রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপে জুয়ার আসর

তানভীর আহমেদ ও তানিয়া তুষ্টি

বিশ্বকাপে জুয়ার আসর

বিশ্বকাপ ফুটবলে ম্যাচ হবে আর পাতানোর ঘটনা ঘটবে না তা কেউ বিশ্বাস করে না। সেই ভাবনা থেকেই ধরে নেওয়া হচ্ছে এবারের গ্রেটেস্ট অন দ্য আর্থ শো রাশিয়ার জন্য হবে একটি কালো অর্থনৈতিক দিক। জুন-জুলাইয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক রাশিয়ার জন্য বিষয়টি অন্যরকম একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ, বিশ্বকাপ শুরুর আগেই সে দেশের ঘরোয়া ফুটবলেও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। তাই বিশ্বকাপের এ সময় যে ম্যাচ পাতানোর ঘটনা ঘটবে না তা কেউ বিশ্বাস করে না।  অনলাইনে বাজির অর্থ লেনদেন বিষয়ক সরকার নিযুক্ত পরিচালনা সংস্থার (টিসইউপিআইএস) পরিচালক অ্যান্টন রোজকভস্কি বার্তা সংস্থা এএফপি-কে বলেন, প্রতি বছর বৈধ ও অফসোর অনলাইন বাজির বাজারে বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলার হতে পারে। তবে এটিকে আমরা সঠিক ফিগার বলে উল্লেখ করতে পারছি না। এটি আড়াই কিংবা ৫ বিলিয়ন ডলারও হতে পারে। এর ৭০ শতাংশই অবৈধ, অফসোর ব্যবসা।

বল যখন মাঠে গড়াচ্ছে তখন জুয়াড়িদেরও খেলা জমে উঠেছে। সেখানে চলছে ফুটবলের বাজির খেলা। জুয়াড়িদের হাত থেকে রেহাই মিলছে না বিশ্বকাপ ফুটবলেরও। শুধু নিজের পকেট ভারী করার জন্যই নয় জুয়াড়িদের কাছে জুয়া একটি নেশা। সেই নেশায় মাতাল করার মতো উন্মাদনা যোগ করেছে বিশ্বকাপ। বড় বড় তারকা ফুটবলারের ওপর যেমন বাজি ধরা হচ্ছে তেমনি বাদ যাচ্ছে না খেলার ফলাফলের ওপর বাজি ধরা। বেটিং চলছে হরদম। ফুটবলের জুয়া, ফাটকা, সাট্টা বা বেটিং, যাই বলুন, তার ‘বুকি’ বা দালালরা অ্যাপ, ওয়েবসাইট ইত্যাদি বানিয়ে ইন্টারনেট যুগের স্মার্টফোন, ট্যাবলেটধারীদের দলে আনার চেষ্টা করছেন। তার ওপর এবারের স্লোগানটা হলো লাইভ ম্যাচ অ্যাকশন। এবারকার বিশ্বকাপ সারা বিশ্বের বুকমেকারদের পক্ষে একটি সর্বকালের অর্থকরী ব্যবসা হয়ে উঠতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, গতবারের বিশ্বকাপে জুয়াড়িরা যা রোজগার করেছিল, এবারকার বিশ্বকাপে তার চেয়ে দ্বিগুণ মুনাফা হতে পারে।

এ তো অজানা নয় জুয়াড়িরা ওতপেতে আছে সুযোগটি নেওয়ার জন্য। বিগত কয়েক বছরে ফুটবল নিয়ে বাজি ধরাটা জনপ্রিয়তায় ঘোড় দৌড়কে পেছনে ফেলে দিচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। কথাটা বিশেষ করে ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেখানকার বুক মেকাররা এবার বেটিং শপের চেয়ে অনলাইন বেটিং থেকেই বেশি বেট টানবেন বলে আশা করছেন, বিশেষ করে তরুণ জুয়াড়িদের কাছ থেকে।

এটা নিয়ে চিন্তিত নিরাপত্তাকর্মীরাও। অনলাইননির্ভর জুয়াড়িদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তরুণ প্রজন্ম লাইভ টিভি অ্যাকশন দেখে অভ্যস্ত। সরাসরি খেলা উপভোগের পাশাপাশি স্মার্ট ফোনটায় মেসেজ আর কল চলে যাচ্ছে বেটিং প্লেসে। উদ্বিগ্ন হওয়ার তো ব্যাপার হলো, বাজি ধরাটাও তাদের কাছে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। খেলা চলাকালীন খেলার যেসব অসংখ্য খুঁটিনাটি নিয়ে বাজি ধরতে পারেন, সেটাও এই নতুন জুয়াড়িদের কাছে একটা বিশেষ আকর্ষণ।

একক প্লেয়ারকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি বাজি ধরা যায়, তারা গোল করবে কিনা; লাল কিংবা হলুদ কার্ড দেখবে কিনা। বাকি রইল অ্যাকশন, ম্যাচে কয়টা কর্নার হবে ইত্যাদি। কোনো কোনো বুকমেকার নাকি শুধু ম্যাচের ওপরই এ ধরনের প্রায় আড়াইশ বাজি ধরার রেখেছেন। অনলাইনের যুগে পিছিয়ে নেই অনলাইন বেটিং। লাইভ ম্যাচ পেজ, গেস্ট ব্লগার হিসেবে নামকরা সব পুরনো প্লেয়ার, এ সবই পরীক্ষা করা হয়ে গেছে এবং হচ্ছে। এ ছাড়া যোগ হয়েছে অ্যাকুমুলেটর বেট অর্থাৎ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত বা সংশ্লিষ্ট বাজি, যেমন কোন গ্রুপে কোন দুটি দল জিতবে। একেক সময় একেক পরিস্থিতির ওপর বাজি ধরে থাকে জুয়াড়িরা। তবে দলের জয় পরাজয়ে বাজির খেলা জমে পুরোদমে। ফুটবল সব সময়ই তার নিজের মর্জি মতো চলে, যদি না ম্যাচ ফিক্সিং হয়। সে ক্ষেত্রে বাজিকরদের ভূমিকা হয়ে ওঠে কালোবাজারিদের মতো। কখনো কখনো বাজির ঘোড়া উল্টে যায় মাঠে। তখন জুয়াড়িদের মাথায় হাত পড়ে। কিন্তু জুয়াড়িদের নিয়ে সতর্কতা রয়েছে নিরাপত্তারক্ষীদের। সে জন্য কেমন জমে জুয়া তা আগেই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু তাই বলে থেমে নেই অনলাইন বাজির খেলা। সে তো জমে উঠেছে অনেক আগে থেকেই। বেটিং চলছে। বাজিকররা ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে তৈরি হয়ে আছে সে আর বলতে। বাজিকররা ধুমছে টাকা উড়াচ্ছেন বিশ্বকাপ ঘিরে। এবার নতুন করে যোগ হয়েছে তরুণ বাজিকরদের। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্বকাপকে নিয়ে বাজির আকার ও ধরন দেখে বিশ্লেষকরা অনেকেই বলছেন, এ যেন বাজির বিশ্বকাপ। অভিজ্ঞ বাজিকরদের পাশাপাশি মৌসুমি বাজিকররাও মিলেছে জুয়ায়।

 

আর্জেন্টিনার গোলকিপারই ভিলেন

বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আর্জেন্টিনার এক নম্বর গোলকিপার সার্জিও রোমেরা ইনজুরিতে পড়েন। বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় তার। এক নম্বর গোলকিপারকে হারিয়ে দুই নম্বর গোলকিপার উইলি ক্যাবালেরোর হাতে পড়ে আর্জেন্টিনার গোলপোস্ট সামলানোর। ৩৬ বছর বয়সী ক্যাবালেরো চেলসিরও গোলকিপার। মালাগা, ম্যানচেস্টার সিটির হয়েও খেলেছেন তিনি। কিন্তু আর্জেন্টিনার হয়ে তার ক্যারিয়ার একেবারেই সাদামাটা। যার প্রমাণ ভালোভাবেই দিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে খেলায়। আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া খেলায় পার্থক্য গড়ে দেয় ক্যাবালেরো। না, আর্জেন্টিনার হয়ে নয়, ক্যাবালেরোর হাস্যকর পারফর্মেন্স ডোবায় আর্জেন্টিনাকে। তার বোকামিতেই প্রথম গোল হজম করে আর্জেন্টিনা। ডিফেন্সের পাঠানো বল ক্রোয়েশিয়ার রোবিচের পায়ে তুলে দেন। রোবিচ লোভনীয় এই অফার গোল করেই গ্রহণ করেন। কার্যত গোলকিপারের এই অমার্জনীয় ভুল হাস্যরস তৈরি করে। খেলার বাকি সময়টাতেও যার ছাপ পড়ে আর্জেন্টিনার ছন্নছাড়া খেলায়। দ্বিতীয়ার্থে প্রথম গোল খাওয়ার ঠিক ২৭ মিনিট পর আবার আক্রমণ করে ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের ৮০ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের মাথা থেকে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান মডরিচ। এবার অতিরিক্ত সময়ে রাকিতিচের আক্রমণ। আবারও আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকের ভুলের মাশুল দিতে হলো গোলে। ডিফেন্ডারের ছন্নছাড়া ভাবের সুযোগ নিলেনে রাকিতিচ। বল পাঠিয়ে দিলেন জালে। ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েটরা।

 

রেফারিতেই সর্বনাশ আর্জেন্টিনার

প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের ড্র। দ্বিতীয় ম্যাচে হেরেই বসল আর্জেন্টিনা। সেবার প্রতিপক্ষ ছিল ক্রোয়েশিয়া। ৩-০ গোলে পরাজয়ে সেই ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া ছাড়াও প্রতিপক্ষ ছিল আরেকজন। তিনি আরও কেউ নন। রেফারি ইরমাতভ! খেলার মাঠে আর্জেন্টিনা সর্বনাশ না করলেও ইতিহাস বলছে বিশ্বকাপে বড় পরাজয় বরাবরই তিনি থাকেন রেফারি। আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে তার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও সেসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না ফিফা। উজবেকিস্তানের রেফারি ইরমাতভের বয়স এখন ৪০। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে জার্মানি-আর্জেন্টিনার ম্যাচেও তিনিই ছিলেন রেফারি। সেবার জার্মানির কাছে  ৪-০ গোলে পরাজয় মেনে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। হোর্হে সাম্পাওলির দল আর্জেন্টিনার অনেক সমর্থকই ইরমাতভকে ভিলেন হিসেবেই দেখেন। কেউ কেউ কুসংস্কারেও ভোগেন যে ইরমাতভ যে খেলার রেফারি সেই  খেলাই আর্জেন্টিনা হারবেই। হলো তাই। ক্রোয়েশিয়ার কাছে বিপক্ষে বড় ব্যবধানে পরাজয়ের দিনে ইরমাতভ ছিলেন আর্জেন্টিনার অন্যরকম ভিলেন।

 

বিপাকে মেসির স্ত্রী

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে বিদ্রূপের শিকার হলেন লিওনেল মেসির স্ত্রী আন্তোনেইয়া। ম্যাচের আগে তিনি ইনস্ট্রাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন দুই বছরের সন্তান ছবি।  নিজে ক্যাপশন, ‘গো পাপ্পা’। ম্যাচের পরেই সেখানে একের পর এক মন্তব্য। কেউ লিখেছেন ‘একটু অপেক্ষা কর, পাপ্পা বাড়ি ফিরে আসছে।’ কেউ লিখেছেন, ‘পাপ্পা হেরে গিয়েছে’। কেউ লিখেছেন, ‘পাপ্পা বলো, নাইজেরিয়া ম্যাচ ভালো করে খেলতে।’ এত বিদ্রুত শোনার পর মেসিস্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। পাল্টা কোনো পোস্টও করা হয়নি। রাশিয়া যাওয়ার কথা থাকলেও আন্তোনেইয়া সন্তানদের নিয়ে বুয়েনস আইরেসে রয়েছে।

 

সাম্ভা নাচ উধাও

২০১৮ সালের বিশ্বকাপকে অটঘনের বিশ্বকাপ বললেও ভুল বলা হবে না। সে রকম একটা অঘটন থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেল ব্রাজিল। নেইমারদের জয় পাওয়ার জন্য দায়ী কোস্তা রিকার গোলকিপার কেলর নাবাস। শেষরক্ষা করতে পারলেন না। গোটা ম্যাচে প্রাধান্য ছিল নেইমার ও কটিনহোদের। যদিও সাম্বা ম্যাজিক এখনো মিসিং। খেলার উন্নতি না ঘটলে পরের ম্যাচগুলোতে বিপাকে পড়তে হবে ব্রাজিলকে। আপাতত ব্রাজিল অক্সিজেন পেল।

 

তাদের আদুরে নাম

গারিঞ্চা-দিদি-ভাভা-তোস্তাও-কাফুদের চিনছেন নিশ্চয়ই। ফুটবলপ্রেমীদের জন্য তাদের না চেনাটা কিছুটা অপরাধ বটে। পছন্দের এসব তারকাদের রয়েছে আদুরে ডাকনাম। এই যেমন ধরুন থিয়াগো সিলভাকে ক্যারিয়ারের শুরুতে বলা হতো ‘মনস্ত্রো’; মানে মনস্টার। ডিফেন্সে দানবীয় উপস্থিতির জন্য এই ছিল তার। ক্লাসের বন্ধুদের খেপানোর মাধ্যমেই হয়ে গেলেন বিশ্বখ্যাত পেলে। অপরদিকে শারীরিক নানা সীমাবদ্ধতা থাকায় গারিঞ্চা ছিল ছোটখাটো। চার বছর বয়সে কোত্থেকে ছোট্ট এক পাখি নিয়ে এলে বোন রোসা তাকে বলেন, ‘তুই তো এই ছোট্ট পাখি গারিঞ্চার মতোই রে।’ ডাকা শুরু করেন গারিঞ্চা নামে।

 

এক মিনিটের নীরবতা

হারের পর টেলিভিশন প্রেজেন্টারদের এক মিনিটের নীরবতা পালন। বিরল এই ঘটনা আর্জেন্টিনার এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে তিন গোলে হারের ঠিক পরেই টিভি চ্যানেলে বসে থাকা বিশেষজ্ঞ, প্রেজেন্টাররা সবাই দাঁড়িয়ে পড়েন। লাইভ অনুষ্ঠানের মাঝে এক মিনিট নীরবতা পালন করার পরে ফের হারের বিচার বিশ্লেষণ শুরু হয়। টিভি চ্যানেলে এই ঘটনা নিয়ে আলোড়ন পড়ে যায়। কিন্তু আর্জেন্টিনায় গোটা দিন ধরেই ছিল কার্যত শোকের চেহারা।

 

 

ভিডিও রেফারির বাজিমাত

ফুটবল মাঠে ভুলের মাত্রা আরও কমিয়ে আনতে তাতে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিরা। এটি মূলত তিন সদস্যের একটি দল। ভিডিও রিপ্লে দেখে তারা মাঠের রেফারির কোনো সিদ্ধান্ত ভুল মনে হলে সেটিকে সংশোধন করার জন্য একত্রে কাজ করবেন। প্রযুক্তির সুফল ভালোভাবেই পাচ্ছে বিশ্বকাপে লড়াইয়ে নামা দলগুলো। ভিডিও রেফারি বা ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর)-এর সহায়তা নিয়ে ইতিমধ্যে লালকার্ড, গোল, পেনাল্টি বাতিলসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেফারিরা। রেফারির চোখে আড়াল হলেও ভিডিও ক্যামেরার আড়াল হচ্ছে না খেলোয়াড়রা অভিনয় ও পেনাল্টি আদায় করে নেওয়ার চর্চা। আবার অনেক সময় ফাউল করেও রেফারিকে ফাঁকি দিয়েছেন অনেকে— সেসব এবার আর হচ্ছে না। বিশ্বকাপ শুরুর আগে কিন্তু ভিডিও রেফারিং নিয়ে অনেক সমালোচনা ছিল। তবে এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ভিডিও রেফারির ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। ব্রাজিল বনাম কোস্টারিকার খেলায় ভিডিও রেফারির কল্যাণের পেনাল্টির মুখ থেকে রক্ষা পায় কোস্টারিকা। নেইমার ডি-বক্সের ভিতরে ঢুকতেই ঘটনাটি ঘটে। নেইমারকে ট্যাকল করেন কোস্টারিকার গঞ্জালেস। চলতি খেলায় পেছন থেকে নেইমারের পেটে সামান্য টান পড়ে। কিন্তু নেইমার এমনভাবে পড়ে যান যেন তাকে টান মেরে ফেলেই দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বেজে ওঠে রেফারির বাঁশি। পেনাল্টি পাবে ব্রাজিল। নেইমার অবশ্য পেনাল্টি কিকের জন্য বলটিকে বসিয়েছিলেনও। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের রেফারি বিয়র্ন কুইপার্স প্রযুক্তির সহায়তা নিলেন। পরিষ্কার দেখা গেল নেইমারকে টান দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়নি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিজেই পড়ে যান নেইমার। রেফারির সেই  পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিয়েছিল রেফারি। যা ভিডিও রেফারি বাতিল করে। বিশ্বকাপের প্রথম ভিডিও রেফারিং ছিল প্রশংসনীয়। ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে। অ্যান্টোনিও গ্রিজম্যানকে অসি ফুটবলার জস রিসডন পা বাড়িয়ে ফেলে দিলে প্রথম ভিএআর ব্যবহারের মাধ্যমে পেনাল্টি দেন রেফারি। প্রথমে রেফারি আন্দ্রেস কুনহা খেলা চালিয়ে যেতে বললেও পরে ভিএআর রেফারি দল থেকে তার হেডফোনে একটি সতর্কবার্তা আসে। তিনি খেলা বন্ধ করে দেন। পরে মাঠের পাশের মনিটরে রিপ্লে দেখে ইতিহাসের প্রথম ভিএআর ব্যবহৃত পেনাল্টি প্রদান করা হয়। রাশিয়া বিশ্বকাপে ভিএআরের  দ্বিতীয় ঘটনা ঘটে স্পেন-ইরান ম্যাচে। ম্যাচের ৬২ মিনিটের ঘটনা এটি। সে সময় ১-০ তে এগিয়ে স্পেন। ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বল ডি-বক্সের জটলার মধ্য থেকে স্পেনের জালে আলতো টোকায় জড়িয়ে দেন ইরানের সাইদ ইজাতোলাহি আফাগ। স্পেনের খেলোয়াড়রা হ্যান্ডবলের আবেদন জানান রেফারি কুনহার কাছে। কুনহা ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির সহায়তা নেন। তবে হ্যান্ডবল নয় গোলটি বাতিল করা হয় অফসাইডের কারণে। গোলটি বাতিল না হলে ম্যাচটি ১-১ সমতায় শেষ হতো। সুইডেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে আসরের প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছে। তবে এ জয়ের পেছনে ছিল ভিডিও রেফারির ভূমিকা। ম্যাচে পাওয়া একমাত্র গোলটি তারা পেয়েছে পেনাল্টি থেকে। অথচ রেফারি প্রথমে পেনাল্টি দেননি। পরে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি রিপ্লের মাধ্যমে পুনরায় দেখে সিদ্ধান্ত নেন রেফারি। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সুইডেন ডিফেন্ডার আন্দ্রেস গ্রানকিভিস্ট লক্ষ্যভেদ করেন। বক্সের মধ্যে এক ফরোয়ার্ডকে ফাউল করলে এই পেনাল্টি পায় সুইডেন। আইসল্যান্ড বনাম নাইজেরিয়ার ম্যাচেও ভিডিও রেফারির সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে। আইসল্যান্ড খেলার ৮৩ মিনিটে একটি পেনাল্টি পায়। আইসল্যান্ডের ফরোয়ার্ড ফিনবোগাসনকে বক্সে ফাউল করেছেন এবুয়েহি। ভিএআর এর সহায়তায় পেনাল্টি দেন রেফারি। তবে আইসল্যান্ডের মিডফিল্ডার গিলফি সিগুর্ডসন সেই পেনাল্টি মিস করেন।

ভিডিও রেফারির সমালোচনায় বলা হতো, এটি খেলার গতি নষ্ট করে দেবে। এখন পর্যন্ত তার প্রভাব বাজেভাবে পড়েনি। মাঠের রেফারি ভিডিও রেফারির সহায়তা পাবেন মোট চারটি ক্ষেত্রে— লাল-কার্ড, উগ্র আচরণ, পেনাল্টি ও গোল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর