শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রুশ বিপ্লব : জার থেকে লেনিন

রুশ বিপ্লব : জার থেকে লেনিন

পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রূপকার লেনিন। তার নেতৃত্বে রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাস রচিত হয়েছে নতুনভাবে। রাশিয়ার জার রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই বিপ্লব গোটা বিশ্বে মুক্তিপ্রাণ মানুষের জন্য আজও অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। এই রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে কয়েকটি ধাপে। রুশ বিপ্লব নিয়ে লিখেছেন— সাইফ ইমন

 

ব্লাডি সানডে

রুশ বিপ্লবের প্রথম সূচনা হয় মূলত ১৯০৫ সালের ২২ জানুয়ারি। ইতিহাসে একে ব্লাডি সানডে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জার দ্বিতীয় নিকোলাসের শাসনের বিরুদ্ধে সেদিন তরুণ ফাদার গাপনের নেতৃত্বে এক বিক্ষোভ-মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে জারের পেটোয়া বাহিনী। প্রকাশ্যে বিনা বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল সেদিন। শত শত মানুষ গুলিতে নিহত হন। আতঙ্কে প্রাণ হারান আরও কয়েকশ মানুষ। রাশিয়ার শহরজুড়ে সেই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন দেশের জনগণ। হরতাল-অবরোধে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো রাশিয়া। এ সময় রাজনীতিবিদ এবং শ্রমিকরা পার্লামেন্ট শাসনের দাবি জানান। কৃষকরা জমিদার থেকে তাদের জমি দখলে নিয়ে নেয়। সৈন্যরা জনগণের সঙ্গে মিলে ঘোষণা দেয় বিদ্রোহের। রাশিয়ার নৌবাহিনীর একটি নৌযুদ্ধ জাহাজের সৈনিকরা জার শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ নিয়ে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছিল। নাম ছিল ‘ব্যাটেলশিপ পোটেমকিন’। চলচ্চিত্রটির পরিচালক ছিলেন সার্গেই আইজেনস্টাটন। রাশিয়ার অন্যতম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে শ্রমিকরা তাদের সংগঠন সোভিয়েত গঠন করে। যা কাজ করে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি, ন্যায্য মজুরি এবং অধিকার নিয়ে।

 

রুশ বিপ্লবের কর্ণধার

১৯১৭ সালের মহান রুশ বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন লেনিন। ১৮৮৭ সালে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ার সময় ছাত্রদের বিপ্লবী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করে। এ সময় পুঁজিবাদ দ্রুত বিকাশ পাচ্ছিল। যান্ত্রিক টেকনোলজি ও হাজার হাজার মজুর নিয়ে চালু হচ্ছিল কল-কারখানা। সে সময় জারের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ‘নারোদবাদী’রা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। নারোদবাদ হচ্ছে মেহনতিদের শ্রমমূল্য প্রতিষ্ঠার জন্য জার পুঁজিপতিদের হত্যা করা। জারের বিরুদ্ধে হলেও লেনিন নারোদবাদীদের বিরুদ্ধে ছিলেন সবসময়। তিনি হত্যাযজ্ঞ এবং সন্ত্রাসকে কিছুতেই মানতে পারেননি। লেনিন সবসময় মার্কস এবং এঙ্গেলসের ধারণা ও তত্ত্বকে গুরুত্ব দিতেন। ১৮৮৯ সালে তিনি সামারায় যান এবং স্থানীয় মার্কসবাদীদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৮৯১ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করে সামারাতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ চলে আসেন এবং শিগগিরই সেখানকার মার্কসবাদীদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এখানেই লেনিন ক্রুপস্কায়ার সঙ্গে পরিচিত হন। ক্রুপস্কায়া শ্রমিক এবং কৃষকদের মধ্যে সাম্যবাদ এবং বিপ্লবী আদর্শের প্রচারে ব্রতী ছিলেন। এ সময় নারোদবাদীরা লেনিনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মাঠে নামে এবং তার নীতিকে ভিত্তিহীন বলে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নানা প্রচারণা ও ব্যাখ্যা চালাতে থাকে। শুধু নারোদবাদীরাই নয়, তথাকথিত ‘বৈধ মার্কসবাদীরা’ও তার বিপক্ষে মাঠে নামে। এই বৈধ মার্কসবাদীরা ছিল বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবী। তারা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পত্রপত্রিকায় লিখত এবং মার্কসবাদকে বুর্জোয়াদের স্বার্থের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করত। লেনিন এই নারোদবাদী ও বৈধ মার্কসবাদীদের বিরুদ্ধে মেহনতি মানুষকে বোঝাতে থাকেন এবং বড় বড় কল-কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘বিপ্লবী মার্কসবাদী পার্টি’ গড়ে তোলার জন্য। জার সরকার ১৮৯৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি লেনিনকে তিন বছরের জন্য সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত করে। সেখানে থাকা ভ্লাদিমির লেনিনের পক্ষে সহজ ছিল না। বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্ট্রিয়া সরকার জার সরকারের বিরুদ্ধে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে লেনিনকে গ্রেফতার করে। তবে লেনিনের সমর্থকদের বিক্ষোভের কারণে দুই সপ্তাহ পর তিনি ছাড়া পেয়ে সুইজারল্যান্ড চলে যান। বিভিন্ন স্থানে গোপনে রাজনৈতিক কাজ করে প্রায় ১০ বছর পর ১৯১৭ সালের ৩ এপ্রিল রাতে লেনিন রাশিয়ায় পৌঁছতে সক্ষম হন। বলশেভিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। এভাবেই লেনিনের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সোভিয়েত জনগণ যে বিরাট রূপান্তর সাধন করেছে, তার মধ্যে রয়েছে মার্কস-লেনিনবাদের বিজয়। লেনিন ১৯১৭ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার বলশেভিক পার্টির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

সাম্রাজ্যবাদ অবসানের সূচনা

১৯১৭ সালের পৃথিবী আর এক শতাব্দী পর এখন ২০১৭ সালের পৃথিবী সম্পূর্ণ আলাদা। বিংশ শতাব্দীর শুরুটা তখন ছিল সাম্রাজ্যের যুগ। পৃথিবীর কর্তৃত্ব ছিল ব্রিটিশ, জার্মান, ফরাসি, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান, রাশিয়ান ও জাপানিদের হাতে। তখন বিশ্বের জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ এসব সাম্রাজ্যের অধীনে। এই উপনিবেশবাদের অবসানের শুরুটা হয় ঘটে রুশ বিপ্লবের সূচনায়। জার সাম্রাজ্যের পতনের পরবর্তী অর্ধশত বছরে পৃথিবীর আর কোনো সাম্রাজ্য ছিল না বললেই চলে। রুশ বিপ্লবের ভিত্তি ছিল শ্রমিক কৃষক মৈত্রী। এই রণনীতিই পরবর্তী সময়ে ঔপনিবেশিক ও আধা ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে ব্যাপক কৃষক সমাজকে সমবেত করতে উদ্বুদ্ধ করে। রুশ বিপ্লবের প্রদর্শিত পথেই তিন দশক পরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে যুগান্তকারী চীন বিপ্লব সংঘটিত হয়। এরপর সংঘটিত হয় ভিয়েতনাম ও কোরিয়ার বিপ্লব। এসব বিপ্লব বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও ১৯৩০-দশকের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামের প্রত্যক্ষ ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয়েছে।

বিপ্লব হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতা বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে একটি মৌলিক সামাজিক পরিবর্তন যা তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ে ঘটে যখন জনগণ চলমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে জেগে ওঠে। এরিস্টটল দুই ধরনের রাজনৈতিক বিপ্লবের বর্ণনা দিয়েছেন- এক সংবিধান থেকে অন্য সংবিধানে পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন আর একটি হলো বিরাজমান সংবিধানের সংস্কার। বিপ্লব মানব ইতিহাসজুড়ে ঘটেছে। বিপ্লবের ফলে সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহে বিশাল পরিবর্তন সাধিত হয়। প্রত্যেকটি বিপ্লব বা পরিবর্তনের ইতিহাস রচিত হয়েছে অসংখ্য বিপ্লবী মানুষের রক্ত-মাংস, আর ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে। হাসিমুখে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। রুশ বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে মূলত জার্মান সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কস ও ফরাসি দার্শনিক ফ্রেডারিক এঙ্গেলের প্রচারিত সমাজতন্ত্র বাস্তব রূপ লাভ করে। ১৮৯৮ সালে লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার তত্কালীন রাজধানী পিটার্সবার্গে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠিত হয়। এই পার্টির দুটি ধারা বলশেভিক এবং মেনশেভিক। তত্কালীন রাশিয়া ছিল অনেক অঞ্চল নিয়ে গঠিত। এক বিশাল রুশ সাম্রাজ্য। কিন্তু সেই সময় কৃষকদের ওপর অমানবিক নির্যাতন, রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা, ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে শুরুর দিকে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার কাছে পরাজয় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। যার দরুন ১৯১৭ সালে শুরুতে সূত্রপাত ঘটে এই রুশ বিপ্লবের। শ্রমিকরা প্রথম বিক্ষোভ শুরু করেন। যা পরবর্তীতে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় জার দ্বিতীয় নিকোলাস ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এরপর ১৯১৭ সালের ৬ ও ৭ নভেম্বর বলশেভিকরা বিদ্রোহী হয়ে রেলস্টেশন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও অন্যান্য সরকারি ভবন দখল করে নেয়। পতন ঘটে অন্তর্বর্তী আলেকজান্ডার কেরেনক্সি সরকারের। এভাবেই সম্পন্ন হয় রুশ বিপ্লব।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া যুক্ত হয়। রাশিয়া যুদ্ধে জার্মানির পক্ষ নেয়। তখন এ যুদ্ধে সৈন্যদের পাশাপাশি জোরপূর্বক সাধারণ কৃষকদের সম্পৃক্ত করা হয়। যাদের ছিল না কোনো যুদ্ধ প্রশিক্ষণ। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে তখন জুতা, প্রয়োজনীয় খাবার ও অস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধে পাঠানো হয়। এর ফলে প্রচুর মানুষ নিহত হয়। তিন বছরে প্রায় ২০ লাখ রাশিয়ান সৈন্য নিহত এবং ৫০ লাখেরও বেশি আহত হয়। রাশিয়ার জনগণ এই ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির জন্য জারকে অভিযুক্ত করে। এর আগে রুশ-জাপান যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনীর পরাজয় দেশটির জনগণকে বিক্ষুব্ধ করেছিল। সেই যুদ্ধে রাশিয়ার ৭০ হাজার সৈন্য নিহত হয়। যুদ্ধে পরাজয় রাশিয়ান শাসক শ্রেণিকে কিছুটা বিচলিত করেছিল। জার দ্বিতীয় নিকোলাস তাই যুদ্ধ-পরবর্তী বছর ১৯০৬ সালে সীমিত আকারে পার্লামেন্ট শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতিতে রাশিয়ার জনগণ আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল।

 

রুশ বিপ্লব

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গণঅসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে। বিপ্লবী শক্তিগুলো বিশেষত বলশেভিক পার্টি জার রাজত্বের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সংঘটিত করে। এ গণঅভ্যুত্থানই বিপ্লবে রূপ নেয়। যা ঘটে ১৯১৭ সালের শুরুতে। শুরুতে শ্রমিকদের হাত দিয়ে শুরু হওয়া এই বিদ্রোহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বসাধারণ এই বিদ্রোহে অংশ নেয়। সবার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা দিয়ে সেনাবাহিনীও জার স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। অবস্থা এমনই খারাপ হয় যে, জার দ্বিতীয় নিকোলাস ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। সেই ঘটনার পর রাশিয়া প্রথমবারের মতো প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। অস্থায়ী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। অস্থায়ী সরকারের প্রধান করা হয় প্রিন্স লভোভকে। পরবর্তীতে অস্থায়ী সরকারের প্রধান করা হয় সমাজতন্ত্রী আইনজীবী আলেকজান্ডার কেরেনস্কিকে। পরবর্তীতে লেনিনের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট বলশেভিক পার্টি এই অস্থায়ী সরকারের বিপক্ষে আন্দোলনের ডাক দেয়। জার্মানিতে আত্মগোপনে থাকা লেনিন এপ্রিলে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন। তার আগমন উপলক্ষে রাশিয়ায় লেনিনের বিপক্ষ দলসমূহ মিছিল করে। যদিও এসব লেনিনবিরোধী দলও অস্থায়ী সরকারের পদত্যাগ দাবি করে। লেনিন পুনরায় আত্মগোপন করেন ফিনল্যান্ডে। এর মাঝে জেনারেল কর্নিলভের নেতৃত্বে ক্যু সংঘটিত হয়। এই ঘটনার পর যুদ্ধরত অনেক সৈনিক বলশেভিকদের পক্ষে অবস্থান নেয়। বিপ্লবী বলশেভিকরা ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর পেত্রোগাত দখল করে। একেই বলা হয় বলশেভিক বিপ্লব। রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভবন তখন বিপ্লবীদের দখলে চলে যায়। নতুন যুগের সূচনা ঘটে গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত রাশিয়ায়। এভাবেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে রাশিয়া বেরিয়ে আসে। ১৯২২ সালে গঠন করা হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। পৃথিবীর সব স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা রুশ বিপ্লবের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে।

 

বলশেভিক বিপ্লবের ঘটনা

বলশেভিক বিপ্লবকে বলা হয়ে থাকে অক্টোবর বিপ্লব অথবা নভেম্বর বিপ্লব অথবা মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব নামে। এই বলশেভিক বিপ্লব রুশ বিপ্লবের একটি অংশবিশেষ। এটি জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর এবং গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ৭ নভেম্বর ১৯১৭ তারিখে এই বলশেভিক বিপ্লবের শুরু হয়েছিল। সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল এই বিপ্লব।  বিপ্লবের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল শ্রমিক শ্রেণি যারা গরিব কৃষকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। এই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে রাশিয়া রাজনৈতিক অর্থে এগিয়ে গিয়েছিল। সেই বিপ্লব বিশ্বের এক-ষষ্ঠাংশব্যাপী বিশাল একটি দেশের জনগণকে পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিল। বলশেভিক বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণি এবং মেহনতি কৃষকের জন্য সামাজিক মুক্তি দিয়েছিল। পাশাপাশি রাশিয়ার জাতিগত এবং সাধারণ গণতান্ত্রিক সমস্যাগুলো সমাধান করেছিল। ১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় কেঁপে ওঠে রুশ বুর্জোয়া সরকারের শেষ ঘাঁটি উইন্টার প্যালেস। গর্জে ওঠে অরোরা যুদ্ধজাহাজের কামান। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় রুশ বুর্জোয়া সরকারের ওপর বিজয়ী আক্রমণ। প্রায় একই স্মোলনির সমাবেশ হলো পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতের জরুরি অধিবেশন। চূড়ান্ত স্পষ্টতা সুনির্দিষ্টতা আর সাদাসিধে ভাষায় লেনিন ঘটনাবলির সারসংক্ষেপ করেন। শ্রমিক এবং কৃষক বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার কথা লেনিন সর্বদাই বলে এসেছিলেন। এই বিপ্লবকে সমাজতান্ত্রিক মহাবিপ্লব বলে আখ্যায়িত করা হয়, যা ছিল সামাজিক বিকাশের একচেটিয়া পুঁজিবাদের পরিস্থিতিতে শ্রেণি সংগ্রামের নিয়মসঙ্গত উপায়। এর ফলে পৃথিবীতে প্রথম সমাজতন্ত্র অভিমুখী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন ঘটে। 

 

লেনিন-কেরেনস্কি বৈপরীত্য

গণবিক্ষোভের পর ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন রাশিয়ার জার নিকোলাস দ্বিতীয়। তার পতনের পর রুশ উদারপন্থি এবং সমাজতন্ত্রী দলগুলো মিলে সরকার গঠন করেছিল। সে সময় পশ্চিমা বিশ্বে রাশিয়ার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক ছিলেন একজন তরুণ সমাজতন্ত্রী আলেক্সান্ডার কেরেনস্কি। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হন জুলাই মাসে। বহু গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করেছিলেন কেরেনস্কি। এর মধ্যে ছিল ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, পুরনো বংশগত পদবি বিলুপ্ত করা, নারীদের সমানাধিকার ইত্যাদি। কেরেনস্কি ছিলেন একজন দুর্দান্ত বক্তা। ১৯১৭ সালের ৩ এপ্রিল ১০ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে সেন্ট পিটার্সবার্গ বা পেত্রোগ্রাদে আসেন ভ্লাদিমির লেনিন। এরপরই শুরু এই দুই নেতার মধ্যে দ্বৈরথ। শুরু থেকেই লেনিন অন্তর্বর্তী সরকারকে উত্খাত করার ডাক দিতে থাকলেন। কারণ কেরেনস্কির সরকার ছিল একটি বুর্জোয়া পুঁজিবাদী সরকার। লেনিনের মতে, একটা সরকার বা দেশ যদি পুঁজি দিয়ে শাসিত হয় এবং ভূমির ব্যক্তিগত মালিকানা না থাকে তবে সেই সরকার বা প্রজাতন্ত্র কতটা গণতান্ত্রিক বা কতটা স্বাধীন তাতে কিছুই আসে যায় না। কারণ এটা নিয়ন্ত্রিত হবে অল্প কিছু লোক দিয়ে যাদের অধিকাংশই হবে ধনী, নয় পুঁজিপতি। রুশ ইতিহাসের একজন বিশেষজ্ঞ অরল্যান্ডো ফাইজেস-এর মতে, দুজন নেতার মধ্যে এর চেয়ে বেশি বৈপরীত্য বোধহয় কল্পনা করা যায় না, যতটা লেনিন এবং কেরেনস্কির মধ্যে ছিল।

 

বিপ্লবের সাফল্য

>>  গৃহযুদ্ধের পর এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীভূত হয়েছিল।

>> সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছিল। সেই সঙ্গে সাত বছরের সর্বজনীন শিক্ষা এবং ১০ বছরের সর্বজনীন মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছিল। অথচ সেই সময়ে ইউরোপের অন্য কোনো দেশ তা চালু করতে পারেনি।

>>  জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটে এবং গরিব কৃষক ও খেতমজুরদের যৌথ খামার এবং সমবায়ে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

>>  বিপ্লবের পরেই সব নাগরিকের বিনা খরচে চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করা হয়।

>>  বেকারত্ব দূর করে সবার জন্য কাজের ব্যবস্থা নিশ্চিত হয় এবং ১৯৩৬ সালের মধ্যে সব এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

>>  নতুন সরকারের প্রথম পদক্ষেপ ছিল মহিলাদের সমানাধিকার, ভোটের অধিকার, সমান মজুরি, মাতৃত্বকালীন অধিকার এবং বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সুনিশ্চিত করা।

>>  রাষ্ট্রীয় খরচে বিভিন্ন বইপত্র, তার সঙ্গে চলচ্চিত্র, সংগীত ও শিল্পকলা নিয়ে প্রকাশনা ও পরিবেশনা উন্মুক্ত করা হয়েছিল।

 

 

বলশেভিক-মেনশেভিক

মার্কসবাদী রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টি ১৯০৩ সালে ভাগ হয় দুই ভাগে। গঠিত হয় দুটি উপদলে। একটি হলো বলশেভিক আর একটি মেনশেভিক। বলশেভিক মানে হলো সংখ্যাগরিষ্ঠতা। আর মেনশেভিক মানে হলো সংখ্যালঘুতা। একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় উল্লিখিত প্রথম উপদলটির নাম হয় বলশেভিক। আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় অপরটির নাম হয় মেনশেভিক। বলশেভিকদের নেতা হন ভ্লাদিমির লেনিন। বলশেভিক ১৯০৫ সাল নাগাদ একটি গণসংগঠনে পরিণত হয়। যার সদস্য ছিল অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক পদবিন্যাসে সংগঠিত শ্রমিক জনগোষ্ঠী যা কেন্দ্রীভূত গণতান্ত্রিক নীতিতে পরিচালিত হতো। তারা নিজেদের রাশিয়ার বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণির নেতা হিসেবে বিবেচনা করত। তাদের বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডকে প্রায়ই বলশেভিকবাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ৭ নভেম্বর ১৯১৭ সেন্ট পিটার্সবার্গে বলশেভিকদের নেতৃত্বে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় রাশিয়ায়। এ ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানকে ‘বলশেভিক বিপ্লব’ নামে অভিহিত করা হয়। বলশেভিকদের হাত ধরেই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে নির্বাসনের পর বিপ্লবী বলশেভিক নেতা লিওন ট্রটস্কি তার প্রত্যক্ষ করা প্রকৃত লেনিনবাদ এবং জোসেফ স্টালিনের নেতৃত্বে পরিচালিত রাষ্ট্র ও দলের মধ্যকার পার্থক্য বোঝাতে সাধারণভাবে বলশেভিক এবং বলশেভিস্ট শব্দ দুটি ব্যবহার করতেন।

 

সোভিয়েত ইউনিয়ন

সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একটি একদলীয় সাম্যবাদী রাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হয় রুশ বিপ্লবের পর ১৯২২ সালে। এর স্থায়িত্বকাল ছিল ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। ১৯৪৫ সাল থেকে ভেঙে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্ব্বী পরাশক্তি ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত সরকারের পতনে ১৫টি নতুন প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। রুশ সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে ১৯১৭ সালে ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে। এই বিপ্লব সারা বিশ্বে কমিউনিস্ট বিপ্লব হিসেবে পরিচিত ছিল। যার ফলশ্রুতিতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সৃষ্টি হয়।

পরবর্তী সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। সর্বশেষ সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যাপ্তি ছিল বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ, পূর্ব পোল্যান্ড ও বেসার্বিয়া পর্যন্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পোল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডকে সোভিয়েত ঐক্য হতে বিচ্ছিন্ন করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নকে পৃথিবীর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মডেল হিসেবে দেখা হতো। শুরুতে চারটি প্রজাতন্ত্র নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়। ১৯৯১ সালে ভেঙে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই ইউনিয়নের প্রজাতন্ত্রের সংখ্যা ছিল ১৫টিতে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সাফল্য লক্ষ্য করা যায় সোভিয়ত ইউনিয়নে দ্রুত আর্থিক বিকাশ, বেকারত্বের অবসান, সর্বজনীন শিক্ষা স্বাস্থ্যরক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা এবং জনগণের বস্তুগত সাংস্কৃতিক মানের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে।

 

প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব

পৃথিবীতে আগে যত বিপ্লব হয়েছে তার থেকে রুশ বিপ্লব একেবারে আলাদা। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লব দিয়ে শুরু করে বিভিন্ন বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। অতীতের ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে নানা বিপ্লব হয়েছে যখন শোষকদের নতুন শ্রেণি পুরনো শোষকদের শাসনকে উত্খাত করেছিল। রুশ বিপ্লবকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এর পরিণতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে গঠিত হয় সমাজতান্ত্রিক শিবির। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্ব এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত সংগ্রামের জন্যই ফ্যাসিবাদ পরাস্ত হয়। রুশ বিপ্লবের সাফল্য বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পশ্চিম ইউরোপের পুঁজিবাদী সরকারগুলো জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রীয় মডেল চালু করতে বাধ্য হয়। এসব দেশের শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনের জন্য সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। নারী-পুরুষ সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। রাশিয়ায় বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণি বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে রুশ বিপ্লবকে পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বলা হয়। সমাজতন্ত্রের অর্থ উত্পাদনের উপকরণসমূহের সামাজিকীকরণ। শিল্প, জমি ও কৃষি এবং উত্পাদনের অন্যান্য উপকরণ রাষ্ট্র হাতে তুলে নিয়ে এবং যৌথ মালিকানায় নিয়ে এসে নতুন রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে এই কাজ সম্পন্ন হয়। রুশ বিপ্লবের কারণেই প্রথম পৃথিবীতে উত্পাদনের নতুন সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

বিপ্লবের ভিত্তি মার্কসবাদ

মার্কসবাদ হলো মহান কার্ল মার্কসের উদ্ভাবিত জীবনব্যবস্থা, পথ ও পন্থার নির্দেশনা। মার্কস ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাধর এক মহান সাধক ও দার্শনিক। তিনি ১৯ শতকের তিনটি উন্নত দেশের মানবাদর্শের ব্যাপক বিশ্লেষণ করেছিলেন। শাস্ত্রীয় জার্মান দর্শন, শাস্ত্রীয় ইংলিশ রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং ফরাসি সমাজতন্ত্রের ও ফরাসি বিপ্লবের মৌলনীতির সমন্বয় সাধন করেছেন। মার্কস আধুনিক বস্তুবাদ এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বিকাশ, শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলন সংগ্রাম এবং দাবি আদায়ের লড়াই পৃথিবীর সব দেশে স্থাপন করে গেছেন। মার্কসবাদ, লেনিনবাদ ও ট্রটস্কিবাদ শব্দগুলো সাধারণত মার্কসবাদী বিপ্লব সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যারা বর্তমান সমাজব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন ব্যবস্থা দেখতে চান। সংস্কারবাদের বিপরীতে তা বলা হয়। সাম্রাজ্যবাদের সমকালে লেনিনবাদ মূলত মার্কসবাদেরই সম্প্রসারিত অংশ। কিন্তু এখনো মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের মধ্যে চলছে নানা বিতর্ক। বিশেষ করে স্টালিন, মাও অথবা ট্রটস্কির অনুসারীদের মধ্যে। ট্রটস্কিবাদ অথবা যারা লিয়ন ট্রটস্কির অনুসারী তারা হলেন মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের ধারাবাহিকতা। তবে অনেকেই ট্রটস্কিবাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। আমরা তাকে দেখছি মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের ধারাবাহিকতা হিসেবে। ট্রটস্কির আদর্শ ও ধারণা মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের সম্প্রসারিত রূপ। মার্কসীয় দর্শনে ট্রটস্কির যেসব অবদান আছে তার মধ্যে স্টালিনবাদের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এবং তার চিন্তা-চেতনার অমূল্য সৃষ্টি হলো নিরন্তর বিপ্লব।

সর্বশেষ খবর