শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

অমুসলিম দেশে বিখ্যাত মসজিদ

অমুসলিম দেশে বিখ্যাত মসজিদ

মুসলিমদের ধর্মীয় প্রার্থনালয় ও পবিত্র স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় মসজিদ। ধর্মের নানা আচার পালন, শিক্ষা বিস্তার ও নৈতিক চরিত্র গঠনে মসজিদ পালন করে অনন্য ভূমিকা। তাই তো বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে ছোট-বড় একাধিক মসজিদের দেখা মেলে। একইভাবে বিশ্বের অমুসলিম দেশগুলোতেও রয়েছে উল্লেখ করার মতো বেশকিছু মসজিদ। সেসব দেশে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদগুলো। বিস্ময়কর সৌন্দর্য, আয়তন ও স্থাপত্যশৈলীর এতটুকু অভাব নেই তাতে। বিশ্বের অমুসলিম দেশে বিখ্যাত মসজিদ নিয়ে লিখেছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

জামে মসজিদ [দিল্লি, ভারত]

দিল্লির মসজিদ-ই-জাহান-নুমা মসজিদটি সাধারণত পরিচিত জামে মসজিদ নামে। ভারতের বৃহত্তর মসজিদ এটি। ১৬৪৪ সাল থেকে ১৬৫৬ সাল পর্যন্ত সময় ব্যয় করে মুঘল সম্রাট শাহজাহান এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তখন ব্যয় হয় ১ মিলিয়ন রুপি। মসজিদটি প্রবর্তিত হয় উজবেকিস্তানের ইমামের মাধ্যমে। মসজিদের ডিজাইনে রয়েছে তিনটি বড় দরজা, চারটি মিনার, দুটি ৪০ মিটার উঁচু মিনার। এটি নির্মাণ করা হয় সম্পূর্ণ লাল বালু পাথর ও সাদা মার্বেল দিয়ে। মসজিদের পূর্বদিকের গেটটি ব্যবহার করা হতো সম্রাটের ঢোকার জন্য। মসজিদের ৪০৮ স্কয়ার ফুটের হলরুমে একই সঙ্গে ২৫ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদে রয়েছে তিনটি গম্বুজ। এর মেঝেতে ৮৯৯টি কালো দাগ দিয়ে প্রার্থনাকারীদের অবস্থানের লাইন নির্দেশ করা হয়েছে। মসজিদটি সাদা ও কালো মার্বেল পাথর দিয়ে এমনভাবে সাজানো হঠাৎ দেখেই মনে হবে সব জায়গায় নামাজের পাটি বিছানো। জামে মসজিদের স্থপত্য পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণ বাদশাহী মসজিদের আদলে। পাকিস্তানের লাহোরে শাহজাহানের ছেলে আওরঙ্গজেবের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের আদলেই দিল্লির জামে মসজিদটি তৈরি করা হয়। ২০০৬ এবং ২০১০ সালে মসজিদটি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়।

 

ইসলামিক সেন্টার অব আমেরিকা [মিশিগান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র]

‘ইসলামিক সেন্টার অব আমেরিকা’ মিশিগান শহরের ডারবানে অবস্থিত। উত্তর আমেরিকায় ২০০৫ সালে তৈরি এই মসজিদ সবচেয়ে বড় ও পুরনো শাই মসজিদ। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক সেন্টার আমেরিকার মুসলিম অধ্যুষিত এই এলাকায় একটি মসজিদের প্রয়োজন অনুভব করে। ১৯৪৯ সালে ইমাম মোহাম্মদ জাওয়াদ সিরি আমেরিকায় সংখ্যালঘু গ্রুপের কাছে এসে মসজিদের প্রস্তাব রাখেন। ওই গ্রুপটি তার কাছে ইসলামের বাণী শুনত। এরপর তার উদ্যোগে মসজিদটি তৈরি হয়। ধীরে ধীরে ওই মসজিদে এলাকার মুসলিম সমাগম বাড়তে থাকে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে একবার মসজিদে ভাঙচুর করে এন্টি সিয়া গ্রাফিটি ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়। মসজিদটি নির্মাণ করা হয় সেখানকার মুসলিমদের সহায়তার উদ্দেশ্যে। মুসলিমদের মাঝে ধর্মীয় জ্ঞান বিস্তার ছিল এই মসজিদের অন্যতম লক্ষ্য। একই সঙ্গে সামাজিক, নৈতিক, এবং ধর্মীয় মানদণ্ডে আমেরিকায় মুসলিম সম্প্রদায় গড়ে তোলার কাজ করে। এখানে আরবি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে আমেরিকান সমাজে ইসলামের জ্ঞান পৌঁছানো এবং আরব সংস্কৃতির বিস্তার লাভ ও ইতিবাচক সামাজিক সম্পর্ক গঠনে সহায়তা করে।

 

সেন্ট্রাল মসজিদ [লন্ডন, যুক্তরাজ্য]

লন্ডন সেন্ট্রাল মসজিদ ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা রিজেন্টস পার্ক মসজিদ নামে পরিচিত। এটি লন্ডনের রিজেন্টস পার্কের পাশেই অবস্থিত। মসজিদটির নকশা করেছেন স্থপতি ফ্রেদেরিক জিববার্ড। মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৭৮ সালে। মসজিদের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে দৃশ্যমান আছে এর বিশালাকার সোনালি রঙের গম্বুজটি। মসজিদের প্রধান হলরুমে একসঙ্গে ৫ হাজার প্রার্থনাকারী অবস্থান নিতে পারবেন। এখানে নারীদের জন্যও সুব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের মেঝে মোড়ানো বৃহদাকার একটি কার্পেট দিয়ে। আছে যৎসামান্য কিছু ফার্নিচার। গম্বুজের ভিতরের দিকটি সাজানো হয়েছে ইসলামী ঐতিহ্যের কিছু ভাঙা আকৃতির উদাহরণ দিয়ে। মসজিদ কম্পাউন্ডে ছোট একটি বইয়ের দোকান ও একটি হালাল ক্যাফে আছে। মসজিদে নানা রকম ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন হয়। এই সংস্কৃতির যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৪ সালে কিং জর্জ-৬ এর হাত ধরে। ব্রিটেনে মুসলিম কমিউনিটির জন্য মসজিদের জমিটিও তিনি দান করেন। তবে কায়রোর কিং ফারুকের কাছ থেকে মিসর ও সুদানে অ্যাঙ্গলিকান ক্যাথেড্রাল স্থাপনের জন্য জমি নেওয়া হয়।

 

কলোগনি সেন্ট্রাল মসজিদ [কলোগনি,  জার্মানি]

জার্মান মুসলিমদের দ্বারা স্বীকৃত সবচেয়ে বড় মসজিদ হলো কলোগনি সেন্ট্রাল মসজিদটি। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর মসজিদটি বৃহত্তর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কলোগনি সেন্ট্রাল মসজিদের ডিজাইনটি করা হয়েছে অটোমান আর্কিটেকচুয়াল স্টাইলে। এই মসজিদের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে কাচ দিয়ে। দুটি মিনার ও একটি গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। ওপর থেকে এর মনোরম দৃশ্য যে কারও নজর কাড়বে। এ মসজিদে রয়েছে একটি বাজার। সেখানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও যায় সাশ্রয়ী মূল্যে কেনাকাটা করতে। ইউরোপের মধ্যে এই মসজিদটি সবচেয়ে বড়। এর মিনারের উচ্চতা বেশি। মসজিদের আয়তন ৪৮ হাজার বর্গমিটার। এখানে প্রায় চার হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে। মসজিদের ডিজাইনটি অটোমান আর্কিটেকচার স্টাইলে করা হয়েছে। এর একটি কংক্রিট ও গ্লাসের গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়াও দুটি ৫৫ মিটারের মিনার আছে। মসজিদে ঢোকার পথে পড়বে বাজার। বয়ানের কক্ষটি নিচতলায়। তবে নামাজ পড়ার জন্য ব্যবস্থা আছে ওপরের তলাগুলোতে। বহু ইসলামী বই মিলবে এখানকার লাইব্রেরিতে।

 

লাল মসজিদ [কলম্বো, শ্রীলঙ্কা]

কলম্বোর সবচেয়ে পুরনো এবং দর্শনার্থীদের কাছে পছন্দের জায়গা লাল মসজিদ। মূলত জামি-উল-আলফার মসজিদের দেয়ালের রঙের জন্য পরবর্তীতে নামকরণ করা হয়েছে লাল মসজিদ নামে। মসজিদ নির্মাণে সময় লাগে ১৯০৮-০৯ সাল পর্যন্ত। সেখানকার বোরাহ মুসলিম কমিউনিটি লাল মসজিদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার নামাজ আদায়ের উদ্দেশে লাল মসজিদ নির্মাণ করেন তারা।

সর্বশেষ খবর