শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রনায়কদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

তানিয়া তুষ্টি

রাষ্ট্রনায়কদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রনায়ককে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য রয়েছে বিশেষ বাহিনী। শত্রুর হামলা থেকে বাঁচাতে এই বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী সব সময়ই তাদের পরিকল্পনা গোপন রাখে। রাষ্ট্রনায়কদের নিরাপত্তায় ফাঁকফোকড় রাখার সুযোগ নেই। নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে এই নিরাপত্তা বাহিনীগুলো রাষ্ট্রনায়ককে দেয় সর্বোচ্চ সুরক্ষা। বিশ্বের শীর্ষ রাষ্ট্রনায়কদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আজকের রকমারি—

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প [প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্র]

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সব সময় ফরমাল সিকিউরিটি সার্ভিসে এজেন্ট ও নেভি ফোর্সের মেম্বারদের নিজের সিকিউরিটির জন্য ইউএস সরকারের কাছ থেকে হায়ার করতেন। কিন্তু যখন থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে যান তখন থেকে নিজের ও পরিবারের সিকিউরিটির জন্য প্রতিদিন ৬ কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাড়িবহরে রয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল লিমো যার নাম ‘দ্য বিস্ট’। নতুন গাড়িটি বুলেটপ্রুফ তো বটেই পাশাপাশি এটি ট্রাম্পকে রক্ষা করতে পারে রকেট ও রাসায়নিক হামলা থেকে। ১৫ লাখ ডলারে নির্মিত গাড়িটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ গাড়ি বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। ‘দ্য বিস্টের’ ওজন ৮ টন। স্টিলের দরজাগুলো ৮ ইঞ্চি পুরু। ট্রাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন দেশ থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করে প্রেসিডেন্টের ওপর হামলার হুমকির বিষয়ে সতর্ক করে। এছাড়া নেভি সিলের একটি বিশেষ দল তাকে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে, যে কোনো হুমকি ও হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকে। প্রেসিডেন্ট বিশ্বের যেখানেই পা ফেলেন নিরাপত্তারক্ষীরা একটি নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে রাখেন।

 

কিম জং উন [সুপ্রিম লিডার, উত্তর কোরিয়া]

উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম লিডার কিম জং উনের ব্যাপারে সবাই কমবেশি জানেন। তার একগুঁয়েমি স্বভাব, বিলাসিতা আর স্বেচ্ছাচারিতার খুঁটিনাটি বিশ্ববাসীর কাছে আজ অজানা নয়। এমনকি নানা পরিসংখ্যানও বলে তিনি পৃথিবীর সবথেকে সমালোচিত প্রধানমন্ত্রী। কারণ তিনি বেশির ভাগ অর্থই খরচ করেন নিজের রাজকীয় জীবনযাপন ও নিরাপত্তামূলক কাজে। তার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজারের মতো। কিমের সিকিউরিটির জন্য প্রতিনিয়ত প্রস্তুত থাকে প্রায় ২০ হাজারের মতো সৈনিক। তার চলার সময় গাড়ির চারদিক ঘিরে দৌড়াতে থাকে বডিগার্ডরা। স্যুট পরে কিম জং উনের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তারা নেতাকে ঘিরে বলয় তৈরি করে দৌড়ান। সুদর্শন এবং সুসজ্জিত দেহরক্ষীদের কেবল চোখ ধাঁধানোর জন্যই রাখা হয়েছে বলে ভাবলে ভুল করবেন। কিম জং উন দেহরক্ষীর দল সেন্ট্রাল পার্টি অফিস-সিক্স নামে পরিচিত। তাদের আনুষ্ঠানিক নাম অবশ্য ভিন্ন। সরকারি কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয় ‘মেইন অফিস অ্যাডজুট্যান্টস’ বলে। কিমের একেবারে খুব কাছে থেকে ঘিরে একটি বৃত্ত তৈরি করে রাখেন তারা। কোরিয়ান পিপলস আর্মির বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে তৈরি করা হয় এই দেহরক্ষী দল। বিশেষ করে তীক্ষ দৃষ্টিসম্পন্ন লোক এখানে সুযোগ পায়। এত নিরাপত্তার কারণ হিসেবে অবশ্য দেখানো হয় আগের ঘটে যাওয়া কিছু অঘটনকে। তার দাদা ও বাবাকে অনেকবারই প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই তিনি আর সেই ঝুঁকি নিতে চান না।

 

ভ্লাদিমির পুতিন [প্রেসিডেন্ট, রাশিয়া]

বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্র রাশিয়া। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলা হয় ‘রহস্যময় প্রেসিডেন্ট’। তার নিরাপত্তা কৌশল কখনোই জনসম্মুখে আসে না। মিসাইল ও গুলি-বোমা ঠেকিয়ে দিতে পারে এমন গাড়িতে তিনি চড়েন। যে ঠিকানায় তাকে নিয়ে বিমান আকাশে ভাসে সেই পথে সব ধরনের আকাশযান নিষিদ্ধ করা হয়। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য গোয়েন্দা ২৪ ঘণ্টা প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা হুমকির তথ্য সংগ্রহ করে। তার সিকিউরিটির দায়িত্ব ফেডারেল প্রোটেকটিভ সার্ভিসের কাছে। যা রাশিয়ার শক্তিশালী সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস। কতজন লোক নিয়োজিত আছে  পুতিনের সিকিউরিটিতে বা কীভাবে তা সম্পন্ন হয় এ ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নয়। তবে এক নিউজের সূত্রে বলা যায়, পুতিনের সুরক্ষার জন্য ৫০ হাজারের বেশি এজেন্ট নিয়োজিত রয়েছে।

 

শিনজো আবে [প্রধানমন্ত্রী, জাপান]

জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ক্ষমতা, নিরাপত্তা কোনো দিক দিয়ে তিনি পিছিয়ে নেই। তার চারপাশে নিরাপত্তার এমন বলয় তৈরি করে রাখা হয় যা তুখোড় শত্রুকেও হার মানায়। তিনি যখন কোথাও যাওয়ার জন্য বের হন সঙ্গে পুরো হাইটেক আর্ম গাড়ি বহর থাকে। গাড়িতে ওই বডিগার্ডরাই থাকেন, যাদের প্রধানমন্ত্রীকে সুরক্ষা করার জন্য স্পেশাল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। একটি জিনিস জাপানকে অন্যান্য দেশ থেকে আলাদা বানিয়েছে। যখন প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি রাস্তা দিয়ে যায় তখন কোনো রাস্তায় ব্লক করা হয় না। শুধু প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটিরা অন্যান্য গাড়িকে স্লো হতে নির্দেশ দেয়।

 

শি জিন পিং [ প্রেসিডেন্ট, চীন]

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। তার সিকিউরিটির দায়িত্ব সেন্ট্রাল সিকিউরিটি ব্যুরো অব কমিউনিস্ট পার্টি চায়নার কাছে। তার সিকিউরিটিতে শুধু আট হাজারের বেশি সদস্য থাকে। তাদের আলাদা আলাদা সাতটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। তারা এতটাই পারদর্শী যে, শত্রু আসার সঙ্গে সঙ্গেই তারা দুহাতে অস্ত্র চালাতে পারে। এছাড়াও জিন পিংয়ের সঙ্গে চলা কারগুলোর দরজা সব সময় খোলা থাকে। যাতে করে সিকিউরিটি এজেন্ট প্রয়োজনে খুব দ্রুত বের হয়ে আসতে পারে।

 

অ্যাঙ্গেলা মেরকেল [চ্যান্সেলর, জার্মানি]

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার কৌশল ও তাত্ক্ষণিক হামলায় চ্যান্সেলরকে রক্ষার পরিকল্পনা কখনোই গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি। বার্লিনের যে ঠিকানায় তিনি থাকেন, সেখানে তার বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যায় পর্যটকরা। অবশ্য মেরকেলের জন্য ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা প্রদান করে এমন গোয়েন্দা দল ও দক্ষ অস্ত্রধারী নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। এমনকি মেরকেলের পরিবারের অন্য সদস্যদেরও তারা গোপনে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। মেরকেল যখন রাজপথে নামেন তখন আশপাশের প্রতিটি দালান, দোকানে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয়। বিশেষ আর্মার গাড়িতে চড়েন তিনি। ১৫ জন বডিগার্ড তাকে ঘিরে থাকে। এছাড়া তার গাড়িবহরে একাধিক নকল গাড়িও থাকে, যাতে বোঝা না যায় চ্যান্সেলর কোন গাড়িতে আছেন।

 

রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয় [রানী, যুক্তরাজ্য]

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের নিরাপত্তার জন্য দেশটি অনেক অর্থ খরচ করে থাকে। মহারানীর জন্য এই সিকিউরিটি কারও কাছেই অবাক করার বিষয় নয়। কেননা রানীকে অনেকবারই হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এজন্যই ব্রিটিশ সরকার রানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো কমতি রাখেনি। রানীকে ২৪ ঘণ্টাই সিকিউরিটির মধ্যে থাকতে হয়। গাড়িবহর যাওয়ার সময় সামনে-পেছনে অসংখ্য সিকিউরিটি অবস্থান নেয়।

 

নরেন্দ্র মোদি [ প্রধানমন্ত্রী, ভারত]

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে সে দেশের ব্ল্যাকক্যাট কমান্ডো ও স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) সদস্যরা। তিনি যখন কোনো দেশ সফর করেন এই বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে আগেই পৌঁছে যায়। গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরাও প্রধানমন্ত্রী যেখানে উপস্থিত থাকবেন সেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সমর্থক হিসেবে হাজির থাকেন।  ব্ল্যাকক্যাট কমান্ডো হচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ এলিট (অভিজাত) বাহিনী। এছাড়া মোদি বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করেন। প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য হেলিকপ্টারও প্রস্তুত থাকে তার জন্য।

 

রিসেপ তায়েপ এরদোগান [প্রেসিডেন্ট, তুরস্ক]

বর্তমান মুসলিম বিশ্বের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট এরদোগান। যে কোনো দেশের মুসলিমরা বিপদে পড়লেই এগিয়ে আসেন এরদোগান। এজন্য ইহুদি ও খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলো তার শত্রু। যার জন্য তিনি নিজেকে সেফ রাখতে শক্তিশালী সিকিউরিটি ফোর্স সঙ্গে রাখেন। নিরাপত্তারক্ষীরা তার পাশে কালো গাড়িতে যায়। এই রক্ষীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। প্রায় ২০ হাজারের মতো। এরদোগানের গাড়িবহর খুব দ্রুত চলতে থাকে। হেডলাইট সার্বক্ষণিক জ্বালানো থাকে এবং ফ্লাশ করতে করতে চলতে থাকে। তিনি যখন রাস্তা দিয়ে যান তখন আশপাশের বিল্ডিংগুলোতে স্নাইপার হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন সিকিউরিটি সদস্যরা। এমনকি তার গাড়ির ছাদেও দাঁড়িয়ে থাকেন স্নাইপাররা।

সর্বশেষ খবর