বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
হিমু-মিসির আলি-রূপা এবং অন্যান্য...

বিস্ময় জাগানিয়া যত চরিত্র

সাইফ ইমন

বিস্ময় জাগানিয়া যত চরিত্র

হিমুর হাতে নীলপদ্ম। রাস্তা থেকেই দেখা যাচ্ছে রূপার ঘরে বাতি জ্বলছে। হাতের নীলপদ্মগুলো রূপার জন্যই অথচ তা কখনোই দেওয়া হয়নি তাকে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হাতের নীলপদ্মগুলো রাস্তার পাশে ল্যাম্পপোস্টের নিচে রেখে ফিরে যায় হিমু। কারণ মহাপুরুষ হওয়ার প্রক্রিয়ার বাঁধনে জড়ানোর নিয়ম নেই। ঠিক এমনই এক প্রেমের রসায়ন ফুটে উঠেছে কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের ‘হিমু’ চরিত্রে। হিমুর হাত ধরেই কলম জাদুকরের আরেকটি সৃষ্টি এই ‘রূপা’। হিমুর মতো এক বাউণ্ডুলেকে ভালোবাসে এই অসম্ভব রূপবতী মেয়েটি। সবসময় অপেক্ষা করে হিমুর পথের দিকে তাকিয়ে। অথচ জগতের যাবতীয় সকল বিষয়ে নির্লিপ্ত হিমু। সবার ধারণা তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে। খালি পায়ে পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবি পরে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুড়ে বেড়ায়। উদ্ভট সব কাজই হিমুর মূল কর্মকাণ্ড। যুক্তির ধার ধারেন না। তারপরেও কোথায় যেন অদৃশ্য সব যুক্তি খেলা করে অযৌক্তিকভাবেই। এমনই এক রহস্যময় চরিত্র হিমু।

হুমায়ূন আহমেদের চরিত্র রূপায়ণ সবসময়ই বিস্ময় জাগিয়েছে। তার চরিত্রগুলো পাঠক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের আশপাশের পানওয়ালা কিংবা মধ্যবিত্ত পিতা থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে শিল্পপতি তনয়া চিত্রলেখার মতো চরিত্ররা হুমায়ূন আহমেদের জাদুর স্পর্শে পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এমন আরও কয়েকটি চরিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিসির আলি, শুভ্র, বাকের ভাই ইত্যাদি। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা চরিত্রের আরেকটি হচ্ছে ‘মিসির আলি’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপকের সামনে দাঁড়ালে আপনার তেমন কিছুই মনে হবে না। এমনই বিশেষত্বহীন চেহারা। কিন্তু ঘটনা ঘটবে যখন তিনি একে একে আপনার মনের সব কথা আপনি বলার আগেই বলতে শুরু করবেন তখন। হয়তো ভাবছেন মিসির আলিও বুঝি আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পন্ন কেউ। মোটেই না। যুক্তির বাইরে এক পাঁ-ও এদিক সেদিক ফেলতে রাজি না মিশির আলি। তিনি মোটা ফ্রেমের ভারী চশমা পরেন। কিছুতেই বিশ্বাস করেন না অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা। যত রহস্যময় ঘটনাই ঘটুক যুক্তি দিয়ে তার সমাধান খুঁজে নেন। এই চরিত্রে আরও একটি বিশেষ দিক তিনি কোনো কিছুকেই অস্বীকার করেন না। তার দাবি মানুষ যুক্তির বাইরে চিন্তা করে তার জ্ঞানের অভাবে। যুক্তি দিয়ে দেখলেই সব কিছুর ব্যাখ্যা একবারে পানির মতন সহজ। ধরুন আপনি মিশির আলিকে বললেন আপনি ভূত দেখেছেন। তিনি কিন্তু অস্বীকার করবেন না বরং আপনার সঙ্গে একমত হবেন যে আপনি আসলেই ভূত দেখেছেন। একটা সময় পর আবিষ্কার করবেন আপনার দেখা ভূত জলজ্যান্ত মানুষ হিসেবেই ধরা দিয়েছে আপনার কাছে। তখন নিজেই বলতে বাধ্য হবেন ভূত বলতে আসলেই কিছু নেই। আর মিসির আলির কথা ভেবে মনে হবে এই মানুষটার সাথে দেখা না হলে জীবনটাই বৃথা যেত।

হুমায়ূন আহমেদের আরও একটি জনপ্রিয় চরিত্র হচ্ছে ‘শুভ্র’। চরিত্রটি তার নামের অর্থের মতোই শুদ্ধতম এক মানবের প্রতিচ্ছবি হয়ে ফুটেছে। নিজেকে পৃথিবীর যাবতীয় জটিলতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে ভাবতে চান না শুভ্র। আসলে এভাবে না বলে বলা উচিত জগতের যাবতীয় সমস্যা শুভ্রর চোখেই পড়ে না। অসম্ভব সুদর্শন চেহারার শুভ্রর মাঝে এক বুদ্ধিদীপ্ত চরিত্রকেই খুঁজে পাওয়া যায়। শুধুমাত্র চিন্তা করেই শুভ্র আবিষ্কার করে যে যাকে সে মা বলে জেনে এসেছে তিনি তার আসল মা নন। তার চরিত্রের আরও একটি বিশেষ দিক হচ্ছে শুভ্র মিথ্যা বলতে পারে না। নেতিবাচক কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করে না। প্রকৃতির শুদ্ধতম সন্তানের প্রতিনিধিত্ব করছে হুমায়ূন আহমেদের ‘শুভ্র’।

এর বাইরেও রয়েছে গল্প উপন্যাসে অসংখ্য হুমায়ূনীয় চরিত্র। যেমন ধরা যাক ‘সিডিসি’র কথা। কল্পবিজ্ঞানের এই চরিত্রটি হলো সুদূর ভবিষ্যতের একটি অতি ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার বা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা। মানুষের কল্যাণ করাই যার কাজ। অথচ তাকে আমরা দেখতে পাই নেতিবাচক ভূমিকায়। কিন্তু গল্পের শেষে কখনো জয় হয় সিডিসির কখনো মানবতার। অথচ সিডিসি কিন্তু মানবতার বিরুদ্ধে নয়। আর হুমায়ূন আহমেদের নাটকের চরিত্র হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাকের ভাই। কোনো গল্প, উপন্যাস কিংবা নাটকের চরিত্র যে বাস্তবজীবনে এভাবে দৃশ্যমান হয় তা বোধ হয় আগে কেউ দেখেনি। হুুমায়ূন আহমেদই সেই বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টি করেন ‘বাকের ভাই’ চরিত্রের মাধ্যমে। হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয় নাটকটি। এ নাটকে ‘বাকের ভাই’র চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর। নাটকের শেষে দেখা যায় নির্দোষ বাকের ভাইকে ফাঁসি দেওয়া হয়। আর কাল্পনিক এই চরিত্রের পক্ষে ঢাকার রাজপথে মিছিল পর্যন্ত হয়।

সর্বশেষ খবর