শিরোনাম
রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

তাদের কোনো দেশ নেই

তানভীর আহমেদ

তাদের কোনো দেশ নেই

তুমি কোন দেশের নাগরিক, তোমার দেশ কোনটি? এই প্রশ্নের জবাব নেই অন্তত ১ কোটি মানুষের। দেশহীন এই মানুষগুলোর জীবন নানা সংকট আর দুর্দশায় ভরা। রোহিঙ্গাদের মতো অনেক শরণার্থী বিভিন্ন দেশে আটকে আছেন। অনেকেই হারিয়েছেন সব দেশ-পরিচয়। জন্মভূমি, আবাসভূমি কেউই তাদের গ্রহণ করতে রাজি নয়। দেশহীন এমন মানুষের গল্প রইল এখানে—

 

১ কোটি

ইউএনএইচসিআরের হিসাব মতে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১ কোটি মানুষ তার দেশ হারিয়েছে। তাদের কাছে কোনো দেশেরই পাসপোর্ট নেই। পরিচয়বিহীন, শরণার্থী এই মানুষগুলোকে বলা হয় ‘স্টেটলেস হিউম্যান’।

 

 

কেন?

দেশ ভাঙন, বিতাড়িত, বৈষম্যের শিকার, আইনি জটিলতা ও অপরাধের কারণে নিজ দেশ থেকে অনেকেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। অন্য কোনো দেশ তাদের গ্রহণ না করলে এবং নিজ দেশে আইনি শর্ত পেরোতে না পারলে— সব ধরনের রাষ্ট্রীয় পরিচয় হারিয়ে ফেলেন তারা।

 

 

রোহিঙ্গারাও একই সংকটে

মিয়ানমার সেনাদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি মিয়ানমার। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে মিয়ানমার। এতে করে ‘স্টেটলেস হিউম্যান’ অবস্থায় রয়েছে তারা।  মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে সে দেশের স্বীকৃতি, পাসপোর্ট বা পরিচয়পত্র না পেলে রোহিঙ্গারা দেশহীন হয়ে পড়বে। তাদের সংকট ও দুর্দশা প্রকট হবে।

 

 

বেড়াতে গিয়ে দেশ হারান মিখাইল

পলিনেশিয়া, ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে অনেকগুলো ছোট দেশ। তারই একটি সামোয়া। সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন মিখাইল সেবাস্তিয়ান। দ্বীপে অবসর কাটানো, সমুদ্রে গোসল করার বাসনা ছিল তার। চার দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে বিমানে চড়ার আগে ইমিগ্রেশন, কাস্টম সব ধাপ পার করেন। কেউ কিছু বলল না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার সঙ্গে অনেকেই এভাবে ছুটি কাটাতে বিমানে উঠেছিলেন। কিন্তু চার দিনের ভ্রমণ দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠল তার। ফেরার বিমান টিকিট নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছার পর আটকে দিলেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। জানালেন, মিখাইলের কোনো দেশ নেই! আকাশ থেকে পড়লেন মিখাইল।

মিখাইলের গল্পটা এমন। ১৯৭৩ সালে আজারবাইজানে জন্ম তার। আজারবাইজান তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। পরিবার নিয়ে ভালোই ছিলেন। বিপদ আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে। আজারবাইজানের মানুষ নাগরিকত্ব হারাল। তাদের দলে ছিলেন মিখাইল। তার পূর্বপুরুষ যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী হওয়ায় কথায় সেই টান ছিল। আজারবাইজান বলল, তুমি আমেরিকান। আর আমেরিকা বলল, তুমি আজারবাইজানের মানুষ, আমাদের কেউ না! এদিকে কোনো দেশেরই পাসপোর্ট নেই তার। আর্মেনিয়া বলল, এ দেশে থাকার মতো পরিচয় নেই তোমার। তিন বছর দেশছাড়া কাটালেন। ১৯৯৫ সালের ঘটনা। অনেক দেন-দরবার করে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ভিসা জোগাড় করলেন। অনুমতিপত্র বলা যায়। অ্যাসাইলাম চেয়ে এটা জোগাড় করেন তিনি। যদিও ১৯৯৬ সালে অ্যাসাইলামটি বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। মিখাইলকে তার দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু মিখাইলের দেশ কোনটা তা কেউ বলতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রও এটা জানে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পাসপোর্ট ততদিনে অকেজো হয়ে গেছে। যা হওয়ার তাই হলো। যুক্তরাষ্ট্র তাকে দেশ থেকে বের হওয়ার আদেশ দেওয়ার পর চূড়ান্তভাবে দেখা গেল মিখাইলের কোনো দেশেরই পরিচয় নেই। দেশ হারানো মিখাইলের দুর্দিন চরম আকার ধারণ করে। তাকে জেল ও আদালতে শুনানি দিয়ে দিন কাটাতে হয়। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাকে অন্য কোনো দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা শুরু করেন। তাতে খুব একটা লাভ হলো না। দেশ হারানো মানুষকে কেউ গ্রহণ করতে রাজি নয়। পরের বছর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের দয়া হলো। তাকে জেল থেকে বের করে বাইরে বসবাসের অনুমতি দিল। শর্ত ছিল তিন মাস পরপর এসে ইমিগ্রেশন অফিসে হাজিরা দিয়ে যেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রেই তাকে কাজের বিশেষ অনুমতি দেওয়া হলো। ইমিগ্রেশন থেকে হাত-পায়ে ধরে ভ্রমণের অনুমতি নিতে হতো প্রতি বছর। আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ব্রিটেন, জাপান, রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড, তুর্কেমিনিস্তান ছাড়াও অন্তত আরও ছয়টি দেশে তিনি ভ্রমণ ভিসার আবেদন করে ব্যর্থ হন। কোনো দেশ তাকে যাওয়ার অনুমতি দিল না। কেউ তাকে পাসপোর্টও দিতে চাইল না। সবাই বলল, তুমি আমার দেশের কেউ না। গোটা পৃথিবীই তার জন্য কারাগার হয়ে উঠল। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে আর্জি করলেন এই বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করার জন্য। মিখাইল চাইলেন, অন্তত কোথাও বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। এই ‘দেশবিহীন’ জীবনে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হতে চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে সামোয়াতে ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি দেয়। সেখানে গিয়েই বিশাল ভুল করেন তিনি। পুরোপুরি আটকে গেলেন। যুক্তরাষ্ট্র তাকে সামোয়া থেকে ফেরার পথে অস্বীকার করে বসে। ওই দ্বীপে চার মাস আটকে ছিলেন মিখাইল। দেশ নেই, পরিচয় নেই— সেখানে কেউ তাকে কাজ দেয়নি। ব্যাগে যে পোশাক ছিল ওই পোশাক পরে আর কোনো মতে চেয়ে চেয়ে খাবার জোগাড় করে দিন কাটাতে হয় তার। তার দুর্দশার খবর মিডিয়াতে আসার পর ২০১৩ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। এতদিনে চাকরি হারিয়েছেন। ভাড়া করা বাসাটি হারিয়েছেন। বন্ধুরাও নেই। সব হারিয়ে দিশাহারা মিখাইল সেবাস্তিয়ান।

শুধু মিখাইল নন, যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক হাজার মানুষ রয়েছেন যাদের কোনো দেশ নেই। এই মানুষগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও তারা কোনো দেশেরই নাগরিক নন।

 

পুরুষ থেকে নারী হওয়ায় বিড়ম্বনা

ছিলেন পুরুষ হয়ে গেলেন নারী। কলম্বিয়ার লুইস রুবাশঙ্ক তখন তাইওয়ানের তাইপে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। হরমোনাল রোগের কারণে পুরুষ থেকে নারী হয়ে যান তিনি। এ কারণে তার পাসপোর্টে সংশোধনের দরকার হলো। তাইওয়ানের কলম্বিয়া দূতাবাস না থাকায় তিনি এলেন হংকং। হংকং বিমানবন্দরে পুরুষের জায়গায় নারী দেখে তাকে প্রবেশ করতে দিতে চাইল না। অনেক কষ্টে প্রবেশের অনুমতি মিললেও হংকংয়ে পৌঁছে তিনি দেশহীন হয়ে পড়লেন। পাসপোর্টে পুরুষ অথচ এখন তিনি নারী— এই বিড়ম্বনায় তিনি সব ধরনের নাগরিক সুবিধা হারালেন। আটকে পড়লেন হংকংয়ে। হংকংয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুমাতেন। সেখানে কাজ না পাওয়ায় খাবার কেনার টাকাও রইল না। পরবর্তীতে জাতিসংঘ তাকে ‘জেন্ডার শরণার্থী’ ঘোষণা করে। নিউজিল্যান্ড তাকে ‘জেন্ডার শরণার্থী’ হিসেবে অ্যাসাইলাম গ্রহণ করে আশ্রয় দিয়েছে।

 

পাসপোর্ট রিনিউ করতে গিয়ে জানলেন তিনি এ দেশের নাগরিক নন

তার নাম জে সুং সেউং। বাবা হংকংয়ের আর মা বেলজিয়ামের নাগরিক। সেউংয়ের জন্ম হংকংয়ে হলেও তার নাগরিকত্ব ছিল বেলজিয়ামের। জন্মের দুই বছরের মাথায় বাবা-মা তাকে নিয়ে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে আসেন। বেলজিয়ামের আইন বলছে, বেলজিয়ামের বাইরে কেউ জন্ম নিলে ১৮ থেকে ২৮ বছরের বয়সসীমায় এখানে থাকতে হবে। ২৮ বছরের নিচে হলে তাকে এ দেশে থাকার ইচ্ছা পোষণ করে নাগরিক হওয়ার আবেদন করতে হবে।

সেউং সেই শর্ত পূরণ করতে না পারায় ২৯ বছর বয়সে বেলজিয়ামের নাগরিকত্ব চেয়ে ব্যর্থ হন। বেলজিয়ামের বাইরে জন্ম নেওয়ায় এ বিপত্তি দেখা দেয়। পাসপোর্ট রিনিউ করতে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি আর বেলজিয়ামের নাগরিক নন। তাকে হংকংয়ে ফিরে যেতে হবে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সেউংয়ের। এতদিন বেলজিয়ামের পাসপোর্ট নিয়ে নানা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। বেলজিয়ামে এত বছর থাকায়, এখানেই পরিবার-পরিজন, কাজ, পড়াশোনা সব তার হুট করে নাগরিকত্ব নেই বললেই হলো? সেউং বেলজিয়ামে থাকায় হংকংয়ের নাগরিকত্ব কখনো চাননি। তিনি হংকংয়ের নাগরিকও নন। সব মিলিয়ে দেশহীন মানুষ হয়ে পড়েন তিনি। তাকে নিয়ে মিডিয়ায় বহু সংবাদ প্রচার হয়। মামলা চলে আদালতে। সব খানেই ব্যর্থ হন সেউং।

 

এয়ারপোর্টে ১৮ বছর কাটান মেহরান

ইরানের শরণার্থী মেহরানের জীবনের গল্প ২ কোটি টাকায় কিনে নেন হলিউডের কিংবদন্তি চিত্রপরিচালক স্টিভেন স্পিলাবার্গ। তার ‘দ্য টার্মিনাল’ সিনেমা যারা দেখেছেন তারা জানেন এয়ারপোর্টের টার্মিনালে কীভাবে এক দেশহারা মানুষ ১৮ বছর জীবন কাটিয়েছেন। সিনেমার গল্পটা মোটেই বানোয়াট নয়। এই অবিশ্বাস্য গল্প জীবন্ত! বাস্তব সেই মানুষটির নাম মেহরান কারিমি নাসিরি। ফ্রান্সের চার্লস দে গালে বিমানবন্দরে গুনে গুনে ১৮ বছর আটকে ছিলেন তিনি। সেখানে সবাই তাকে ডাকত আলফ্রেড মেহরান নামে। মেহরান ছিলেন ইরানের বাসিন্দা। তিনি দাবি করেন, ইরানের শাসক মোহাম্মদ রেজা শাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় তাকে  সেই দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ইরানের শরণার্থীদের তখন বেলজিয়ামে আশ্রয়ের সুযোগ মিলছিল। তবে তিনি যেতে চাইলেন ব্রিটেন। সে আশায় তিনি ইরান ছাড়েন। ১৯৮৮ সালের ঘটনা। তার পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বেলজিয়াম থেকে ব্রিটেনে পাঠাতে কুরিয়ার করে দিলেন। অবশ্য তিনি দাবি করেছিলেন সেসব চুরি হয়েছে। সে যাই হোক, তিনি কিন্তু ব্রিটেনে পৌঁছতে পারলেন না। যে বিমানে উঠেছিলেন সেটি যুক্তরাজ্যে না গিয়ে ফ্রান্স বিমানবন্দরে ফিরে আসে। বেলজিয়াম থেকে লন্ডন না পৌঁছে তিনি আটকে গেলেন ফ্রান্সে। ফ্রান্সের চার্লস দে গালে বিমানবন্দরে পৌঁছেই পড়েন বিপাকে। এখানে তিনি কোনো ধরনের পাসপোর্ট, ভিসা কিছুই দেখাতে পারলেন না। না তিনি বেলজিয়ামের নাগরিক, না যুক্তরাজ্যের। ইরানি পাসপোর্ট তো আগে থেকেই নেই! ফ্রান্সের ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করল। তাকে বিমানবন্দরের এক নম্বর টার্মিনাল থেকে আটকানোর কারণে তার ঠিকানা লেখা হলো— টার্মিনাল ওয়ান। কোনো দেশের নাগরিকত্ব প্রমাণ না থাকায় তিনি দেশবিহীন হয়ে পড়লেন। ফ্রান্স ইমিগ্রেশন তাকে যুক্তরাজ্য কি ইরান, বেলজিয়াম কোনো দেশেই ফেরত পাঠাতে পারল না। নিজ দেশেও ঢুকতে দিল না। বিমানবন্দরের কর্মীদের ফুড ভাউচার (খাবার টিকিট) দিয়ে তিনি সামান্য কিছু খাবার পেতেন। বিমানবন্দরের চেয়ার ছিল বিছানা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেন। বিমানবন্দরের সব ধরনের কর্মকর্তা তার স্বজন হয়ে উঠলেন। বিমানবন্দরের প্রতিটি ক্লিনার, দোকানদার, পুলিশ সবার কাছে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তার স্বভাবসুলভ শান্ত আচরণের জন্য। একসময় গোটা বিমানবন্দরই তার বাড়ি হয়ে উঠল। কোনো দেশই যখন মেহরানকে তার নাগরিক বলে গ্রহণ করতে দিয়ে রাজি নয় তখন ফ্রান্সের চার্লস দে গালে বিমানবন্দরের এক নম্বর টার্মিনাল তার দেশ, বাড়ি, পরিবার হয়ে উঠল। এক অবিশ্বাস্য জীবন তার। সেখানে বই পড়ে, আত্মজীবনী লিখে তিনি পার করেন ১৮ বছর! উপন্যাসের গল্পেও এত রোমাঞ্চ, অবিশ্বাস থাকে না, তবু এটাই সত্যি। তার জীবনের গল্প শুনতে নানা দেশের সাংবাদিক, পর্যটকরা ছুটে আসতেন এয়ারপোর্টে। তাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে ভালোই সময় কাটাতেন মেহরান। ২০০৬ সালে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে আনা হয়। ২০০৭ সালের শেষ দিক পর্যন্ত তিনি ফ্রান্স রেডক্রসের একটি চিকিৎসালয়ে ছিলেন। তাকে আর এয়ারপোর্টে ফিরতে হয়নি। বেলজিয়াম ও যুক্তরাজ্য তাকে থাকার অনুমতি দিলেও তিনি আর ফিরে যাননি।

 

ভারত-পাকিস্তান কেউই দায়িত্ব নিল না ইদ্রিসের

ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট-বিরোধ বহু পুরনো। এই সংকটে অনেক মানুষের জীবনের গল্প বদলে গেছে। তাদেরই একজন মোহাম্মদ ইদ্রিস। তার জীবনের ১০ বছর কেটেছে ভারতের জেলখানায়। ভিসার মেয়াদ মাত্র ৩ দিন পেরিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে ভারতের পুলিশ। ইদ্রিসের জন্ম ভারতে। কিন্তু বিয়ের পর তিনি পাকিস্তানে পরিবার নিয়ে চলে যান। পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে সেখানেই স্থায়ী বসবাস করছিলেন তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে পাকিস্তানে চলে গেলেও ভারতে থেকে গিয়েছিল তার বাবা। বাবা অসুস্থ সেই খবর পেয়ে আর দেরি করেননি। ১৯৯৯ সালের ঘটনা এটি। তিনি ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। বাবার কাছে ছুটে যান। তার অসুস্থ বাবা কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান। যে কারণে আরও কয়েকটা দিন ভারতে থাকার প্রয়োজন পড়ে তার। কে জানত আইনি প্যাঁচ এসব বুঝে না? ভিসায় উল্লিখিত সময়ের চেয়ে তিন দিন বেশি থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ দাবি করে সে পাকিস্তানের অনুচর। তাকে জেলে পাঠানো হয়। তারপর কেটে যায় ১০ বছর! তাকে নিয়ে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয় বিশ্বজুড়ে। ১০ বছর কারাগারে থাকার পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ভারত সরকার তাকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠাতে গেলে পাকিস্তান দাবি করে ইদ্রিস পাকিস্তানের নাগরিক নন! পাকিস্তানের ভাষ্য, ১০ বছর স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় সে আর পরিবার দাবি করতে পারে না। আর যে পাসপোর্ট নিয়ে ইদ্রিস ভারত গিয়েছিলেন তার মেয়াদ বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। মানে ইদ্রিসের কাছে পাকিস্তানের কোনো পাসপোর্টও নেই। ভারত-পাকিস্তান কেউই ইদ্রিসের দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। দেশহীন হয়ে পড়েন মোহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি ভারতেই আটকে রইলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর