বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্ব রাজনীতিবিদদের বিচার

সাইফ ইমন

বিশ্ব রাজনীতিবিদদের বিচার

রাষ্ট্রের শাসনভার পেয়ে থাকেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। দেশের উন্নয়ন ও নানা সংকটে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় যে কোনো আইন ভঙ্গের অভিযোগ উঠলে তাদের প্রচলিত আইনেই বিচার করা হয়। বিশ্বজুড়ে বহু প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কপাল পুড়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায়। আদালতের রায়ে তারা গ্রেফতার হয়েছেন, জেল খেটেছেন। কারও কারও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে গেছে। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন এমন কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিবিদকে নিয়ে আজকের রকমারি—

 

নওয়াজ শরিফ

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট

অপ্রদর্শিত আয় সংশ্লিষ্ট অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করে

 

লন্ডনের সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত অভিযোগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তার মেয়ে ও জামাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী আদালত। অপ্রদর্শিত আয় সংশ্লিষ্ট অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করে। এ নিয়ে শুরু হয় বিশ্ব জুড়ে তোলপাড়। তবে রায় ঘোষণার পরই তিনি পদত্যাগ করেন। এতে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় এবং পাকিস্তানের চলমান আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন হয়। কিন্তু তিনি ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের ওপর নিজের কর্তৃত্ব ঠিকই বহাল রেখে চলেছেন। পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো নওয়াজ শরিফ, কন্যা মরিয়ম ও জামাতা মোহাম্মদ সফদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। তারা তিনজনই আদালতে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নওয়াজ শরিফ প্রতিনিধির মাধ্যমে তার ওপর আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বর্তমানে অসুস্থ স্ত্রীর প্রতি সময় দিতে তিনি ইংল্যান্ডে রয়েছেন।

 

 

 

নিকোলাস দ্বিতীয়

রাশিয়ার জারতন্ত্রের রাজা

জার রাজা নিকোলাসের ভুল পদক্ষেপের কারণে ৩.৩ মিলিয়ন রাশিয়ান প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা যায়

 

নিকোলাস দ্বিতীয় ছিলেন রাশিয়ার সর্বশেষ সম্রাট। তিনি ১ নভেম্বর ১৮৮৪ থেকে ১৫ মার্চ ১৯১৭ পর্যন্ত শাসন করেন। তার শাসনামলের সমাপ্তির মাধ্যমে তৎকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি রাশিয়ার সাম্রাজ্যে তথা জারতন্ত্রের পতন ঘটে। খোদিঙ্কা ট্র্যাজেডি, সেমেটিক-বিরোধী অভিযান, ২০০৫ সালে ব্লাডি সানডের সময় বিপ্লবীদের দমন ও বিভিন্ন সময় রাজকীয় সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনার দায় আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তার রাজনৈতিক শত্রুরা তাকে নিকোলাস দ্য ব্লাডি নামে অভিহিত করত। তার ভুল পদক্ষেপের কারণে ৩.৩ মিলিয়ন রাশিয়ান প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা যায়। ১৯১৭ সালের বিপ্লবের পর নিকোলাস নিজে সিংহাসন ত্যাগের ঘোষণা দেন। জারকে সপরিবারে কারাবন্দী করা হয়। ১৯১৮ সালের বসন্তে নিকোলাসকে স্থানীয় উরাল সোভিয়েতদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। লেনিনের অনুমতিক্রমে বলশেভিকরা ১৬ এবং ১৭ জুলাই ১৯১৮ সালে সপরিবারে জার দ্বিতীয় নিকোলাসকে হত্যা করে।

 

 

সাদ্দাম হোসেন

ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট

বিচার শেষে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়

 

২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে নয় মাসব্যাপী বিচারের পর মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত শাসক সাদ্দাম হোসেন। ইরাকে ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানের সময় ক্ষমতাচ্যুত হন সাদ্দাম হোসেন। তারও প্রায় আট মাস পর তিনি মার্কিন সৈন্যদের হাতে ধরা পড়েছিলেন। বাগদাদের এক আদালতে অনুষ্ঠিত হয় তার বিচার। এই বিচারে সাদ্দাম হোসেনকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যে আইনি দল দেওয়া হয়েছিল তার অংশ ছিলেন আমেরিকান র‌্যামজি ক্লার্ক। র‌্যামজি ক্লার্ক বলেন, ‘তিনি সাদ্দাম হোসেনের মধ্যে কোনো মৃত্যুভয় দেখতে পাননি। সাদ্দাম হোসেন মনে করতেন, এই বিচারের একটাই মাত্র পরিণতি হতে পারে। আর তা হলো, তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং তার মৃত্যুদণ্ড হবে।’ র‌্যামজি ক্লার্কের সঙ্গে সাদ্দাম হোসেনের প্রথম পরিচয় হয়েছিল ইরাকে ১৯৯০ সালে। বিচার শেষে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় সাদ্দাম হোসেন অধ্যায়ের।

 

 

 

অলান্টা হিউমালা

পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট

অবৈধভাবে টাকা, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কঠোর পরিণতি হয় পেরুর সাবেক এই প্রেসিডেন্টের

 

পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট অলান্টা হিউমালা এবং তার স্ত্রীর কপাল পুড়েছে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে। জনসমর্থন নিয়ে দেশে প্রশংসিত হলেও শেষতক সেই ইমেজ ধরে রাখতে পারেননি অলান্টা। ১৮ মাসের ডিটেনশন দিয়ে আদালত তার বক্তব্য রাখে। বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আগে থেকেই নানা সমালোচনায় মুখর ছিল মিডিয়া। সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি। ‘অপারেশন কার ওয়াশ’ তাকে ডুবিয়েছে। বিপুল পরিমাণ মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বহুদিন ধরেই সমালোচিত ছিলেন তিনি। মানি লন্ডারিং বা অবৈধভাবে অর্থ পাচারের মামলায় তার সঙ্গে তার স্ত্রীর নামও যোগ হয়। আদালত তাদের ১৮ মাসের ডিটেনশন অর্ডার করে। একটি ব্রাজিলিয়ান কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তার এই পরিণতি। নির্বাচনীয় প্রচারণায় মানি লন্ডারিং করে তিনি ওই ব্রাজিলিয়ান কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে সংগ্রহ করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় ঘুষ গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে।

 

 

রেইনালদো বেনিয়োনে

আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট

জেনারেল বেনিয়োনের বিরুদ্ধে অপহরণ, নির্যাতন, শিশু চুরিসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়

 

রেইনালদো বেনিয়োনে আর্জেন্টিনার শেষ একনায়ক ও সাবেক সেনাশাসক। ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কারাভোগ করছেন তিনি। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় সামরিক শাসন চলে। এ আট বছরে চারজন সামরিক কর্মকর্তা কার্যত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। শেষ মেয়াদে ১৯৮২ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯৮৩ সালের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল রেইনালদো বেনিয়োনে। ২০০৭ সালে ক্রিস্টিনা ফারনান্দেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জান্তা সরকারের নাটের গুরুদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে জোর তৎপরতা শুরু করেন। জেনারেল বেনিয়োনের বিরুদ্ধে অপহরণ, নির্যাতন, শিশু চুরিসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। ২০০৭ সালের ৮ মার্চ বেনিয়োনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরই ২৪ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়। সেনা শাসনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার জন্য এখন পর্যন্ত মোট ১৪৬৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে আর্জেন্টিনায়।

 

 

আলফনসো পোরতিয়োকে

গুয়েতেমালার সাবেক প্রেসিডেন্ট

শিশুদের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ চুরি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগ

 

২০১০ সালের ১৮ মার্চ গুয়েতেমালার একটি আদালত টাকা পাচারের মামলায় দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলফনসো পোরতিয়োকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে রায় দেয়। শিশুদের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ চুরি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগে মার্কিন আদালতে পোরতিয়োর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলফনসো পোরতিয়োকে তাদের কাছে হস্তান্তরের আহ্বান জানানোর পর গুয়েতেমালার আদালত এ রায় দেয়। তবে আলফনসো পোরতিয়ো বলেছিলেন, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কারাগারে আটক থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আলফনসো রাষ্ট্রের লাখ লাখ ডলার পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনেকই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে আইনের শাসন আবারও প্রতিষ্ঠা পেল। আইনের ঊর্ধ্বে কেউই নয় তা আবারও প্রমাণিত হয়।

 

 

আহমেদ আদিব

মালদ্বীপের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট

প্রেসিডেন্টকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়

 

প্রেসিডেন্টকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মালদ্বীপের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আদিবের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।গত বৃহস্পতিবার দেশটির একটি আদালত এ রায় দেয়। এক সফরে রাজধানীতে ফেরার পথে প্রেসিডেন্ট আবদুুল্লাহ ইয়ামিনের নৌকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় সামান্য আহত হন ইয়ামিন। পরে এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আদিবকে গ্রেফতার করা হয়। তবে আদিব এ ঘটনায় নিজের সস্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন। সরকারি আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন,  নৌকায় বিস্ফোরণটি হয়েছিল বোমার কারণে। তবে এফবিআইসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা জানিয়েছে, বোমার কারণে নৌকায় বিস্ফোরণ হয়নি। আদালত প্রেসিডেন্টকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আদিবকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এর আগে নিজের কাছে অস্ত্র রাখার অভিযোগে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত। আদিবের স্ত্রী মরিয়ম নাশওয়া বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই ন্যায়বিচার নয়।’

 

 

পার্ক জিউন হাই

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট

২০১৬ সালের পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে পার্ক জিউন হাইকে অভিশংসিত করার পক্ষে রায় হয়

 

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইকে অভিশংসিত করতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছর। এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে যুক্তিতর্ক  শোনা শুরু করে সেদেশের আদালত। ২০১৬ সালের পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে পার্ক জিউন হাইকে অভিশংসিত করার পক্ষে রায় আসার পর এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো। প্রধান প্রসিকিউটর কুয়েওন সিয়ং ডং আদালতে দাবি করেন, সংবিধান ও অপরাধ আইন লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে পার্ক জনগণের আস্থাকে ‘ব্যাপক ও ভয়াবহভাবে’ ধোঁকা দিয়েছেন। পার্ককে স্থায়ীভাবে পদচ্যুত করা হয় এবং বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। পার্কের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ তিনি তার বন্ধুকে অবৈধভাবে ক্ষমতার নেপথ্যে থেকে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেন। পার্ক জিউন হাইয়ের বন্ধু চোই সুন-সিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের নামে ৬৫.৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে স্যামসাং এবং হুন্দাই-এর মতো কোম্পানিও রয়েছে।

 

 

হোসনি মোবারক

মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট

২০১১ সালের বিক্ষোভের সময় পুরো দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল

 

মোবারকের পতনকে ওই সময় আরব বিশ্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কার আসবে। হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ আনা হলেও ছোটখাটো একটি দুর্নীতি মামলাতেই শুধু তার সাজা হয়েছে। যদিও তিনি মুক্তি পেয়েছেন। তবে মাত্র কয়েক বছর আগে বিরাট বিক্ষোভের ফল হিসেবে মোবারকের মুক্তি ছিল অকল্পনীয়। প্রথম আরব নেতা হিসেবে দেশের সাধারণ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সময় মোবারককে প্রাথমিকভাবে কুখ্যাত টোরা কমপ্লেক্সে বন্দী হিসেবে রাখা হয়েছিল। এরপর তাকে মাদি সামরিক হাসপাতালে  নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে তাহরির স্কয়ারে বিক্ষোভে পুলিশ দিয়ে ২৩৯ জন আন্দোলনকারীকে হত্যা, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার লুট, ২০১১ সালের বিক্ষোভের সময় পুরো দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল। ১৯৮১ সালে মিসরের ক্ষমতায় আসেন মোবারক। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র।

 

 

শের বাহাদুর দেউবা

নেপালের প্রধানমন্ত্রী

২০০৫ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী

 

হিমালয়ের পাদদেশের এই দেশটিতে গত বছর পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে নেপাল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট শের বাহাদুর দেউবা একাই প্রার্থী ছিলেন। সিপিএন-ইউএমএলসহ অন্য দলগুলোর কোনো প্রার্থী ছিল না। ৫৯৩ জন পার্লামেন্ট সদস্যের মধ্যে ৫৫৮ জন ভোট দিয়েছেন। ৩৮৮ জন দেউবার পক্ষে ভোট দেন এদের মধ্যে নেপাল কংগ্রেস ছাড়াও তাদের জোট সঙ্গী কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালসহ কয়েকটি দলের সদস্যরা রয়েছেন। দেউবার বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৭০টি। দেশটির ৪০তম এই প্রধানমন্ত্রী ২০০৫ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন। তুমুল জনপ্রিয় এই নেতা আগে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ এবং ২০০১ থেকে ২০০২ ও ২০০৪ থেকে ২০০৫ সালে তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। গত বছর তিনি চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন কিন্তু তৃতীয়বারের সময় ক্ষমতা ত্যাগের পর তাকে এক বছরের বেশি সময় জেল খাটতে হয়েছিল। এর প্রায় ১০ বছর পরও তিনি তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন।

 

জুলফিকার আলী ভুট্টো

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী

সেনা বাহিনীর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আনতে যা সম্ভব সবই করেছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো

 

পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলী খান ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ড ঘটান ভুট্টোরই একসময়ের প্রিয় ব্যক্তি যিনি ভুট্টোকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন জেনারেল জিয়াউল হক। ১৯৭১ সালের পর ভুট্টোর হাতেই পাকিস্তানের ক্ষমতা ছেড়ে দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভের কথা জানতেন ভুট্টো সে জন্য তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর পর্যায়ক্রমে অনেক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাকে অবসর প্রদান করেন। ১৯৭৩ সালে ভুট্টো তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ৫৯ জন সেনা কর্মকর্তাকে  গ্রেফতার করেন। পরে তাদের কোর্ট মার্শালে বিচার করা হয়। ভুট্টো ওই কোর্টের চেয়ারম্যান করেছিলেন ওই সময়ের ব্রিগেডিয়ার জিয়াউল হককে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই জিয়াউল হকই ১৯৭৭ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে গ্রেফতার করেন। একটি হত্যা মামলার বিচারের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

 

জয় ললিতা

তামিল নাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী

৮৮০ কেজি রুপা, ১২ হাজার শাড়ি, ৭৫০ জোড়া জুতা, ৯১টি দামি ঘড়িসহ অন্যান্য মালামাল জব্দ করা হয়েছিল

 

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম জয় ললিতা ছিলেন একজন সফল চলচ্চিত্র অভিনেত্রী তথা নায়িকা। সে অর্থে একসময় ছিলেন যুবকদের হার্টথ্রব। কিন্তু রাজনীতিতে যোগ দিয়ে নিজেকে তুলে ধরেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। প্রথমবার ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর জয়ললিতা আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ দখলে রাখার মামলায় পড়েন। তিনি ৬৬ কোটি ৬৫ লাখ রুপির কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময় তার সম্পদ ছিল মাত্র ৩ কোটি রুপি। অথচ ১৯৯৬ সালে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা জয়ললিতার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ৩০ কেজি সোনা, ৮৮০ কেজি রুপা, ১২ হাজার শাড়ি, ৭৫০ জোড়া জুতা, ৯১টি দামি ঘড়িসহ অন্যান্য মালামাল জব্দ করে, যেগুলোর কোনো বৈধ উৎস ছিল না। এসবের বাইরে তিনি ছিলেন দুই হাজার একর সম্পত্তির মালিক। তবে এত কিছুর পরও জয়ললিতা পরবর্তীতে তিন তিনবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। সর্বশেষ সাজা হওয়ার সময়ও তিনি মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন।

সর্বশেষ খবর