বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভালোবাসার শহর

তানভীর আহমেদ

ভালোবাসার শহর

বিশ্বজুড়ে নানা সংকট আর বিভেদের খবর। তবু প্রেমিক-প্রেমিকারা থেমে নেই। ভালোবাসার বার্তা ঠিকই পৌঁছে দিচ্ছেন প্রিয় মানুষের কাছে। ভালোবাসতে নির্দিষ্ট সময় ও স্থানের প্রয়োজন নেই। ভালোবাসা পেতে স্বস্তিকর পরিবেশ খুঁজে ফেরে প্রেমপিয়াসী মানুষ। প্রাকৃতিক ও সামাজিকভাবে গোছানো এবং নিরাপদ তেমনই কয়েকটি শহরকে রোমান্টিক শহর বলে জানে সবাই।


 

ভেনিস  [ইতালি]

পৃথিবীর ভাসমান শহরের তালিকায় শীর্ষে যে নাম উঠে আসে সেটি হলো ভেনিস। ইতালির এ শহরটির মতো নান্দনিক শহর পৃথিবীতে খুব কমই আছে। পুরো শহরটির বুক চিরে বয়ে গেছে স্বচ্ছ জলের প্রবাহ। পরিষ্কার জলের এ লেকগুলো এতটাই স্বচ্ছ যেন গা-ঘেঁষে মাথা উঁচু করে থাকা দালানগুলোর প্রতিবিম্ব আর আকাশে ছুটে চলা মেঘ নেমে এসেছে পানিতে। এ শহরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের নৌকা। এসব নৌকায় করে আপনি দালানের ভিড়ে চলতে পারবেন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। এ শহরে নেই কোলাহল, নেই যান্ত্রিক ব্যস্ততা। শুধু প্রশান্তি যেন বিছিয়ে আছে পুরো শহরটিতে।

পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে বছরের বেশির ভাগ সময় ভেনিস।


 

প্যারিস [ফ্রান্স]

পৃথিবীর সবচেয়ে রোমান্টিক শহর কোনটি— এ প্রশ্নের জবাবে সবাই একবাক্যে মেনে নিয়েছেন যে শহরটিকে তার নাম প্যারিস। প্রেমিক-প্রেমিকাদের স্বপ্ননগরী বলেও খ্যাতি আছে প্যারিসের। ফ্রান্সের প্যারিস নগরীকে বলা হয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির এক অনন্য মিশেল। এ নগরীকে দেখে প্রেমে পড়েননি এমন মানুষ নেই। যারা একবার ফ্রান্সে বেড়াতে গিয়েছেন আর পা পড়েনি প্যারিসে, তা যেন হওয়ার নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে রোমান্টিক শহরটির নাম তাই প্যারিস। প্রেম-ভালোবাসায় মাখামাখি এ শহরের প্রতিটি সড়ক, স্থাপনা আর ক্যাফে। নবদম্পতিরাও ছুটে আসেন এ শহরে। রাতের প্যারিসের সৌন্দর্য লিখে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সুনসান নীরবতায় বৃষ্টির ছাঁট— প্যারিসের ভেজা পথে হেঁটে ফেরার ভাগ্য সত্যি অমূল্য! প্যারিসের মতো গোছানো শহর খুব কমই রয়েছে। পর্যটকদের প্রিয় এই শহরটি নতুন প্রেমিক-প্রেমিকা ও নবদম্পতিদের সময় কাটানোর জন্য বিখ্যাত। পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ বাতাসে ঘুরে বেড়ানো মানুষের মনে মুহূর্তেই আনন্দের জোয়ার ওঠে এ শহরে এসে। যারা সংস্কৃতিপ্রেমী তাদের জন্য প্যারিস যেন কল্পনার নগরী। এত সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ শহর গোটা দুনিয়ায় আর কয়টি আছে? সব মিলিয়ে প্রেম-ভালোবাসায় প্যারিসের তুলনা চলে কেবল প্যারিসের সঙ্গেই।


 

দেশে দেশে লাভ লক

প্যারিসের শিন নদী। এই নদীর ওপর যে ব্রিজ তাতে লাগানো আছে কোটি তালা! প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল এখানে এসে তালায় তাদের নাম লিখে চাবিটা ছুড়ে দেয় নদীতে। তারা বিশ্বাস করে, চাবি ছাড়া এই তালার মতোই দুজনের হৃদয় যুগলবন্দী হয়ে থাকবে চিরকাল। এই অদ্ভুত কাণ্ড কি শুধু ফ্রান্সেই ঘটে? না। প্রেমিক-প্রেমিকারা তো ছড়িয়ে আছে গোটা বিশ্বেই। আলজেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, ব্রাজিল— নানা দেশেই এমন ব্রিজের দেখা মেলে। প্রায় ১০০ বছর হতে চলল, লাভ লক বা প্রেমের তালা জুড়ে দেওয়ার এই চর্চা করে আসছে প্রেমিক-প্রেমিকারা। কৌতূহল জাগতে পারে এর শুরুটা কোথায়। অনেকেই বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নাডা নামের এক সার্বিয়ান বালিকা প্রেমে পড়েছিল স্থানীয় এক অফিসার যুবকের। সেই যুবকের নাম ছিল রেলজা। কিন্তু কিছুদিন পরই রেলজা যুদ্ধ করতে চলে যায় গ্রিসে। গ্রিসে গিয়ে রেলজা সেখানকার এক মেয়ের প্রেমে পড়ে। ভুলে যায় নাডাকে। সেই বিরহেই প্রাণ যায় প্রেমিকা নাডার। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে সার্বিয়ায়। এরপর থেকে সার্বিয়ার বানজার এলাকার মেয়েরা একটি তালার মাঝে প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনের নামের প্রথম অক্ষর লিখে সেটি ঝুলিয়ে দিত বানজারের একটা ব্রিজে। এই ব্রিজে বিকাল হলেই নাডা এবং রেলজা দেখা করত। এই ইতিহাস পরে ছড়িয়ে যায় সারা পৃথিবীতে। দেশে দেশে ব্রিজের ওপর লাভ লকের গল্প হয়তো এখান থেকেই শুরু।


 

লিসবন  [পর্তুগাল]

পর্তুগালের লিসবন শহর। লিসবন শহরকে বলা হয় শিল্পী আর লেখকদের তীর্থভূমি। এ শহরে জমায়েত হয় পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখক ও অভিনয়শিল্পী। প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত এ শহর চোখ জুড়িয়ে দেয় পর্যটকদের। এ শহরের চারপাশ দেখলে অনেকেই ভাববেন এ যেন কোনো চিত্রশিল্পীর মনের মাধুরী মিশিয়ে আঁকা কোনো নগরী। এত সুন্দর শহর পৃথিবীতে খুব কমই আছে। পরিষ্কার বাতাস, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া আর নিরাপদ শহর এটি। এখানকার রাস্তাগুলোতে হেঁটে ফিরলে নজর কাড়ে রাস্তার দুই পাশে সীমান্ত বিস্তৃত প্রাকৃতিক রূপ-লাবণ্য। এ শহরের লাবণ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অনেকেই বলে থাকেন লিসবন গুপ্তরহস্যের শহর।


 

লন্ডন  [ ইংল্যান্ড ]

ইংল্যান্ডের মুকুট বলা হয় লন্ডন শহরটিকে। এই শহরটিও বেশ গোছানো ও পরিকল্পনামাফিক গড়ে ওঠার কারণে এই শহরের পরিবেশ পৃথিবীর রোমান্টিক সিটি হিসেবে গণ্য করেছে। পৃথিবীর বসবাসযোগ্য, সুস্থ নগরী হিসেবে লন্ডনের তুলনা লন্ডনই হতে পারে। সুপ্রশস্ত রাস্তা, সুন্দর বসবাসের বাড়ি, আইনশৃঙ্খলার নির্ভরযোগ্য পরিবেশ— সব মিলিয়ে  লন্ডন হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মেট্রোপলিটন সিটি। নাগরিক কোলাহল থাকলেও এ শহরকে নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক মনে করেন প্রেমপিয়াসীরা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই শহরে এসে ভিড় করেন সুস্থ ও স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটানোর জন্য। সবুজে ঢাকা নগরী লন্ডনে রয়েছে আধুনিকতার সর্বোচ্চ ছোঁয়া। এখানকার নাইট ক্লাবগুলো জমে উঠে রাতের বেলা। রেস্টুরেন্টগুলোতে পাওয়া যায় বিভিন্ন সংস্কৃতির সুস্বাদু ও বিখ্যাত খাবার। রাতের বেলা ঘুমানোর জন্য রয়েছে আরামদায়ক আবাসন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর