বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশে দেশে শীত উৎসব

এখন আর শীতকে জবুথবু কাঁপুনি দিয়ে বিশেষায়িত করা নয়, রীতিমতো তা উৎসবের অন্যতম উপলক্ষ। পোশাক থেকে শুরু করে খাবার-দাবার, ঘোরাফেরা, ইভেন্ট, বিনোদন ইত্যাদি তো থাকেই। কোনো কোনো দেশে শীতে জমে ওঠা বরফ দিয়ে চলে নানা রকম কারুশিল্প প্রদর্শনী। শীতপ্রধান দেশে গড়ে তোলা বরফের মূর্তিগুলো থাকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। প্রতি বছর  হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় জমে তা দেখতে। বিশ্বজুড়ে শীত উদযাপনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন—তানিয়া তুষ্টি

 

এ সময় যত উৎসব

শীত মানেই উৎসব। পোশাক থেকে শুরু করে খাবার-দাবার ও কার্নিভালে পাওয়া যায় তার স্পষ্ট প্রভাব। ইতালির ভেনিসে আয়োজিত কার্নিভাল প্যারেডে করা হয় নাচ, সংগীত ও শোভাযাত্রার আয়োজন। ইভেন্ট শুরুর ৪০ দিন আগেই চলে তোড়জোড়। সেখানে মুখোশ পরাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কে কার থেকে আকর্ষণীয় মাস্ক পরবে তার প্রতিযোগিতা হয়। তবে ব্রাজিলের রিও-তে আয়োজিত শীতকালীন উৎসবটি সারা বিশ্বের বড় কার্নিভাল হিসেবে বিবেচিত। একদিনের এই অনুষ্ঠানে জড়ো হয় প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ, প্রদর্শিত হয় ঐতিহ্যবাহী পোশাকের সঙ্গে সাম্বা নাচ। ১৭২৩ সাল থেকে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশটির স্কুলের ছেলেমেয়েরা মুখিয়ে থাকে। নিউ অর্লিন্সের শীতকালীন উৎসবটি চলে ৬ জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বিশ্বের মধ্যে সব থেকে জাঁকজমকপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে পর্যটকরা আগেভাগেই ভিড় জমাতে থাকেন। এদিকে মিয়ামি বিচে লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডারদের গোষ্ঠী এলজিবিটির আয়োজিত হোয়াইট পার্টি হয় বিশাল পরিসরে। যা এই গোষ্ঠীর আয়োজিত অন্য সব অনুষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বড়। বিশ্বের কমপক্ষে ১০ হাজার অতিথির সামনে অনুষ্ঠানের ছয় দিন নয়টি নাচের ইভেন্ট সম্পন্ন করা হয়। শীতকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন হাজারো অনুষ্ঠানের আয়োজন চলে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হয় পৌষমেলা। নানা রকম পিঠাপুলি ও দেশীয় ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাদ যায় না চীন, জাপান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও পাকিস্তানের মতো দেশও। বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশেও চলে শীতকালীন নানা উৎসব। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আয়োজন করা হয় পৌষমেলা, পিঠা উৎসব, যাত্রাপালা, ঘুড়ি ওড়ানো ও লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও নানা ধরনের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী, সেমিনার হয়ে থাকে। উৎসবের আমেজে আত্মীয়রা একে অপরের বাড়িতে বেড়াতেও যায় এই সময়ে।

 

আইস ফেস্টিভ্যাল

আইস ফেস্টিভ্যাল বলতে বরফিকৃত শিল্পচিত্র প্রদর্শনীকে বোঝায়। প্রতিটি ভাস্কর্য একেকটি আস্ত বরফখণ্ড। বিস্ময় জাগতে পারে, বরফ দিয়ে আবার কীভাবে ভাস্কর্য নির্মাণ সম্ভব। সেগুলো তৈরির হাতিয়ারই বা কেমন। হ্যাঁ এ ধরনের ভাস্কর্য বানাতেও বাঁটালি, হাত করাত, ইলেক্ট্রিক করাত, আগুন ও বিভিন্ন ধরনের কাটার ব্যবহার করা হয়। শিল্পীদের হাত থেকে বেরিয়ে আসে নজরজুড়ানো সব শিল্পকর্ম। কোনো কারিগর যেন কারও থেকে কম যান না। আর তাই তো হয়ে যায়, আন্তর্জাতিক মানের বরফ ও তুষার ভাস্কর্য প্রতিযোগিতা উৎসব। রাশিয়ায় নতুন বছর এলেই ইয়েনিসেই নদীর ধারে শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা। যারা তাতে অংশ নেয় তাদের আগে যুক্তরাষ্ট্র, লাটভিয়া, চীন, জাপান, কাজাখস্তান ও সাইবেরিয়া থেকে বরফ ও তুষার বিভাগে প্রতিযোগিতা করতে হয়। তারপর বাছাই করা ভাস্কর্যগুলো প্রদর্শন করা হয় দর্শনার্থীদের জন্য। এসব ভাস্কর্যে নানা ধরনের চিত্র উঠে আসে। মিথলজিক্যাল থিম থেকে শুরু করে নানা প্রতীক এসব কর্মে স্থান করে নেয়। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইস ফেস্টিভ্যাল দেখতে হলে আপনাকে হারবিন ইন্টারন্যাশনাল আইস অ্যান্ড স্নো স্কাল্পচার ফেস্টিভ্যাল চীনে যেতে হবে। এটি ১৯৬৩ সাল থেকে শুরু হয়েছে। জানুয়ারি মাসে হার্বিনের গড় তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হার্বিনের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সংহুয়া নদী। তুষার ভাস্কর্যের কাঁচামাল এই নদী থেকেই আসে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সাংহুয়াতে এক মিটার গভীরতা পর্যন্ত বরফ জমে। যান্ত্রিক করাত দিয়ে সেই বরফ কেটে স্লেজে করে প্রদর্শনীর স্থলে পাঠানো হয় ১৫০টি ফুটবল মাঠের সমান একটি এলাকায়। এই তুষার ভাস্কর্যগুলো সৃষ্টি করেন প্রায় ১০ হাজার শিল্পী। আবহাওয়া পক্ষে থাকলে পরবর্তী তিন মাস খোলা আকাশের নিচে অক্ষত থাকে। চীনের হার্বিনে শুধু তুষারের ভাস্কর্য নয়, আছে আইসক্রিম খাবার বার ও রেস্টুরেন্ট। জমে যাওয়া নদীর বরফে গর্ত করে মাছ ধরা যায়। এখানে কয়েক লাখ দর্শক ও অতিথিরা প্রতি বছর ভিড় জমিয়ে থাকেন। বিশ্বের নামকরা বরফ ও তুষার ভাস্কর্য শিল্পীরা সেখানে জড়ো হন। অপরদিকে কানাডার আইস অন হোয়াইটি ফেস্টিভ্যালে বিশেষ এক ধরনের করাত, বাটালি, আগুন নিয়ে ভাস্কর্য শিল্পীরা ১০ দিনের জন্য চলে যান আউটডোরে। তাদের সঙ্গে পর্যাপ্ত খাবার, গান শোনার যন্ত্র ও অন্যান্য জিনিস থাকে। তারা রাশিয়া, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, মালয়েশিয়া থেকে অংশ নেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, জাপানের সাপ্পোরো স্নো ভেস্টিভ্যালকে। এটি চলছে ১৯৯০ সাল থেকে। হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বানানো মাত্র ছয়টি বরফের ভাস্কর্য দিয়ে এই প্রতিযোগিতার শুরু। বর্তমানে সেখানে ৫০ হাজারের বেশি বরফের ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয়। প্রতি বছর ২ মিলিয়নের বেশি অতিথি আসেন। চাইলে ভেস্টিভ্যালে যেতে পারেন আপনিও। তবে তার আগে অবশ্যই  টিস্যু, হাত উষ্ণকারী কাইরো ও ভেস্টিভ্যালের সুভেনিয়র সংগ্রহ করতে হবে। তবেই না আপনার মনোরম উপস্থাপনা উপভোগ সুবিধা হবে। উল্লেখিত জায়গা ছাড়াও ফ্রান্সে ২৬ বছর, লাটভিয়ায় ১৯ বছর, আমেরিকায় ১৭ বছর ধরে এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। কানাডাতে তো রীতিমতো সবচেয়ে বড় একটি মিলনমেলা তৈরি করে এই আয়োজন। আগন্তুকদের আগ্রহের কারণে স্নোকিং নামের এই আইস ফেস্টিভ্যাল থাকে মাসব্যাপী স্থায়ী। প্রতি বছর মার্চে এই আয়োজন করা হয়। অপরদিকে নরওয়ে তো রীতিমতো এই উৎসবকে সাংস্কৃতিক রূপ দিয়ে বসেছে। আইস ফেস্টিভ্যালকে নরওয়ে একটি অনন্য ও নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। প্রতি বছর পূর্ণিমা রাতে খোলা আকাশের নিচে ভাস্কর্য প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে মনোমুগ্ধকর সুরের আয়োজন করা হয়। পরিবেশিত হয় গান, বাদ্যযন্ত্র। আগত অতিথিরা সারা রাত বসে এই সুরের মূর্ছনা উপভোগ করে। স্কি এবং ভাইকিংয়ের ব্যবস্থাও আছে।

 

বরফের বিচিত্রতা

 

বিচিত্র চেহারার বরফ

বরফের নাম শুনলেই হয়তো চোখের সামনে ভেসে ওঠে জমাটবাঁধা ঠাণ্ডা একদলা পানি। তাপ পেলে হয়তো টুপ টুপ করে গলে পড়বে। কিন্তু সব সময় বরফের চেহারা শুধু একদলা সাদা পানিই নয়, ধারণ করে মনোমুগ্ধকর বিচিত্র চেহারা। কোথাও গড়িয়ে নামা পানি পরিণত হয় ধারালো বরফে। হঠাৎ দেখলে যে ভাবতে পারেন সাদা লেস ঝুলিয়ে কেউ বুঝি নকশা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের লেক মিশিগানে দেখতে পাবেন ডোরাকাটা বরফ। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় আছে বরফের তৈরি গুহা। শীতপ্রধান দেশের পাহাড়ি এলাকায় প্রচণ্ড বাতাসে সৃষ্টি হয় বরফের ঘূর্ণি। এ ঘূর্ণি গড়াতে গড়াতে একসময় পরিণত হয় শক্তিশালী বরফের চাকায়। অ্যান্টার্কটিকায় খোঁজ পাওয়া যায় দুর্লভ নীলচে রংয়ের বরফ।  কানাডার বানফ ন্যাশনাল পার্কের লেকে আবিষ্কার করা হয় দুর্লভ বরফের বুদবুদ। মিথেন গ্যাসে পরিপূর্ণ ছিল এ বুদবুদগুলো।

 

বরফের প্রভাবে জীবন

পৃথিবীর উত্তর সীমানায় এমন বহু দেশ রয়েছে যেখানে বছরের অর্ধেক সময় আঁধারে কাটে। উত্তর আমেরিকা, পূর্ব সাইবেরিয়া, গ্রিনল্যান্ড সুমেরুবৃত্তীয় প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত দেশের পরিস্থিতি মূলত এমনই। এখানে বসবাসকারীদের বলা হয় এস্কিমো। দেখতে খাটো, চ্যাপটা নাক ও নরুন চেরা চোখ। লম্বা লোমযুক্ত সিলের চামড়ার জামা পরে তারা। এস্কিমোরা পশুর চামড়া, তিমির হাড়, ঘাসের চাপ, কাঠ, বরফ দিয়ে ঘর বাড়ি বানায়। এখন আধুনিক বাড়িঘরও হচ্ছে। শীতকালে শিকারের উদ্দেশ্যে এসব ঘর বানায় সুবিধাজনক স্থানে। বরফে ঢাকা থাকায় গাছপালা ও প্রাণীর সংখ্যা নিতান্ত কম। সাদা ভালুক, সিল, সিন্দুঘোটক ও পেঙ্গুইন জাতের জীবজন্তু বরফে মোড়া এসব স্থানে বসবাস করে। মেরু এলাকার মানুষ জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে ব্যবহার করে মাছের তেল। বিশেষ করে সিল, তিমি এবং সামুদ্রিক প্রাণীর চর্বি দিয়ে তারা ল্যাম্প ও চুলা জ্বালায়।

 

শীতকালীন ইভেন্ট

শীতের দিনে জমায়েতস্থলে নাচ, গান, আনন্দ-ফুর্তি কার না ভালো লাগে। শীতকে ঘিরেও থাকে কত-শত আয়োজন। খোলা রাস্তার ওপর অথবা ছাদের ওপর হতে পারে এমন আনন্দ-আয়োজন। আবার কারও কারও চাওয়া থাকে যেকোনো একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সব প্রিয়জনকে একত্র করা। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টগুলোও তার সব ব্যবস্থা করে থাকে। এটি একদিকে কারও জন্য যেমন বিনোদনের তেমনি অপরের জন্য ব্যবসাও। শীত উপলক্ষে বিনোদনমূলক সব ইভেন্টের আয়োজন করে তারা। মূলত দর্শনার্থীদের আনন্দ উপভোগের ব্যবস্থা করে দেওয়া তাদের কাজ। ইভেন্টের কাজ হিসেবে শীতকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন হিসেবে ধরা হয় স্পেশাল শীতকালীন অলিম্পিক আসরকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ওয়ার্ল্ড ট্যুরসহ, পর্বত আহরণ, সমুদ্র ভ্রমণসহ নানা ধরনের অফার চালু করেন। লন্ডনের স্টোরি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এ ধরনের বড় একটি এজেন্সি। টরেন্টোর বাসেট ইভেন্ট, নিউইয়র্কের এমকেজি, শিকাগোর এ পারফেক্ট ইভেন্ট, বোস্টনের রাফানেলি ইভেন্ট, চীনের ৩১ হুয়ি, জাপানের ইভেন্ট ২১-সহ আরও নামকরা অনেক কোম্পানি আছে। যারা প্রতি বছর অন্যান্য অনুষ্ঠানের সঙ্গে শীত উপলক্ষে নানা ধরনের বিনোদন, পর্যটন ও খাবার উৎসবের আয়োজন করে থাকে। ভ্রমণপিপাসু মানুষজন তাদের ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে পারেন কখন, কোথায়, কী আয়োজন করা হচ্ছে। গ্রাহকদের জন্য কী কী প্যাকেজ অফার আছে। তাই খুব সহজেই বিশ্বের নামকরা সব উৎসবের খোঁজও তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, সেসব অনুষ্ঠানে যোগদান করাও যে কারও জন্য সহজ হয়ে যায়।

 

শীতে রূপের আধার

শীত এলেই শহর-গ্রামে আসে গুটিশুটি ভাব। কিন্তু কখনো কখনো সেখানেও ফুটে ওঠে মনোমুগ্ধকর কিছু দৃশ্য। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো তেমনি একটি শীতকালীন রূপবান স্থান। সাজানো-গোছানো শহরটি যখন তুলোসাদা তুষারে মুড়ে থাকে তখন কিছুটা আদুরেও লাগে বটে। বাহারি খাবার-দাবার আর বিনোদনের বিশাল আয়োজন দর্শনার্থীদের ছুটে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এর পরেই আছে এস্তোনিয়ার তাল্লিন শহরটি। তীব্র শীতে নতুন রূপে ধরা দেয় তাল্লিন। সারি সারি ঘরবাড়ির ফাঁকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা দুয়েকটি গাছ। কিন্তু পুরোটায় সাদা তুষারের আস্তরণে ঢাকা। বাড়ির ভিতর থেকে যখন আলো ঠিকরে বের হয়, তখন নয়নের সঙ্গে মনও জুড়িয়ে যায়। লন্ডনের রিচমন্ড পার্কটিও কম যায় না। ২৫ শত একরের বিস্তৃত এই পার্কের চারদিকে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মায়া হরিণ। ছোট টিলা আর বিস্তীর্ণ এলাকায় একটু পর পরই লোমশ হরিণের ছুটে চলা।  শীতকালীন সময়টাতে তাদের সঙ্গে হারিয়ে যেতে পারেন দারুণ মুগ্ধতায়। মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমিতেও প্রকাশ পায় আকর্ষণীয় এক রূপ। আপনি যদি থ্রিল পছন্দ করেন তবে অবশ্যই কঠিন শীতের মাঝেও মঙ্গোলিয়ার লোমশ উটের সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাইবেন। এখানে স্থানীয় উট পালকরা হাজার হাজার উট নিয়ে পোলো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সঙ্গে নানা রকম ইভেন্ট আগত অতিথিদের বিনোদনের ব্যবস্থা করে থাকে। সরাসরি এমন কোনো প্রদর্শনী দেখাটা সত্যিই উপভোগ্য। নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউন বছর জুড়েই দর্শনীয় স্থান হিসেবে সেরা। এখানে শীতকালীন অনেকগুলো ইভেন্টের আয়োজন হয়ে থাকে। তাছাড়া অপরূপ সৌন্দর্যের পাহাড়ের বুকে ধারণ করা তুষার সৌন্দর্যর ইশারা দিয়ে ডাকতে থাকে। পাহাড়ে ফোটে বাহারি ফুল আর গাছের পাতায়ও আসে নতুন রূপ। ফিনল্যান্ডের আকাশে প্রায়ই দেখা যাবে রঙিন অরোরার নাচানাচি। বরফের ভাস্কর্যে সাজানো চীনের হারবিনে থাকে বাহারি রঙের খেলা। ঘোরার জন্য এটিও আকর্ষণের।

 

প্রথম বরফের হোটেল

নতুন জিনিস সবসময় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে। তাই উদ্ভাবকরাও চেষ্টা করেন নতুন দিয়ে সবাইকে তাজ্জব করে দিতে। উত্তর সুইডেনের ইয়ুকাসিয়ার্ভি গ্রামে অবস্থিত বিশ্বের প্রথম আইস হোটেলটি তেমনি তাজ্জবের কেন্দ্রবিন্দু। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বরফের এই হোটেলটির প্রায় সবকিছু বরফের তৈরি। রুমের তাপমাত্রা সবসময় থাকে হিমাঙ্কের নিচে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বিস্তর এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা হোটেলে রয়েছে সর্বমোট ৬৫টি কক্ষ। শুধু বিছানার জন্য জাজিম আর বলগা হরিণের চামড়া ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে রাতে থাকা যায় ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। শীতের শুরুতে শতাধিক ডিজাইনার ঘরগুলোর জন্য নকশার প্রস্তাব করেন। বাছাই করা নকশায় নভেম্বর থেকে প্রায় একশ জনের একটি দল হোটেলের কাজ শুরু করে। এতে ব্যবহূত হয় প্রায় ৩৫ হাজার টন বরফ ও তুষার। তুষারশিল্পীরা এখানে প্রখ্যাত ভবন ও ভাস্কর্যের অনুলিপি তৈরি করেন। হোটেলের নয়নাভিরাম সেতুগুলোও বরফের তৈরি। সামনে থাকা সুবিশাল ভাস্কর্যগুলো রাতের বেলায় রঙিন আলোয় উদ্ভাসিত করা হয়।

 

বিশ্বের শীতলতম স্থান

অ্যান্টার্কটিকার কেন্দ্রে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থান। সেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ৯৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাস্তবে এই তাপমাত্রায় ফুটন্ত পানিও মুহূর্তেই বরফ হয়ে যাবে। এরপরই আছে রাশিয়া। গরমকালে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখানে গরম রাখতে সোয়েটারের সঙ্গে প্রয়োজন ভদকা। কানাডায় বছরের ৫ মাসই শীতকাল অনুভূত হয়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমেও প্রায় একই থাকে। কাজাকস্তানে অত্যধিক তুষারপাত এবং বৃষ্টিপাতের ফলে সব সময়ই থাকে ঠাণ্ডার ঘাঁটি। এরপরেই আছে উত্তর আমেরিকার আলাস্কার অবস্থান, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের আলো প্রায় আসেই না পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডে। গরমকালেই তার সর্বোচ্চ উষ্ণতা হিমাঙ্কের নিচে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আইল্যান্ডের তাপমাত্রাও হিমাঙ্কের ৪০ ডিগ্রি নিচে নেমে যায়। মধ্য এশিয়ার দেশ মঙ্গোলিয়াও শীতলতম দেশের একটি। শীত এলে নামে হিমাঙ্কের ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় শীতকালে থাকে ০ ডিগ্রি থেকে -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফিনল্যান্ড এবং বাল্টিক সি-এর মাঝখানে অবস্থিত এস্তোনিয়া। পুরো শীতকাল এখানে তাপমাত্রা থাকে -৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে -৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমকালে তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর