রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বসেরা হীরার খনি

তানিয়া তুষ্টি

বিশ্বসেরা হীরার খনি
হীরা বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটানো এক টুকরো পদার্থ। সাদার পাশাপাশি কালো, সবুজ, নীল, গোলাপি, বেগুনি, হলুদ ও লালসহ অনেক রঙের হীরা পাওয়া যায়। চলতি বিশ্বে ১৪ কোটি ২৩ লাখ ক্যারেট হীরা উত্তোলনের পূর্বাভাস থাকলে এই পদার্থের মূল্য অনেক চড়া। তাই তো হীরা সম্পর্কে জানার আগ্রহের শেষ নেই। জানার আগ্রহ থাকে অতি মূল্যবান এই পদার্থ উত্তোলনের খনি সম্পর্কেও। বিশ্বসেরা হীরা খনি নিয়ে আজকের রকমারি আয়োজন।

 

আর্গিলি, অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৃহৎ হীরা খনি আর্গিলি। অস্ট্রেলিয়ার দুর্গম একটি এলাকায় খনিটির অবস্থান। ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭৫০ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা এখান থেকে উত্তোলিত হয়েছে। এই খনিতে এখনো ৯৩.১ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা মজুদ রয়েছে। ২০১৬ সালে এখানে উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ১৬.৮ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা। উত্তোলনের এই ধারা চলতে পারে ২০২২ সাল পর্যন্ত। আর্গিলি আবিষ্কার হয় ১৯৭৯ সালে। আর্গিলি মূলত নিচু মানের অধিক হীরা উত্তোলনকারী খনি হিসেবে বিশ্বের কাছে বেশি পরিচিত। তবে এখানে অতি মূল্যবান গোলাপি ও লাল রঙের হীরাও পাওয়া যায়। হীরা শিল্পে এই খনির অবদান অনেক বেশি বলে দাবি করা হয়। কারণ, সস্তা ও ভিন্ন ধরনের হীরা প্রাপ্তি ঘটে থাকে এই খনি থেকেই।

 

ওরাপা, বেসায়ানা

বেসায়ানার মাইনিং কোম্পানি ডি বিয়ার্সের তথ্য অনুসারে ওরাপা হীরা খনিকে বর্তমানে সবচেয়ে বড় উত্তোলনকারী খনি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখানে হীরা মজুদের পরিমাণ রয়েছে ১৫১.৪ মিলিয়ন ক্যারেট। ২০১৫ সালে এখানে ড্রিলিং করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওরাপা এমন একটি খনি যেখানে একটি মাত্র স্থানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হীরা মজুদ আছে। এই খনিটি রাজধানী গ্যাবারানো থেকে ৫০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত। ওরাপা অর্থ ‘সিংহের কুস্তি খেলার স্থান’। এটি আবিষ্কার হয় ১৯৬০ সালে। এর কিছু বছর আগেই মাত্র বেসায়ানা ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এই খনি থেকে উত্তোলনের কাজ শুরু হয় ১৯৭১ সালে। তখন থেকেই বিশ্বের সেরা হীরা উত্তোলনকারী খনি হিসেবে পরিচিতি পায়। দেশটিতে পুরাতন যত খনি আছে তার মধ্যে এটি একটি। ডি বিয়ার্স ও সরকারের সঙ্গে  দেবসোয়ানা কোম্পানি তাদের জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজ শুরু করে। ১১৮ বর্গ কি.মি এলাকাজুড়ে খনিটির অবস্থান। এখান থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত হীরা উত্তোলন করা সম্ভব হবে।

জওয়ানাং, বেসায়ানা

আশ্চর্যের বিষয় মনে হলেও এটিই সত্য যে, বেসায়ানা দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরা খনিটিরও অধিকারী। এই খনির হীরার মূল্য বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। জওয়ানাং খনিটি বেসায়ানার গ্যাবরণ থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত। জওয়ানাং অর্থ ‘ছোট পাথরের স্থান’। অর্থমূল্যের দিক থেকে বিচার করলে ২০১৫ সালে এই খনির হীরা এক নম্বরের খনি ছিল। প্রতি বছর খনিটি প্রায় ১১ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা উত্তোলন করে থাকে। যার প্রতি ক্যারেটের গড়পড়তা মূল্য ২০০ ডলারের বেশি। ২০১৫ সালে এখানে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের হীরা উত্তোলিত হয়। ২০১৪ সালে পরীক্ষা করে দেখা যায়, আগের ধারণার তুলনায় এখানে আরও ৯৫ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা বেশি আছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখান থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত হীরা উত্তোলন সম্ভব হবে।  

জুবিলি, রাশিয়া

দীর্ঘদিন ধরে আয়তনে বিশ্বের বৃহৎ হীরা খনি হিসেবে পরিচিত ছিল জুবিলি হীরা খনি। রাশিয়ার উত্তরাংশে শাখা অঞ্চলে এটি অবস্থিত। খনিটির বর্তমান অবস্থান চতুর্থ। হীরার সঙ্গে এই খনি থেকে অন্যান্য আকরিকও উত্তোলন হয়ে থাকে। ২০১৫ সালে এখান থেকে ৯ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা উত্তোলন হয়। এখন পর্যন্ত এই খনির মজুদের পরিমাণ অন্যান্য খনি থেকে অনেক বেশি। এদিক থেকে খনিটি এখনো বৃহত্তম। ধারণা করা হয়, এখানে এখনো ১২৫.৪ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা মজুদ রয়েছে। খনির উত্তোলনের কাজ শুরু হয় ১৯৮৬ সাল থেকে। রাশিয়ার আলরোসা কোম্পানি এই খনির মালিক। আইখাল মাইনিং অ্যান্ড প্রসেসিং ডিভিশন হীরা উত্তোলনের কাজ করে থাকে। রাশিয়ার জন্য হীরা উত্তোলনের পরিমাণ ও রেভিনিউ আনার ক্ষেত্রে এই খনিটি সবচেয়ে বৃহত্তর ভূমিকা রেখে চলেছে।

কাটোকা, অ্যাঙ্গোলা

অ্যাঙ্গোলার সবচেয়ে বড় হীরা খনিটি হলো কাটোকা। এই দেশের মোট হীরা উত্তোলনের প্রায় ৭০ শতাংশ উত্তোলন হয় কাটোকা থেকে। খনিটি আবিষ্কার হয় ১৯৬৫ সালে। তবে উত্তোলনের কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সাল থেকে। ২০০৫ সালে এই খনির খনন কাজ আরও দীর্ঘ করতে নতুন প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়। ২০১৬ সালে এই খনি থেকে ৬.৫ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা উত্তোলন করা হয়। এই বছরই মূলত বৃহৎ হীরা খনির তালিকায় কাটোকার নাম উঠিয়ে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, কাটোকাতে এখনো ১১০ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা মজুদ আছে। এখানে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত খননকাজ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইউদাসনি, রাশিয়া

রাশিয়ার নামকরা হীরা খনি মিরের জমজ খনি ইউদাসনি। এটি ৬৪০ মিটার গভীর। ১৯৭১ সাল থেকে এখানে উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছে। এই খনিতে ৮০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ মজুদ আছে বলে ধারণা করা হয়। মজুদ থাকা ৩৪০ মিলিয়ন টন আকরিক থেকে কাঙ্ক্ষিত হীরা পাওয়া যাবে। ইউদাসনি প্রতি বছর প্রায় ৪ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা এবং আকরিক উত্তোলন করছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দিয়েছেন, এখান থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হীরা উত্তোলন করা সম্ভব হবে। তবে তারা আরও আশা করছেন, মজুদ হীরার পরিমাণ যা ধারণা করা হয়েছিল তা থেকেও প্রায় ৮ মিলিয়ন বেশি পাওয়া যাবে।

 

মির, রাশিয়া

বিশ্বের দ্বিতীয় গভীর হীরা খনিটি হলো রাশিয়ার মির। এটি এতটাই গভীর যে, এই এলাকা দিয়ে কোনো উড়োজাহাজ যাওয়া নিষেধ। মিরের ব্যাসরেখার দৈর্ঘ্য ১.২ কি.মি এবং গভীরতা ৫০০ মিটার। এই পর্যন্ত হীরা শিল্পে মির খনির গুরুত্ব অপরিসীম। খনিটি আবিষ্কার হয় ১৯৫৫ সালে। ২০০১ সালে খনিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি বছর এখান থেকে ১০ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা উত্তোলন সম্ভব হয়েছে। তবে ২০০৯ সালে আবারও সিদ্ধান্ত হয় খনিতে খনন চলবে। এখনো হীরা মজুদ রয়েছে ৯৭.৪ মিলিয়ন ক্যারেট। পুনরায় খনন শুরু হলে সেখানে উত্তোলনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ২.২ মিলিয়ন ক্যারেট উত্তোলন হয়। পরবর্তী লক্ষ্য প্রতি বছরে ৪ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা উত্তোলনের।

 

হীরা উত্তোলনে সেরা দেশ

রাশিয়া

রাশিয়া ফেডারেশন প্রতি বছর ৮৯ ক্যারেট হীরা উত্তোলন করে থাকে। রাশিয়া থেকে উত্তোলিত এই পরিমাণ হীরার বর্তমান আর্থিক মূল্য প্রায় ৩৫৬ কোটি ডলার। বাজার মূল্যের দিক থেকে হীরা উত্তোলনে রাশিয়া বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে। উত্তোলিত সমুদয় হীরা আসে দেশের কয়েকটি খনি থেকে।

বেসায়ানা

হীরা উত্তোলনে বেসায়ানার অবস্থান দ্বিতীয়। রাশিয়ার তুলনায় বেসায়ানা থেকে হীরা উত্তোলনের পরিমাণ বেশি তবে আর্থিক মূল্য কম। বেসায়ানা বাৎসরিক ১৩৯ ক্যারেট হীরা উত্তোলন করে যার বাজার মূল্য প্রায় ২৮৫ কোটি ডলার।

কানাডা

তৃতীয় অবস্থানে আছে কানাডা। দেশটি প্রতি বছর ১০৭ ক্যারেট হীরা উত্তোলন করে। কানাডার হীরার বাজার মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি ডলার। 

দক্ষিণ আফ্রিকা

বছরে দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তোলিত হীরার পরিমাণ ১৫০ ক্যারেট। বাজার মূল্য প্রায় ১২৫ কোটি ডলার।

অ্যাঙ্গোলা

অ্যাঙ্গোলা বিশ্বের মানচিত্রে ছোট্ট একটি দেশ। দেশটির অভ্যন্তরে যতগুলো হীরা খনি আছে তা থেকে প্রতি বছর প্রায় ১২০ ক্যারেট হীরা উত্তোলন করা সম্ভব হয়। এর মূল্য দাঁড়ায় ১০৭ কোটি ডলার।

নামিবিয়া

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হীরা উত্তোলনকারী দেশ নামিবিয়া। প্রতি বছর দেশটি প্রায় ৫৩৩ ক্যারেট হীরা উত্তোলন করে থাকে। এই হীরা থেকে নামিবিয়া বাজার মূল্য পেয়ে থাকে প্রায় ৯২ কোটি ডলারের মতো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর