মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুপারস্টার রোনালদো

তানভীর আহমেদ

সুপারস্টার রোনালদো

ফুটবল তারকাদের আসর বসেছে রাশিয়ায়। এখনো জ্বলে উঠতে পারেননি মেসি, নেইমার, মুলারের মতো তারকারা। ব্যতিক্রম শুধু রিয়াল মাদ্রিদ ও পর্তুগাল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। স্পেনের সঙ্গে প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন কেন তাকে তারকাদের তারকা বলা হয়। ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হয়ে গুনে গুনে পাঁচটি ব্যালন ডি অর ঘরে তুলেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে একের পর রেকর্ডের পাশে লিখে চলেছেন নিজের নাম। দুর্দান্ত স্পিড, ফিটনেস আর টেকনিক্যালি সবাইকে টক্কর দিয়ে রোনালদো এখন বিশ্বসেরাদের কাতারে। খুব দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা রোনালদোর ১৫ বছর বয়সে হার্টের অপারেশনের পর কেউ ভাবতেও পারেননি তিনি ফুটবল মাঠে ফিরে আসবেন! সেই রোনালদোকে কেন্দ্র করেই পর্তুগাল বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে আজ!

 

বিশ্বকাপে রোনালদো

২০০৬ প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামেন পর্তুগাল তারকা রোনালদো। প্রথম বিশ্বকাপে একটি গোল করেছিলেন। ক্লাব ফুটবলে জাদু দেখানো এই তারকা ২০১০ সালের বিশ্বকাপেও মাত্র একটি গোলের দেখা পান। ২০১৪ বিশ্বকাপে এক গোল করার হিসেবটাই থাকল। ব্যতিক্রম ঘটল ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে এসে। টানা ৪ বিশ্বকাপ খেলতে নেমে এবার প্রথম ম্যাচেই ৩ গোল করলেন রোনালদো!

 

প্রেসিডেন্টের নামে তার নাম

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নামটা আরও কোথায় শুনেছেন বলে মনে হয়? পর্তুগাল ফুটবল সেনসেশন রোনালদোর বাবা ছিলেন রিপাবলিকান ভক্ত। রাজনীতি নিয়ে তার মাতামাতি ঘরেও এসে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের নামের খ্যাতি তাই ছাড়তে পারলেন না। রোনাল্ড থেকে সন্তানের নাম রাখলেন রোনালদো। যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা-খ্যাতি রোনালদোর বাবাকে মাতিয়ে তুললেও তিনি কি জানতেন তার ছেলেও একদিন বিশ্ব মাতাবে? সে প্রশ্নের উত্তর না থাকলেও, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিন্তু বিশ্বজয় করতে পেরেছেন তার ফুটবল নৈপুণ্য দিয়ে। আটলান্টিক মহাসাগরের ওপাড়ে পর্তুগালের মাদেইরায় জন্ম নিয়েছিলেন রোনালদো।

সালটা ছিল ১৯৮৫ সালের ৫ ফ্রেব্রুয়ারি। মারিয়া দোলোরেস দস সান্তোস আভেইরো এবং জোসে দিনিস আভেইরোর ঘরে জন্ম নেওয়া রোনালদোর জীবনী যে কাউকে চমকে দেবে। গর্ভে থাকার সময়ই তার মা এবং বাবা মোটেও চাননি তাদের এই সন্তানটির জন্ম হোক। কারণ দরিদ্রতা। বাবা জোসে দিনিস আভেইরো ছিলেন পেশায় একজন মালী। মানুষের বাগানে গাছের পরিচর্যা করে খুব সামান্য টাকা কামাই করতেন। সেই টাকায় পেটের ভাত জুটত না। সংসারের হাল ধরতে তার মা মারিয়া দস সান্তোস আভেইরো রাঁধুনির কাজ নেন। ঘরে তখন ১ ছেলে আর ২ মেয়ে তাদের। একজন মানুষের খাবার জোগাতেই হিমশিম যখন তখন আরেকটি সন্তান নেওয়ার সাহস তাদের হচ্ছিল না। গর্ভে রোনালদো, মায়ের মিনতিতেই সন্তানটির জন্ম হলো। বাবা আর না করতে পারলেন না। কে জানত, সেই সন্তানটি একদিন খ্যাতি-বিত্তের সিংহাসনে বসবে?

 

স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হলো তাকে

রোনালদোর শৈশব আর দশজন দরিদ্র মানুষের মতোই ছিল। বাবা হতাশ হয়ে মদপান করে মাতলামি করতেন। ভাঙা এক টিনের ছাদ দেওয়া বাড়িতে অনেক কষ্টে বড় হয়েছেন রোনালদো। বস্তির মতো এলাকায় কেউ তাদের খোঁজ নিত না। আশপাশে যারা ছিল তারাও হতদরিদ্র। ঘরে টাকা নেই, খাবার নেই। পড়াশোনায় মন নেই। ছেলে পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করবে, ভাগ্য বদলাবে সেই স্বপ্ন তার বাবারও ছিল। কিন্তু রোনালদো সেই পথে হাঁটতে পারেননি। সারাদিন ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকতেন। পাড়া-মহল্লার মাঠে বন্ধুদের নিয়ে ফুটবল খেলেই দিন কাটত। স্কুলের পড়াশোনা তাই গোল্লায় গেল। ১৪ বছর বয়সে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়। স্কুলের এক শিক্ষক তার উচ্চারণ নিয়ে মশকরা করতেন। সেটা সহ্য করতে পারেননি কিশোর বয়সী রোনালদো। রাগের মাথায় চেয়ার ছুড়ে মারেন। সেই অপরাধে স্কুল জীবন শেষ হয় তার। পড়াশোনা আর হলো না। এই ঘটনার পর দরিদ্র বাবাও আর ঘাঁটলেন না তাকে। ফুটবল খেলার এই নেশা দেখে বাবা রোনালদোর ভবিষ্যৎ ফুটবলের ওপরই ছেড়ে দিলেন।

 

গোল না হলেই কেঁদে ফেলতেন রোনালদো

মাত্র ১০ বছর বয়সেই রোনালদো তার এলাকায় বেশ নাম-ডাক কুড়িয়ে ফেলেছিলেন। তার সঙ্গে বল কাটিয়ে কেউ পেরে উঠত না। তাকে মহল্লার ছেলেরা ডাকত ক্রাই বেবি নামে! যে ছেলেটা কাঁদে! ফুটবল খেলতে গিয়ে দারুণ সব পাস দিতেন রোনালদো। বন্ধুরা স্বো পাস থেকে গোল দিতে না পারলে খেলার মাঠেই কেঁদে বুক ভাসাতেন বলে তার কপালে এই খেতাব জুটেছিল। তাকে নিয়ে মজা করলেও বন্ধুরা তার খেলায় মুগ্ধ ছিল। মৌমাছির মতো ছুটতে পারত বলে তাকে অনেকেই ‘লিটল বি’ বা ছোট মৌমাছি বলে ডাকত। তার জীবনীতে লেখা হয়— রোনালদো, সেই ছেলেটা যে খায় আর খেলে, কেউই পারে না তার সঙ্গে! ফুটবলই ছিল রোনালদোর ধ্যান। মালীর কাজ ছেড়ে দেন রোনালদোর বাবা। কাজ নেন একটি স্থানীয় অপেশাদার ক্লাবের সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে। ছেলের ফুটবল পাগলামি দেখে তাকে সেই ক্লাবে নিয়ে যান তিনি। অ্যান্ডোরিনহা ক্লাবেই রোনালদোর ফুটবল জীবনের শুরু। রোনালদো ১৯৯২ সালে সেই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯৯৫ পর্যন্ত সেই ক্লাবে খেলেন।

 

১২ বছর বয়সী রোনালদো স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে তিন দিনের ট্রায়ালে যান। সেখানে কোচের চোখে পড়েন তিনি। তার ড্রিবলিং আর দৌড়ের গতি তাকে সবার চেয়ে আলাদা করে দেয়...

হার্টের রোগে থমকে গিয়েছিল ফুটবল ক্যারিয়ার

প্রফেশনাল ফুটবলে রোনালদো নজর কাড়েন ১৯৯৭ সালের দিকে। ১২ বছর বয়সী রোনালদো স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে তিন দিনের ট্রায়ালে যান। সেখানে কোচের চোখে পড়েন তিনি। তার ড্রিবলিং আর দৌড়ের গতি তাকে সবার চেয়ে আলাদা করে দেয়। লিসবনের ক্লাবটি তাকে মাত্র ১ হাজান ৫০০ ইউরোর বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ করে। যদিও সবাই জানতে পারে তাকে ২২ হাজার ৫০০ ইউরোতে চুক্তি করেছে দলটি। এই ক্লাবে গিয়ে শারীরিক ও ফুটবল কলাকৌশল রপ্ত করতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু বছরখানেক পরই দুঃসংবাদ এলো। শরীরের রোগ তাকে কাবু করে ফেলে। ১৫ বছর বয়সে ধরা পড়ে রোনালদো হৃদরোগে ভুগছেন। সাধারণ মানুষের চেয়ে তার হার্ট বেশি দ্রুত রক্ত সঞ্চালন করছে। টেকিকার্ডিয়া নামের সেই রোগ সারাতে অপারেশন ছাড়া উপায় নেই। ফুটবল ক্যারিয়ার ছেড়ে তখন বেঁচে থাকাই চ্যালেঞ্জ। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে রোনালদোর হার্ট অপারেশন তাকে আটকাতে পারেনি। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হতে শুরু করেন। আবার খেলার মাঠে ফিরে আসেন তিনি। হার্টের এমন জটিল অসুখ তারপর অপারেশনের পর কেউ ভাবতেও পারেননি রোনালদোকে খেলার মাঠে দেখা যাবে। তার সতীর্থরাও অবাক হয়ে দেখতে লাগল তাকে। রোনালদো আসলেই এক বিস্ময়!

 

যেভাবে ‘সিআর সেভেন’ এর উত্থান

১৬ বছর বয়সে স্পোটিং ইয়ুথ টিমে খেলতে নামেন। সেখানে তার ফুটবল নৈপুণ্য তাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। ২০০২ সালে প্রিমিয়ার লিগে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই ২ গোল করে সবাইকে চমকে দেন। অবশ্য বিশ্ববাসী তখনো তার খবর জানে না। আরও এক বছর পর রোনালদো ম্যাজিক দেখে বিশ্ব। ২০০৩ সালে স্পোটিং সিপি বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে রোনালদোকে প্রথমবারের মতো দেখতে পায় গোটা বিশ্ব। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে স্পোর্টিং সিপি। এই জয়ের নায়ক ছিলেন রোনালদো। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন তার খেলা দেখে বুঝতে বাকি রাখেননি— ভবিষ্যৎ মেগাস্টার এই ছেলেটাই! খেলা শেষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলোয়াড়রা ছুটে যান তাদের কোচ স্যার ফার্গুসনের কাছে— অনুরোধ একটাই তিনি যেন রোনালদোকে ক্লাবের জন্য চুক্তি করিয়ে নেন। স্যার ফার্গুসন আর দেরি করেননি। রোনালদোকে ১২ দশমিক ২৪ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে দলে যোগ করেন তিনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামি কিশোর এবং ক্লাবটির ইতিহাসের প্রথম পর্তুগিজ খেলোয়াড় হলেন রোনালদো। এখান থেকেই তার উত্থান। স্যার ফার্গুসন রোনালদোকে দিলেন ৭ নম্বর জার্সিটা। আজ ‘সিআর সেভেন’ মানে ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সাত’ নমটাই ব্র্যান্ড, রোনালদোকে চেনার আন্তর্জাতিক ঠিকানা। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে কিংবা পর্তুগালের হয়ে সাত নম্বর জার্সি পরেই মাঠ কাঁপান। ফুটবল বিশ্বকে প্রতিদিনই জানান দিচ্ছেন, কেন তিনি বিশ্বসেরাদের একজন।

 

এটাই আমার সেরা

আমি দারুণ খুশি। এই হ্যাটট্রিক আমার ক্যারিয়ারের সেরা

— স্পেনের বিপক্ষে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকের পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

 

► বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বুড়ো বয়সে হ্যাটট্রিক করেন পর্তুগাল সুপারস্টার রোনালদো। এখন তার বয়স ৩৩ বছর ১৩০ দিন। এর আগে বুড়ো বয়সে হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটা ছিল নেদারল্যান্ডসের রোব রেসেনব্রিংকের। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ৩৩ বছর ৩৩৫ দিন বয়সী এই নেদারল্যান্ডসের তারকা ইরানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন।

 

► রোনালদোর হ্যাটট্রিক সংখ্যাতত্ত্বেও জাদু দেখিয়েছে। ক্লাব ও দেশের হয়ে করা এটি ছিল তার ৫১তম হ্যাটট্রিক। আবার বিশ্বকাপের ইতিহাসেও এটি ৫১তম হ্যাটট্রিক!

 

► ক্লাব ফুটবলে জাদু দেখানো রোনালদো বড় কোনো টুর্নামেন্টে ৪৫ বার ফ্রি কিক নিয়েছেন। স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের তৃতীয় গোলটি ছিল অসাধারণ। আপনি কি জানেন, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এটিই তার প্রথম ফ্রি-কিক থেকে সরাসরি দেওয়া গোল?

 

► হ্যাটট্রিক ও দুর্দান্ত নৈপুণ্যে স্পেনের বিপক্ষে পর্তুগালের প্রথম খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন পর্তুগাল অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

 

 

প্রথম ম্যাচেই রোনালদো ম্যাজিক

► গোল দিয়েছেন ৩টি

 

► গোল পোস্টে শট করেছেন ৪টি

 

► শট লক্ষ্যে ছিল ৩টি

 

► খেলার মোড় বদলে দেওয়া পাস দিয়েছেন ১টি

 

► বল পাসে সফলতার হার ছিল ৯৪ শতাংশ

 

ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত গোল দিয়ে হ্যাটট্রিক করেন রোনালদো

স্পেন ও পর্তুগালের মধ্যকার বিশ্বকাপের প্রথম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হয়। এই ম্যাচে বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন পর্তুগাল সুপারস্টার রোনালদো।

 

গোল ১ ম্যাচের দুই মিনিটে ডি বক্সে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার নাচো অবৈধভাবে বাধা দিলে পড়ে যান রোনালদো। পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করেননি রোনালদো।

 

গোল ২ প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার মাত্র এক মিনিট আগে গুয়েদেসের কাছ থেকে বল পেয়ে রোনালদো বাঁ-পায়ে শট নিলে ডে গিয়ার হাত ফসকে জালে গিয়ে জড়ায়।

 

গোল ৩ খেলার ৮৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে রোনালদোকে ফাউল করে বসেন পিকে। রেফারি ফ্রি কিকের সিদ্ধান্ত দেন। সেখান থেকেই দর্শনীয় এক ফ্রি কিকে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন রোনালদো, স্পেনকে আটকে ড্র করে পর্তুগাল।

 

অর্জনেই সেরা

ব্যক্তিগত অর্জনে রোনালদোর ধারে কাছেও কেউ নেই। লিওনেল মেসির সঙ্গে শ্রেষ্ঠত্বে লড়াইয়ে রোনালদোকে একমাত্র নাম হিসেবে তুলে ধরেছেন বিশ্ব তারকারা। এক নজরে তার অর্জনগুলো— ফিফা ব্যালন ডি অর জিতেছেন : ২০০৮, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সাল। ফিফা দ্য বেস্ট" এওয়ার্ড : ২০১৬ ও ২০১৭ সাল। ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ২০০৮ সালে। ইউয়েফা বর্ষসেরা ইউরোপিয়ান খেলোয়াড় : ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সাল। ফিফা পুশকাস এওয়ার্ড পেয়েছেন ২০০৯ সালে। ইউয়েফা বর্ষসেরা ক্লাব ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন ২০০৭-০৮। ওয়ার্ল্ড সকার প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার : ২০০৮, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সাল। ফিফাপ্রো বর্ষসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ২০০৮ সালে।

প্রতিবছরই ফিফার ব্যালন ডি অর লড়াইয়ে রোনালদো এবং মেসির নাম চলে আসে। পরপর ৪ বার তার প্রতিদ্বন্দ্বী মেসিকে ব্যালন ডি অর জিততে দেখেও পিছিয়ে পড়েননি। এখন মেসির সমান ৫টি ব্যালন ডি অর রয়েছে রোনালদোরও। একযুগ পর রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোসহ অনেক ফিরে আসার সাক্ষী রোনালদো। বিশ্বের সবচেয়ে লড়াকু খেলোয়াড় হিসেবেও রোনালদোর নাম সবার আগে চলে আসে।

 

কত রেকর্ড তার

সর্বাধিক ১৩টি ফিফা অ্যাওয়ার্ড, বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও ধনী ফুটবলার হিসেবে নির্বাচিত, প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিটি মিনিটেই গোল করেছেন অফিশিয়াল ফুটবল খেলায়, প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেছেন, প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ভিন্ন ২টি ক্লাবের হয়ে ঘরোয়া লিগ, ঘরোয়া কাপ, উয়েফা সুপার কাপ, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ, গোল্ডেন বুট, লিগের সেরা খেলোয়াড় ও ব্যালন ডি অর জিতেছেন— ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে, প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা ৪টি ইউরো কাপে গোল করেছেন, প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা ৪টি বিশ্বকাপে গোল করেছেন, ইউয়েফা ইউরোতে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১ মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৭ গোলের রেকর্ড,

ইউরোপিয়ান ক্লাবভিত্তিক প্রতিযোগিতার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা, লা লিগায় ১৫০ গোল করা দ্রুততম খেলোয়াড়, পর্তুগালের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করা খেলোয়াড়, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিক করা খেলোয়াড়, রিয়াল মাদ্রিদের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা, ১ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল ৬০ গোল, লা লিগার ১ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল।

 

রোনালদোর গার্লফ্রেন্ড কজন সে হিসাব রাখা দায়! গার্লফ্রেন্ড নিয়ে তার উদ্যাম জীবনের খণ্ডচিত্র

গার্লফ্রেন্ড নাকি পদ্ম পাতার জল?

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৪৫০ আর পর্তুগালের হয়ে ৮৪ গোল করেছেন রোনালদো। এই হিসাবটা দেওয়া যায়। চাইলে দেওয়া যাবে, কয়টা হলুদ কার্ড পেয়েছেন কিংবা ফ্রি-কিক থেকে তার গোল সংখ্যা কত— কিন্তু দেওয়া যাবে না তার গার্লফ্রেন্ডের ঠিক সংখ্যাটা! হ্যাঁ, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর উদ্যাম জীবনের কথা কারও অজানা নয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টানোর আগেই পাল্টে যায় রোনালদোর গার্লফ্রেন্ড। আজ একজনের সঙ্গে হোটেলে রাত কাটিয়ে শিরোনাম হয়েছেন তো কাল আরেক সুন্দরীকে নিয়ে তিনি ক্যামেরাবন্দী হয়ে যান কোনো নির্জন সমুদ্রপাড়ে। নতুন গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করছেন, এই গুঞ্জনের মাঝেই তাকে দেখা যায় অর্ধনগ্ন হয়ে অন্য কোনো নারীর সঙ্গে। নারী বান্ধবীদের তালিকায় কম করে হলেও ২৩ জনের নাম এসেছে এ পর্যন্ত। খেলার মাঠে তারকা ফুটবলারের মাঠের বাইরের ছবিতে তাই অনেক বিতর্ক জড়িয়ে আছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ‘লাভার বয়’ কিংবা দুষ্টু ছেলে তকমাটা তাই জড়িয়ে গেছে তার সঙ্গে। এখনো বিয়ে না করলেও ঠিকই চার সন্তানের বাবা হয়ে গেছেন। ২০১০ সালে তিনি মায়ের পরিচয় গোপন রেখে প্রথম ছেলে সন্তানকে আইনি স্বীকৃতি দেন। ২০১৫ সালে তার বান্ধবী রাশিয়ান মডেল ইরিনা শায়েকের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন। ২০১৭ সালে রোনালদো জোড়া সন্তানের কথা জানান। মেয়ে ইভা মারিয়া ও ছেলে সন্তান মাতেওর কথা জানানোর পর তার বর্তমান বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজের গর্ভে এলানা মার্টিনা নামের এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ধারণা করা হচ্ছে, বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজ আবারও গর্ভ ধারণ করেছেন এবং রোনালদো হয়তো তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। রোনালদোর গার্লফ্রেন্ড হিসেবে নাম এসেছে কারিনা ফেররো, ডানিয়েল এগুয়েইর, ইসাবেল ফিগুয়েইর, দিয়ানা চ্যাভেজ, নুরিয়া বারমেদেজ, সুরাইয়া চ্যাভেজ, মার্চি রোমেরো, লুসিয়ান এভেরিয়াও, গেম্মা এটকিনসন, কারিনা বেচ্চি, ক্যারোলিনা প্যাটরিসিনো, লুসিয়া গার্সিয়া, নিকি গাজিয়ান, টেয়েসি কুন্নিহাম, নেরিদা গ্যালার্দো, মিয়া জোদাকিন, বিপাশা বসু, ল্যাটেজিয়া ফিলিপ্পি ও এলোয়ানা হায়ানেসসহ অনেক নারীর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর