শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধনকুবের জুয়াড়ি

ধনকুবের জুয়াড়ি

এই ধনকুবেরদের কত টাকা তারা নিজেরাও হয়তো জানেন না। বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত তারা। বিনোদনের জন্য অনেকে রাত বাড়লেই ঢুকে পড়েন জুয়ার আসরে। জুয়ায় কত টাকা জিতেন আর কত টাকা হারেন সেটা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। হাজার হাজার কোটি টাকা জুয়ার টেবিলে বসে উড়ানো তাদের অভ্যাস। ধনকুবেরদের জুয়া নিয়ে লিখেছেন— তানভীর আহমেদ

 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যাসিনোতে ৮ কোটি টাকা ফেলে আসেন এই জুয়াড়ি!

১৯৯০ সালের ঘটনা। জুয়া খেলতে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যাসিনোতে। দুই রাতে জুয়া খেলে প্রায় ৫০ কোটি টাকা জিতে নেন। কিন্তু ক্যাসিনো কৌশলে শেষটায় ভাগ্য বিগড়ে যায়। হাজার কোটি টাকা হারিয়ে ফেলেন। খেলা থেকে উঠে বাড়ির পথ ধরেন তিনি। জুয়ার টেবিলে তার মানিব্যাগ আর সিগারেটে আগুন দেওয়ার লাইটার ফেলে চলে আসেন। মানিব্যাগে থাকা টাকা আর লাইটারের দাম যোগ করলে বাংলাদেশের টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় আট কোটি টাকারও বেশি! তার নাম আকিও কাশিওজি। জাপানের রহস্যময় এই ধনকুবের টাকা বানিয়েছেন রিয়েল এস্টেট বা জমি কেনাবেচা করে। জুয়াড়ি হিসেবে তিনি চ্যাম্পিয়ন। তাকে ক্যাসিনোয়ালারা ডাকে ‘দ্য ওয়ারিওর’ বলে। জুয়া খেলতে বসে, না জিতে টেবিল ছাড়েন না। কত টাকার বাজি, সেটা নিয়ে কোনো হুঁশ থাকে না তার। ১৯৯২ সালে তাকে নির্মমভাবে খুন করে পালিয়ে যায় আততায়ী।

 

ক্যারি পেকার

অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া শাহেনশাহ ক্যারি পেকার। শীর্ষ এই ধনকুবের অস্ট্রেলিয়ার প্রধান মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলোর মালিক ও পরিচালক ছিলেন। নাইন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ও অস্ট্রেলিয়ান কনসোলিডেটেড প্রেস নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। টাকার পাহাড় ছিল তার। এই টাকা ব্যয় করতেন বিলাসী জীবনযাপন আর জুয়ার পেছনে। ক্যাসিনো আর নাইটবারগুলোয় তার উপস্থিতি পুরো শহরকে চাঙ্গা করে দিত। হাজার হাজার কোটি টাকা এক বসাতেই উড়িয়ে দিতেন তিনি। ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে বসে মিলিয়ন ডলার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পকেটে পুরে নিতেও পটু ছিলেন তিনি। এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা সিগারেট টানতেন। থামত না মদের পেয়ালায় চুমুক। কথিত আছে, একবার এক ধনকুবের তেল ব্যবসায়ীর সঙ্গে জুয়া খেলতে বসে ৯৫০ কোটি টাকারও বেশি বাজি ধরে বসেন। ক্যারি পেকার বলেন, আসেন কয়েন ছুড়ে টস করি। খেলবেন? প্রায় হাজার কোটি টাকার সে বাজি কে জিতেছিল পরে তা জানা যায়নি। কিন্তু ক্যারি পেকারের মতো ধনকুবেরদের কাছে এসব বড় কোনো ব্যাপার না। ক্যারি পেকার ২০০৫ সালে যখন মারা যান তখন তিনি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি।

 

টেরেন্স ওয়াটেনেব

এক বছরে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি জুয়ায় হারানো লোকটির নাম টেরেন্স ওয়াটেনেব। তাকে অনেকে চেনে জুয়াড়ির ব্যবসায়ী বলে। জুয়া খেলাটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন টেরেন্স। তার ভাগ্যের উত্থান-পতন তাই জুয়া খেলার ওপরই নির্ভর করে। ২০০৭ সালে লাস ভেগাসে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি উড়িয়ে বসেন তিনি। এই ঘটনার পর তিনি ক্যাসিনো মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, জুয়া খেলার সময় ক্যাসিনো মালিক নাকি তার মদের গ্লাসে এমন এক ধরনের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছেন যাতে তিনি বড় বড় বাজি ধরতেন। সেই অভিযোগ নিয়ে কম হইচই হয়নি। টেরেন্সকে নিয়েও অভিযোগ আছে। একবার জুয়া খেলতে বসেন হারাহ নামের এক ক্যাসিনোতে। সেখানে তিনি এত বড় অঙ্কের বাজি ধরতে থাকেন যে, সে টাকা দিতে পারছিল না ক্যাসিনো। তিনি উল্টো ক্যাসিনোয়ালাদের বললেন, ‘আমি এক হাজার কোটি টাকা ধার দিচ্ছি, আসেন জুয়াটা শেষ করি।’ সেই বাজি টেরেন্স জিতে নেয়। ক্যাসিনো মালিককে পথে বসিয়ে দিয়ে হাজার কোটি টাকা পকেটে নিয়ে বাসায় ফেরেন তিনি।

 

বিল বেন্টার

যুক্তরাষ্ট্রের পেলসেলভেনিয়ায় জন্ম নেওয়া বিল বেন্টার জুয়াড়িদের জগতের সম্রাট। অঙ্কে পাকা বিল দারুণ মেধাবী। পদার্থ বিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করে ক্যারিয়ার গড়লেন জুয়াড়ি হিসেবে! লাস ভেগাসে গিয়ে দেখলেন, টাকা উড়ছে বাতাসে। সেই টাকা ধরার কৌশলও তার মাথায় চলে এলো। তাসের খেলায় অঙ্কের মারপ্যাঁচে বলে দিতে পারতেন কার হাতে কোন তাস আছে। তাস খেলায় বাজি ধরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। ক্যাসিনোতে কার্ড গেমে তাকে মেশিন বলে স্বীকার করে নিয়েছে সবাই। এক পর্যায়ে ক্যাসিনো মালিকরা তাকে জুয়া খেলতে দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিল। জুয়া খেলতে গিয়ে তার পরিচয় হয় অ্যালেন উডের সঙ্গে। পরে লাস ভেগাস ছেড়ে তার সঙ্গে হংকং চলে আসেন বিল। এখানে এসে ঘোড়দৌড় খেলায় বাজি ধরা শুরু করলেন। তিনি হিসাব করে নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারতেন কোন ঘোড়া রেসে জিততে যাচ্ছে। হতোও তাই। হাজার হাজার কোটি টাকার বাজি জিততে থাকেন তিনি। তার অনুমান আর অঙ্কের রহস্য কেউ ভাঙতে পারেনি। বিল বেন্টার গণিতনির্ভর একটি সফটওয়্যারও দাঁড় করিয়ে ফেলেন যাতে হিসাব করে বাজি ধরতেন আর জুয়ায় জিতে নিতেন হাজার কোটি টাকা!

 

জিনলিয়ে জন

নিজেকে মেক্সিকোর ব্যবসায়ী দাবি করেন। টাকার উৎস জানতে চাইলে, হাসি দেন। মেক্সিকোর পুলিশ বলছে, দেশের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী তিনি। তার টাকা আসে মাদক চোরাচালান করে। জুয়া খেলতে বসলে লোকজন ভিড় করে তার চারপাশে। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিকরা তার সঙ্গে জুয়া খেলতে ভয় পান। মেক্সিকোর এই শীর্ষ জুয়াড়ির নাম জেনলিয়ে জন। চীনে জন্ম নেওয়া এই জুয়াড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিতে দিতে হয়রান মেক্সিকো আর যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ। অবৈধ অর্থের স্রোত ঠেকাতে হিমশিম খায় তারা। বারবার তার গাড়ি-বাড়ি ব্যাংকের টাকা সিজ করে পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ আর মেক্সিকোর পুলিশ মিলে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি আটকে দিয়েছে তার। তাতে কিছুই যায় আসেনি জেনলিয়ের। একবার জুয়া খেলতে বসে এক রাতেই  প্রায় এক হাজার কোটি টাকা জিতে নেন। ক্যাসিনো মালিকের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে ফিরছিলেন তিনি। ক্যাসিনো থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে মালিককে ডেকে বললেন, ‘কী মন খারাপ? নাও পুরো টাকাটাই (এক হাজার কোটি টাকা) দান করে দিলাম তোমাকে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর