শিরোনাম
রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জেল ভেঙে পালানোর কাহিনী

সাইফ ইমন

জেল ভেঙে পালানোর কাহিনী

তালেবানদের জেল ভেঙে পলায়ন

আফগানিস্তানের গজনি শহরে তালেবান যোদ্ধারা কারাগার ভেঙে প্রায় ৩০০  বন্দীকে পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দেয়। ঘটনাটি ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসের।  

পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে অধিকাংশই বিদ্রোহী তালেবান সদস্য। তবে এদের মধ্যে কয়েকজন অপরাধীও আছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। কারাগারটির  দেয়ালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গর্ত সৃষ্টি করা হয়। একজন তালেবান সদস্য আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। ওয়াচ টাওয়ারগুলো লক্ষ্য করে ছোড়া হয় রকেট লঞ্চার। সেখান দিয়েই বন্দীরা পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন প্রদেশের সহকারী গভর্নর আখতার মোহাম্মদ খায়েরজাদা। কর্তৃৃপক্ষ এই জেল ভাঙার ঘটনার জন্য বিদ্রোহী তালেবানদের দায়ী করেছে।

 

ডিলিঞ্জারের কাঠের পিস্তল

জন ডিলিঞ্জার আমেরিকার ইতিহাসের কুখ্যাত সন্ত্রাসী। তিনি ছিলেন ডিলিঞ্জার গ্যাঙের সদস্য যেটি ২৪টি ব্যাংক ডাকাতি, চারটি পুলিশ স্টেশনে হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য পরিচিত। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৪ সালের জানুয়ারিতে অ্যারিজোনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং তার স্থান হয় ইন্ডিয়ানার লেক কাউন্টি জেলে। সামান্য কাঠ কেটে তিনি বানিয়েছিলেন এক খেলনা পিস্তল।

 

তারপর সেটিকে আরও আসলের মতো দেখাতে ব্যবহার করেন জুতার কালি। সেই খেলনা পিস্তল দিয়ে প্রহরীদের ভয় দেখিয়েই পালিয়ে যান জন ডিলিঞ্জার।  জেল ভেঙে পালানোর জন্য সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন শেরিফের নতুন কেনা একটি ফোর্ড গাড়ি। ওই বছরেরই ২২ জুলাই পুলিশের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

 

 

 

 

 

 

অপ্রতিরোধ্য ডোনাল্ড জনসন

দীর্ঘ ২১ বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকদের চোখে ধুলো দেন ডোনাল্ড জনসন। এর আগে ডাকাতির দায়ে ১৯৬৬ সালে ১৫ বছরের সাজা হয়েছিল ডোনাল্ডের। ক্যালিফোর্নিয়ার জেমসটাউনে পাঠানো হয় তাকে। ছয় মাসের মাথায় জেল ভেঙে পালিয়ে যান ডোনাল্ড। ১৯৬৯ সালে আবার ফ্লোরিডায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। সেখানে ৫ বছরের সাজা হয় তার। কথা ছিল সেখান থেকে বেরোলেই ক্যালিফোর্নিয়ার জেলে ফেরত যেতে হবে তাকে। কিন্তু সেটা আর হয়নি। মাত্র সাড়ে তিন মাস জেলে কাটিয়েই বেরিয়ে আসেন জনসন আর ফ্লোরিডা থেকে চলে যান সোজা আরকানসাসে।

 

জেল ভেঙে পালিয়ে সেলফি!

ব্রাজিলের মানাউস শহরের কারাগার থেকে পালানো এক বন্দী ব্রায়ান ব্রেমার  ফেসবুকে দম্ভভরে একের পর এক সেলফি পোস্ট করে যাচ্ছেন। গত বছর শুরুর দিকের ঘটনা এটি। মানাউসের দুটি কারাগার ভেঙে দুই শতাধিক বন্দী পালিয়ে যায় সেদিন। ব্রেমার ডাকাতির অভিযোগে সাজা খাটছিলেন। ছবিতে দেখা যায় ঘন জঙ্গলের মধ্যে ব্রায়ানসহ কয়েকজন পলাতক আসামি আঙ্গুল উঁচিয়ে সেলফি তুলছেন। এ ধরনের ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি।  পালানোর পরে তার তোলা সেলফি ভাইরাল হয়ে যায় পুরো বিশ্বে। একটি ছবিতে ক্যাপশন ছিল— জেল থেকে পালিয়ে দৌড়াচ্ছি। অপর একটি  ছবিতে দেখা যায় ব্রেমার ও অন্য আরও চারজন ফল খাচ্ছেন। আমাজোনাস প্রদেশের মানাউস শহরের অ্যান্তোনিও ত্রিনিদাদ কারাগারে এই পালানোর ঘটনা ঘটে। এরপরেই আনিসিও জবিম কারাগারে রক্তাক্ত দাঙ্গায় ৫৬ জন নিহত হন। সেখান থেকে পালায় আরও ১১২ জন বন্দী। ব্রেমারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি একসময় বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি জেনে অনেকেই মজা পেলেও আসলে এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। ব্রেমার ও অন্য আরেক বন্দীর তোলা  সেলফি ছবি ব্যবহার কারাগার পলাতক কাহিনী নিয়ে নির্মিত বিখ্যাত সিনেমা  দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন ও টিভি সিরিজ প্রিজন ব্রেকের অনুকরণে মিম তৈরি করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন এই বিষয়টা ঝড় তুলেছে তখন পুলিশ ৪০ জনকে পুনরায় আটক করতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে ব্রেমার না থাকলেও ব্রেমারের সঙ্গে সেলফি তোলা এক বন্দীও রয়েছে।

 

দ্য টেক্সাস সেভেন

দ্য টেক্সাস সেভেন হলো এক দল জেলবন্দী যারা টেক্সাসে জন কোনালি ইউনিট থেকে পালিয়ে যান। ঘটনাটি ২০০০ সালের ১৩ ডিসেম্বরের। এর ঠিক এক মাসের মাথায় ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি দ্য টেক্সাস সেভেন দলটি আবার ধরা পড়ে একটি টেলিভিশন প্রোগ্রামের কল্যাণে।

 আমেরিকাস মোস্ট ওয়ান্টেড নামের অনুষ্ঠানটি তখন ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল।

এই সাত কয়েদি পালানোর জন্য অত্যন্ত সুচারু পরিকল্পনা করে দক্ষিণ টেক্সাস টাউনের স্টেট সিকিউরিটি কারাগার ‘জন কোনালি ইউনিট’ থেকে পালিয়ে যাওয়ার। পালানোর সময় তারা চারজন বেসামরিক রক্ষণাবেক্ষণ সুপারভাইজার, চারজন শাস্তিবিষয়ক কর্মকর্তাকে সম্পূর্ণভাবে পরাভূত করতে সক্ষম হয়। দ্য টেক্সাস সেভেন দলটি কারাগার ভেঙে পালানোর সময় কারাগারেরই একটি পিকআপ ব্যবহার করেন।

 

জিম্মি করে পালায় তারা

ব্রিটিশ ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত জেল থেকে পালানোর ঘটনাটি ঘটে ১৯৮৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর। এদিন জেল থেকে ৩৮ জন বন্দী পালাতে সক্ষম হন। এদের সবাই ছিল আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি। যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। এ ঘটনার আকস্মিকতায় তত্ক্ষণাৎ এক জেল কর্মকর্তা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, আরও ২০ জন আহত হন। অথচ এই এইচ এম মেইজ জেলখানাটি গোটা ইউরোপে সবচেয়ে সুরক্ষিত জেলখানা হিসেবে পরিচিত ছিল। জেলখানাটির চারপাশজুড়ে ছিল ১৮ ফুট উচ্চতার কনক্রিটের দেয়াল এবং এর প্রতিটি স্টিলের তৈরি গেট সম্পূর্ণ উপায়ে নিয়ন্ত্রিত হতো। পালানোর আগে বন্দীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জেলখানাটির একটি ব্লক দখলে নিয়ে নেয়। তারপর খাদ্য বহনকারী গাড়িটি পালানোর কাজে ব্যবহার করে দরজা ভেঙে পালিয়ে যায়।

 

পালাল ৪৪০ গাদ্দাফির অনুসারী

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির ‘আইন জারা’ নামক একটি কারাগার থেকে অন্তত ৪৪০ জন বন্দী পালিয়ে যায়। কারাগারের নিরাপত্তারক্ষীরা প্রাণভয়ে বন্দীদের বাধা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। কারণ এই ঘটনার সময় বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে। এই সুযোগটি কাজে লাগায় বন্দীরা। জেলের দরজা ভেঙে পালায় তারা। আইন জারা কারাগারে আটক বন্দীদের বেশিরভাগই প্রাক্তন লিবীয়  নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির অনুসারী বলে জানা গেছে। গাদ্দাফি সরকারের পতনের পর দেশটিতে বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্ম হয় এবং এসব গোষ্ঠী এক একটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বর্তমানে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি সরকার রাজধানী ত্রিপোলির ক্ষমতায় থাকলেও লিবিয়ার বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে।

 

ধোঁয়াশার ৩৪ বছর

১৯৭৫ সালে ২২ বছর বয়সী নারী ক্যারোলকে চুরির দায়ে ৫ বছরের জন্য ফ্লোরিডার ওকালার কারাগারে পাঠানো হয়। এর ৪৭ দিনের মাথায় জেল থেকে পালিয়ে যান ক্যারোল।

তবে তার পালানোর ব্যাপারটি পুরোটাই ধোঁয়াশা তৈরি করে সবার কাছে। কারণ প্রহরীর ভাষ্যমতে, ক্যারোলার পালানোর এক ঘণ্টা আগেও তাকে তার জায়গাতেই ঘুমাতে দেখা গেছে বলে জানায় সে। জেল থেকে পালিয়েই নিজের নাম পাল্টিয়ে শ্যারন অ্যাডওয়ার্ডস রাখে ক্যারোল। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার শ্যারন নামের এক নারীর নিরাপত্তা কার্ডের নম্বরও ব্যবহার করা শুরু করে। এরপর কেটে যায় ৩৪ বছর! ২০১০ সালে পুলিশের কাছে আবার ধরা পড়ে ক্যারোল। যদিও তখন তার দাবি, সে আর আগের ক্যারোল নেই। কিন্তু পুলিশ তাকে এত সহজে ছাড়েনি। জেলে ঢুকতে হয় আবার তাকে। আর সেখানেই ১১ মাস কাটিয়ে ২০১১ সালে বাইরে বের হয় ক্যারোল।

 

সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালানো কয়েদিরা

দ্য গ্রেট এস্কেপ ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত একটি ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘স্টালাগ লাফট-৩’ ছিল জার্মানদের বানানো আরেকটি যুদ্ধবন্দীদের ক্যাম্প যেখানে বিমান বাহিনীর লোকদের বন্দী হিসেবে রাখা হতো। এখানকার বন্দীদের মাঝেই একজন ছিলেন অক্সিলিয়ারি এয়ার ফোর্সের স্কোয়াড্রন লিডার রজার জয়েস বুশেল। ১৯৪৩ সালের জানুয়ারি মাসে বুশেল এখান থেকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালানোর পরিকল্পনা করলেন, তবে একটি নয়, তিনটি; একা নয়, সবাইকে নিয়ে। এগুলোর সাংকেতিক নাম ছিল টম, ডিক ও হ্যারি। সুড়ঙ্গগুলো তৈরিতে প্রায় ১৩০ টন মাটি সরানোর কাজ করা হয়েছিল! সুড়ঙ্গপথে এক এক করে পালায় ৭৬ জন। ৭৭তম বন্দী সুড়ঙ্গ থেকে বের হওয়া মাত্রই ধরা পড়ে যান এক প্রহরীর নজরে। এরপর ৭৬ জনের মধ্যে ৭৩ জনই ধরা পড়েছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর