রবিবার, ১৮ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্বসেরা ধনীদের সাধারণ জীবন

সাইফ ইমন

বিশ্বসেরা ধনীদের সাধারণ জীবন

বিশ্বসেরা ধনীদের নিয়ে জনসাধারণের মনে নানা কৌতূহল। তারা বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ নিশ্চয় বিলাসবহুল জীবন-যাপনে ব্যয় করেন। অথচ বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। বিশ্বসেরা ধনকুবেরদের অনেকে টাকার কুমির হলেও খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করেন। শুনলে অবাক হবেন তাদের ব্যবহূত গাড়ি-বাড়ি এমনকি হাতের সেলফোনটি পর্যন্ত অতি সাধারণ। আর এমনই কিছু মানুষকে নিয়ে আজকের রকমারি—

 

সাধারণ পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন

জং কুইংহাউ

চীনের অন্যতম ধনী হিসেবে খ্যাত জং কুইংহাউ। অতি সাধারণ জীবন-যাপন তার। পোশাকও ব্যবহার করেন আর দশটা সাধারণ মানষের মতো। তিনি বলেন, ‘মানুষ বলতে পারবে না তুমি ১০০০ টাকার কাপড় পরেছ নাকি ১০০ টাকার।

তাহলে তাদের জন্য খরচ করে কী লাভ?’ জীবনের চলার সব পথেই সব সময় টাকাকে অনেক বেশি হিসাব করে খরচ করে এসেছেন হুয়াংজহাউ ওয়াহাহা গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠাতা। বিনিময়ে পেয়েছেন চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হওয়ার সম্মান। বর্তমানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০.৮ বিলিয়ন।

 

 

থাকেন সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টে

কার্লোস স্লিম

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কার্লোস স্লিমের সম্পদের পরিমাণ ৫৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই টেলিকম ব্যবসায়ী হোটেল ব্যবসা ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দিয়ে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেন। ব্যক্তি জীবনে ছয় সন্তানের জনক কার্লোস। ৭৪ বছর বয়সেও দক্ষ হাতে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। অথচ খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করেন তিনি। 

বিশাল রিয়েল এস্টেট ব্যবসার কর্ণধার হলেও তিনি বাস করেন অতি সাধারণ একটি অ্যাপার্টমেন্টে। তার জীবন-যাপনও সাধারণ। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েও এমন সাধারণ থাকার উদাহরণ তিনি।

 

হুডি আর সাধারণ টি-শার্ট পছন্দ

মার্ক জুকারবার্গ

গায়ে ধূসর একটা গেঞ্জি আর মাথায় খুব সাধারণ হুডিই পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ কোটিপতি ফেসবুকের জনক মার্ক জুকারবার্গের পছন্দ। কত পোশাকই না কিনতে পারেন মার্ক। বিশেষ করে তার মোট সম্পদের পরিমাণ যখন ৫৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু না!

কোনো দামি পোশাকে নয়, সাধারণ টি-শার্ট আর জিন্সেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। সেই সঙ্গে সবার মনকে জয় করে নিতে পারার মতো কোটি টাকা দামের হাসি! বাড়ি কেনার চেয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকতেই পছন্দ মার্কের। আর তাই এখনো পালো আল্টোর ভাড়া বাড়িতেই বাস করেন তিনি।

 

 

দুপুরের খাবার খান কর্মচারীদের সঙ্গে

আমানসিও ওর্তেগা

ব্যবসায়ী হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান সফলদের কাতারে দাঁড়ানো আমানসিও ওর্তেগা। বিশ্বখ্যাত জারা ফ্যাশন হাউসের মালিক পৃথিবীর এই অন্যতম ধনী মানুষটি। প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়েছেন তিনি। তবে সেটা নিজের অর্থ-সম্পদের পরিমাণেই। মানুষ হিসেবে ঠিক তেমনটাই রয়ে গেছেন যেমনটা তিনি ছিলেন ৪০ বছর আগেও।

খাবার খেতে গেলে এখনো নিজের কর্মীদের পাশে বসতেই ভালোবাসেন ওর্তেগা। প্রতিদিন দুপুরের খাবার কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই খান আমানসিও ওর্তেগা। চলতে-ফিরতে পছন্দ করেন আগের মতোই। বর্তমানে এই বিজনেস টাইকুনের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭১.৩ বিলিয়ন ডলার।

 

ব্যবহার করেন সাধারণ মোবাইল সেট

ওয়ারেন বাফেট

বিলিয়নিয়ার ওয়ারেন বাফেট এড়িয়ে চলেন সব ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি, যেমন— মোবাইল, ইন্টারনেট। অতিরিক্ত কর দেওয়ায় মোটেই পক্ষপাতী নন তিনি। আর তাই জিনিসপত্র কিনে রাখেন হিসাব করে।

একজন মানুষ ঠিক কতটা সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারেন তা ওয়ারেন বাফেটকে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। অথচ তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭৫.৬ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের এই অন্যতম ধনী আর বৃহত্তম লগ্নিকারক মানুষটি একেবারেই বদলাননি। বরং সেটাই ধরে রেখেছেন যেটা তিনি ছিলেন ৪০ বছর আগেও। ১৯৫৮ সালে নেবের ওমাহায় মাত্র ৩১,৫০০ ডলারে একটি বাড়িতে এখনো বাস করেন তিনি।

 

 

নিজের হাতেই করেন সব কাজ

জন কাওডওয়েল

জন কাওডওয়েল মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী। তার ইয়ট, বিমান কিংবা ভালো গাড়ি সবই রয়েছে। তারপরও তিনি এই তালিকায়।

কারণ দৈনন্দিন জীবনে নিজের মিতব্যয়িতা। তার দৈনন্দিন চলাফেরা দেখলে আপনি অবাক হবেন। প্রতিদিনের কাজকর্মে নানারকম কত খরচই তো হয় আমাদের।

কিন্তু ২.৩ বিলিয়ন ডলারের মালিক এই মানুষটি কখনই সেটা করেন না। বরং সস্তা কাপড়েই স্বস্তি পান জন।

 

 

সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত তিনি

ক্রিস্ট ওয়াল্টন

 

৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক ৬৮ বছর বয়সী ক্রিস্ট ওয়াল্টন। তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনী নারীদের মধ্যে অন্যতম।

ছেলে লুকাস ওয়াল্টনকে নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যে বসবাস করেন।

১৯৫৫ সালে জন্ম নেওয়া ক্রিস্ট ওয়াল্টনের আয়ের উৎস বিশ্বের সবচেয়ে বড় চেইন স্টোর ওয়ালমার্ট ও ফার্স্ট সোলার কোম্পানি।

এত কিছুর মালিক হয়েও খুবই সাধারণ জীবন-যাপনের সিদ্ধান্ত নেন ক্রিস্ট ওয়াল্টন।

 

 

 

চাক ফিনি  (নিজের না আছে বাড়ি, না আছে গাড়ি)

এই আইরিশ আমেরিকান ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক। তবে এর বাইরেও তার আরও সম্পদ রয়েছে বলে জানা যায়। নিজের সম্পদের হিসাব অনেকটা আড়ালেই রাখতে চান চাক ফিনি। আর তার চেয়েও আড়ালে রাখেন সেগুলোর ব্যয়ের পরিমাণ। তবে প্রতি বছরই একের পর এক দান করে আসছেন এই মানুষটি। বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডের জন্য, সেখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন আর পড়াশোনার সুব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত দুই হাতে খরচ করে যাচ্ছেন ফিনি। ৮৬ বছর বয়স্ক ফিনি খুব সহজেই পৃথিবীর অন্যতম জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদে বাস করতে পারলেও বাস্তবে এই মানুষটির না আছে নিজের কোনো বাড়ি, না আছে কোনো গাড়ি। আর দশটা মানুষের মতোই প্রতিদিন গণপরিবহনে ঠেলাঠেলি করে উঠে অভ্যস্ত চাক ফিনি।

 

একেবারেই সাধারণ তিনি

হুয়াঙ গুয়াঙগিউ

 

গোম ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠানের হুয়াঙ গুয়াঙগিউ। বিলিয়নিয়ার হলেও খুব সাধারণ জীবন-যাপন করেন হুয়াঙ।

ঘুষ, প্রতারণাসহ আরও অনেক কিছুর অভিযোগে একদিন ধরা পড়তে হয় হুয়াঙকে।

নিজের ক্ষমতা হারিয়ে জেলে কাটান তিনি ১৪ বছর।

টাকার বিনিময়ে বাইরে চলে আসতে পারলেও এখনো আরও দশটা সাধারণ মানুষ কিংবা তাদের চেয়েও নীচু জীবন-যাত্রায় অভ্যস্ত হুয়াঙ।

 

 

 

 

ব্যবহার করেন ইকোনমি ক্লাস

ইঙ্গভার ক্যামপার্ড

সুইডেনের বিখ্যাত আসবাবপত্রের প্রতিষ্ঠান আইকেইএ-এর প্রতিষ্ঠাতা ইঙ্গভার ফিওডোর ক্যামপার্ড। খুব সাধারণ আর দশটা মানুষের মতো দেখতে, চলতে ও থাকতে পছন্দ করেন ইঙ্গভার।

আর তাতেই অভ্যস্ত তিনি। ৬ বিলিয়ন সম্পদের মালিক এই মানুষটি বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দা। ব্যবহার করেন একটি ভলভো ২৪০ গাড়ি।

সাধারণত বিমানে ইকোনমি ক্লাসে উঠতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

সর্বশেষ খবর