রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
কলকাতায় ভূতরহস্য

পুতুল বাড়ির বদনাম

তানভীর আহমেদ

পুতুল বাড়ির বদনাম

ভূতের ভয়ে কার না বুক কাঁপে? যিনি ভূতের ভয়ে কাবু নন তারও কৌতূহলের বারুদে আগুন লাগে ভূতের বাড়ির কথা উঠলে। কলকাতার পুতুল বাড়িকে নিয়ে নানা কানকথা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এ পাড়া ও পাড়া পেরিয়ে গোটা ভারতেই কলকাতার পুতুল বাড়ির কুখ্যাতি। আহরিটোলার পুতুল বাড়িতে ভূতের উপদ্রব বেশ পুরনো। সেই ব্রিটিশ আমলেই কথা রটে যায়— ভূতের আনাগোনায় থাকা দায় এ বাড়িতে। কোথা থেকে এলো এই ভূত? প্রশ্নের উত্তর মিলবে এ বাড়ির ইতিহাস খুঁড়লে। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে এ বাড়ির মালিকানা ছিল ধনাঢ্য বাবুদের। বাবু সাহেবরা এ বাড়িতে চালিয়েছেন নানা নির্যাতন, অত্যাচার। ঘরের মহিলাদের তো বটেই, বাদ যায়নি ঘরের কাজের মহিলারাও। তাদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ছিল রীতিমতো কুখ্যাত। মুখ বুজে সহ্য করতে না পারলে সেসব নারীকে খুন করা ছিল পানির মতোই সহজ। বাবুদের এই অত্যাচার ও খুনখারাপি পুরো বাড়ির আবহাওয়াকে গুমোট করে তোলে। মৃত্যুর আগে নির্মমভাবে নির্যাতিত নারীদের চিৎকার ও বাঁচার আকুতি প্রাসাদসম বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হতো।

সে অত্যাচারের ফল ভুগতে হতো বাড়িটিকে। তাই হলো। বাবুদের হাতছাড়া হওয়া বাড়িতে আর কেউই স্বস্তি পায়নি। যারাই এই বাড়িতে এসেছে তারাই ভূতের উপদ্রবে পালিয়েছে। লোকশ্রুতি আছে, এই বাড়ির দোতলা ও তিনতলায় দুজন নারীর পদচারণা রয়েছে। তাদের ফিসফিস কথাবার্তা অনেকেই শুনেছেন। রাত গভীরে বাঁচার আকুতি নিয়ে নারীর কান্নার আওয়াজ যে কারও বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। এরা কারা? তাদের যারা দেখেছে, তাদের ভাষ্য হচ্ছে, পুতুলরূপী মহিলারা এ বাড়িতে আবছায়ায় ঘুরে বেড়ায়। অনেকেই এদের বলেছেন, অতৃপ্ত আত্মা। তবে ভূতের গল্পগুলো তো এমনই হয়— সে বিশ্বাস হয় কজনের? তাই বাড়ির চারপাশে নজর রাখা হয়, মাটিতে পুঁতে ফেলা নারীদের লাশের খোঁজে। স্থানীয়রা বাড়িকে নিয়ে এসব গালগল্প শুনতে শুনতে বিরক্ত।  তারা চায়, এসব থামুক এবার। কিন্তু লোকে কি তা মানবে? ভূতের ভয়, কার না হয়?

পুতুল বাড়ির ভূতেরা

বাড়ির বয়স ৩০০ হতে চলল। রোমান স্থাপত্যশৈলীতে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ির চেহারা বেশ বদলে গেছে। স্যাঁতসেঁতে দেয়ালের প্লাস্টার খসে বেরিয়ে এসেছে ইট। এতটা বছর পেরিয়ে এখনো ভুতুড়ে বাড়ির বদনামটা ঝেড়ে ফেলতে পারেনি। এ বাড়িকে এখনো লোক পুতুল বাড়ি বলেই চেনে। বাড়ির ভিতরে নারী পুতুলরূপে অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায়— এমনটা বলে কয়ে আড্ডা জমায় কলকাতার বাসিন্দারা। এখানে-ওখানে পুতুলের চলাচল আর গা হিম করে হাসির কথাও বলেন অনেকে। ভূতের দেখা পেতে কেউ কেউ ছোটেন ওই বাড়িতে।  কেউ দুই কদম এগিয়ে নিজেই বেঁধে ফেলেন বানোয়াট ভূতের গল্প।

কঠোরভাবে প্রবেশ নিষেধ

ঠিকানা ধরে অনেকেই গেছেন এই বাড়িতে। এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশ্য একটাই— ভূতের দেখা পাওয়া। ৩০০ বছর পুরনো বাড়ি। ভেঙে প্রায় ধসে পড়ার দশা। গা ছমছমে আবহাওয়া বলে দেয়, ভূতদের জন্য বেশ মানানসই পরিবেশ! বাড়ির প্রবেশমুখে নোটিস ঝুলানো। তাতে লেখা— কঠোরভাবে প্রবেশ নিষেধ। এটুকু পড়েই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এরপরই লেখা— ‘অযথা গুজবে কান দেবেন না। স্যোসাল নেটওয়ার্কে ভ্রান্ত খবরে বিভ্রান্ত হবেন না। ভূত সংক্রান্ত তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা।  এ ব্যাপারে জানতে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করবেন না।’ স্থানীয়রাও বলেন, ওসব ভূতের গল্প সব বানোয়াট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর