বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বরফকাণ্ড

তানভীর আহমেদ

বরফকাণ্ড

যুক্তরাষ্ট্রের তাপমাত্রা মাইনাস ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নেমে যাওয়ায় ঠাণ্ডায় জমে যায় নায়াগ্রা জলপ্রপাত। যে কেউ চাইলে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের বরফের ওপর দিয়ে হেঁটে আমেরিকা থেকে কানাডায় পৌঁছে যেতে পারছেন

জমে বরফ নায়াগ্রা জলপ্রপাত

২০ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যাচ্ছে ঘোড়ার খুরের শব্দ। মনে হবে প্রবল গতিতে দৌড়ে চলছে কোনো ঘোড়া। ঘোড়ার খুরের শব্দ আসলে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের গর্জন! প্রতি সেকেন্ডে ৬ লাখ ৮১ হাজার ৭৫০ গ্যালন পানি নিচের দিকে পড়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই জলপ্রপাত থেকে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার টন পানি নামে এই জলপ্রপাত থেকে। কিন্তু গ্রীষ্মের সেই চিত্র এখন আর নেই। মাত্র কয়েক মাসের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জমে গেছে নায়াগ্রা। উত্তাল পানির স্রোত এখন বরফের স্তূপ। সেই বরফের ওপর দিয়ে হেঁটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডার সীমান্তে চলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে তাপমাত্রা কমতে কমতে মাইনাস ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়। হাজার হাজার পর্যটক এই বিরল দৃশ্য দেখতে ছুটে আসেন নায়াগ্রায়। তবে এটি প্রথম নয়। এর আগে ১৮৮০ সালেও ঠাণ্ডায় জমে গিয়েছিল নায়াগ্রা। তখন এক দেশ থেকে অন্যত্র পৌঁছে যাচ্ছিলেন পর্যটকরা। এবারও একই দৃশ্য। মানুষ হাঁটতে পারছে নায়াগ্রার ওপর দিয়ে। বরফে ঢেকে যাওয়া

জলপ্রপাতের এই দৃশ্য সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। যে জলপ্রপাতের নিচে পর্যটকদের জাহাজ পৌঁছত, সেখানে এখন বরফের চাদর। ধীরগতির জলের স্রোত ওপর থেকে নিচে পড়তে যে সময় লাগে তাতেই তুষার হয়ে পড়ছে, নিচে পানির বদলে বরফ পাহাড়।

 

 

গোটা পৃথিবীই যেন ডিপ ফ্রিজ

শেষ কবে মানুষ এতটা ঠাণ্ডার মুখোমুখি হয়েছে ভেবে বের করা কঠিন। ৮০ বছরের বেশি তো হবেই। মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা নেমে গেছে কোথাও কোথাও। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা— গোটা দুনিয়াই রীতিমতো ডিপ ফ্রিজ হয়ে উঠেছে। ভয়াবহ শীত আমেরিকা, কানাডা, মেক্সিকো, গ্রিনল্যান্ড, ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, রাশিয়া থেকে শুরু করে চীন— সব দেশকেই কাবু করে ফেলেছে। আমেরিকা, কানাডা, গ্রিনল্যান্ড, রাশিয়ায় মানুষ কার্যত গৃহবন্দী বলা যায়। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে আসায় লোকজন ঘরের বাইরেও বের হচ্ছে না। সড়ক-মহাসড়কে পুলিশ ভ্যান আর অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া যান চলাচল একেবারেই কম। প্রচণ্ড তুষারঝড়ের সঙ্গে রয়েছে ঝড়ো হাওয়া। রাস্তাঘাট বরফে ডুবে গেছে। প্রধান রাস্তার ওপর থেকে বরফ কেটে ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। পিচ্ছিল রাস্তায় গাড়ি চালানো হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, ওজনপার্ক, পার্কচেস্টার, হাডসন, নিউজার্সির প্যাটারসন, আটলান্টিক সিটি, পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া, আপারডারবি, মিলবোর্ন সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার সব দোকানপাট এখন জনমানবশূন্য। নিউইয়র্ক সিটির বাস ও সাবওয়ে চলাচল করলেও যাত্রীর সংখ্যা হাতে গোনা। এ ছাড়া ট্রেনের সিডিউল কমানো হয়েছে। দেশে দেশে স্থগিত করা হয়েছে প্রাদেশিক বাস পরিবহন। পর্যটকরা পড়েছেন বিপাকে। বিভিন্ন দেশে তুষারঝড়ের কবলে পড়ে কোনো কোনো স্থানে দুই ফুট পর্যন্ত বরফ জমে যায়। জানালা ঢেকে গেছে বরফে। দরজার সামনে বরফের স্তূপ থাকায় দরজা খুলতেও বেগ পেতে হচ্ছে। মানুষ হিটার ছেড়ে ঘর গরম রাখার চেষ্টা করছে। দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল। সরকারি অফিসগুলোতে উপস্থিতির জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। প্রয়োজনে যারা বাইরে বেড়িয়েছেন তারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। কোথাও কোথাও চলে গেছে বিদ্যুত্। ইতালিতে লেক জমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে জলযান চলাচল। বাইরে মানুষ বের হচ্ছেন না। দেশে দেশে বাতিল করা হয়েছে কয়েক হাজার ফ্লাইট। এয়ারপোর্টে লাখ লাখ মানুষ আটকা পড়েন বিভিন্ন দেশে।

 

কানাডা-রাশিয়ায় গরম পানিও বরফ

বিশ্বের অন্যতম শীতপ্রধান দেশ কানাডা। এ দেশের তাপমাত্রা সাধারণত মাইনাস ১৫ থেকে মাইনাস ৩৯ ডিগ্রির মধ্যেই থাকে। এবার ইতিহাস গড়া ঠাণ্ডা কানাডার পাশাপাশি আমেরিকা, রাশিয়াকেও যোগ করেছে। জনজীবন বিপর্যস্ত করা এই ঠাণ্ডায় রসিকতা করার মানুষও কম নেই। কানাডা এখন কতটা শীতল সেটা জানান দিতে অনেকেই ঘরের বাইরে গরম পানি ছুড়ছেন বাতাসে। বাইরে কত ঠাণ্ডা সেটা দেখানোই উদ্দেশ্য। এমনই একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ফুটন্ত গরম পানি তাত্ক্ষণিক বরফে পরিণত হচ্ছে। এক কাপ ফুটন্ত গরম পানি বাতাসে উড়িয়ে মারার সঙ্গে সঙ্গেই তা তুষার হয়ে মাটিতে পড়ছে। একই ধরনের আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পানির পাইপে পানি জমে বরফ হয়ে গেছে। মোটর থেকে পানি উত্তোলনের দৃশ্য অবাক করেছে অনেককে। মাটির নিচের পানি পাইপ বেয়ে মাটিতে পড়ছে টুকরো টুকরো বরফ হয়ে। কেউ কেউ ঘরের বাইরে এসে ছবি তুলেছেন চুলের, চোখের জলের। চোখের জলও গাল বেয়ে নামতে পারছে না, তার আগেই বরফ হয়ে যাচ্ছে।

 

সমুদ্রের ঢেউ তীরে এসে বরফ

 আর্কটিক অঞ্চলের সমুদ্র জমে বরফ হয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেকেরই জানা। কিন্তু উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ কোথাও বরফ হয়ে আছড়ে পড়ছে এমন খবরে অনেকেই চমকে উঠবেন। ২০১৬ সালে বিজনেস ইনসাইডার সাইবেরিয়ার বৈকাল লেক জমে যাওয়ার দৃশ্য প্রচার করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। আর্কটিক অঞ্চলের আশপাশের দেশগুলোর সমুদ্রগুলোতে বরফ ঢেউয়ের কথা শোনা যায়। কিন্তু কখনোই ঢেউ জমে বরফ হয়ে গেছে এমনটি দেখা যায়নি। এবার সে রেকর্ডও হয়ে গেল। সার্ফিং করতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখেছেন শৌখিন পর্যটকরা। রাশিয়া ও গ্রিনল্যান্ডের দিকে জমে যাওয়া সমুদ্রের ঢেউয়ের দৃশ্য দেখা যায়। সাইবেরিয়ার বৈকাল লেকের তীরে জমতে শুরু করেছিল বরফ। ঢেউ এসে তীরে ভেঙে পড়ার দৃশ্যের বদলে দেখা গেল বরফ এসে জড়ো হচ্ছে। ঢেউয়ের তালে তালে সেই বরফের স্তূপ বড় হতে থাকে। ম্যাসাচুসেটসের নানটুকেটে এ বছরের ২ জানুয়ারি দেখা যায় সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ পুরোটাই বরফ হয়ে গেছে। তীরের কাছাকাছি সমুদ্র বরফ আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। ভিতরের দিকে ঢেউ থাকলেও তীরের দিকে সমুদ্র ছিল নীরব। সেখানে সমুদ্রের পানি হুট করেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেছে। আকস্মিক তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সমুদ্রের ঢেউ আর ভেঙে পড়ারও সুযোগ পায়নি যেন। ওই অবস্থায়ই জমে বরফ হয়ে যায়। সমুদ্রতীর ঢাকা পড়েছে সাদা বরফে।

 

যে গ্রামে ঠাণ্ডায় হাড় জমে যায়!

সাইবেরিয়ার বরফঢাকা গ্রাম ওমিয়াকন। পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল গ্রাম এটি।  জানুয়ারির দিকে এ গ্রামে তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। এবার সে ঠাণ্ডাও যেন কিছু নয়! তাপমাত্রা নিচে নামতে নামতে থার্মোমিটারের কাঁটা না ভাঙলেও অতীতের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। এ বছর সাইবেরিয়ার এ গ্রামে তাপমাত্রা নেমেছে মাইনাস ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে! অবিশ্বাস্য এই ঠাণ্ডার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। ইলেকট্রিক থার্মোমিটারে মাইনাস ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামায় ওমিয়াকন গ্রামের জনজীবন পুরোপুরি থেমে গেছে। বাইরে বেরোলেই মানুষের হাড় পর্যন্ত জমে যাচ্ছে। ৩০০ অধিবাসীর এ গ্রাম তুষারপাত আর বরফে রীতিমতো ভুতুড়ে হয়ে উঠেছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়।

 

 

বরফ হোটেলে বিলাসিতা

জার্মানিতে পাহাড়ের ওপর রয়েছে ইগলু ভিলেজের আদলে বরফ রেস্টুরেন্ট।  ভেড়ার চামড়ায় তৈরি এখানকার বিছানা

 

বিচিত্র রেস্টুরেন্টের তালিকায় বরফ হোটেল বা রেস্টুরেন্টও রয়েছে। সুইডেনের বরফ হোটেলে রয়েছে বরফের বিছানা। এখানে সপ্তাহ শেষে আপনার খরচ হবে এক হাজার ডলার। বরফের তৈরি হোটেলটি নতুন নতুন নকশা অনুযায়ী প্রতি বছরই নতুন করে নির্মাণ করা হয়। মার্চ মাসে হোটেলের কাছেই তোরণে নদী থেকে ৫ হাজার টন বরফ সংগ্রহ করা হয় এবং গ্রীষ্মকালজুড়ে তা গুদামজাত করে রাখা হয়। এই বরফ দিয়ে পরে হোটেলটি বানানো হয়। আর বসন্তকাল যখন সুইডেনে রাজত্ব করে সে সময় হোটেলটি গলে যায়।

এ ধরনের আরেকটি হোটেল রয়েছে জার্মানিতে। এটি আবার পাহাড়ের ওপর। ইগলু  গ্রামের বরফের হোটেল বলা যায় একে। এর ভিতরে অতিথিদের উষ্ণ রাখার জন্য সব ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে। সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় তিন হাজার মিটার উঁচুতে এক পাহাড়ে এই হোটেল গড়ে তোলা হয়েছে। জার্মানির আল্পসের কাছে গড়ে তোলা হয়েছে, ইগলু ডর্ফ বা ইগলু ভিলেজ। জার্মানিতে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে বরফ হোটেল এটি। এক রাত এখানে থাকতে খরচ করতে হবে প্রতিজনের ১০৯ ইউরো থেকে ২০৯ ইউরো। এই হোটেলের বিছানাগুলো বানানো হয়েছে ভেড়ার চামড়া দিয়ে।

 

চীনের বিস্ময় বালক

চীনের বিস্ময় বালকের তকমা জুটেছে ওয়াংফু ম্যানের। বয়স মাত্র ৮। চীনে এখন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। হঠাত্ করে তাপমাত্রা মাইনাস ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। বরফ জমানো এই ঠাণ্ডায় বাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে স্কুলে উপস্থিত হয় এই বালক। তাকে দেখে অবাক হয় সহপাঠীরা। দীর্ঘ পথ হেঁটে আসায় তার চুল, ভ্রু এবং হাত বরফ হয়ে যায়। পরীক্ষার হলে প্রবেশের পর এই অবস্থা দেখে শিক্ষক ও সহপাঠীরা রীতিমতো বিস্মিত।  ছবিও তোলেন কয়েকজন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ওয়াংফু ম্যান। স্কুলে পৌঁছানোর পর গোলাপি গাল ও বরফ আচ্ছাদিত চুলের বালকটির ছবি তোলেন স্কুলের শিক্ষক এবং তা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। চীনের সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওয়াংফুর মাথার চুল ঠাণ্ডায় জমে বরফ হয়ে যাওয়ার এই ছবি টুইটার, ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ এই বালকের দুর্দশা দেখে ব্যথিত হয়েছেন। ওয়াংফুর গ্রামের উন্নয়ন ও এই শীতে যেন বালক-বালিকা, শিক্ষার্থী ও গ্রামের মানুষ যেন উষ্ণতায় কাটে সে জন্য ফান্ড সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

 

 

মরুভূমি ঢেকে গেল বরফে

প্রচণ্ড শীতে যখন কাঁপছে বিশ্ববাসী, তখন খুশি সাহারা মরুভূমির বাসিন্দারা। কারণ হঠাত্ই মরুর বুকে দেখা গেল তুষারপাত

 

সাহারা মরুভূমি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মরুভূমি এটি। ৯০ লাখ বর্গকিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত সাহারা মরুভূমি। বালুর সমুদ্র সাহারার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। আফ্রিকার এই মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। ধূ ধূ মরুপ্রান্তরের যে দৃশ্য ছবিতে বা সিনেমার পর্দায় দেখে অভ্যস্ত সবাই, তাদের জন্য বড় চমক এখন। সাহারায় এবার দেখা গেল তুষারঝড়। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার অদ্ভুত উদাহরণ হয়ে থাকবে এটি। বিশ্ববাসীও চমকে গেছে সাহারা মরুভূমির বুকে এই বরফের চাদর দেখে। উত্তর দিকের হাওয়ার দাপটে রুক্ষ, শুষ্ক, তপ্ত সাহারা হিমশীতল হয়ে ওঠে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই মরুপ্রান্তরে বসবাস করে। যাযাবর এই অধিবাসীরা প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকে। সারা বিশ্বের মানুষ যখন প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তুষারপাতের কথা ভেবে গা জমে যাচ্ছে তখন মরুর বাসিন্দাদের কাছে এই তুষারঝড় ছিল আনন্দের। সাহারা মরুভূমিতে বরফের চাদর বিছিয়ে থাকার দৃশ্য রীতিমতো আশ্চর্যজনক ঘটনা। সাহারার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এইন সেফরায় শহরে ১৫ ইঞ্চি তুষারপাত হয়। এইন সেফরার এক বাসিন্দার কথায়, ‘সকালে উঠে আমাদের চোখ কপালে। দেখি চারদিকে সাদা বরফের পরত।’ তবে এটি মরুর বুকে প্রথম তুষারপাতের ঘটনা নয়। প্রথমবার তুষারপাত হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন মরু অঞ্চলের বাসিন্দারা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তাদের হাতে, গায়ে এসে পড়ছে নরম তুলার মতো বরফ।

 

৪০ দিন পর

সূর্যোদয়

গত বছরের ২ ডিসেম্বর সূর্যাস্ত হলো রাশিয়ায়। রাত নেমে এলো। কিন্তু ভোর হওয়ার নাম নেই। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ছেই। তাপমাত্রা মাইনাস ৫ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে নামল। দিনের হিসাব করতে গিয়ে বেসামাল সবাই— কারণ সূর্যোদয় হচ্ছে না। আর্কটিক অঞ্চলের ওদিকটায় ২৪ ঘণ্টাই রাত থাকা নতুন কিছু নয়। বরফে আচ্ছাদিত উত্তর রাশিয়ায় সূর্যের দেখা পেতে ২০১৭ পেরিয়ে ২০১৮ এসে গেল। জানুয়ারির ১১ তারিখ, প্রায় ৪০ দিন পর সূর্যোদয় হয়। একে বলা হয় ‘পোলার নাইট’। ‘পোলার নাইট’ এবং নতুন বছরের সূর্যোদয় ঐতিহ্যগতভাবে অবলোকন করে থাকেন ওই অঞ্চলের মানুষজন। বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখতে উত্তর রাশিয়ার বাসিন্দারা ছুটে যান সানি হিল বা শহরের অন্যতম উঁচু পর্বত সোলাঞ্চিয়ায়। রোমাঞ্চকর সময়টা উপভোগ করতে স্থানীয়রা প্রচণ্ড শীতে বাইরে বেরিয়ে আসেন, চলে যান খোলা ছাদে। সেলফি তোলেন। সূর্যোদয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। অবশ্য সবাইকে চমকে দিয়ে মাত্র ৩০ মিনিট পরই নিভে যায় সূর্যের আলো। নেমে আসে আবার রাতের আঁধার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর