রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হ্যাকিংয়ের কবলে বিশ্ব

তানভীর আহমেদ ও সাইফ ইমন

হ্যাকিংয়ের কবলে বিশ্ব

আলোচিত হ্যাকিং

  ভয়ে তটস্থ ন্যাটোর সেনাবাহিনী

গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল রাশিয়ার হ্যাকারদের বিরুদ্ধে। তারা নাকি ন্যাটোর সেনাবাহিনী এবং তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার উদ্দেশ্যে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে অবস্থিত ন্যাটোর সৈন্যদের  মোবাইল ফোন হ্যাক করেছে। ন্যাটোর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং কিছু সৈন্যের বরাত দিয়ে এমনটিই জানিয়েছিল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া ন্যাটোর অন্তত ৪,০০০ সৈন্যের স্মার্ট ফোন হ্যাক করা হয়। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউরোপের পোল্যান্ড, এস্তোনিয়াসহ আরও কিছু দেশে অবস্থিত ন্যাটোর সৈন্যদের স্মার্টফোন লক্ষ্য করে এই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটানো হয়। 

 

বাদ যায়নি ‘নাসা’

যে কোনো রকম নেটওয়ার্কে হ্যাকারদের আক্রমণ খুবই সাধারণ ঘটনা। কিন্তু হ্যাকারদের কবল থেকে বাদ যায়নি নাসার ওয়েবসাইটও! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমন ঘটনাই ঘটেছে গত বছর। মার্কিন যে সংস্থাটি মহাকাশ নিয়ে জটিল সব গবেষণা করে তারাই কিনা নিজেদের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি! মার্কিন কংগ্রেস ম্যানদের প্রশ্নের জবাবে নাসার ইন্সপেক্টর জেনারেল পল কে মার্টিন এ তথ্য জানিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যানুসারে, সংস্থাটি অনেকবার হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে। শুধু ২০১১ সালেই ১৩ বার নাসার কম্পিউটার হ্যাক করে নিজেদের নিয়েছিল হ্যাকাররা।

 

আক্রান্ত ৩০০ কোটি

২০১৩ সালে জনপ্রিয় মেইল সেবা ইয়াহু থেকে ৩০০ কোটি ব্যবহারকারীর মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়। ২০১৬ সালে ইয়াহুকে কিনে নিয়েছিল ভেরিজন। এই জন্য ভেরিজন ব্যয় করেছিল ৪.৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেই বছর প্রতিষ্ঠানটির তদন্ত দল এই হ্যাকিং হওয়ার কথা জনান। হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি এত বড় ছিল যে সেটা আগে কল্পনাও করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। চুরি হওয়া ডাটার মধ্যে ছিল ব্যবহারকারীর মেইল আইডি, পাসওয়ার্ড, পেইমেন্ট কার্ড ও ফোন নম্বরসহ আরও ব্যক্তিগত তথ্য। ইয়াহু ১৯৯৪ সালে তৈরি হয়েছিল, একটা সময় প্রতিষ্ঠানটির ভ্যালু ছিল ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

অ্যাডাল্ট ফ্রেন্ড ফাইন্ডার

অ্যাডাল্ট ফ্রেন্ড ফাইন্ডার হলো যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সেক্স পার্টনার খোঁজার ওয়েবসাইট। যেটি হ্যাক হয়েছিল ২০১৫ সালে। ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে সেক্স পার্টনার খোঁজা ও লাইভ চ্যাট করা যায়।

এই হ্যাকিং ঘটনায় ৪১ কোটি ২২ লাখ অ্যাকাউন্টের তথ্য চুরি হয়। গ্রাহকদের চুরি হওয়া তথ্যের মধ্যে ছিল তাদের ব্যক্তিগত ই-মেইল অ্যাড্রেস,  ক্রেডিট কার্ড নম্বর ও সেক্সচ্যুয়াল পার্টনারদের বিভিন্ন তথ্য। সেই সময় এক ই-মেইল বিবৃতিতে ফ্রেন্ড ফাইন্ডার নেটওয়ার্কস তার গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছিল। পরবর্তীতে সাইটের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে ফিরিয়ে আনে। এই ওয়েবসাইটটির মোট গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি ছিল।

 

হ্যাকিংয়ে ব্যাংক লুট

রাশিয়ান হ্যাকারদের ৬৫০ মিলিয়ন ইউরো লুট : ৬৫০ মিলিয়ন ইউরো সরিয়ে ফেলে হ্যাকাররা। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ব্যাংক লুটের ঘটনা এটি। ব্রিটিশ ব্যাংক থেকে এ বড় অঙ্কের টাকা লুটে নেয় একদল রাশিয়ান হ্যাকার। কমপক্ষে ১০০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। হ্যাকাররা ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে সিস্টেম ব্যবহার করে। সেখানে ম্যালওয়ার ছড়িয়ে দেয়। এতে করে ব্যাংকের লেনদেন তথ্য ও অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের তথ্য হাতে পেয়ে যান হ্যাকাররা। ধীরে ধীরে খুব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা টাকা সরাতে শুরু করেন। সবার অলক্ষ্যে এ বিপুল পরিমাণ টাকা তারা বৈধ লেনদেনের আদলেই লুটে নেন। আতঙ্কের কথা ৬৫০ মিলিয়ন ইউরো বলা হলেও আসলে সেটি ঠিক কিনা বলা কঠিন। কারণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখনো সত্যিকারের অঙ্কটি প্রকাশ করেনি। ব্যাংকের লেনদেনবিষয়ক সিস্টেম যাচাই-বাছাই করে জানা যায়, একটি ই-মেইলের মাধ্যমে ম্যালওয়ারটি তাদের সিস্টেমে ঢুকে পড়ে। তারপর সেটি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠাতে শুরু করে। হ্যাকাররা সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ এমনভাবে নিয়েছিল, যাতে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পর্যায়েও সেটি ধরা পড়েনি। তারা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনগুলো অন্তত চার মাস ধরে চলেছিল।

এ তো গেল ব্যাংক। এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনারও বহু উদাহরণ রয়েছে। তেমনই এক ঘটনা ঘটে ‘গ্লোবাল পেম্যান্টস ইনকরপোরেশন’-এ।

‘গ্লোবাল পেম্যান্টস ইনকরপোরেশন’-এর এটিএম জালিয়াতি : আটলান্টার এ প্রতিষ্ঠানটি ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হারায় হ্যাকারদের কবলে পড়ে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ ঘটনাটি ঘটে। ভিসা, মাস্টার কার্ড তাদের সতর্ক করে দেয় এই বলে যে, তাদের প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ডের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ২০১১ সালে এ নিয়ে বেশ কয়েকটি কনফারেন্সও হয়। তাদের প্রতিষ্ঠানটি নির্ভরযোগ্য বলে প্রতীয়মান হলে সে সময় আর মাথা ঘামানো হয়নি। অবশ্য মূল ঘটনাটি ঘটে কয়েক মাস পর। তাদের কিছু কিছু ব্রাঞ্চ অভিযোগ করে, তাদের লেনদেনগুলো স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। ভিসা, মাস্টার কার্ড জালিয়াতি চক্রের খপ্পরে পড়েছে তারা। অবৈধ ও অস্বাভাবিক লেনদেনবিষয়ক নিরাপত্তা জোরদার করে তারা। তবে এ পূর্বপ্রস্তুতি যথেষ্ট ছিল না। হ্যাকাররা তাদের সিস্টেমে প্রবেশ করে তছনছ করে দেয় সবকিছু। শুরুতে ১.৫ মিলিয়ন ডলার হাতছাড়া হওয়ার কথা জানা গেলেও শেষে জানা গেল অঙ্কটি ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ অঙ্কটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অবশ্য পরিশেষ বলে ৩৬ মিলিয়ন ডলার সেখানে ফাইন ও তদন্তের জন্য আরও ৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল তারা।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ে স্টার ভ্লাদিমির লেভিন : ভ্লাদিমির লেভিন হলেন ১৯৪০-র জেমস বন্ড। রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ভ্লাদিমির ছিলেন একজন মেধাবী গণিতজ্ঞ। সেন্ট পিটারস বার্গ স্টেট ইনস্টিটিউট থেকে বায়োকেমেস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৪৪ সালে ভ্লাদিমির ১০ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার করেন নিজের অ্যাকাউন্টে ডায়েল আপ ওয়ার ট্রান্সফার সার্ভিসের মাধ্যমে। ফিনল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ইসরায়েলের মতো বিভিন্ন দেশের সিটি ব্যাংকের কয়েক হাজার অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন তিনি।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকে চুরি : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এটি। ইতিপূর্বে কখনো বাংলাদেশ বড় অঙ্কের টাকা খোয়ায়নি হ্যাকিংয়ের ঘটনায়। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরি করেছেন হ্যাকাররা। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ ২০১৬ ফেব্রুয়ারিতে হ্যাক করে চীনভিত্তিক হ্যাকার গ্রুপ। চক্রটি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ সরিয়ে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে। ব্যাংক থেকে টাকা ডাকাতির এক অভিনব কায়দা এই হ্যাকিং। প্রত্যেক ব্যাংকের কিছু সুইফট কোড থাকে, যা দিয়ে প্রত্যেক ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে ট্রানজেকশন করে থাকে। হ্যাকাররা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এই সুইফট কোডগুলো বের করে তা দিয়ে ফেডারেল ব্যাংক থেকে প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার তাদের সুবিধামতো অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছেন। ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা চুরি ঘটনার ইতিহাসে এটির অবস্থান পঞ্চম। বিশ্বের প্রায় ২৫০টির মতো দেশের সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভে টাকা জমা রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব আইডি হ্যাক করে অর্থ চুরি করা হয়েছে এমন তিনটি আইডি শনাক্ত করেছে তদন্তকারী দল— যে তিনটি আইডি হ্যাক করে অর্থ সরানো হয়েছিল। কীভাবে এই আইডি হ্যাক হয় বিস্তারিত তদন্ত হচ্ছে।

 

ঝুঁকিতে পাওয়ার গ্রিড

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এই সম্পর্কে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে। ব্ল্যাক হেট ও ডেফ কনের গবেষকরা এই তথ্য জানিয়েছেন।  বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব নাজুক। গবেষক রবার্ট এম লি বলেছেন, পাওয়ার গ্রিড যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদেরকে জানতে হবে যে এ ধরনের হামলা হতে পারে। এজন্য সতর্ক থাকতে হবে। সতর্কবার্তাটি পাওয়ার গ্রিডগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে স্ক্যান করতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে পাওয়ার গ্রিডের কন্ট্রোলাররা হ্যাকারদের অনধিকার প্রবেশের ব্যাপারটি সঙ্গে সঙ্গেই পারবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। এ বিষয়ে গবেষণা করেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষক দল। তারা পরবর্তীতে হামলার একটি ভিজ্যুয়াল মডেল তৈরি দেখায়। তার এর মাধ্যমে  দেখিয়েছেন কত সহজে হ্যাকাররা পাওয়ার গ্রিডে আক্রমণ চালাতে পারে। তিনজনের এই দল একটি সফটওয়্যারে পাওয়ার গ্রিডের ছবি আঁকেন। এরপর হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে পুরো নেটওয়ার্কটি অকার্যকর করে দেওয়া সম্ভব তা ব্যাখ্যা করেন। হ্যাকাররা ইউক্রেনের পাওয়ার গ্রিড দুইবার বন্ধ করে  দেয়। ইউক্রেনে সংঘটিত ম্যালওয়্যার হামলাটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল।

 

বিকল হতে পারে ইন্টারনেট

ইয়াহু, উবারের মতো প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে চমকে দেয়। বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের নাম হবে সাইবার নিরাপত্তা। হ্যাক শব্দটি শুনলেই কেমন যেন শরীর হিম হয়ে আসে। আর যাঁরা হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েছেন তাদের তো আর কথাই নেই। হ্যাকার নাম শুনলেই প্রথমেই যে জিনিসটা আমার চোখের সামনে ভেসে আসে তা হলো নিজের সাইটে একটা কালো ডিফেন্স পেজ। যদিও কেবল ওয়েবসাইট হ্যাক করেই হ্যাকাররা থেমে নেই। যে কোন সময়ে অচল হয়ে যেতে পারে ইান্টারনেট যে কোনো জায়গায়। প্রতি বছর একের পর এক সাইবার হামলার ঘটনায় টালমাটাল ইন্টারনেট দুনিয়া। বিশ্বের অন্যতম সেরা কোম্পানিগুলোও সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাইবার হামলা চালিয়ে হ্যাকাররা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি সাধনে সমর্থ হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে উবারের নেটওয়ার্ক হ্যাক করে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর ডাটা হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। চালক ও যাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার ঘটনা যাতে ফাঁস না হয় সে জন্য  গোপনে হ্যাকারদের দাবি অনুযায়ী এক লাখ ডলার পরিশোধ করে উবার কর্তৃপক্ষ।

 

বাড়ছে গাড়ি হ্যাকিং

গাড়ি হ্যাকিং সম্পর্কে প্রথম সতর্কতা হিসেবে একটি ম্যাগাজিন প্রতিবেদন করার পর বিষয়টি সবার নজরে আসে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান ফিয়াট ক্রাইসলার যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহূত তাদের ১৪ লাখ গাড়িতে পুনরায় সফটওয়্যার ইনস্টল করে। এফবি আই এবং ন্যাশনাল হাইওয়ে প্রাফিক সেইফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএইচটিএসএ) এক সরকারি সংবাদ বিবৃতিতে জানিয়েছে যে বিভিন্ন মোটর গাড়ি হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী তারা এ বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছেন, সাধারণ জনগণ ও গাড়ি নির্মাতাদের আধুনিক গাড়ি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেনতা বাড়াতে সতর্ক করা হচ্ছে। সমস্যা খুব দ্রুত সমাধানে নির্মাতাদের চেষ্টা করতে হবে।

 

কুখ্যাত হ্যাকার...

এদের বলা হয় ‘মিস্টেরিয়াস পিপল’। রহস্যমানবরা কিন্তু ভিনগ্রহের কেউ নন। তারা থেকেছেন পর্দার ওপারে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের একপ্রান্তে বসে কাঁপিয়ে দিয়েছেন পুরো দুনিয়া। এরা হ্যাকিং শব্দটাকে নিয়ে গেছেন আতঙ্কের কাতারে। যে কারণে হ্যাকিং শুনলেই মনে আসে দুর্ধর্ষ একদল প্রযুক্তি চোরের ছবি। যদিও হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে টেকনোলজি উন্নততর করার কাজও করা হয়ে থাকে। এ হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারদের বাদ দিলে বেরিয়ে আসবে গ্রেট হ্যাট ও ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকাররা। এদের অনেকেই অবৈধভাবে হ্যাকিংয়ের দায়ে ধরা পড়েন পুলিশের কাছে। তারাই দুর্ধর্ষ হ্যাকার—

কেভিন লি পোলসেন : আশির দশকে কুখ্যাত হ্যাকার ছিলেন মার্কিন সাংবাদিক কেভিন লি পোলসেন। তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন টেলিফোন লাইন হ্যাক করার জন্য। পোলসেন ১৯৯১ সালে ধরা পড়েন। সাইবার ক্রাইম, কম্পিউটার সংক্রান্ত অপরাধ, স্মাগলিং বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হন পোলসেন। চার বছর জেল খাটেন তিনি।

রবার্ট তপ্পন মরিস : ১৯৮৮, ২ নভেম্বর রবার্ট মরিস তৈরি করেন কম্পিউটার ওরম। এটিই প্রথম ভাইরাস, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে বিভিন্ন মূল্যবান তথ্যকে নষ্ট করত। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি নামে এক বেসরকারি রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশ করেন মরিস ভাইরাস। তার এ ওরম দুর্বল পাসওয়ার্ড নষ্ট করে দিতে সক্ষম হয়।

১৯৮৯ সালে কম্পিউটার ফ্রড ও অ্যাবিউস অ্যাক্টে অভিযুক্ত হন।

মাইকেল কেলস : মাইকেল কেলস হলেন ইন্টারনেট দুনিয়ার ‘মাফিয়া বয়’। কিউবেকের এই মাফিয়া বয় মাত্র হাইস্কুল পাস করে ইয়াহু, আমাজন, ডেল, ইবে. সিএনএনের মতো বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিকে নাচিয়ে ছাড়েন। ২০০০ সালে মাইকেল কেলস তৈরি করেন, যা বড় কমার্শিয়াল ওয়েবসাইট হ্যাক করার ক্ষমতা রাখে। তিনি ১ ঘণ্টার জন্য সেই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহুকে হ্যাক করেন। ২০০১ সালে মনট্রিয়েল ইয়থ কোর্ট আট মাসের জন্য মাইকেলকে নজরদারিতে রাখার নির্দেশ দেন ও ইন্টারনেট ব্যবহার না করার নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

ডেভিড স্মিথ : ম্যালিসা ম্যাক্রো ভাইরাস তৈরি করে বেশ নাম করেছিলেন। তার তৈরি ভাইরাসের বিশেষত্ব হলো আউটলুকের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মূল্যবান ফাইলগুলোকে নষ্ট করা। মাইক্রোসফট, ইনটেল, লুসেন্ট   কোম্পানিরা ই-মেইল গেটওয়েতে ম্যালিসা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয় তারা। উত্তর আমেরিকায় বড় বড় কোম্পানির কম্পিউটারে ম্যালিসা ভাইরাস আক্রমণে ৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয় তাদের।

অ্যান্ড্রিয়ান লামো : ছদ্মনাম ‘দ্য হোমলেস হ্যাকার’। ২০০৩ সালে অ্যাড্রিয়ান লামো খবরের শিরোনামে উঠে আসে মাইক্রোসফট, ইয়াহু, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, এমসিআই ওয়ার্ল্ডকমের হাইপ্রোফাইল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ভাঙার কারণে। টাইমস অভিযোগ দায়ের করলে লামোর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

জর্জ হটজ : জর্জ হটজ হলেন প্রথম ব্যক্তি আইফোন অপারেটিং সিস্টেম ব্রেক করেছিলেন। ২০০৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে আইফোন অপারেটিং সিস্টেম ভেঙে চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বকে। এ ছাড়াও তিনি ডেভেলপ করেন আইফোন অপারেটিং সিস্টেম নষ্ট করার জন্য জেলব্রেক টুল ও বুট্রুম। সোনি প্লে স্টেশন থ্রি ব্রেক করার পর সনির সঙ্গে তুমুল আইনি লড়াই চলে। প্লে স্টেশন নেটওয়ার্ক হ্যাক করে ৭৭ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি করে জর্জ হটজের হ্যাকার গ্রুপ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর