সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

রবীন্দ্রনাথের জমিদারি

রকমারি ডেস্ক

রবীন্দ্রনাথের জমিদারি

শিলাইদহ কুটিবাড়ী

রবীন্দ্রনাথের জন্ম ধনী এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পিতামহ প্রিন্স (দ্বারকানাথ ঠাকুর) নামে খ্যাত, পিতা মহর্ষী (দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর) নামে। নিজে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, স্বল্পকালের জন্য হলেও ইংরেজ সরকারের নাইট উপাধিধারী। লোকচক্ষে অভিজাতকুলতিলক। কিন্তু তার প্রকৃত পরিচয়টা যে তার নিজের হাতে গড়া সে কথা কম লোকই ভেবে দেখেন। বংশের ধারা রক্ষা করে চলাই যদি অভিলাষ হতো তাহলে জোড়াসাঁকোর প্রাসাদ ছেড়ে গ্রামবাংলার পথে-প্রান্তরে, খাল-বিল-নদী পথে ঘুরতেন না এবং শান্তিনিকেতনের মাটি ও খড়ের ঘরে বাস করতেন না। মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে উপরিল্লিখিত চার জমিদারির দেখাশোনার দায়িত্ব দেন রবীন্দ্রনাথকে। এর পাঁচ বছর পর ১৮৯৬-এর ৮ আগস্ট উক্ত জমিদারিসমূহের সর্বময় দায়িত্ব দেন (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি)। জমিদারির কাজে তিনি নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। পুরাতন বিধি পরিবর্তন করার বিরুদ্ধে ছিলেন পুরাতন কর্মচারীরা। দুর্বোধ্য কার্যপ্রণালি পদ্ধতির পরিবর্তে তিনি যে নতুন বা সহজ পদ্ধতির প্রবর্তন করেন তা অনুকরণ করার জন্য পার্শ্ববর্তী জমিদাররা তাদের কর্মচারীদের পাঠাতেন তা জানার জন্য। প্রজা দরদি রবীন্দ্রনাথ কৃষকের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে খুব ভাবতেন। সে সময় সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাংক বলে কোনো ধারণাই ছিল না। তখন তিনি প্রজাদের মিতব্যয়িতা, সংঘবদ্ধ হয়ে কর্ম এবং সহায়তার অভ্যাস শিক্ষা দেওয়ার জন্য ১৯০৫ সালে পতিসরে কৃষকের জন্য কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। তার ব্যাংক খোলার পর বহু গরিব প্রজা প্রথম সুযোগ পেল ঋণমুক্ত হওয়ার। রবীন্দ্রনাথ জার্মানি ও আয়ারল্যান্ড থেকে সমবায়ের সাফল্যের উদাহরণ গরিবী হটাতে কাজে লাগাবার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি তার নোবেল বিজয়ের অর্থের একাংশ দিয়ে সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। কৃষির সম্ভাবনা এবং কৃষিকে আধুুনিকায়নের কথা বহু আগেই তিনি ভেবেছিলেন। তাই তিনি তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ এবং তার বন্ধুপুত্র সন্তোষ মজুমদারকে অক্সফোর্ডে না পড়িয়ে আমেরিকার ইলিনয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পাঠিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘সম্মানের চির নির্বাসনে সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসেছি সংকীর্ণ বাতায়নে—সেখান থেকে সমস্ত দেশটাকে, দেশের মানুষকে আমি দেখতে পাইনি।’ তিনি সম্মানের উচ্চ আসনে বসতে যাননি, সম্মানের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তার বিচার করা হয়েছে। বিচারে অভিযুক্ত হয়ে তিনি বিনয়ে বলেছেন— ‘তোমরা যাদের চাষি মজুর বল তাদের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় ছিল না এমন না। তবে পরিচয়টা যতটা ঘনিষ্ঠ হতে পারত ততটা তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে পারিনি। তিনি তাই তো লিখেছেন, ‘মাঝে মাঝে গেছি আমি ও পাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে, ভিতরে প্রবেশ করি সে শক্তি ছিল না একেবারে।’ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন প্রজাহিতৈষী জমিদার। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে একজন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট তার রিপোর্টে বর্ণনা করেন— ‘জমিদার মাত্রই যে হৃদয়হীন হন না তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিশিষ্ট কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’ ‘নায়েব কর্মচারীরা যাতে প্রজাদের ওপর কোনো প্রকার জবরদস্তি না করে সেদিকে তার প্রখর দৃষ্টি ছিল।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর