শনিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশে দেশে বিখ্যাত যত দেয়াল

তানিয়া তুষ্টি

দেশে দেশে বিখ্যাত যত দেয়াল

বিশ্বজুড়ে আলোচনায় যে দেয়াল

প্রতি বছর উন্নত কাজ বা ভালো জীবনের খোঁজে নতুন করে হাজার হাজার মেক্সিকান অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। এটি সবসময়ই মার্কিন রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আর তাই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেই ২ হাজার মাইল লম্বা মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার বিষয়টি গুরুত্ব দেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ঘোষণা মেক্সিকোয় কড়া সমালোচনার মুখোমুখি হয়। মেক্সিকানরা এটিকে বর্ণবৈষম্যবাদ বলে আখ্যা দেয়। এটি নিয়ে দফায় দফায় বাদানুবাদ চলে দুদেশের মধ্যে। সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে মেক্সিকো সীমান্তে অবশ্যই আমাদের দেয়াল নির্মাণ করতে হবে। দেয়াল নির্মাণ ছাড়া অন্য কোনো উপায় আমাদের নেই। ট্রাম্প জানান, এটি আমাদের দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প এতটাই উদ্বিগ্ন যে, তিনি বলেই বসেছেন, দেয়াল নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ না পেলে, দরকার হলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হবে। এর আগে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, যতদিন পর্যন্ত মেক্সিকো সীমান্তে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে না ততদিন এ অচলাবস্থা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজন হলে মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা মাসের পর মাস এমনকি বছর ধরে চলবে। এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাটরা একটি বিল পাস করে। এতে সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণের জন্য ১৩০ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণ করতে ৫৬০ কোটি ডলার দাবি করেছিলেন। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেক্সিকো বরাবর দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনায় এর দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয় ১৩০০ কিলোমিটার। তার আগে পরিকল্পনা ছিল ৩১০০ কিমি.। হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন কেলি জানান, দেয়ালের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০০ কোটি ডলার। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে মনে করেছিলেন, এই দেয়াল নির্মাণে ১০০০ থেকে ১২০০ কোটি ডলার ব্যয় হবে। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছিলেন, এই ব্যয়ের পুরোটা আদায় করা হবে মেক্সিকোর কাছ থেকে। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। মার্কিন প্রশাসন যত পরিকল্পনায় করুক না কেন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়োতো সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই দেয়াল নির্মাণে কোনো অর্থ দেয়া হবে না। মেক্সিকোর সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদরও একই পথে হাঁটছেন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়ালের বিপক্ষে তার শক্ত অবস্থান। জন কেলি বলছেন, তারা এখন ভিন্ন উপায়ে অর্থ জোগানোর কথা চিন্তাভাবনা করছেন। যেমন, ভিসা ফি বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং নাফটা বাণিজ্য চুক্তিতে নতুনভাবে দরকষাকষির মাধ্যমে।

 

চীনের মহাপ্রাচীর

পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যের মধ্যে চীনের মহাপ্রাচীর একটি। দীর্ঘতম এই প্রাচীর দৈর্ঘ্যে প্রায় ২ হাজার ৬৯৫ কিলোমিটার। উচ্চতা ৪.৫৭ থেকে ৯.২ মিটার বা প্রায় ১৫ থেকে ৩০ ফুট। প্রাচীরটি চওড়ায় প্রায় ৯.৭৫ মিটার বা ৩২ ফুট। কথিত আছে, চীনের মহাপ্রাচীরের ওপর দিয়ে একসঙ্গে ১২ জোড়া ঘোড়া একসঙ্গে চলতে পারত। প্রাচীরটি নির্মাণের ধারণা বহু পুরনো। নিজের সাম্রাজ্য ও প্রজাদের বহিঃশত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে খ্রিস্টপূর্ব ২২০-২০৬ সালে সম্রাট কিন শি হুয়াং অল্প কিছু জায়গাজুড়ে চীনের উত্তর সীমান্তে এর নির্মাণ শুরু করেন। এরপর বাকি ছয়টি চীনা উপসাম্রাজ্য তাদের নিজেদের সীমানা সম্প্রসারণ করে। কিন্তু কিছুতেই যাযাবর মঙ্গোলিয়ানদের আক্রমণ থেকে চীনকে বাঁচানো যাচ্ছিল না। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সম্রাটের অনুমতি সাপেক্ষে আরও মজবুত প্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান ছি চি গুয়াং। প্রাচীরটি নির্মাণের জন্য ১৫৬৯ সালে তিনি ২০ হাজার মানুষ নিয়ে, ৫ বছর সময় বরাদ্দ করেন। ইট, পাথর আর পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি এই প্রাচীরে কয়েকশ গজ পর পর একটি করে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রাখা হয়। বর্তমানে প্রাচীরের ঐতিহ্য রক্ষার ব্যবস্থা হলেও প্রাচীরের অনেক জায়গা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। নাশকতার জন্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পর্যটন এলাকার কাছে মেরামতকৃত অংশ হয়ে উঠেছে পণ্য বিক্রয়স্থল।

 

যুদ্ধ স্মারক ভেটেরান্স মেমোরিয়াল

ওয়াশিংটনের জাতীয় যুদ্ধ স্মারক হিসেবে পরিচিত ভিয়েতনাম  ভেটেরান্স মেমোরিয়াল ওয়ালটি। এটিকে শহরের সবচেয়ে বেশি মর্মস্পর্শী স্মৃতি স্মারক হিসেবে জানা যায়। ভিয়েতনাম ভেটেরান্স মেমোরিয়াল ওয়ালটি তৈরি করার পেছনে ছিল একটি স্পর্শকাতর বিষয়। আর তা হলো যারা ভিয়েতনাম যুদ্ধে মারা গেছেন বা হারিয়ে গেছেন তাদের স্মরণ করা। ২৪৬ ফুট দীর্ঘ ও ১০ ফুট উচ্চতার এই স্মারকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। তবে এর আরও একটি লক্ষ্য ছিল, সর্বাপেক্ষা উৎসর্গীকৃত সৈন্যদের স্মরণে রাজনৈতিক বিতর্ক অতিক্রম করা। দেয়ালটির কালো গ্রানাইট দিয়ে তৈরি, এতে মিরোর ইফেক্ট প্রতিফলিত হয়। দেয়ালটিতে লিখে রাখা হয়েছে ৫৮,২৫৬ জন সৈনিকের নাম।

 

পর্যটক আকর্ষণে সেরা হাদ্রিয়ান্স

রোমানদের দ্বারা নির্মিত হয় পৃথিবী বিখ্যাত ‘হাদ্রিয়ান্স ওয়াল’। ওয়ালটি নির্মাণের প্রধান কারণ ছিল স্কটল্যান্ডের উপজাতিদের কাছ থেকে নিজেদের কলোনি ব্রিটানিয়াকে রক্ষা করা। ১১৭ কিলোমিটার বা ৭৩ মাইল দীর্ঘ ওয়ালটি ইংল্যান্ডের উত্তরজুড়ে প্রসারিত হয়ে আইরিশ সাগর থেকে উত্তর সাগরের দিকে এগিয়ে গেছে। রোমান সম্রাট হাদ্রিয়েনের একটি সফরের পর ১২২ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় দেয়ালটির নির্মাণকাজ। কাজটি সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন হতে সময় লাগে ছয় বছর। প্রায় ৯ হাজার সৈন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে দেয়ালটি নির্মাণ করে। বিখ্যাত এই প্রাচীর আজও অক্ষুণ্নভাবে দৃশ্যমান। ইংল্যান্ডের পর্যটন আকর্ষণে দেয়ালটির জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। ওয়ালেসেন্ড থেকে বোনেস-অন-সোলওয়ে পর্যন্ত প্রাচীরের পাশ দিয়ে একটি জাতীয় পথ রয়েছে।

 

বিপুল অভিবাসন ঠেকাতে বার্লিন ওয়াল

১৯৬১ সালের ১৩ আগস্ট থেকে ৯ নভেম্বর ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৮ বছর পশ্চিম বার্লিন থেকে পূর্ব বার্লিন এবং পূর্ব জার্মানির কিছু অংশকে পৃথক করে রেখেছিল বার্লিন ওয়াল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ সময়কালে প্রাচীর টপকে পশ্চিম বার্লিন যাওয়ার সময় ১২৫ জন প্রাণ হারান। কয়েক সপ্তাহের জনঅসন্তোষের পর ১৯৮৯ সালে পূর্ব জার্মান সরকার পশ্চিম বার্লিনে যাওয়ার অনুমতি দেয়। পশ্চিম প্রান্তে উৎসবমুখর পরিবেশে হাজার হাজার মানুষকে স্বাগত জানানো হয়। ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবরে  আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো প্রাচীর সরিয়ে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর জার্মানি কার্যত চারটি অংশে বিভক্ত হয়। সামাজিক বাজার ব্যবস্থায় পশ্চিম জার্মানি পরিণত হয় একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে, অর্জন করে বিপুল প্রবৃদ্ধি। পশ্চিম জার্মানির অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধায় আকৃষ্ট হয়ে পূর্ব জার্মান নাগরিক পশ্চিমাংশে চলে যেতে শুরু করে। বিপুল পরিমাণ অভিবাসন ঠেকাতে পূর্ব জার্মান সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বার্লিনের পশ্চিমাংশ ও পূর্বাংশের মাঝে একটি দেয়াল তুলে দেওয়া হবে। এর ফলে সিদ্ধান্ত হয়, পশ্চিমাংশের নাগরিকরা বিশেষ পাস সংগ্রহ করে পূর্বাংশে আসতে পারবেন।

 

ইউরোপের দ্বিতীয় দীর্ঘ ওয়াল অব স্টোন

ইউরোপের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেয়াল ‘ওয়াল অব স্টোন’। প্রাচীরটি দক্ষিণ ক্রোয়েশিয়ার পেলজেসাক উপদ্বীপে অবস্থিত। উপদ্বীপটি সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থান মূল ভূমিতে যুক্ত হওয়ার কিছুটা আগেই এই প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। টাউন অব স্টোন থেকে শুরু করে মালি স্টোন পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য। এই প্রাচীরটি ৫.৫ কিলোমিটার বা ৩.৫ মাইল লম্বা। দেয়ালটি দুটি ছোট সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত। এই প্রাচীর তৈরির কাজ পঞ্চদশ শতাব্দীতে সম্পন্ন হয়। এতে ৪০টি টাওয়ার এবং মোট ৫টি দুর্গ রয়েছে। ৪০টি টাওয়ার এবং ৫টি দুর্গসহ প্রাচীরটির কাজ সম্পন্ন হয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে। প্রাচীরটিকে ডুব্রোভনিক শহরের প্রতিরক্ষার জন্য দ্বিতীয় ব্যবস্থা হিসেবে বোঝানো হয়েছিল। তখনকার দিনে দেশটির জন্য মূল্যবান লবণ প্যানগুলো সুরক্ষিত করতে এটি নির্মাণ করা হয়। এই প্যানগুলো ডুব্রোভনিকের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতো। দেশটিতে প্রজাতন্ত্রের পতনের পর দেয়ালটি কিছু কিছু জায়গায় ধ্বংসের সম্মখীন হয়। কিন্তু ১৮৮৪ সালে ক্রোয়েশিয়ার প্রতিবেশী অস্ট্রিয়ান কর্তৃপক্ষ প্রাচীরের কাছ থেকে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিয়ে ওয়াল অব স্টোনকে সুরক্ষা পেতে সহায়তা করে।

 

ওয়েস্টার্ন ওয়াল অব জেরুজালেম

তিনটি ধর্মের পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত জেরুজালেম। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা, ‘ওল্ড সিটি’খ্যাত শহরটিতে বিভক্ত মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান ও আর্মেনীয়দের বসতি। ১২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরের রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস। পৃথিবীর অন্যতম পুরনো এই শহরকে নিয়ে টানাপড়েনও হাজার বছরের। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের কেন্দ্র এই এলাকায় অবস্থিত ইসলামের তৃতীয় পবিত্র মসজিদ আল-আকসা, বা বায়তুল মুকাদ্দাস-সহ মুসলিমদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। একই জায়গায় অবস্থিত ইহুদিদের পবিত্র ভূমিখ্যাত ‘টেম্পল মাউন্ট’ বা ‘ঈশ্বরের ঘর’। এটি মুসলিমদের কাছে পবিত্র ‘কুব্বাত আস-সাখরা’ হিসেবে পরিচিত। টেম্পল মাউন্টকে ঘিরে থাকা ‘ওয়েস্টার্ন ওয়াল’ ইহুদিদের কাছে ‘পৃথিবীর ভিত্তিপ্রস্তর’ হিসেবে স্বীকৃত। এখানে নিয়মিত প্রার্থনায় অংশ নেন লাখো ইহুদি। যিশু খ্রিস্টের স্মৃতিবিজড়িত গির্জার কারণে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছেও পবিত্রতার দিক থেকে সমান গুরুত্বপূর্ণ জেরুজালেম। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস, এখানেই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল যিশুকে।

 

গ্রেট জিম্বাবুয়ে

জিম্বাবুয়ের দৈন্যদশাপূর্ণ একটি শহর বর্তমানের গ্রেট জিম্বাবুয়ে।  এক সময় এটিই ছিল জিম্বাবুয়ের ঐশ্বর্যপূর্ণ রাজধানী। আর এই রাজধানীকে রক্ষা করার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল গ্রেট জিম্বাবুয়ে দেয়ালটি। গ্রেট জিম্বাবুয়ে প্রাচীর, আধুনিক জিম্বাবুয়ের একটি বৃহৎ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে। একাদশ শতকের শুরুর দিকে এই প্রাচীরটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রাচীরটির নির্মাণকাজ একাধারে ৩০০ বছর অব্যাহত থাকে। অনুমান করা হয়, এই প্রাচীরটির ওপর অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ বাস করত। তাদের সংখ্যাও নেহায়েতই কম ছিল না; প্রায় ১৮ হাজারের মতোই। এই দেয়ালটির সবচেয়ে দুর্লভ ভবন হিসেবে সাধারণত ‘গ্রেট এনকোজার’-এর কথা উল্লেখ করা যায়। এটি ১১ মিটার (৩৬ ফুট) উচ্চতার একটি প্রাচীর, যা প্রায় ২৫০ মিটার (৮২০ ফুট) প্রসারিত। এটি সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে অবস্থিত বৃহত্তম প্রাচীন কাঠামো।

 

৯০ ফুট উঁচু দুই স্তরের ব্যাবিলন প্রাচীর

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ নগরী ছিল ব্যাবিলন। ধারণা করা হয়, ১৭৭০-১৬৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ এবং ৬১২-৩২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সময়টিতে ব্যাবিলনই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর। ২ লাখের বেশি জনসংখ্যার প্রথম নগরী বলেও মনে করা হয় ব্যাবিলনকে। স্বভাবতই ঐশ্বর্য আর জৌলুসের অভাব ছিল না সে শহরে। তাই প্রয়োজন পড়ে সুরক্ষার। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের দিকে ব্যাবিলন নগরী সুরক্ষিত ছিল বড় আকারের ব্যাবিলন প্রাচীরের আড়ালে। পুরো নগরী বেষ্টন করে রাখা ২ স্তরের এই প্রাচীর তৈরি করা হয় যাতে এর একটি স্তরের পতন ঘটলেও অপর স্তর দিয়ে শত্রু ঠেকানো যায়। এ দুই দেয়ালের মাঝে ছিল পরিখা, যা পাড়ি দিয়ে শহরে প্রবেশ করা শত্রুপক্ষের জন্য রীতিমতো অসম্ভব করে রেখেছিল। এছাড়া ওয়াচ টাওয়ারগুলোতে সার্বণিক সশস্ত্র পাহারার ব্যবস্থা তো ছিলই। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস এক ব্যাখ্যায় লেখেন, এ দেয়ালগুলো ছিল ৩০০ ফুট উঁচু, ৮০ ফুট চওড়া ও ৫৫ মাইলজুড়ে বিস্তৃত। অবশ্য বর্তমানকালের ঐতিহাসিকদের মতে, দেয়ালগুলো ছিল ৯০ ফুট উঁচু ও ১০ মাইল লম্বা। এছাড়া ইউফ্রেতিস নদী শহরটির মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ছিল।

 

প্রেমের শহরে টিকে আছে ওয়াল অব ট্রয়

উত্তর-পশ্চিম তুরস্কের একটি ঐতিহাসিক শহর ট্রয়। বিখ্যাত এই শহরটি উঠে এসেছে হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াডের মাধ্যমে। ইলিয়াডের ব্যাখ্যা মতে, এটিই সেই স্থান যেখানে প্রেমের কারণে ট্রয় যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। ধ্বংস হয়েছিল শহরের প্রায় সবকিছুই। কিন্তু ট্রয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষের মাঝে আজও টিকে আছে ওয়াল অব ট্রয়। হাজারও ধ্বংসাবশেষের ভেতর এখনও দৃশ্যমান দেয়ালটি। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০-২৬০০ পর্যন্ত অর্থাৎ ব্রোঞ্জ যুগে এটি নির্মিত হয়। ৫ মিটার পুরু দেয়ালটি কোথাও কোথাও ৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু। শহরের প্রধান প্রতিরক্ষার কাজে এই দেয়াল তৈরি করা হয় বলে জানা যায়। আজ সেই ঐতিহাসিক ট্রয় দেখতে অসংখ্য পর্যটক আসেন। এখানে ভূত আর ধ্বংসাবশেষে আশ্চর্য হওয়ার জন্য এলেও তাদের অনেকেই আসেন শুধু প্রাচীন এই দেয়াল ‘ওয়াল অব ট্রয়’কে প্রধান আকর্ষণের জায়গা হিসেবে রেখে। বর্তমানে এটি একটি বড় ও বিখ্যাত পর্যটন বাণিজ্যিক সাইট। এ স্থানের একটি অংশে একটি বড় কাঠের ঘোড়া শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে। সঙ্গে আরও আছে খেলার মাঠ। শিশুরা সেখানে খেলা করে। পাশে কিছু কিছু দোকানও আছে। পরে অবশ্য একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর