সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রনায়ক হত্যাকাণ্ড

রাষ্ট্রনায়ক হত্যাকাণ্ড

একটি দেশের ভবিষ্যৎ স্বপ্নদ্রষ্টা, রাষ্ট্রনায়করা। তারা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়ার কথা বলেন। ন্যায্য অধিকার আদায়ে তারা রাজপথে নামেন। আন্দোলন, বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। অসীম সাহসিকতায় তারা নতুন করে লেখেন ইতিহাস। দেশে দেশে কিংবদন্তি রাষ্ট্রনায়করা মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধায় চির স্মরণীয়। মহান এই নেতাদের সংগ্রামমুখর জীবনের পরিণতি কখনো কখনো গোটা পৃথিবীর মানুষকে থমকে দেয়। আততায়ীদের হাতে তাদের করুণ মৃত্যু ঘটে— নির্মম হত্যাকাণ্ডে ইতিহাস হয় কলঙ্কময়। এমনই কয়েকজন রাষ্ট্রনায়কের হত্যাকাণ্ড নিয়ে লিখেছেন— আবদুল কাদের

 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি জাতির জনক। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে এবং শেষে ১৯৭১ সালে সেই প্রতিবাদ মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল। বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। ভোরে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী বিশ্বাসঘাতকের হাতে নিহত হন। সেদিন বঙ্গবন্ধুুর সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন নেছা, বঙ্গবন্ধুুর জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা লে. শেখ কামাল, পুত্র লে. শেখ জামাল, কনিষ্ঠ শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবি সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভ্রাতুষ্পুত্র শহীদ সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল আহমেদ এবং ১৪ বছরের কিশোর আবদুল নঈম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়স্বজনকে ঘাতকরা হত্যা করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হওয়ার পর দেশে সামরিক শাসন জারি হয়। ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন। এই দিবসটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে বাঙালি জাতি পালন করে। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু

বাংলাদেশকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংঘাতের দিকে টেনে নেয়। সেনা অভ্যুত্থানের নেতারা অল্পদিনের মধ্যেই উচ্ছেদ হয়ে যান এবং অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান আর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে দেশে সৃষ্টি হয় এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার এবং ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলা করেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানির পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিশ্চিত করেন। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বাদী-বিবাদীর আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে চার দফায় রায় প্রকাশ হয়, সর্বশেষ আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর থেকে টানা ২৯ কর্মদিবস শুনানি করার পর ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে। এই রায়ের মাধ্যমে ১৩ বছর ধরে চলা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আইনি ও বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

 

কিংবদন্তি রাষ্ট্রনেতা

মহাত্মা গান্ধী

১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি। নয়াদিল্লির বিরলা ভবনে তখন চলছিল বাপুর সান্ধ্যকালীন পথসভা। ইতিহাস তখন দেখেছিল এক জঘন্য হত্যাকাণ্ড। সেই পথসভায় বাপুকে নাথুরাম গডস সবার সামনেই গুলি করেন। নিমিষেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাপু।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাপু। বাপু ছিলেন ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ শাসনবিরোধী অহিংস আন্দোলনের নেতা। ভক্তরা মহাত্মা গান্ধীকে বাপু বলেই ডাকতেন, যার অর্থ পিতা। আলোচিত সেই হত্যাকাণ্ডে নাথুরাম গডস বেরেটা এম-১৯৩৪ ব্যবহার করেছিলেন। যদিও এর আগে ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৪ সাল মোট ছয়বার বাপুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।

ভাগ্য তখন বাপুর সহায় ছিল। তিনি বেঁচে যান। আগের ব্যর্থ চেষ্টাগুলোর পর অন্য একজন সহযোগী নারায়ণ আপতেসহ নাথুরাম গডস মুম্বাই হয়ে পুনেতে আসেন। সেখান থেকে গঙ্গাধর নামের একজনের সহযোগিতায় বেরেটা এম-১৯৩৪ সেমি অটোমেটিক পিস্তলটি ক্রয় করেছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাটি করা হয়েছিল দিল্লি রেল স্টেশনে।

এই তিনজন ছাড়াও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনায় আরও চারজন অভিযুক্ত ছিলেন। ১৯৪৯ সালের ১৫ নভেম্বর মহাত্মা গান্ধীর এ হত্যাকারীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

 

 

মার্টিন লুথার কিং

১৯৬৩ সালের ২৫ মার্চ। আমেরিকার কালো মানুষের নেতা রাজধানীতে হাজির হয়েছিলেন লাখো মানুষের মিছিল নিয়ে। সাদা মানুষের সমান মর্যাদা আন্দোলনে সেদিন শামিল হয়েছিলেন সবাই। সেদিন সদর্পণে কালো-সাদা নির্বিশেষে সবার অধিকার আদায়ে ভাষণ দিয়েছিলেন আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী। এরপর থেকেই এফবিআইয়ের তালিকায় মার্টিন লুথার কিংয়ের নাম উঠে এলো ১ নম্বর জাতীয় শত্রু হিসেবে এবং কমিউনিস্টদের তালিকায় ছিলেন বন্ধু হিসেবে। এরপর জীবন দিয়েই সেই বর্ণবাদ আন্দোলনের মূল্য দিতে হয়েছিল মার্টিন লুথার কিংকে। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থি যুবক জেমস আর্ল রে-এর গুলিতে নিহত হন বর্ণবাদ আন্দোলনের মহানায়ক মার্টিন লুথার কিং। যার মুক্তির মূল মন্ত্রই ছিল ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম।’ কালো-সাদা নির্বিশেষে নিখিল মানবের প্রতিনিধি হয়েছিলেন তিনি। কর্মজীবনের শুরু থেকে মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। নাগরিক অধিকার রক্ষাই তার উদ্দেশ্য ছিল। আমেরিকার সিভিল রাইট নেতা হাওয়ার্ডস থমসন এবং ভারতের নন-ভায়োলেন্সের জনক মহাত্মা গান্ধীর মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে মার্টিন লুথার কিং অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে আমৃত্যু এই সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তাদের নৈতিক চরিত্র গঠন নিশ্চিত করাও ছিল এই সংগঠনটির কাজ। মার্কিন এই মানবাধিকার কর্মী আমৃত্যু নির্যাতিত, অত্যাচারিত নিপীড়িত আর অধিকারবঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন।

 

ইন্দিরা গান্ধী

ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৮০ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৮৪-এর অক্টোবর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তখন রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তের মুখোমুখি ছিলেন। তখন শিখ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত চরম রূপ নিয়েছিল। শিখ সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মস্থান অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েকজন শিখ জঙ্গি। তাদের উত্খাত করতেই সেনা অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন মিসেস গান্ধী। তখন ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা রক্ষীর কাজে নিয়োজিত শিখদের সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু বিষয়টি মিসেস গান্ধী মানতে রাজি হননি। দিনটি ছিল ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে মিসেস গান্ধী সফদর জং রোডের বাসভবনের বাগানে হাঁটছিলেন। সেদিন তার বাসভবনে একটা ডকুমেন্টারির শুটিং হওয়ার কথা ছিল। অভিনেতা পিটার উস্তিনভ তার ওপর একটা ডকুমেন্টারি তৈরি করছিলেন। এ জন্য বাগানে মিসেস গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তখনই শিখ দেহরক্ষী সতওয়ান্ত সিং ও বেয়ান্ত সিং তাকে গুলি ছোড়ে। শেষমেশ নিজ দেহরক্ষীর গুলিতেই নিহত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। যদিও এর আগে মিসেস গান্ধীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী সে সবের তোয়াক্কা করেননি। ইন্দিরা গান্ধীর শেষকৃত্য করা হয়েছিল ১৯৮৪ সালের ১৩ নভেম্বর। তার হত্যার পর পর গোটা রাজ্যে দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছিল। দাঙ্গা চলে ৩১ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। দফায় দফায় চলে এ দাঙ্গা। সেই দাঙ্গায় প্রায় ৩ হাজার শিখ প্রাণ হারিয়েছিল।

 

জন এফ কেনেডি

১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর, রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছিল মার্কিনিদের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন ফিটজেরাল্ড কেনেডি। কেনেডি ১৯৬১ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। সেদিন এক রাজনৈতিক সফরে যান প্রেসিডেন্ট কেনেডি। তিনি যখন মোটরগাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, সে সময় এক আততায়ী গুলি চালায়। গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কেনেডি আধা ঘণ্টা পরে হাসপাতালে মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরে স্কুল বুক ডিপোজিটোরির ছয়তলা ভবন থেকে তাকে গুলি করেছিল বলে ধারণা করা হয়। ঘটনার দিনই ভবনটির গুদামখানার কর্মচারী লি হার্ভে অসওয়াল্ডকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়।

যদিও অসওয়াল্ড হত্যার দায় স্বীকার করেননি, করাতেও পারেননি। ঠিক তার দুই দিন পর স্থানীয় এক নৈশক্লাবের মালিক জ্যাক রুবি তাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর থেকে রহস্য আরও ঘনীভূত হতে থাকে। কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক। ইতিহাসবিদরা এখনো লি হার্ভে অসওয়াল্ডের ব্যাপারে সন্দিহান। অনেক মার্কিনি বিশ্বাস করেন যে, কেনেডির হত্যার পেছনে কেবল এক ব্যক্তি জড়িত। আবার অনেকেই মনে করেন, কোনো মাফিয়া দল অথবা দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) কেনেডিকে হত্যা করেছে। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও ছিল। ‘দে কিল্ড আওয়ার প্রেসিডেন্ট’ বই থেকে পাওয়া যায়, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় যেতে চেয়েছিলেন বলেই হয়তো হত্যা করা হয়। আবার কিউবার সঙ্গে বে অব পিগসের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর সেনা কর্মকর্তা-আইনপ্রণেতাদের লেনদেনের চক্রকে ভাঙতে চেয়েছিলেন বলেই।’

 

 

আব্রাহাম লিংকন

গৃহযুদ্ধ তখন শেষের দিকে। টানা পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ছিল দাস প্রথা বাতিলের আরেকটা জয়। নিজেদের দেশে আরেকটা শুভক্ষণ যখন এগিয়ে আসছে তখন তো শান্তিতে থাকারই কথা। কিন্তু তা আর হলো না, আততায়ী জন উইকিস বোথের হাতে প্রাণ হারান আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল, সন্ধ্যায় স্ত্রীকে নিয়ে কমেডি শো দেখতে গিয়েছিলেন ওয়াশিংটন ডিসি ফোর্ড থিয়েটারে। মাত্র ৩/৪ ফিট পেছন থেকে সরাসরি মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় আমেরিকান এই প্রেসিডেন্টকে। বোথ ছিলেন একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। দক্ষিণের কনফেডারেটের স্টেট অব আমেরিকার একজন সহযোগী। এর আগে একই বছরে বোথ ও তার ছয়জন সহকারী একটা নির্দিষ্ট জায়গায় প্রেসিডেন্ট লিংকনের জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা চেয়েছিল, যদি লিংকনকে জিম্মি হিসেবে ধরে রাখা যায়, তাহলে তার প্রাণের বিনিময়ে কনফেডারেটের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা কারাবন্দীদের ছাড়িয়ে আনা যাবে।

কিন্তু তার এই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। প্রেসিডেন্ট কোনো এক কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ওই স্থানে পৌঁছাননি। এরপরই তাদের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায়। তারা নতুন ছক কষতে শুরু করে। তখন থিয়েটারে যে কনফেডারেটের গুপ্তচর ছিল কেউ জানত না। তাই প্রবেশ নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। যখন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ সহকারে নাটক দেখছিলেন, তখনই বোথ পেছন থেকে তার মাথার বাম পাশে গুলি করেন। খুব কাছে থেকে গুলি করায় তা চোখ দিয়ে বের হয়ে যায়। এর পরদিন অর্থাৎ ১৫ তারিখ সকাল ৭টা ২২ মিনিটে প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হয়।

 

 

 

লিয়াকত আলী খান

১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর, পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে রাওয়ালপিন্ডির কোম্পানিবাগের মুসলিম সিটি লীগের একটি জনসভায় গুলি করে হত্য করা হয়। আততায়ী নওয়াবজাদার বুকে দুবার গুলি করে। পুলিশ ঘটনাস্থলেই আততায়ীকে গুলি করে। পরবর্তীতে তদন্তে জানা যায় আততায়ী লোকটির নাম সাদ আকবর বারাক। এদিকে নওয়াবজাদা লিয়াকত আলী খানকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং রক্ত দেওয়া হলেও তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। নওয়াবজাদা লিয়াকত আলী খান ছিলেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। তাকে পাকিস্তানের জাতির পিতা মানা হয়।

রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবী হিসেবে তার ছিল যথেষ্ট সুনাম। প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়াও তিনি পাকিস্তানের কাশ্মীরবিষয়ক প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। ১৯৪৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার হত্যাকাণ্ড নিয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন। কেউ বলছেন আফগানিস্তানের তৎকালীন সরকারকে ব্যবহার করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। সেই সময়ে ইরানের তেলক্ষেত্রগুলো থেকে তেল উত্তোলন করতে চাইছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর জন্য তেহরানের সঙ্গে চুক্তি করতে যুক্তরাষ্ট্র লিয়াকতের সাহায্য চায়। ওই সময় পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের ভালো সম্পর্ক ছিল। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ৬৪ বছর পর সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে প্রকাশিত সে সময়কার গোপন নথিপত্র থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। সন্দেহভাজন হিসেবে অনেককে জেরাও করেছিল এই কমিশন, সামনে এসেছিল বিভিন্ন রকম মতামতও কিন্তু এর একটিও প্রমাণ করার মতো ছিল না বলে এতদিনেও এই রহস্যের সমাধান করা সম্ভব হয়নি।

 

 

রফিক হারিরি

লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরিকে হত্যা করা হয় ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। হত্যাকাণ্ডের দিন সেন্ট জর্জ হোটেলের পাশে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। হোটেলের পাশে একটি মোটর সাইকেলে এক হাজার কেজি ওজনের বোমা রাখা ছিল। এই হামলায় হারিরিসহ ২৩ জন নিহত এবং ২২৬ জন আহত হয়েছিলেন। এই ঘটনায় ইউএনআইআইসিআইয়ের প্রথম দুটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে সিরিয়ার সরকার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের সংবাদ অনুসন্ধানের ভিত্তিতে, বিশেষ জাতিসংঘের তদন্ত দল হিজবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের জন্য দৃঢ় প্রমাণের কথা বার বার বলে আসছে। এখনো লেবাননের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তদন্ত চলছে। সম্প্রতি হেগের ট্রাইব্যুনালে প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি হত্যা মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। সিরিয়া-সমর্থিত শিয়া জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর চার সদস্য ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। যদিও হিজবুল্লাহ বরাবরের মতই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে হারিরি হত্যাকাণ্ডের পরই অভিযোগ উঠেছিল, সিরিয়াপন্থি লেবাননের একদল জেনারেল এই হামলায় জড়িত। এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডটি লেবাননের ব্যাপক রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটায়। এর মধ্যে সিডার বিপ্লব এবং লেবানন থেকে সিরিয়ান সৈন্য প্রত্যাহার ছিল অন্যতম ঘটনা।

 

 

থমাস ম্যাকগি

থমাস হিউজ ম্যাকগি একজন আইরিশ জাতীয়তাবাদী, ক্যাথলিক মুখপাত্র, সাংবাদিক ছিলেন। পরবর্তীতে তার পরিচয়ে যোগ হয় রাষ্ট্রনায়ক। কানাডিয়ান কনফেডারেশনের জনক তিনি। কানাডার এই রাষ্ট্রনায়কের জীবনেও ঘটে করুণ ট্র্যাজেডি। কানাডার ইতিহাসে তিনিই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যে আততায়ীর হাতে মৃত্যুবরণ করেন। কানাডার অর্থনীতির উন্নয়ন, আধুনিক শহর, রেলওয়ে নির্মাণ এবং অভিবাসীদের উন্নয়নে তার ভূমিকা অতুলনীয়। দেশের রেলওয়েসহ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় তিনি যুগান্তরকারী উন্নয়ন ঘটান। ১৮৬৮ সালে তিনি সংসদীয় বিতর্কে যোগ দিতে বেরিয়ে যান। তখন ছিল মধ্যরাত। তিনি তার স্পার্কস সেন্ট পলিং হাউসে যখন পৌঁছলেন তখন রাত ২টা বাজে। ম্যাক তার বোর্ডিং বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেন।

কিন্তু ভিতর থেকেই দরজা বন্ধ। এবার তিনি অপেক্ষা করছিলেন কখন ভিতর থেকে গৃহকর্ত্রী দরজা খুলবেন! কিন্তু দরজা খুললেন আততায়ী। হঠাৎ করেই আততায়ীকে দেখে ম্যাকগি কিছুটা ভরকে যান। সেই আততায়ী ছিলেন তথাকথিত প্যাট্রিক জে হোয়েলান। প্যাট্রিক কানাডিয়ান এই প্রধানমন্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। আর এই আক্রমণেই ম্যাকগি প্রাণ হারান। যদিও পরবর্তীতে ঘাতক প্যাট্রিক জে হোয়েলানকে আটক করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। বিচারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর