শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মালদ্বীপ দখলের সেই ঘটনা

মালদ্বীপ দখলের সেই ঘটনা

ভারতীয় সৈন্যরা মালদ্বীপকে দখলমুক্ত করে তামিল ইলেম নামের শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটির হাত থেকে

পৃথিবীর অন্যতম নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত দেশ মালদ্বীপ। ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্র তার প্রকৃতি যেন সাজিয়েছে দুনিয়াজোড়া মানুষকে মুগ্ধ করতেই। ১১৯০টি প্রবাল দ্বীপের এই রাষ্ট্রের প্রধান আয়ের উৎসও তাই পর্যটন। প্রতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক দেশটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। ১৯৮৮ সালে শ্রীলঙ্কান তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের মাত্র ৮০ জন সদস্যের সাহায্যে স্থানীয় আবদুল্লাহ লুথুফি মালদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তখন ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পরবর্তীতে ভারতীয় নৌবাহিনী ও তাদের প্যারাস্ট্রুপারদের সফল অভিযানে মালদ্বীপ দখল মুক্ত হয়। অতি সম্প্রতি দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান এবং কারাবন্দী নেতাদের মুক্ত করতে ‘ভারতের হস্তক্ষেপ’ কামনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদ। লিখেছেন— সাইফ ইমন

   

৮০ জন সশস্ত্র সৈন্যের দখল চেষ্টা

শ্রীলঙ্কার কিছু তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সৈন্য মালদ্বীপ দখলের পরিকল্পনা করেছিল। যার ফলে ১৯৮৮ সালে মালদ্বীপে একটি অভ্যুত্থান ঘটে। এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে ৮০ জন সশস্ত্র সৈন্য। মাত্র অল্প কিছু সৈন্য নিয়ে একটা দেশ দখল করে ফেলার নজির বিশ্বে আর একটাও নেই। তবে এর পেছনের মূল কারিগর ছিল স্থানীয় জনগণই। যার নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল্লাহ লুথুফি। শ্রীলঙ্কান তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সাহায্য নেন আবদুল্লাহ লুথুফি। পিপলস লিবারেশন অর্গানাইজেশন অব তামিল ইলেম নামের শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটি সুযোগ বুঝে হাত মেলান আবদুল্লাহ লুথুফির সঙ্গে। সংগঠনটির মাত্র কয়েজন সশস্ত্র সৈন্য এই অভিযান পরিচালনা করেন। পিপলস লিবারেশন অর্গানাইজেশন অব তামিল ইলেম নামের শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সংগঠনটির কূটনৈতিক কার্যক্রম ছিল ব্যাপক শক্তিশালী। মামুন আবদুল গাইয়ুম ছিলেন তৎকালীন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। তার বিরুদ্ধে আবদুল্লাহ লুথুফি অভ্যুত্থান ঘটানোর উদ্দেশ্যে পিপলস লিবারেশন অর্গানাইজেশন অব তামিল ইলেমের সৈন্যদের ভাড়া করেন। বলা হয়ে থাকে এই কাজের জন্য দলটিকে ১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছিল। তবে অনেকে দাবি করেন অর্থের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। এমনকি এটা ১০ মিলিয়ন ডলারও হতে পারে। এর আগে ১৯৮০ এবং ১৯৮৩ সালেও দুটি অভ্যুত্থান হয়। তবে সেক্ষেত্রে অভ্যুত্থানকারীরা বিফল হলেও শ্রীলঙ্কার পিপলস লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সৈন্যরা ঠিকই সফল হয়েছিল। পানিপথে সৈন্যদল স্পিডবোটে করে মালদ্বীপে প্রবেশ করে। তারা খুব সহজেই রাজধানীসহ বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, এয়ারপোর্ট, টেলিভিশন এবং রেডিও স্টেশনের দখল নিয়ে নেয়। কিন্তু তারা মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে অপহরণ করতে ব্যর্থ হয়। প্রেসিডেন্ট গাইয়ুম এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে থাকেন। এর মাঝে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারত সরকারের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই ১৬০০ সৈন্যের একটি দল আকাশপথে মালদ্বীপ পুনরুদ্ধারের জন্য পাঠান। ভারতীয় সৈন্যদল অপারেশন ক্যাকটাস নামে একটি সফল অভিযান চালিয়ে অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দেয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই ভারতীয় প্যারাট্রুপাররা দক্ষতার সঙ্গে দেশটিকে দখলমুক্ত করে প্রেসিডেন্ট গাইয়ুমকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট গাইয়ুম ১১ নভেম্বর ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। দেশটিতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামেন। মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট সরকারপ্রধান হিসেবে ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নিয়োগ দেন। প্রেসিডেন্ট নিজেই ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের প্রধান হিসেবে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তবে মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে অমুসলিমদের কোনো ভোটাধিকার নেই। মালদ্বীপে ৫০ সদস্যের একটি মজলিসে শূরা রয়েছে। এই শূরা সদস্যরাও পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এই ৫০ সদস্যের মধ্যে আটজন প্রেসিডেন্ট মনোনীত করেন। এই একটি উপায়েই মহিলারা সংসদে প্রবেশের সুযোগ পান। দেশটিতে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে ২০০৫ সালে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম দলটি প্রতিষ্ঠিত করেন। দলের নাম ‘দ্য মাল দ্বীপিয়ান পিপলস পার্টি’। একই বছর আরেকটি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়। দলটির নাম ‘মাল দ্বীপিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’। বর্তমানে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট ইয়ামেন জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।

 

নতুন সংকটে মালদ্বীপ

আদালত-সরকার দ্বন্দ্ব, প্রধান বিচারপতি গ্রেফতার, জরুরি অবস্থা জারি সব মিলিয়ে মালদ্বীপে এখন পুরোপুরি অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। ২০১৫ সালে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে কারাদণ্ড পাওয়া নাশিদ ও বিরোধী দলের আরও ১২ এমপিকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয় গত ১ ফেব্রুয়ারি মালদ্বীপ সুপ্রিম কোর্ট। কারাদণ্ড পাওয়ায় বিরোধী দলের ওই ১২ এমপির আসন শূন্য হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা খালাস পাওয়ায় মালদ্বীপের ৮৫ সদস্যের পার্লামেন্টে এমডিপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে পরিণত হয়েছে। রায়ে সে সময়ের বিচারকে ‘অসাংবিধানিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলা হয়। কিন্তু মালদ্বীপ সরকার বিরোধী দলের  নেতাদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানালে চলমান সংকটের সূত্রপাত হয়। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন গত সোমবার রাতে জরুরি অবস্থা জারির মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশটির প্রধান বিচারপতি আবদুল্লাহ সাঈদ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান এবং কারাবন্দী নেতাদের মুক্ত করতে ‘ভারতের হস্তক্ষেপ’ কামনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদ। মালদ্বীপের প্রধান বিরোধী দল মালদিভিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এমডিপি) নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদ বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন। টুইটারে এক বিবৃতিতে নাশিদ বলেন, ‘বিচারক, রাজনৈতিক বন্দী, সেইসঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমকে মুক্ত করতে আমরা ভারত সরকারকে তাদের সেনাবাহিনী সমর্থিত প্রতিনিধি দলকে মালদ্বীপে পাঠানোর আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের মালদ্বীপের মাটিতে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

নাশিদ আরও বলেন, আমরা অবশ্যই প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করব। মালদ্বীপের জনগণ আন্তর্জাতিক অঙ্গন বিশেষ করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ বিষয়ে সাহায্যের অনুরোধ করছে।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন গত শনিবার দেশটির পার্লামেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। তার এক দিন পরই দেশজুড়ে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এদিকে, নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংবাদ মাধ্যমকে ভারতীয় এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, ভারত সরকার মালদ্বীপের পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে, বিশেষ করে সেখানে অবস্থান করা ভারতীয়দের নিরাপত্তার বিষয়টি তারা নিশ্চিত করতে চাইছে। সেইসঙ্গে ভারত তাদের স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিউর সক্রিয় করেছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তারা। এসওপির অর্থ ভারতের বিমান ও নৌসেনাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যদিও সামরিক অভিযানের নির্দেশ এখনো আসেনি, কিন্তু আসলে কয়েকঘণ্টার মধ্যেই ভারতীয় বিমান ও যুদ্ধ জাহাজ মালদ্বীপে রওনা হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদ ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের কাছে অল্প ব্যবধানে হেরে যান। অন্যদিকে, মামুন আবদুল গাইয়ুম ৩০ বছর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সত্ভাই।

 

জনসংখ্যা ও অর্থনীতি

মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। শতকরা ১০০ ভাগ মুসলমান। ধিবেহি ভাষা বা মালদ্বীপীয় ভাষা মালদ্বীপের সরকারি ভাষা। এই দ্বীপগুলোর প্রায় সবাই ধিবেহি ভাষা ও বিভিন্ন উপভাষা ব্যবহার করে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রই এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস। আমদানির ওপর দেশটির অর্থনীতি বেশির ভাগ নির্ভর করলেও সামুদ্রিক মাছ হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি। তবে বর্তমানে দেশটি পর্যটন শিল্পেও অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। মালদ্বীপের বড় শিল্প এখন পর্যটন। প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক আসে মালদ্বীপ দেশ উপভোগ করতে। দেশটির মোট আয়ের ২৮ শতাংশ এবং মোট বৈদেশিক আয়ের ৬০ শতাংশই আসে পর্যটন শিল্প থেকে। ১৯৮৯ সালে দেশটির সরকার প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করে। শেষ এক বছর ধরে দেশটির প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশের বেশি।

 

রাজার দ্বীপ ‘মালে’

মালদ্বীপের রাজধানী মালে। খুব ছোট এই দ্বীপটিকে বলা হয় কিংস আইল্যান্ড। বাংলা করলে যার মানে দাঁড়ায় রাজার দ্বীপ। ঘণ্টাখানেক সময় হাতে নিয়ে চাইলে পুরো মালে ঘুরে আসা সম্ভব। মালদ্বীপ পুরো দেশটিই দ্বীপের মালা। মালেও তাই। সমুদ্রে জেগে থাকা ছোট রাজধানী দ্বীপ পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ৫.৮ বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ এই দ্বীপে প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ বসবাস করে। অবাক করা বিষয় হলো মালে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর!

 

শিক্ষিতের হার প্রায় শতভাগ

ঐতিহ্য অনুযায়ী মালদ্বীপের তিন বছরের শিশুরা ‘এডহারজ’ নামক স্কুলে যায়। এটার জন্য ব্যবহার করা হয় বড় একটি রুম অথবা বড় কোনো গাছতলা। এই বয়সে তারা কিছু গণিত, মাতৃভাষা ও আরবি বিষয়ে পড়াশোনা করে। এরই সঙ্গে কোরআন পড়াটা রপ্ত করে নেয়।

বর্তমানে এই ধরনের প্রাইভেট স্কুলের জায়গা দখল করে নিচ্ছে ওয়েস্টার্ন স্টাইলের কিছু স্কুল। মালদ্বীপে বয়স্কদের মধ্যে শিক্ষিতের হার রয়েছে ৯৮ শতাংশ। অপরদিকে ছোটদের মধ্যে শতভাগ লেখাপড়া জানা।

তাদের রেজাল্টও অনেক ভালো। ছাত্রদের ৯৯% গ্রেড ফাইভ রেজাল্ট করে। ২০০২ সালের তথ্যমতে, দেশটির প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে জানানো হয় তারা ইউনিভার্সাল প্রাইমারি এডুকেশনের প্রায় পুরোটাই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭৮ সালে যেখানে শিক্ষার হার ছিল ৭০% ২০০২ সালে এসে তা দাঁড়ায় ৯৮.৮২ শতাংশ। ২০০৫ সালে তাদের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই স্কুল গোয়িং স্টুডেন্ট।

 

নিরাপদ পর্যটন

দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের গঠন প্রশ্নাতীতভাবেই পৃথিবীর বুকে বিস্ময়কর সুন্দরতম একটি স্থান। মালদ্বীপকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্র। এখানকার রিসোর্ট, দ্বীপ সবই আকর্ষণ করবে যে কোনো পর্যটককে। বেশিরভাগ পর্যটক রাজধানী মালেতে যান। সেখান থেকে আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় যান, বোটিং করেন, উল্লেখযোগ্য মসজিদ দেখেন, পাশের মার্কেট থেকে কেনাকাটা করে ফিরে আসেন। তবে এই দেশের আরও অনেক জায়গা

রয়েছে যেগুলো পর্যটকদের জন্য যেমন পছন্দনীয় তেমন নিরাপদ। স্পেশাল রিসোর্ট, পুল, বোটিং স্পেস সবই পাবেন নিজের মতো করে। খুব সম্প্রতি নতুন লোকাল গেস্ট হাউসগুলো হানিমুন জুটির জন্য নিয়ে এসেছে ফ্লোটিং হাউস, অ্যাডভেঞ্চারসহ মনোমুগ্ধকর নানা আয়োজন।

বালু বেষ্টিত এই দ্বীপরাষ্ট্রের মূল আকর্ষণ বাড়িয়েছে রিসোর্টগুলো। এগুলো দ্বীপের চেহারাই বদলে দিয়েছে। সুন্দর সাজানো-গোছানো পরিবেশ একই সঙ্গে প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গের অনুভূতি দিয়ে থাকে। দ্বীপ ঘিরে রাখা পরিষ্কার ঝকঝকে পানি ইশারা দিয়ে ডাকে বোটিংয়ের জন্য।

 

পানির নিচে ক্যাবিনেট মিটিং

দ্ব্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের সরকার ২০০৯ সালে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পানির নিচে ক্যাবিনেট মিটিং করার মাধ্যমে। প্রশ্নাতীতভাবেই পৃথিবীজুড়ে এই মিটিং পত্রিকাগুলোর শিরোনামে পরিণত হয়। পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয় হওয়ায় এই অদ্ভুত মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। ১৪ মন্ত্রিসভার মাত্র তিনজন এই মিটিংয়ে অংশ নিতে পারেননি। যার মধ্যে দুজন শারীরিকভাবে আনফিট ছিলেন আর অপরজন দেশের বাইরে ছিলেন। তাছাড়া মন্ত্রিসভার সবাই পানির নিচের অভূতপূর্ব সেই মিটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ইনস্ট্রাক্টরদের সহায়তায় মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারী মন্ত্রীদের মিলিটারি এসকর্টরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

 

সমুদ্রে ভাসে বিমানবন্দর

সমুদ্রে ভাসে বিমানবন্দর! শুনতে অবাক হওয়ার মতো হলেও এটি সত্যি মালদ্বীপে। আস্ত একটা দ্বীপ নিয়েই গড়ে উঠেছে মালদ্বীপের একমাত্র বিমানবন্দর। এটি পৃথিবীর নয়নাভিরাম সুন্দর বিমানবন্দরগুলোর মধ্যেও অন্যতম। এই বিমানবন্দরের নাম ইব্রাহিম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এর চারপাশজুড়ে ভারত মহাসাগর। চলমান উড়োজাহাজ থেকে আপনি যখন এই বিমানবন্দরে ল্যান্ড করতে যাবেন তখন এর অপরূপ দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। মালদ্বীপের একমাত্র প্রধান প্রবেশদ্বারও এই বিমানবন্দর। অর্থাৎ আপনাকে এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেই মালদ্বীপে প্রবেশ করতে হবে। সরকারি মালিকানাধীন আইল্যান্ড এভিয়েশন সার্ভিসেস চেন্নাই ও তিরুবনন্তপুরম, ভারত ও বাংলাদেশ এ আন্তর্জাতিক পরিবহন করে থাকে।

 

সাবমেরিনে সমুদ্র ভ্রমণ

মালদ্বীপের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে পর্যটকরা অনায়াসে উপভোগ করতে পারেন একের পর এক দ্বীপ। পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র মালদ্বীপেই রয়েছে সাবমেরিনে করে সমুদ্রে ডুব দেওয়ার সুযোগ। বিশালকায় সাবমেরিনে করে সমুদ্রর তলদেশে ভ্রমণ করতে চাইলে মালদ্বীপ আপনার জন্য তীর্থস্থান। সাবমেরিন করে পর্যটকদের ১২০ ফুট গভীর সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত ঘুরিয়ে আনা হয়। গভীর সমুদ্রের তলদেশে বিশাল বিশাল মাছ, গাছ-গাছালি, ভয়ংকর প্রাণী, উঁচু-নিচু পাহাড় দেখে মুগ্ধ হতে হবেই আপনাকে। মনে হবে যেন আপনি এক নৈসর্গিক ভুবনে প্রবেশ করেছেন যেখানে শুধুই আপনি আর অবারিত জলরাশি। সমুদ্রের তলদেশে ভ্রমণ এতই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দিবে যে আপনার আর ফিরে আসতে মন চাইবে না। সৌন্দর্যপিপাসুদের জন্য অনাবিল আনন্দের নাম সাবমেরিনে সমুদ্র ভ্রমণ। সাবমেরিনের পাশপাশি এখানে রয়েছে সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সাফারিবোট। এক একটি সাফারিবোট ১৫-২০ দিনের জন্য ২০-২৫ জন পর্যটক নিয়ে পাড়ি জমায় গভীর সমুদ্র ভ্রমণের পথে।

 

হাজার দ্বীপের দেশ মালদ্বীপ

মালদ্বীপ দেশটি অনেক দ্বীপের সমাহার। মালদ্বীপে মোট ১১৯০টি প্রবাল দ্বীপ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ২০০টি দ্বীপে মানুষের বসবাস রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য মালদ্বীপের এই দ্বীপগুলোর প্রতিটিই সমুদ্রে জেগে রয়েছে। পর্যটক ইবনে বতুতা যখন মালদ্বীপ পৌঁছান তিনি একে বলেছেন— মহল দ্বীপ বা রাজপ্রাসাদের দ্বীপ।

সম্রাট অশোকের সময় থেকে শ্রীলঙ্কা থেকে মালদ্বীপে বৌদ্ধভিক্ষুদের যাতায়াত ও বসবাসের ইতিহাস রয়েছে। এরপর নানা চড়াই-উত্রাই পেড়িয়ে ১৯৬৫ সাল থেকে মালদ্বীপ ব্রিটিশ শাসনের ইতি টেনে স্বাধীন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। মালদ্বীপের আয়ের বড় অংশই সমুদ্র পরিবহন ও পর্যটন থেকে এসে থাকে।

 

অ্যালকোহল নিষিদ্ধ

মুসলিম দেশ মালদ্বীপ। আর সে কারণেই এখানে অ্যালকোহল একেবারেই নিষিদ্ধ। স্থানীয়রা ইসলামিক রীতি অনুসারে এই নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু একেবারে ভড়কে যাওয়ার কিছু নেই। হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে পর্যটকদের জন্য হরহামেশাই অ্যালকোহল মিলবে। তবে আপনি কখনোই চাইলেই পাবলিক প্লেসে মদপান করতে পারবেন না। এ ছাড়াও প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় অতিথিদের ফ্রি মদপানের ব্যবস্থা করে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর