বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিপজ্জনক বিমানবন্দর

তানভীর আহমেদ

বিপজ্জনক বিমানবন্দর

ঝুঁকিপূর্ণ ত্রিভুবন বিমানবন্দর

নেপালের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ‘ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’। এটি রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৩৩৮ মিটার উঁচুতে অবস্থিত বিমানবন্দরটি ১৯৪৯ সাল থেকে বিমানমাঠ হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ১৯৫৫ সালে রাজা মাহেন্দ্রার মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়। ১৯৬৪ সালে বিমানবন্দরটি তার বর্তমান নাম ধারণ করে। এর রানওয়ে মূলত ঘাসে ঢাকা। পাহাড়ে ঘেরা বিমানবন্দরটির আয়তন বিভিন্ন সময়ে বাড়ানো হয়েছে। শুরুর দিক থেকে অনিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করলেও ১৯৭২ সাল থেকে নিয়মিত জেট পরিচালনা করা হয়। বিমানবন্দরটিতে একটি ডমেস্টিক এবং একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল রয়েছে। বর্তমানে ৩৮টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

তবে অব্যবস্থাপনা হোক অথবা পারিপার্শ্বিক কারণ হোক, ত্রিভুবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর হিসেবে ধরা হয়। কারণ তাদের কার্যকালের যাত্রার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দুর্ঘটনা তো কম ঘটেনি। পরিসংখ্যান বলছে, এসব দুর্ঘটনায় ৩৫৬ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বিমানের পাশাপাশি সেখানে হেলিকপ্টারও বিধ্বস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ১২ মার্চ বাংলাদেশি একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ত্রিভুবন বিমানবন্দরটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আবারও বিশ্বমিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছে। কাঠমান্ডুর উপত্যকার বেশ সংকীর্ণ স্থানে এটি অবস্থিত। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত হওয়ায় প্রায়শই কুয়াশায় ঢাকা থাকে। এই কারণে এতটা দুর্ঘটনাপ্রবণ বলে মনে করে অ্যাভিয়েশন সেফটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তাদের সমালোচনা হয়েছে। উইকিপিডিয়া বলছে, ১৯৭২ সালের মে মাসে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমান অবতরণ করার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। তাতে ১০০ জনের মতো যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিলেন। তাদের একজন নিহত হন। ১৯৯২ সালে থাই এয়ারওয়েজের একটি এয়ারবাস অবতরণ করার জন্য বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১১৩ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হয় আরও একটি ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। পাকিস্তানের পিআইএর বিমানটি বিধ্বস্ত হলে বিমানের ভিতরে থাকা ১৬৭ জনের সবাই প্রাণ হারায়। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। ১৯৯৫ সালে রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনসের একটি বিমান বেষ্টনী ভেঙে মাঠের ভিতরে ঢুকে যায়। তাতে দুজন নিহত হয়।

১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে লুফথানসার একটি বিমান এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়ন শুরু করার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। তাতে পাঁচজন ক্রু সদস্য নিহত হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নেকন এয়ারের একটি বিমান ত্রিভুবন বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি টাওয়ারের সঙ্গে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১০ জন যাত্রী ও পাঁচজন ক্রুর সবাই নিহত হন। ২০১১ সালে বুদ্ধ এয়ারের একটি বিমান বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় ১৯ জন আরোহীর মধ্যে একজন শুরুতে প্রাণে বাঁচতে সক্ষম হলেও পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। বলা হয় খারাপ আবহাওয়া ও নিচুতে থাকা মেঘের কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ২০১২ সালে সিতা এয়ারের একটি বিমান উড্ডয়নের পরপরই সম্ভবত একটি শকুনের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৯ জন আরোহীর সবাই মারা যান। ২০১৫ সালে তুর্কি এয়ারলাইনসের একটি বিমান ঘন কুয়াশার মধ্যে নামতে গিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়ে। ৩০ মিনিট ধরে এটি বিমানবন্দরের ওপর উড়তে থাকে। দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় নামতে পারলেও সেটি রানওয়ে থেকে ছিটকে মাঠের ঘাসের ওপর চলে যায়। ২২৭ জন যাত্রীকে সেখান থেকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে সামিট এয়ারলাইনসের একটি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আর সর্বশেষ দুর্ঘটনার শিকার হলো ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের বিমানটি। যে বিমানবন্দরের দুর্ঘটনার ফিরিস্তি এত বড় তাকে নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর বলা যায়।

 

চার্চেভেল এয়ারপোর্ট  [ফ্রান্স]

বিপজ্জনক বিমানবন্দরের কথা বললে প্রথমেই চলে আসে চার্চেভেল বিমানবন্দরের কথা। বাণিজ্যিক বিমানের চলাচল খুব কম হলেও প্রাইভেট বিমানের আনাগোনা রয়েছে, যদিও এই বিমানবন্দরটি হলো একটি স্কি এরিয়া। হলিডের জেমস বন্ড সিনেমাতেও এই বিমানবন্দরটি দেখানো হয়েছিল। তারপর থেকেই সাধারণ মানুষের কাছে বিপজ্জনক রানওয়ে হিসেবে এটি পরিচিতি লাভ করে। এখানে বিমান ওঠানো-নামানো দুটি কাজই ভীষণ কঠিন। বিমান দুর্ঘটনার জন্য যতরকম কারণ থাকতে পারে তার সবই রয়েছে এ বিমানবন্দরটিতে। এখানে রানওয়ে অনেক ছোট এবং খুব ঢালু। বিমান অবতরণের ওপর এখানে পাইলটদের খুব কম গতিতে নামতে হয়, টেক অফ করার সময় খুব কম গতিতে রানওয়ের উঁচু প্রান্তের দিকে যেতে হয়। বিমানবন্দরটির রানওয়ে মাত্র ৫২৫ মিটার এবং এর ব্যাসার্ধ ১৮.৫। এ ছোট রানওয়েতে একটি বিমান মাত্র একবারই উড়তে অথবা নামতে পারে। একই সময়ে অন্য কোনো বিমান এয়ারপোর্ট ছেড়ে যেতে চাইলে অথবা বাইরে থেকে এসে এখানে অবতরণ করতে পারে না। এ ছাড়া অনেক সময় অল্প জায়গায় বিমান ঘুরানো খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখানে বিমান ঘুরাতে বেগ পেতে হয়। এসবের পাশাপাশি আছে ঘন কুয়াশা এবং মেঘের বাড়াবাড়ি। ঘন কুয়াশায় উড়োজাহাজ অবতরণ বা উড্ডয়ন দুটোই বন্ধ থাকে পুরোপুরি। অনেক সময়ই ভারী মেঘের কারণে বিমান শিডিউল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মেঘ এসে রানওয়েতে  কুয়াশাচ্ছন্ন করে তোলে বলে রানওয়েতে বিমান ওঠানো বা নামানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পাইলটদের কাছে এসব যে প্রাকৃতিক কারণে সমস্যা সৃষ্টি করে তা নয়। অল্প জায়গার কারণে রানওয়ে থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেলে দুর্ঘটনার মাত্রাও এখানে বেশি বলেই মনে করেন পাইলটরা। এ বিমানবন্দরটিকে ভয়ানক বিমানবন্দর বলার আরেকটি কারণ হলো আল্পস পর্বতমালা। অতি উঁচু পর্বতমালা ঘিরে রেখেছে এই বিমানবন্দরটিকে। অনেকবারই বহু দক্ষ পাইলটের কাছেও এয়ারপোর্টের রানওয়ে খুঁজে পেতেই হয়রান হতে হয়। আল্পস পর্বতমালা থেকে মেঘের কুয়াশা রানওয়েতে বিচরণ করে বলে সব সময়ই আলো জ্বালিয়ে রানওয়ে চিহ্নিত করতে হয় পাইলটদের কাছে। এসব ছাড়াও সমস্যার অন্ত নেই এই বিপজ্জনক এয়ারপোর্টে। প্রায়ই জ্বালানি সমস্যা ছাড়াও কারিগরি ত্রুটি সারাতে এই এয়ারপোর্টে কর্তৃপক্ষকে ভুগতে হয়।

 

বাররা এয়ারপোর্ট  [স্কটল্যান্ড]

স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে সাধারণ মানের এয়ারপোর্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল বাররা এয়ারপোর্ট। এরপর বেশ কিছু আধুনিকায়ন হলেও মূলত পূর্বের দুর্নাম খুব একটা ঘুচাতে পারেনি এটি। এ বিমানবন্দরটি স্কটল্যান্ডের অন্তর্গত বাররা দ্বীপে অবস্থিত বলেই বাররা এয়ারপোর্ট নাম দেওয়া হয়। বিভিন্ন সময় পর্যটকদের ভোটে এই এয়ারপোর্টকে দেখা হয়েছে একেবারেই আগ্রহশূন্য এয়ারপোর্ট। বাররা দ্বীপপুঞ্জের কাছে অবস্থিত এই এয়ারপোর্টের সি বিচে যারা বেড়াতে আসেন তাদের চোখেও দুর্নাম আছে এই এয়ারপোর্টের। দ্বীপের বিশাল বিচের ওপর এই বিমানবন্দর তৈরি করা হয় ১৯৭৫ সালে। পৃথিবীর একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেখানে বিচের ওপর বিমান ল্যান্ড করাতে হয়। এ কারণেই এটি খুব বিপজ্জনক। সি বিচের ওপর দিয়ে বিমান অবতরণের জন্য পর্যটকদের কাছে এই বিমানবন্দরের বিমানগুলো বেশ আতঙ্ক তৈরি করে। শুধু তাই নয়, কানফাটানো শব্দের পাশাপাশি বিমানের ঘূর্ণায়মান পাখার বাতাসেও সরে দাঁড়াতে হয় পর্যটকদের। এত নিচু হয়ে যখন বিমান সি বিচের ওপর দিয়ে নেমে আসে তখন পাইলটের সামনে একটা চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়ায় এর রানওয়েতে বিমান নামানো। শুধু তাই নয়, এই বিমানবন্দরটি দিনে একবার জোয়ার-ভাটায় ধুয়ে যায়। তখন পাইলটদের অবস্থা হয় আরও সঙ্গিন।

 

জুয়াংকো ই রাসকুইন  [নেদারল্যান্ডস]

জুয়াংকো ই রাসকুইন বিমানবন্দরের শেষে রয়েছে খোলা উত্তাল সমুদ্র, উভয় পাশে উঁচু পাহাড়। বিমান উঠানো নামানোর সময় সবচেয়ে বেশিবার জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হওয়া বিমানবন্দরগুলোর একটি এটি। এই বিমানবন্দরটি নেদারল্যান্ডসের অন্তর্গত ছোট একটি ক্যারিবিয়ান দ্বীপ সাবায় অবস্থিত। এই বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ হয় ১৯৬৩ সালে। এটি সাবা দ্বীপের অধিকাংশ এলাকা নিয়ে অবস্থিত অন্যতম বড় আকারের এয়ারপোর্ট। ছোটখাটো বেশ কয়েকবার বিমান দুর্ঘটনা হলেও  সৌভাগ্যবশত এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক বিমানবন্দরের একটি ধরা হয় এটিকে। এই এয়ারপোর্টের রানওয়েটি সম্ভবত কোনো পাইলটকেই স্বাগত জানায় না এমনটাই বলা চলে। দুই পাশের উঁচু পাহাড়গুলো বিমান অবতরণের পক্ষে কোনোভাবেই ঠিক নয়। তা ছাড়া রানওয়ের শেষ প্রান্তটি সমুদ্রে নেমে যাওয়ায় ভুল করেও যদি পাইলট বিমান টেক অফ করাতে না পারেন তবে বিমানটি গিয়ে সোজা আছড়ে পড়বে সমুদ্রে।

পর্বতময় ভূখণ্ড এই রানওয়েটিকে করে তুলেছে আরও চ্যালেঞ্জিং। অভিজ্ঞ পাইলট ছাড়া এখানে উড়োজাহাজ অবতরণ করার কথা অন্য কেউ ভাবতেই পারেন না।

 

মেডেইরা  [পর্তুগাল]

পর্তুগালের বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয় ১৯৬৪ সালে। ছোট রানওয়ের মূল বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই এয়ারপোর্টের নামডাক থাকলে একসময় প্রতীয়মাণ হয় এটিই বিমানবন্দরের সমস্যা। পাশাপাশি যোগ হয়েছে রানওয়ে ঘেঁষে থাকা সুউচ্চ পাহাড়গুলো। বিমানবন্দরের সঙ্গে সুউচ্চ পর্বত ও সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্যও বিমান অবতরণ করাটা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। শুরুতে এ বিমানবন্দরের মূল রানওয়ে ছিল মাত্র ১৪০০ মিটার লম্বা। কিন্তু একসময় পাইলটদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আরও ৪০০ মিটার বাড়ানো হয়। সবশেষ ২০০৩ সালে এর রানওয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে।

 

ম্যাটিক্যান এয়ারস্ট্রিপ [লুসোটো]

ম্যাটিক্যান এয়ারস্ট্রিপের কথা অনেকেই শুনেছেন হয়তো। রানওয়ে ধরে এগোতে থাকলে হঠাৎ শেষ হয়ে যায় রানওয়ে। উড়োজাহাজ যদি টেক অফ করে বাতাসে উড়তে শুরু করে তবে শেষ রক্ষা নইলে গিয়ে আছড়ে পড়তে হবে শূন্য গহ্বরে। পাহাড়ের এক পাশ কেটে বানানো এই এয়ারপোর্টটির সবচেয়ে বড় আতঙ্ক এটিই। হঠাৎ করে শেষ হয়ে যাওয়া রানওয়ে ধরে এগিয়ে যখন বিমানের নাক উঁচু করে বাতাসে ভাসতে শুরু করে তখনকার আতঙ্ক কেটে যাত্রীদের চোখে মুখে শুধু বেঁচে ফেরার আনন্দই অবশিষ্ট থাকে। বিমানের রানওয়ের এই ছোট পরিসরের পাশাপাশি রানওয়ে শেষে থাকা শূন্য ও বিশাল গহ্বরে বায়ুর ঘূর্ণি বিমান অবতরণকে করে তোলে আরও দুরূহ।

 

সি আইস  [এন্টার্কটিকা]

এন্টার্কটিকা মহাদেশে অবস্থিত এবং পৃথিবীর একমাত্র বরফের বিমানবন্দর এটি। বিশ্বের যত বিপজ্জনক বিমানবন্দর রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম এটি। এন্টার্কটিকায় গবেষণারত গবেষকদের কাছে বিভিন্ন জিনিসপত্র আনা নেওয়ার জন্য যে তিনটি এয়ার স্ট্রিপের ব্যবহার রয়েছে এর মধ্যে এটি একটি। এই বিমানবন্দর পাইলটদের কাছে খুবই ভয়ানক। কারণ এখানে পাইলটদের প্রসারিত বরফের পর খুব সতর্কতা নিয়ে বিমান অবতরণ করাতে হয়। এন্টার্কটিকায় বরফে ঢাকা রানওয়েগুলোর মধ্যে সি আইস বিশ্বের যে কোনো বিমানবন্দর থেকে আলাদা শুধু বিমানের ল্যান্ডি এরিয়ার জন্য। এখানে তড়িঘড়ি করে উড়োজাহাজ নামাতে গেলেই অতিরিক্ত ওজনের কারণে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এসব কারণেই পাইলটদের এই রানওয়ে সবসময় এড়িয়ে চলতেই পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

জিব্রাল্টার এয়ারপোর্ট  [জিব্রাল্টার]

বিমানবন্দরের ভিতরে রেলগাড়ি ছুটে চলছে এমনটা ভাবতেই হয়তো চোখ কপালে উঠে যাবে অনেকের। শুধু তাই নয় জিব্রাল্টার এয়ারপোর্টের ভিতরে দিয়ে চলে গেছে ভারী গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তাও! বিশ্বাস হতে না চাইলেও জিব্রাল্টারের এই এয়ারপোর্টে ঢুকলে আপনার মনে হবে আপনি বোধহয় কোনো রেইলরোড ক্রসিংয়ের ভিতর পড়েছেন! অনেকটা গাড়ি চলাচলের রাস্তার মাঝে এই এয়ারপোর্টের রানওয়ে বানানো হয়েছে। এ কারণেই প্রায়ই উড়োজাহাজ যখন অবতরণ করে তখন বাধ্য হয়ে দুই পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই অবাক করা বিমানবন্দরটি শুধু জিব্রাল্টার বা ইউএস এয়ারলাইনসের চলাচলে সারা বিশ্বেই উড়োজাহাজের ভয়ানক রানওয়ে হিসেবে পরিচিত। যারা প্রথমবার এই রানওয়ে ধরে বিমান থেকে অবতরণ করেছেন তারাই জানেন আতঙ্কের রেশ কতটুকু থেকে যায় নিরাপদে অবতরণের পরও। অনেক পাইলট এই রানওয়ে ধরে নামতে চান না। কারণ একটাই, উড়োজাহাজ তো বটেই সাধারণ যাত্রীদের নিয়েও প্রাণশঙ্কা।

 

প্রিন্সেস জুলিয়ানা  [নেদারল্যান্ড]

প্রিন্সেস জুলিয়ানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যখন প্রথমবার ভয়ানক রানওয়ের বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে তখন অনেকেই বলেছিলেন এই এয়ারপোর্টটি বন্ধ করে দিতে। বিশেষ করে বিমান দুর্ঘটনার ঘটনাগুলোকে মোটেই হেলার নয় বলেই মত দিয়েছিলেন অনেকে। এ বিমানবন্দরটি রয়েছে পূর্ব ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সেন্ট মার্টিনে। নেদারল্যান্ডের যে অংশে এখনো নিয়মিত বিমান অবতরণে আগে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পাইলটদের বলা হয় তার একটি এই বিমানবন্দর। এ অঞ্চলের মধ্যে এটি ২য় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরটি যখন নির্মাণ করা হয়েছিল তখন কিন্তু অবস্থা এতটা প্রসারিত ছিল না যে নিরাপত্তার দিকটি বিবেচ্য হবে। আসলে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৪২ সালে। ১৯৪৪ সালে নেদারল্যান্ডসের সম্রাজ্ঞী জুলিয়ানা এ বিমানবন্দরে প্রথম ল্যান্ড করলে তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। বিমানবন্দরের ল্যান্ডিং স্ট্রিপ খুবই ছোট যা প্রায় ২১৮০ মিটার মাত্র। এত ছোট রানওয়ের আসল কারণ ছিল যুদ্ধবিমানের ছোট রানওয়ে ধরে ছুটে চলা। যাত্রী পরিবহনের চেয়েও তাই বিশেষ দৃষ্টি ছিল যুদ্ধবিমানগুলোতে করে গোলাবারুদ পরিবহন।

 

কানসাই এয়ারপোর্ট  [জাপান]

জাপানের ওসাকায় অবস্থিত এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর। কানসাই বিমানবন্দরটি লম্বায় ২.৬ মাইল এবং ১.৬ মাইল চওড়া। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে এই বিমানবন্দরটি ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

 

 

লুকলা এয়ারপোর্ট  [নেপাল]

লুকলা বিমানবন্দরকে অনেকে তেনজিং-হিলারি এয়ারপোর্ট নামেও চেনেন। নেপালে অবস্থিত এই এয়ারপোর্টটি ২০১০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক ও বিপজ্জনক এয়ারপোর্ট হিসেবে নাম লেখায়।

দ্য হিস্টোরি চ্যানেলের করা এক প্রতিবেদনে এই এয়ারপোর্টকে বিপজ্জনক রানওয়ের এয়ারপোর্ট হিসেবে তুলে ধরা হলে বিশ্বের মানুষের কৌতূহলে এসে দাঁড়ায় এটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৯০০ মিটার উপর অবস্থিত এই বিমানবন্দরটি নেপালের লুকলা শহরে অবস্থিত খুব ছোট একটা বিমানবন্দর। এই এয়ারপোর্টের চারপাশের পরিবেশ জনকোলাহল থেকে দূরে থাকলেও বিমানবন্দরের এক প্রান্ত পুরোটাই পর্বতবেষ্টিত বলে বিমান অবতরণের সময় পর্বতের সঙ্গে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। ২০০৮ সালে এই বিমানবন্দর এভারেস্ট বিজয়ী স্যার এডমন্ড হিলারির নামে লুকলা এয়ারপোর্টের নাম পাল্টে তেনজিং-হিলারি এয়ারপোর্ট নাম রাখা হয়। বারবার বিমান দুর্ঘটনার ঘটনার তালিকায় একেবারেই পিছিয়ে নেই এই এয়ারপোর্টটি। পাইলটদের কাছে রীতিমতো এক চ্যালেঞ্জে নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে এই এয়ারপোর্টটি। বিমান অবতরণের সময় খারাপ আবহাওয়ায় পাহাড় ঘেঁষে মেঘ ছুটে আসায় রানওয়েতে বিমান নামানোর চ্যালেঞ্জে বেশ অনেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর