বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আর্মি নেই যেসব দেশে

তানভীর আহমেদ

আর্মি নেই যেসব দেশে

দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারে ব্যস্ত বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ। সেনাবাহিনী দেশের প্রতিরক্ষায় বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সব দেশই সেনাবাহিনীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সামরিক শক্তিধর দেশগুলোই বিশ্বের অর্থনীতি ও রাজনীতির কলকাঠি নাড়ে। অবাক শোনালেও সত্যি প্রায় ২২টি দেশের অফিসিয়াল সেনাবাহিনী নেই। এ দেশগুলোর অবস্থান, আয়তন ও জনসংখ্যা কম, আর্থিক সামর্থ্য না থাকা ও নানা চুক্তির প্রতিশ্রুতিতে সেনাবাহিনী গড়ে তোলেনি।

 

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রতিটি দেশই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকে। আধুনিক সময়ে সেনাবাহিনীর গুরুত্ব বাড়ছে। প্রতিটি দেশই তাদের সেনাবাহিনীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ২২টি দেশে অফিসিয়াল সেনাবাহিনী নেই। এই ব্যতিক্রম অনেকের কাছেই কৌতূহল জাগায়। প্রশ্ন জাগতে পারে— বহির্দেশের আক্রমণে এ দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তবে কী? উত্তরটি খুব সাধারণ। এ দেশগুলোর প্রতিরক্ষা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। বেশিরভাগই অন্য দেশের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি ও আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমে প্রতিরক্ষার দায় ছেড়ে দিয়েছে। ২২টি দেশের কথা বলার আগে জেনে নেওয়া দরকার, আর্মড ফোর্স বা অফিসিয়াল সেনাবাহিনী না থাকলেও কিছু দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের সীমিত মিলিটারি ফোর্স রয়েছে। সরকারি সেনাবাহিনী নেই— এ অর্থে দেশগুলোতে ‘আর্মড ফোর্স’ নেই বলে অভিহিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আইসল্যান্ড ও মোনাকোর কথা। এ দুটি দেশের অফিসিয়াল সেনাবাহিনী না থাকলেও ‘নন-পুলিশ মিলিটারি ফোর্স’ রয়েছে। কিছু দেশ আবার দীর্ঘস্থায়ী চুক্তিতে রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী তারা দেশে সেনাবাহিনী গড়ে তোলেনি। ফ্রান্সের সঙ্গে মোনাকোর চুক্তির ভিত্তিতেই কোনো সেনাবাহিনী তৈরি করেনি প্রায় ৩০০ বছর হতে চলল। কিছু দেশের আবার সেনাবাহিনী ও দেশের প্রতিরক্ষা নিয়ে বাড়তি মাথাব্যথা নেই। তারা অন্য দেশের সঙ্গে কোনোরকম সাতেপাঁচে নেই। মার্শাল আইল্যান্ড, মাইক্রোনেশিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে আগ্রহী নয়। ফেডারেল স্টেটস অব মাইক্রোনেশিয়া ইউনাইটেড স্টেটসের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যায়। আমেরিকার সহযোগিতা তারা ভালোমতোই পায়। বলা যেতে পারে এনডোরার কথা। তাদের রয়েছে নামমাত্র সেনাবাহিনী। শুধু বিপদ-সংকট পরিবেশে সহায়তার জন্যই তাদের সেনাবাহিনীর দেখা মেলে— যুদ্ধে নয়। সামোয়া দেশটির প্রতিরক্ষার জন্য অন্য দেশের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। আইসল্যান্ড আবার ইউনাইটেড স্টেটসের সঙ্গে চুক্তিতে রয়েছে, যেন প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাহায্য করে। নিজস্ব সেনাবাহিনী গড়ে তোলেনি তারা। অন্য দেশগুলোর সেনাবাহিনী নেই; সীমিত পরিসরে মিলিটারি ফোর্স রয়েছে দেশের ভিতরে নানা বিপদে সহায়তা করার জন্য। কোস্টারিকা, হাইতি, গ্রানাডা দেশগুলো পুরোপুরি সেনা বিলুপ্তির পথে হাঁটছে। তারা কোনো ধরনের আর্মড ফোর্সই রাখবে না।

 

আর্মি  নেই কেন?

দেশের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনেই সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়। অফিসিয়াল সেনাবাহিনী নেই— এমন দেশের কথা উঠলে অনেকেই ভাবেন, এ দেশগুলো কেন সেনাবাহিনী গড়ে তোলেনি। যে ২২টি দেশের কথা বলা হচ্ছে, তাদের আয়তন ও জনসংখ্যার বিশ্লেষণে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলার খুব একটা প্রয়োজন নেই।

পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কারণে তারা নানাভাবে তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এছাড়া কিছু দেশ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়েও খুব একটা কথা চালাচালি করতে পছন্দ করে না। শান্তিপ্রিয় এই দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবেও এতটা শক্তিশালী নয় যে, বৃহৎ পরিসরে সেনাবাহিনী গড়ে তুলবে। এছাড়া  প্রতিবেশী দেশগুলো সামরিক শক্তিতে যেমন বিশ্বসেরাদের কাতারে রয়েছে, তেমনি অবস্থানগত কারণেও যুদ্ধ বিবাদে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেই আর্মড ফোর্স গড়ে তোলার পথে হাঁটেননি তারা।

 

সেনাবাহিনী ছাড়া দেশগুলোর হালচাল

এনডোরা : ফ্রান্স ও স্পেন সীমান্তবর্তী দেশ এনডোরা। সবুজে ঘেরা ছিমছাম দেশটির লোকজনও বেশ শান্তিপ্রিয়। নিজস্ব সেনাবাহিনী গড়ে না তুললেও তাদের ভলান্টিয়ার টিম রয়েছে। বিপদে তারাই এগিয়ে আসে।

কোস্টারিকা : ১৯৪৮ সালে গৃহযুদ্ধ বাধে দেশটিতে। যুদ্ধ-বিগ্রহের ক্ষতি ও ভয়াবহতার স্মৃতি তাদের সেনাবাহিনী ছাড়া পথচলার স্বপ্ন দেখায়। তখন থেকেই দেশটিতে কোনো সেনাবাহিনী গড়ে ওঠেনি।

ডোমেনিকা : প্রাকৃতিক নৈসর্গের ছোট দেশ ডোমেনিকায় ১৯৮১ সাল থেকে কোনো সেনাবাহিনী নেই। তবে ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্য

দেশগুলোর মতো আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে।

গ্রানাডা : ১৯৮৩ সাল থেকে গ্রানাডায় কোনো সেনাবাহিনী কার্যকর নেই। তবে দেশটির নিরাপত্তা রক্ষায় রয়েছে পুলিশ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাহিনী।

হাইতি : ১৯৯৫ সালের আগেও দেশটিতে সেনাবাহিনী বেশ আলোচিত ছিল। কিন্তু বারবার সেনা অভ্যুত্থান, সংঘাতের কারণে দেশটি সেনাবাহিনীর ইতি টানে।

আইসল্যান্ড : ১৮৬৯ সাল থেকে সেনাবাহিনী নেই দেশটিতে। আইসল্যান্ড ন্যাটোর সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির ফলে তার প্রতিরক্ষার দেখভাল যুক্তরাষ্ট্রই করে।

কিরিবাতি : ছোট তিনটি দ্বীপ নিয়ে কিরিবাতি। তাদের কোনো সেনাবাহিনী নেই ১৯৭৮ সাল থেকে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের সাহায্য করে।

লিচেনস্টেইন : খুবই ছোট একটি দেশ। লোকজন খুবই কম। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই তাদের। তাছাড়া সেনাবাহিনী পালার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই দেশটির।

মার্শাল আইল্যান্ড : দেশটিতে কোনো সেনাবাহিনী নেই। অভ্যন্তরের নিরাপত্তায় পুলিশ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিরক্ষায় সাহায্য করে থাকে।

মৌরিশাস : এ দেশে সেনাবাহিনী না থাকলেও বেশ বড় পুলিশ বাহিনী রয়েছে। পুলিশ কমিশনার তাদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর