রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বপ্নে পাওয়া বিজ্ঞান

সাইফ ইমন

স্বপ্নে পাওয়া বিজ্ঞান

রাস্তাঘাটে প্রায়ই বিভিন্ন ফেরিওয়ালাকে বলতে শোনা যায় স্বপ্নে পাওয়া ওষুধের কথা যা খেলে সব রোগ ভালো হয়ে যাবে! বলাই বাহুল্য, এসবই আজগুবি আর মিথ্যা গুজব। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও স্বপ্ন ব্যাপারটা কিন্তু একেবারে অর্থহীন বলা যাবে না। জার্মান জৈব রসায়নবিদ আগস্ট কেকিউল একবার স্বপ্নে দেখলেন বেনজিন মলিকিউলের গঠন। যা অন্যান্য জৈব যৌগের মতো  সরলরৈখিক নয় বরং এই যৌগটির গঠন বৃত্তাকার। এ রকম স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশনা থেকে দুনিয়ার বিখ্যাত কয়েকটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নিয়েই আজকের রকমারি—

 

দ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি

অসামান্য প্রতিভাধর ভারতীয় গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজনকে নিয়ে একটি বায়োপিক চলচ্চিত্র আছে নাম ‘দ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি’। এর আগে একই নামে তাকে নিয়ে একটি বই লেখা হয়। যারা এই চলচ্চিত্রটি দেখেছেন তারা তো অবশ্যই আর যারা দেখেন নি তারাও নিশ্চয়ই জানেন রামানুজনের নাম। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর প্রতিভায় গণিতের বিভিন্ন শাখা যেমন— গাণিতিক বিশ্লেষণ, সংখ্যাতত্ত্ব, অসীম ধারা, আবৃত্ত ভগ্নাংশ প্রভৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। প্রমাণ করে গেছেন তিন হাজারেরও বেশি গাণিতিক তত্ত্ব। শ্রীনিবাস রামানুজন ছিলেন একজন ভারতীয়। ক্ষণজন্মা এই গণিতবিদ গণিতে সুদূরপ্রসারী অবদান রেখে গেছেন। প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে না গিয়েও তিনি অবস্থান করেছিলেন শিক্ষার আলোর সর্বোচ্চ স্তরে। সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় তিনি গণিতের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ করে গাণিতিক বিশ্লেষণ, সংখ্যাতত্ত্ব, অসীম ধারা ও আবৃত্ত ভগ্নাংশ শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার রেখে যাওয়া নোটবুক বা ডায়েরি হতে পরবর্তীতে আরও অনেক নতুন সমাধান পাওয়া গেছে। ইংরেজ গণিতবিদ জি এইচ হার্ডি রামানুজনকে অয়েলার ও গাউসের সমপর্যায়ের গণিতবিদ মনে করেন। রামানুজনের মতে, তিনি তার অনেক গাণিতিক সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে পেয়েছিলেন ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্ন থেকে। রামানুজন বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করেছেন এক দেবীর কথা। তিনি জীবনের বিভিন্ন সময় হিন্দু দেবী নামগিরিকে স্বপ্নে দেখতেন। দেবী তাকে স্বপ্নে জটিল সব গণিতের সূত্র দেখিয়ে দিতেন। পরে ঘুম থেকে জেগে তিনি সে সমস্ত সূত্রের সত্যতা প্রমাণ করতেন নিজে নিজে। রামানুজনের স্বপ্নই শুধু বিস্ময়কর নয়। তার কর্ম এবং জীবনও বিস্ময়কর।

অবিভক্ত ভারতের মাদ্রাজের এক গরিব ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান রামানুজন ১০ বছর বয়সে গণিতের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। তাকে এস এল লোনি লিখিত ‘ত্রিকোণমিতি’ পুস্তকটি দেওয়া হয় এবং তখন থেকে তিনি গণিতে সহজাত প্রতিভা প্রদর্শন করেন। ১২ বছরের মধ্যে তিনি ওই পুস্তকের বিষয়গুলোতে দক্ষতা অর্জন করেন। এমন কি তিনি নিজে কিছু উপপাদ্য আবিষ্কার করেন এবং স্বতন্ত্রভাবে অয়েলারের এককত্ব পুনরায় আবিষ্কার করেন। ১৭ বছর বয়সে রামানুজন বার্নোলির সংখ্যা ও অয়েলার-মাসেরনি ধ্রুবকের ওপর নিজের গবেষণা সম্পন্ন করেন। রামানুজনকে প্রায়ই দেখা যেত হিন্দু দেবী নামগিরির মূর্তির সামনে বসে নিজে নিজে অঙ্ক কষছেন। বিষয়টা আধুনিক বিজ্ঞানীদের জন্য বিব্রতকর বটে। ইতিহাস অনুযায়ী সত্য তো সত্যই। 

 

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব তখনো প্রমাণিত হয়নি। ইংরেজ বিজ্ঞানীরা সূর্যগ্রহণের একাধিক ছবি তোলেন। সেই ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেল আলো বাঁকে। বিজ্ঞানীরা উত্তেজনায় ফেটে পড়লেন। ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটিতে ঘোষণা করা হলো সেই যুগান্তকারী তত্ত্ব, আলো বেঁকে যায়। এই বাঁকের নিয়ম নিউটনের তত্ত্বে না থাকলেও আলোর বাঁকের মাপ আছে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সূত্রে। আইনস্টাইন তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে কৌতুক করে বললেন, ‘আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার জার্মানি বলবে আমি জার্মান আর ফরাসিরা বলবে আমি বিশ্ব নাগরিক। কিন্তু আমার তত্ত্ব যদি মিথ্যা হতো তাহলে ফরাসিরা বলত আমি জার্মান আর জার্মানরা বলত আমি ইহুদি।’ এভাবেই নিজের আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে রসবোধে মেতে উঠতেন আইনস্টাইন। একদিন এক তরুণ সাংবাদিক বললেন, আপনি সংক্ষেপে বলুন আপেক্ষিক তত্ত্বটা কী?  আইনস্টাইন আবারও কৌতুক করে বললেন, ‘যখন একজন লোক কোনো সুন্দরীর সঙ্গে এক ঘণ্টা গল্প করে তখন তার মনে হয় যেন এক মিনিট বসে আছে। কিন্তু যখন তাকে কোনো গরম উননের ধারে এক মিনিট দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় তার মনে হয় সে যেন এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে। এই হচ্ছে আপেক্ষিক তত্ত্ব।’ আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্বের জন্য বিশ্ববিখ্যাত। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে— এই জগদ্বিখ্যাত পদার্থবিদ, তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্বটি আবিষ্কার করেছিলেন ঘুমের মধ্যে দেখা একটি স্বপ্ন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। অল্প বয়সী আইনস্টাইন একদিন স্বপ্নে দেখেন, একটি খাড়া পর্বতে ওঠার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে লক্ষ করলেন তিনি যতই দ্রুত উপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করছেন, ততই আলোর গতিপথ বদলে যাচ্ছে। এমন সময় তিনি লক্ষ করেন স্বপ্নে নক্ষত্রগুলোও তাদের গতিপথ বদলে অন্য রকমভাবে দেখা দিচ্ছে তার সামনে।

ঘুম ভাঙলে আইনস্টাইন তার এ স্বপ্ন নিয়েই চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন। এ রকম একটি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলে না ভেবে উপায় কি এবং এক সময় এই স্বপ্ন থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে একটা তত্ত্বের উদ্ভাবন করতে সমর্থ হন পরবর্তীতে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে তার সে উদ্ভাবন সবচেয়ে যুগান্তকারী তত্ত্বের একটি হয়ে দেখা দেয়। আর তা হলো এই আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বা থিউরি অব রিলেটিভিটি।

‘আইনস্টাইনস ড্রিম’ নামের অ্যালেন লাইটম্যানের লেখা আস্ত একটি বই প্রকাশিত হয়েছে ১৯৯২ সালে। এ ছাড়াও আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে মুখরোচক কিছু কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে। একদিন এক তরুণী তার প্রেমিকের সঙ্গে চার্চের ফাদারের পরিচয় করিয়ে দেয়। ফাদার বলে, ‘তোমার প্রেমিককে আমার সব দিক থেকেই ভালো লেগেছে শুধু একটি বিষয় ছাড়া। তার কোনো রসবোধ নেই। আমি তাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা জিজ্ঞাসা করেছি আর সে আমাকে তাই বোঝাতে আরম্ভ করল।’ ফাদারের এ কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ল মেয়েটি।

 

নিলস বোরের পরমাণুর গঠনতত্ত্ব

রাদাফোর্ডের পরমাণু মডেলের ভুলগুলো শুধরে ডেনিশ পদার্থবিদ নিলস বোর নতুন একটি মডেল দাঁড় করে চারদিকে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম পরমাণুর সঠিক গঠন বর্ণনা করেছিলেন। তাকে বলা হয়,  কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের জনক। মজার ব্যাপার হলো— তিনি পরমাণুর গঠনতত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন একটি স্বপ্ন  থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। নিলস বোরের পুরো নাম নিলস  হেনরিক ডেভিড বোর।

বিংশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিদদের একজন ভাবা হয় নিলস বোরকে। এই বিজ্ঞানী ১৯২২ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বোরের পরমাণু মডেল রসায়নের ইতিহাসে আজও বিখ্যাত হয়ে আছে। তিনি মূলত অবদান রাখেন আণবিক গঠন এবং কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের ওপর যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তিনি পরমাণু মডেলকে সূর্যের কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান গ্রহের সঙ্গে তুলনা করেন; যেখানে পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস অবস্থিত এবং নিউক্লিয়াসের চার পাশে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন অবস্থিত। ১৯১২ সালে মারগ্রেথ নোরলান্ড নামীয় রমণীকে বিয়ে করেন। তাদের সন্তানদের একজন ছিলেন অউ নিলস বোর। তিনিও গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯৭৫ সালে তাকেও নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল। যখন তিনি পরমাণুর গঠন ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতে শুরু করেন তখন এক রাতে তিনি ঘুমের মধ্যে পরমাণুর গঠন নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ঘুম থেকে জেগে উঠলে, নিলস বোর বুঝতে পারেন স্বপ্নে যা দেখেছেন তা একদম সঠিক। তাই ঘুম থেকে জেগে তিনি তার ল্যাবে কাজ করতে শুরু করেন এবং তার স্বপ্নের স্বপক্ষে প্রমাণ খুঁজতে আরম্ভ করেন। শেষ পর্যন্ত নিলস বোর পরমাণুর গঠনতত্ত্বের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ বের করতে সমর্থ হন।

 

ইনসুলিনের আবিষ্কার

১৯২১ সালের কোনো এক দিনে নিউইয়র্কে ফ্রেডরিক অ্যালেনের হাসপাতালে একদল ডায়াবেটিস রোগী বসে আছে। ইনসুলিন তখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই ডায়বেটিস রোগের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে না খেয়ে বেঁচে থাকা। এর মধ্যে গুজব শুরু হলো— ইনসুলিন নামে কিছু একটা উদ্ভাবন হয়েছে কানাডায়, যেটা নাকি ডায়াবেটিস রোগীকে স্বাভাবিক জীবন দিতে পারে। ফ্রেডরিক অ্যালেন ঘটনার সত্যতা জানতে গেছেন। এই মুহূর্তে রাতের খাবারের পর রোগীদের ঘুমিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু তারা জেগে আছেন ফ্রেডরিক অ্যালেনের অপেক্ষায়। এক সময় হাসপাতালের প্রবেশপথে ফ্রেডরিকের পায়ের শব্দ পাওয়া যায়। সবার মনোযোগ সেই শব্দে। ফ্রেডরিক হাসপাতালের দরজা খুললেন, শত শত চোখ তার দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল। তা দেখে তিনি এক মিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর ধীরে ধীরে স্পস্ট বললেন, আমার মনে হয়, আমার কাছে আপনাদের জন্য কিছু আছে। কারণ কানাডার এক চিকিৎসাবিজ্ঞানী আসলেই ইনসুলিনের উদ্ভাবন করে ফেলেছেন। কানাডার নোবেল বিজয়ী সেই চিকিৎসাবিজ্ঞানী স্যার ফ্রেডরিক গ্রান্ড বেন্টিং। ডায়াবেটিসের প্রতিকারের উপায় বের করার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন। অনেক চেষ্টার পর ডায়াবেটিস প্রতিকারের উপায় বের করতে না পারলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার যুগান্তকারী একটা উপায় ইনসুলিন বের করতে পেরেছিলেন তিনি। ইনসুলিন আবিষ্কারে তার একজন সহকর্মীর পাশাপাশি সহায়ক হিসেবে কাজ করেছিল বেন্টিংয়ের ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্ন। স্বপ্নেই নির্দেশনা পেয়েছিলেন তিনি কী করে ইনসুলিনের সাহায্যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং কী করে ওষুধ আকারে তা ব্যবহার করা যায়।

 

পৃথিবীর প্রথম সাই-ফাই উপন্যাস

বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রবন্ধকার, জীবনীকার এবং ভ্রমণ কাহিনীকার মেরি শেলির নাম অনেকেই শুনেছেন। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার কালজয়ী উপন্যাস ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের জন্য। অনেকের মতে, এই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন উপন্যাসটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী উপন্যাস বা সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস।

মজার ব্যাপার হলো— মেরি শেলি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন উপন্যাসটি লিখেছিলেন তার ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্ন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। ১৮১৬ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মেরি শেলি ইংরেজ কবি লর্ড বায়রনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে লর্ড বায়রন তাকে একটা ভূতের গল্প লেখার পরামর্শ দেন। কিন্তু শেলি লিখতে পারছিলেন না। রাইটার্স ব্লক হয়েছিল তার। রাতের পর রাত ভেবেও শেলি যখন কিছুতেই মনকে তার কল্পনার জগতে বিচরণ করাতে পারছিলেন না, ঠিক তখনই একদিন ঘুমের মধ্যে তিনি স্বপ্নে পেয়ে যান তার ফ্রাঙ্কেনস্টেইন উপন্যাসের প্লট। স্বপ্নটা এতটাই স্পষ্ট ছিল যে, ঘুম থেকে জেগে উঠেও তিনি পরিষ্কার তা মনে করতে পেরেছিলেন। এরপরই মেরি শেলি লিখে ফেলেছিলেন তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’। এই ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে মেরি দেখিয়েছেন কীভাবে সৃষ্টি স্রষ্টার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বইটিতে স্রষ্টার অসহায়ত্ব চিত্রিত হয়েছে মূলত। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নামক একজন বিজ্ঞান গবেষক মৃতকে প্রাণ দিয়ে অতিমানব তৈরি করতে গিয়ে যে বিপত্তি বাধায় সেটিই মূলত বইটির উপজীব্য। যদিও এর আড়ালে একটা ভিন্ন সুরও রয়েছে বুদ্ধিমান পাঠকদের জন্য।

 

সেলাই মেশিন

১৮০০ সালের শুরুর দিকে সাধারণ মানুষের হাতে তখন খুব একটা টাকা-পয়সা থাকত না। চাইলেই দোকানে গিয়ে নিজের ও পরিবারের জন্য পোশাক পরিচ্ছদও কেনা যেত না। জামা প্যান্ট সব বাড়িতেই তৈরি করা হতো সুই-সুতার সাহয্যে। ১৮৪৬ সালে এলিয়াস হোউই বিরাট পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন এ ক্ষেত্রে। তিনি সেলাই মেশিনের প্যাটেন্ট করেন। যদিও সেলাই মেশিনের ধারণা তখন নতুন কিছু নয়। এই একই ধরনের মেশিন ১৭৫৫ সালে ইংল্যান্ডে, ১৮১৯ সালে আমেরিকায় এবং ১৮৩০ সালে ফ্রান্সে প্যাটেন্ট লাভ করে। তবে শুরুর দিকের মেশিনগুলোর নকশা এমনভাবে করা ছিল যা শুধু শিল্পকারখানায় ব্যবহার উপযোগী। বাসায় নিত্য প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যেত না। এলিয়াস হউই ১৮৪৫ সালে এমন এক সেলাই মেশিন আবিষ্কার করেন যা বাসাবাড়িতেও ব্যবহার করা যেত। অবাক করার বিষয় হলো— তার এই আবিষ্কারের পেছনে ছিল স্বপ্নের অবদান। এলিয়াস হউই সেলাই মেশিনের অন্য সব অংশ ঠিকঠাক বানালেও কিন্তু সুই যে কোথায় স্থাপন করবেন তা কিছুতেই যখন বুঝতে পারছিলেন না তখনই ঘুমের মধ্যে দেখেন এক অদ্ভুত স্বপ্ন। যে স্বপ্ন তাকে বাতলে দেয় সেলাই মেশিনে সুই স্থাপনের উপায়। পরদিন সকালেই ঘুম থেকে উঠে তিনি পেয়ে যান তার সমস্যার সমাধান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর