বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

সুন্দরী প্রতিযোগিতার যত কথা

সুন্দরী রমণীরা সব সময়ই পুরুষকে আকর্ষণ করে, অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সুন্দরী প্রতিযোগিতা। শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নারীর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সাহস, চতুরতা, মানসিকতা, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয় সুন্দরী প্রতিযোগিতায়। এই প্রতিযোগিতার রয়েছে একটি ইতিহাস। সুন্দরী প্রতিযোগিতার নানা দিক নিয়ে লিখেছেন— সাইফ ইমন

 

যেভাবে শুরু

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৮৫৪ সালে। কিন্তু তখনকার মার্কিন সমাজ ছিল রক্ষণশীল। আর এ কারণেই খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি সেই প্রতিযোগিতাটি। সে সময় মার্কিন জনগণ এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। এক সময় বাধার মুখে প্রতিযোগিতাটি বন্ধ করে দিতে হয়। এরপর প্রতিযোগিতার ধরন একটু পরিবর্তন করে আবারও সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ‘ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতা’ নামে নতুন সেই প্রতিযোগিতা বেশ কিছুদিন চলে। এভাবে কিছুদিন পর ১৯২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আাাধুনিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার শুরু হয়। তবে তা জনগণের সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই সুন্দরী প্রতিযোগিতা মানুষের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক সিটির হোটেলসমূহের কর্তৃপক্ষরা হোটেলগুলোতে ভ্রমণকারীদের বেশি সময় ধরে আটকে রাখার উপায় হিসেবে মেয়েদের সুইমস্যুটনির্ভর সেই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এটাই আধুনিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার আদি নিদর্শন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে কর্মরত সুন্দরী নারীদের নিয়ে প্রতিযোগিতার শুরু হয়। এর মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত সেরা সুন্দরী। এরপর আয়োজকরা সংক্ষিপ্তভাবে একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ১৯৫১ সালে। তা ছিল বর্তমান ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার আদলে অনেকটা। কিন্তু এবারও রক্ষণশীল সমাজের বাধা আসে। রক্ষণশীলতার নামে তারা সামাজিকভাবে এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে জড়িতদের হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় এক সময় সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিজয়ীকে রক্ষণশীল সমাজ প্রত্যাখ্যান করে। এত কিছু সত্ত্বেও কিন্তু থেমে থাকেনি এই প্রতিযোগিতা। ‘মিস ইউনিভার্স’ ও ‘মিস ইউএসএ’ প্রতিযোগিতার শুরু হয় ১৯৫২ সালে। ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতা। ১৯৫৫ সালে ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতাটি টেলিভিশনে প্রচার করা শুরু হয়। ফলে এই সুন্দরী প্রতিযোগিতা প্রসার পায় সর্বত্র। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্যাসিফিক মিলস নামে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ক্লথিং কোম্পানি এই প্রতিযোগিতা পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। ১৯৯৬ সালে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠান এই সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০০১ সাল পর্যন্ত তারা এই প্রতিযোগিতা পরিচালনা করে। বর্তমানে মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে আসছে। আরও একটি পুরনো ও প্রধান আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতা হচ্ছে মিস ওয়ার্ল্ড। যুক্তরাজ্যের এরিক মোর্লে ১৯৫১ সালে এই প্রতিযোগিতার গোড়াপত্তন করেন। ২০০০ সালে এরিকের মৃত্যুর পর থেকে তার স্ত্রী জুলিয়া মোর্লে এই প্রতিযোগিতার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব্ব পালন করছেন। ১৯৭১ সালের পর বিভিন্ন দেশে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নানা ধরনের সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়ে আসছে।

 

প্রথম  প্রতিযোগিতা

পৃথিবীজুড়ে সুন্দরী রমণীরা সব সময়ই পুরুষের প্রেরণার উত্স। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি শুরু থেকেই চলে আসছে। তবে প্রাচীন গ্রিসেই এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়। ইতিহাস বলছে প্রথম সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় গ্রিক জনপদ করিন্থের জনগণের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসল নতুন শহর ব্যাসিলিসের উদ্বোধন উপলক্ষে। করিন্থের তত্কালীন শাসক কিপসেলাস এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন।

সে সময় এই প্রতিযোগিতাটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল এ প্রতিযোগিতা। কারণ সে প্রতিযোগিতায় করিন্থের শাসক কিপসেলাসের স্ত্রীকেই সেরা সুন্দরী নির্বাচিত করা হয়েছিল। তাই এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল।

 

 

 

ভারতের সুন্দরীরা

১৯৯৪ সালের আগে একমাত্র ভারতীয় বিশ্বসুন্দরী ছিলেন রিটা ফারিয়া। যিনি ২৮ বছর পূর্বে ১৯৬৬ সালে বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জয় করে ছিলেন। ভারতীয় নারীরা একসময় বিশ্বসুন্দরীর খেতাব পাওয়া শুরু করেন এবং একের পর এক পেতেই থাকেন। ১৯৯৪ সালে সুস্মিতা সেন মিস ইউনিভার্স হন এবং ঐশ্বরিয়া রাই মিস ওয়ার্ল্ড হন। এরপর ডায়ানা হেইডেন মিস ওয়ার্ল্ড হন ১৯৯৭ সালে। যুক্তামুখী মিস ওয়ার্ল্ড হন ১৯৯৯ সালে। ২০০০ সালে মিস ইউনিভার্স হন লারা দত্ত এবং মিস ওয়ার্ল্ড হন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। কিন্তু ১৯৯৪-২০০০ সময়কালে, ৬ বছরে ছয়জন বিশ্বসেরা সুন্দরীর খেতাব পায়। অথচ ১৯৬৭-১৯৯৩ সময়কালে কোনো ভারতীয় বিশ্বসুন্দরীর খেতাব পাননি। তাই এ নিয়ে সমালোচকরা নানাভাবে প্রতিযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে।

 

 

‘‘অংশগ্রহণ করার নিয়ম

মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চাইলে নিজ দেশে জাতীয়ভাবে আয়োজিত সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিজয়ীরাই অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রতিবছর প্রতিযোগিতা আরম্ভ হওয়ার আগে বিভিন্ন দেশের কাছে নির্বাচিত সুন্দরীর তালিকা চাওয়া হয়।

তবে কোনো দেশে এ আয়োজন না হলে মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ নিজস্ব এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে প্রার্থী নির্বাচন করে থাকে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর হতে হয়।

আর মিস ওয়ার্ল্ড ফাইনালে অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেক প্রতিযোগীকে তার নিজ দেশের মিস ওয়ার্ল্ড ন্যাশনাল প্রিলিমিনারি বিজয়ী হতে হয়। মিস ওয়ার্ল্ড ন্যাশনাল প্রিলিমিনারি সংশ্লিষ্ট দেশের লাইসেন্সপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বিজয়ীকে ওই দেশের মিস ওয়ার্ল্ড নামকরণে ভূষিত করা হয়। বিশ্বব্যাপী চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

 

 

 

সুন্দরীদের নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প

ব্যবসায়ী হিসেবে নাম কুড়ানো ছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিস ইউনিভার্সের স্পন্সর ছিলেন দীর্ঘদিন। এই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অর্থ ঢেলে প্রথম আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন ১৯৯৬ সালে।

তখন থেকে এই প্রতিযোগিতার দায়িত্ব ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল। টানা পাঁচ বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প এর তত্ত্বাবধান করেন। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে মিস ইউএসএ। এ ছাড়া মিস স্টেটস সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজন করেও মিডিয়ার নজর কাড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সুন্দরী মডেলদের সঙ্গে তার প্রেম ও অন্তরঙ্গতাও মিডিয়ার আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছিল।

 

 

 

মিস মুসলিম ওয়ার্ল্ড

সুন্দরী প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই মুসলিম বিশ্বও। ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত হয় ‘মিস মুসলিম ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতা।

১৯ জন ফাইনালিস্টের দেহ গলা পর্যন্ত পোশাকে আবৃত ছিল আর মাথায় ছিল স্কার্ফ। নাইজেরিয়ার ২১ বছর বয়সী ওবাবিয়ি আয়েশা আজিবোলা তাতে প্রথম হন।

 

 

 

 

পরিপূর্ণ মূল্যায়ন

সুন্দরী প্রতিযোগিতায় করা হয় পরিপূর্ণ মূল্যায়ন। দেখা যায় কৃষ্ণবর্ণের নারীও সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম নির্বাচিত হচ্ছেন। এ ধরনের প্রতিযোগিতা শুধু সুন্দরের বিচার করা হয় না।

এখানে শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নারীর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সাহস, চতুরতা, মানসিকতা, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয়। তাই যাদের গাত্রবর্ণ কালো তাদেরও সমান সুযোগ রয়েছে এই প্রতিযোগিতায়।

সর্বশেষ খবর