রীসেবা? উত্তরটা হলো, চাঙ্গি বিমানবন্দর অপ্রতিদ্বন্দ্বী!

 

ইনচেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর ইনচেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রতি বছর ৪১.৭ মিলিয়ন যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে থাকেন। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দরটির অবকাঠামো যে কাউকে বিস্মিত করবে। দ. কোরিয়ার রাজধানী ঘেঁষেই একটি দ্বীপে বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়। ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করা এই বিমানবন্দরটি বিশ্বের ২৪তম ব্যস্ত বিমানবন্দর। যাত্রীসেবা প্রদানে ইনচেন বিমানবন্দর সর্বাধুনিক বিনোদন ব্যবস্থা করেছে। এখানে রয়েছে যাত্রীদের জন্য আলাদা ঘুমানোর কক্ষ। চাইলে আইস স্কেটিং (বরফে স্কেটিং করার খেলা) রিংক। ছোটখাটো গলফ কোর্স থাকায় সময় কাটাতে চলে যেতে পারেন সেখানে। স্পা সেন্টারে শরীর ম্যাসাজ করাতে পারেন, ঘুমিয়ে নিতে পারেন সেখানেই। বিমানবন্দরের ভিতরে বিশাল পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন গাছের সারির মাঝে বসে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য চেয়ার রয়েছে। কোরিয়ান সংস্কৃতি সম্পর্কে যারা আগ্রহী তারা ঢু মেরে আসতে পারেন বিমানবন্দরের ভিতরে থাকা জাদুঘর থেকে।

যাত্রীদের জন্য এত বিনোদন ব্যবস্থা থাকার পরও অনেকের জিজ্ঞাসা থাকতে পারে, এ বিমানবন্দর পেরোতে কতক্ষণ লাগে? শুনে অবাক হবেন— মাত্র ১৯ মিনিটেই আপনি সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিমানে চড়তে পারেন অথবা বিমান থেকে নেমে ট্যাক্সি ধরে ফিরতে পারেন গন্তব্যে। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ১২ মিনিটের মধ্যেই আপনাকে অফিসিয়ালভাবে বিমানে চড়া বা বিমান থেকে এয়ারপোর্ট ছাড়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। ডিউটি ফ্রি কেনাকাটার জন্য স্বর্গ বলা যায় একে। পর্যটকরা বলেন, ইনচেন থেকে খালি হাতে ফেরে বোকারা!

 

মিউনিখ বিমানবন্দর

ছবিতে সার্ফিংয়ের ঢেউ দেখে ভিরমি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। এটি জার্মানির মিউনিখ বিমানবন্দর। জার্মানির প্রধান বিমানবন্দরের এটি দ্বিতীয়। বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দর তো বটেই, যাত্রীসেবা প্রদানে সেরার তালিকায় এটি উপরের দিকই রয়েছে। বিশ্বের বিলাসবহুল বিমানবন্দরের তালিকায় এর নাম খুঁজে নিতে কষ্ট হয় না। ইউরোপের সপ্তম ব্যস্ত বিমানবন্দরটি প্রতি বছর ব্যবহার করেন ৩৮.৭ মিলিয়ন মানুষ। মিউনিখ বিমানবন্দরের চমৎকার একটি দিক হলো, এই বিমানবন্দরের সঙ্গে গোটা শহরের যোগাযোগ রয়েছে। চারদিক ছুটে যাওয়া যায় সহজেই, অল্প সময়ে। স্থাপত্যশৈলীতে যাত্রীদের চমকে দিতে জুড়ি নেই এর। রঙিন কাচে মোড়ানো গোটা এয়ারপোর্ট এতটাই বিশাল যে, হাতে সময় থাকলে বিমানবন্দরটি ঘুরে আসার জন্য আলাদা ট্যুর প্যাকেজ নিতে পারেন! ফাস্ট ফুড ও ড্রিংকের জন্য চমৎকার জায়গা এটি। সস্তা বলে, যাত্রীরা এই বিমানবন্দর থেকে দুহাত ভরে কেনাকাটা করেন। ১৫০টি বড় রিটেইল শপ-ই আছে এখানে। অন্তত ৫০টি ছড়ানো রেস্টুরেন্টে বসে আয়েশ করে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিতে পারেন। মিউনিখ বিমানবন্দরকে অনেকে ছোট একটি শহর বলেই মানেন। ফার্মাসি থেকে শুরু করে জিম সেন্টার, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, সার্ফিং, সিনেমা থিয়েটার, মিনি পার্ক, গলফ কোর্স... কী নেই এতে! সার্ভিস সেন্টারের ছড়াছড়ি এখানে। লন্ড্রি হোক আর ফ্যাক্স পাঠানো— সব পাবেন হাতের কাছেই। মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার ভাঙিয়ে নিন, চলে যান টেরেসে। ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে শহর দেখুন। চলে যেতে পারেন, ভিজিটরস হিল-এ। সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় কোনোটির সৌন্দর্যই কম নয়। আছে স্পা ও সেলুন সেন্টার।

 

হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

কাতারের রাজধানী দোহায় রয়েছে হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কাতার এয়ারওয়েজের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর এটি। উন্নত যাত্রীসেবা প্রদানে এগিয়ে থাকা বিমানবন্দরগুলোর এটি একটি। বিলাসবহুল বিমানবন্দর হিসেবেও এর নাম এসেছে বারবার। ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করা এই বিমানবন্দরটি একেবারেই নতুন, ঝকঝকে-তকতকে। উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি, অল্প সময়ে ইমিগ্রেশন পেরোনো, লাগেজ আউটের জন্যও এটি যাত্রীদের কাছে সমাদৃত। হামাদ বিমানবন্দর বিশ্বের ফাইভ স্টার এয়ারপোর্টগুলোর একটি। ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে এই বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এই বিমানবন্দরে রয়েছে বিনোদন কক্ষ, বিশ্রাম কক্ষ, শিশুদের খেলার জায়গাসহ বহু যাত্রীসুবিধা।

 

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

প্রতি বছর হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করেন ৫৯.৬ মিলিয়ন যাত্রী। এত বিশাল অঙ্কের যাত্রীকে অল্প সময়ে বিমানবন্দর ত্যাগ ও বিভিন্ন সেবা প্রদানে এগিয়ে বলেই এটি বিশ্বের শীর্ষ বিমানবন্দরের একটি। যাত্রীদের অত্যন্ত পছন্দের বিমানবন্দরও এটি। বিমানবন্দরটি ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে। এশিয়ার ব্যস্ত বিমানবন্দর ব্যবহার করে ক্যাথি প্যাসিফিক, হংকং এয়ারলাইন্স এবং ড্রাগোনিয়ার। হংকং জনপ্রিয় স্কাইসিটি নামে— সে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এই বিমানবন্দরও। যাত্রীসেবায় নিয়োজিত আছে ৬৫ হাজার কর্মী। ১০০টি এয়ারলাইন্স এখান থেকে ১৮০টি গন্তব্যে উড়ে যায়। বলা যায়, সারা বিশ্বের সঙ্গেই এর যোগাযোগ রয়েছে। এখানে রয়েছে এয়ারপোর্ট অ্যাম্বাসেডর; যাত্রীদের টার্মিনাল চিনিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার জন্য এরা হাসিমুখে প্রস্তুত। রয়েছে শিশুদের খেলার মাঠ, হাসপাতাল, বিশ্রামঘর।

 

টোকিও হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বিশ্বের চতুর্থ ব্যস্ত বিমানবন্দর টোকিও হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ব্যবসায়ীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবন্দরটি প্রতি বছর ৬৮.৯ মিলিয়ন যাত্রী ব্যবহার করে। ব্যবসায়ী ছাড়াও এই বিমানবন্দরের যাত্রী তালিকায় পর্যটকের সংখ্যাও কম নয়। জাপানের ব্যবসা ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে হানেদা বিমানবন্দরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই বিমানবন্দর দ্রুততম সময়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা বেষ্টনী, ইমিগ্রেশন ও লাগেজ চেকিং শেষ করায় যাত্রীবান্ধব বলে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। যাত্রীসেবা প্রদানে বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মীদের আচরণ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। তারা সাহায্যপরায়ণ ও নিবেদিত। পরিচ্ছন্ন ও ছিমছাম বিমানবন্দর হিসেবেও এর সুনাম রয়েছে। ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের আকর্ষণ করে এই বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি শপিং সেন্টারগুলো। বিমানবন্দরের ভিতরেই রয়েছে পার্ক, খেলার জায়গা, ঘুমানোর ঘর, হোটেল, সিনেমা হল ইত্যাদি।

 

জুরিখ বিমানবন্দর

ভিআইপিদের বিশেষ সেবা প্রদানে এগিয়ে থাকা বিমানবন্দরের কথা উঠলে জুরিখ বিমানবন্দরকে এগিয়ে রাখতে হবে। তবে সাধারণ যাত্রীরাও প্রথম ভ্রমণে ধাক্কা খেতে পারেন কারণ তাদের যাত্রীসেবা দেখে মনে হবে, আপনি নিজেই ভিআইপি সুবিধা ভোগ করছেন। সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর এটি। প্রতি বছর ২৪.৯ মিলিয়ন যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেন।

সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ঘর বলে খ্যাত এই বিমানবন্দরের ভিতরেই পাঁচ তারকা হোটেলের মতো প্রায় সব সুবিধাই ভোগ করতে পারেন যাত্রীরা। সাইকেল চালিয়ে ঘুরে আসতে পারেন গোটা বিমানবন্দর। চাইলে স্কেটিংও করতে পারেন।

ভিতরে রয়েছে সুইস জাদুঘর।

এই বিমানবন্দরের লাগেজ সার্ভিস অসাধারণ। শিশু সন্তানদের খেলার জায়গা রয়েছে। ঘুমানোর ঘর মিলবে, মিনি থিয়েটারও রয়েছে। ইন্টারনেট, রেস্টুরেন্ট, শপিংসেন্টার... এমন যাত্রীসেবার সব আয়োজনই আছে।

 

সেন্ট্রাল জাপান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

জাপানের কৃত্রিম দ্বীপ ‘সি বে’। এখানেই গড়ে তোলা হয়েছে সেন্ট্রাল জাপান বিমানবন্দর। বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরের তালিকায় এর নাম রয়েছে। স্থানীয়রা চুবু এয়ারপোর্ট নামেই চেনে একে। বছরে প্রায় ৯.৮ মিলিয়ন যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে। জাপান এয়ারলাইন্স ও এএনএ-এর ঘর এটি। এই বিমানবন্দরে রয়েছে এক হাজার ফুট দীর্ঘ স্কাইডেক। এখানে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা নাগোয়া পোর্টের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। জাপানের ঐতিহ্যবাহী বাথহাউসও রয়েছে এখানে। উঁচু ছাদে দাঁড়িয়ে সমুদ্রে সূর্যাস্তের রূপ দেখতে অনেকেই ছুটে আসেন এই বিমানবন্দরে। এই বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা ঈর্ষণীয়।

যাত্রী খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিমানবন্দরের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পারেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কঠোর। যাত্রীদের বিনোদন ও বিশ্রামের জন্য রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেলের মতোই সব আয়োজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর