শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইলন মাস্ক

প্রযুক্তিবিশ্বের বিস্ময়

প্রযুক্তিবিশ্বের বিস্ময়

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। তার প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের তৈরি ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে চড়ে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে পৌঁছায়। এ সময় বাঙালির কাছে ইলন মাস্ক নামটি আবারও নতুনভাবে পরিচিতি পায়। একটি উক্তি তিনি সব সময় মেনে চলেন, ‘অর্থ মানুষের কাছে যেমন গুরুত্ব বহন করে, আমার কাছে অর্থের গুরুত্ব তেমন নয়। আমার অর্জিত সব অর্থ ব্যয় করা হয় পরবর্তী আবিষ্কারের পেছনে, যাতে করে মানুষের জীবন আরও সহজ হয়।’ প্রযুক্তি বিশ্বের এই আইকনের জীবনের খুঁটিনাটি নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- তানিয়া তুষ্টি

 

ব্যবসায় যাত্রা

ইলন মাস্ক ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন ১৯৯৫ সালে। তিনি এবং তার ভাই মিলে জিপ-২ নামের একটি ওয়েব সফটওয়্যার কোম্পানি দাঁড় করান। কোম্পানিতে ৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন ইলন। প্রথম ব্যবসাতেই তিনি সফলতার স্বাদ পান। এরপর ১৯৯৯ সালে এক্স.কম নামে একটি ইন্টারনেটভিত্তিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম চালু করেন যাকে আমরা বর্তমানে পেপ্যাল নামে চিনি। এটি বর্তমানে ইন্টারনেটভিত্তিক টাকা লেনদেনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। ২০০২ সালে পেপাল ই-বে কিনে নেয় প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। স্পেসএক্স এবং তেসলা, মহাকাশপথ এবং সড়কপথ দুটোর ভবিষ্যৎই বদলে দেওয়া দুটি কোম্পানি যা মাস্কের হাতেই সৃষ্টি। গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানো, স্বল্পমূল্যে মহাকাশ যাত্রা, মঙ্গলগ্রহে মানুষের বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি করা ইত্যাদি ছিল তার স্বপ্ন। বাস্তবতা হলো, নিজের সব স্বপ্নই একে একে বাস্তব করে চলেছেন তিনি।

 

স্পেস এক্স

স্পেস এক্সের পূর্ণ রূপ হচ্ছে স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস করপোরেশন। এটি ক্যালিফোর্নিয়ার হ্যাথ্রোনে অবস্থিত একটি এরোস্পেস নির্মাতা এবং স্পেস ট্রান্সপোর্টেশন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। মাত্র ৬০ জন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে প্রায় ৭০০০ কর্মী কাজ করছেন সেখানে। পৃথিবীতে একমাত্র ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স যারা সবচেয়ে কম খরচে মহাকাশে রকেট এবং স্পেসক্রাফট পাঠিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা নিয়মিত মহাকাশে বাণিজ্যিক কাজে রকেট পাঠিয়ে আসছে। ২০০২ সালের আগে মহাকাশযানে করে স্যাটেলাইট পাঠানোর ক্ষেত্রে যাবতীয় কার্যকলাপ পরিচালনা করত নিজ নিজ দেশের সরকার। তবে ২০০২ সালের মে মাসে স্পেস এক্স প্রাইভেট কোম্পানিটি চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে এই রীতি বদলে যায়। তারা তুলনামূলক কম খরচে মহাকাশে পাঠানো সম্ভব এমন রকেট তৈরি করছে এবং সেই রকেটের এক্সপ্লোরেশন থেকে রিকোভার পর্যন্ত যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। স্পেস এক্সের তৈরি রকেটগুলো প্রচলিত রকেটের চেয়ে কার্যকারিতার দিক দিয়ে এক নম্বরে অবস্থান করছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাকাশ সংস্থা এবং আমেরিকার সরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার স্পেস এক্সের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। ফ্যালকন ১ ও ৯ স্পেস এক্সের বিখ্যাত রকেট।

গিগা ফ্যাক্টরি

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ফ্যাক্টরি গিগা ফ্যাক্টরি নির্মাণ করেছেন ইলন মাস্ক। তার স্বপ্ন ছিল, গোটা বিশ্বকে ব্যাটারি এনার্জির আওতায় নিয়ে আসবেন। তার এই স্বপ্নকে পূরণ করতে হলে প্রচুর পরিমাণে ব্যাটারির দরকার। অথচ সেই পরিমাণ ব্যাটারি পুরো বিশ্ব বছরে উৎপাদন করতে পারবে না। তাই নিজে ফ্যাক্টরি নির্মাণ শুরু করে দিলেন। সেই ফ্যাক্টরিতে প্রতি বছর এমন পরিমাণ ব্যাটারি উৎপাদন সম্ভব যা পুরো বিশ্বের সব ফ্যাক্টরির ব্যাটারি উৎপাদনকে হার মানাবে। থিউরি অনুযায়ী পৃথিবীতে এই রকম আরও ৯৯টি ফ্যাক্টরি থাকলে একেবারেই ব্যাটারি এনার্জির ওপর নির্ভরশীল হতে পারবে। ইলন মাস্ক মনে করেন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানুষের জীবননাশের আশঙ্কার প্রধান কারণ। ভবিষ্যতে যখন তারা নিজে নিজেই চিন্তাভাবনা করতে পারবে তখন সেটা মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তার মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা উদ্ভাবন করা আর জাহান্নাম থেকে শয়তানকে ডেকে আনা একই কথা। তবে স্বল্প খরচে ইন্টারনেট ব্যবহারের পক্ষে। ইলন মাস্ক বিশ্বের প্রায় সব দেশের সরকারের কাছে পৃথিবীর ওপর ৪ হাজার ৪২৫টি স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপন করার অনুমতি চেয়েছেন। এতে তিনি পুরো বিশ্বের সবার জন্য ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবস্থার আয়োজন করতে পারবেন!

 

দ্রুতগতির হাইপার-লুপ

হাইপার-লুপ নামের এক ধরনের যোগাযোগ প্রযুক্তির কথা ভাবছেন মাস্ক। প্রযুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে তা হবে অত্যন্ত দ্রুতগতির। তিনি আশা করছেন ঘণ্টায় গতি থাকবে ৬০০ মাইল।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, হাইপার-লুপের মাধ্যমে আমেরিকার নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস যেতে সময় প্রয়োজন হবে মাত্র ৪৫ মিনিট। প্রযুক্তিটি একটি টিউব কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। টিউবটি একটি দেশের বিভিন্ন শহরে কিংবা কয়েকটি ভিন্ন দেশে যুক্ত থাকবে। টিউবের ভেতর থাকবে ক্যাপসুল আকৃতির বিশেষ যানবাহন। এ ধরনের ক্যাপসুলে চড়ে মানুষের পক্ষে ঘণ্টায় ৬০০ মাইল বেগে ভ্রমণ করা সম্ভব হবে। উন্নতমানের এই টিউবটি হবে সম্পূর্ণ বায়ুমুক্ত, কাজেই এতে ঘর্ষণ থাকবে না বললেই চলে।

 

মঙ্গল ভাবনায় মগ্ন

মঙ্গল গ্রহ নিয়ে ইলন মাস্কের ভাবনার অন্ত নেই। মঙ্গল গ্রহকে ঘিরে তার একেক সময় একেক কল্পনা। তার রকেট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘স্পেসএক্স’ থেকে রকেট বানিয়ে তাতে করে মঙ্গলে ইঁদুর পাঠানোর চিন্তা করেন। স্বপ্ন ছিল, মঙ্গলে ইঁদুরের বংশ বৃদ্ধি করা। এই চিন্তা থেকেই মূলত প্রথমে রকেট বানাতে শুরু করেন। কিন্তু ব্যয় বেশি হওয়ায় সে চিন্তা থেকে সরে আসেন। কিন্তু রকেট বানানো থেকে তিনি সরে আসেননি। এমনকি মঙ্গলে মানুষের বসতি গড়নের পরিকল্পনা থেকেও মাস্ক সরে আসেননি। তিনি তার স্পেসএক্স প্রজেক্টের মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহে মানুষ বসবাসের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি মঙ্গলগ্রহে মৃত্যুবরণ করতে চান। পৃথিবীতে মৃত্যুবরণের ইচ্ছা মোটেই নেই। তার স্পেসএক্স প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য হলো এক প্ল্যানেট হতে অন্য প্ল্যানেটের যাতায়াতের খরচ কে এক হাজার মিলিয়ন ডলারের মধ্যে নিয়ে আসা। বর্তমানে এক প্ল্যানেট হতে অন্য প্ল্যানেটের যাতায়াতের খরচ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। তিনি ২০২৪ সালের মধ্যে মঙ্গলগ্রহে এক মিলিয়ন মানুষ পাঠাতে চান। তিনি জোরালোভাবে এলিয়েনে বিশ্বাস করেন। তার ধারণা পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও হয়তো জীবিত প্রাণী থাকতে পারে।

 

সহজে টাকা পাঠায় পেপ্যাল

বিশ্বব্যাপী টাকা লেনদেনের সবচেয়ে নিখুঁত উপায়গুলোর একটি ‘পেপ্যাল’। এর কথা আমরা প্রায় সবাই জানলেও হয়তো অনেকেই জানি না পেপ্যাল-এর প্রতিষ্ঠাতা কে। ক্যান হুয়ারি, ম্যাক্স লেভচিন, লিউক নসেক, পিটার থিয়েল এবং ইউ প্যানকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৯৮ সালে ‘পেপ্যাল’ প্রতিষ্ঠা করেন ইলন মাস্ক। পেপ্যাল নিয়ে তিনি বলেন, আমরা যখন কিছু তরুণ পেপ্যাল প্রতিষ্ঠা করি তখন মানুষ আমাদের এই সেবাকে মেনে নিতে পারেনি। পরে আমরা যখন তাদের বিষয়টা বুঝিয়ে বলি, তখন ধীরে ধীরে মানুষ এই সেবা গ্রহণ করতে থাকে। আজ যদি আপনারা পেপ্যালের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন, প্রতিষ্ঠানটি কত সুন্দর সেবা দিয়ে চলেছে। ইলন মাস্ক প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্বপ্নের কথা বলে চলেন। তিনি যে শুধু স্বপ্নের কথা বলেন তা নয়, তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়নও করে দেখিয়েছেন।

 

পিএইচডিতে অনীহা

নিজের স্বপ্নের প্রোজেক্টে কাজ করার জন্য পিএইচডি কোর্সকে বাতিল করে দেন। ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসায় নেমে পড়েন। মূলধন হিসেবে বাবার কাছ থেকে ২৮ হাজার মার্কিন ডলার ধার নেন। এই পূঁজি কাজে লাগিয়ে মাত্র কয়েক বছর পর প্রজেক্টটিকে প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের প্রতি তার এমন অনীহা থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কিন্তু ভালোই ভালোই পার করেছেন। ১৯৯৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সের ওপর পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ছোটবেলায় আফ্রিকার বেসরকারি স্কুলে পড়েছেন। ১৮ বছর বয়সে কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। তারপর ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়াতে চলে আসেন। ১৯৯৭ সালে এখান থেকে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন এবং ওয়ার্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ইকোনমিকসেও ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন।

 

আজকের ইলন হয়ে ওঠার গল্প

ইলন রিভ মাস্ক। অনেক আগে থেকেই প্রযুক্তি দুনিয়ায় নামটি প্রভাবশালী ভূমিকায় আছে। বাঙালির কাছে বিশেষভাবে পরিচিতি বেড়েছে ২০১৮ সালের মে মাসে তার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের তৈরি ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে চেপে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে গেলে। ইলন মাস্ক ১৯৭১ সালে ২৮ জুন সাউথ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় জš§গ্রহণ করেন। তার মা মায়া মাস্ক একজন কানাডিয়ান মডেল ও পুষ্টিবিদ, বাবা ইরল মাস্ক সাউথ আফ্রিকান ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ইলনের ৯ বছর বয়সেই বাবা-মায়ের মাঝে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তবে জšে§র পর ১৭ বছর পর্যন্ত তিনি আফ্রিকাতে ছিলেন। জš§গতভাবে ইলন আফ্রিকান হলেও পরবর্তীতে কানাডা ও আমেরিকান নাগরিকত্বও ধারণ করেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকায় বসবাস করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি নিজেই প্রোগ্রামিং শিখে ‘ব্লাস্টার’ নামে একটি ভিডিও গেমস তৈরি করেন। একটি ম্যাগাজিনের কাছে সেই গেম বিক্রি করে আয় করেন ৫০০ ডলার। তার জানার আগ্রহ ছিল অপরিসীম। দিনে ১০ ঘণ্টা সময় কাটাতেন পছন্দের বই পড়ে। বেশির ভাগ বই ছিল পদার্থবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি বিষয়ক। তিনি বই থেকে অর্জিত জ্ঞান এবং নিজস্ব চিন্তা-চেতনা বাস্তবে প্রয়োগ করতে চেষ্টা করতেন। ১২ বছর বয়সেই ভিডিও গেম নির্মাণ করা সেই বিস্ময় বালক হলেন আজকের বিখ্যাত ইলন মাস্ক। তিনি একাধারে একজন উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক এবং ব্যবসায়ী। ইলন মাস্ক মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেসএক্সের সিইও এবং সিটিও, ইলেকট্রনিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তেসলা মোটরসের সিইও এবং পণ্য প্রকৌশলী, ওপেনঅলের কো-চেয়ারম্যান এবং নিউরোলিংকের ফাউন্ডার এবং সিইও। এ ছাড়াও সোলারসিটির কো-ফাউন্ডার এবং সাবেক চেয়ারম্যান, জিপ২-এর কো-ফাউন্ডার এবং পে-পালের সাবেক ফাউন্ডার তিনি। ‘মানব কল্যাণে বিজ্ঞান’ মূলনীতি নিয়ে তিনি কাজ করে চলেছেন। সোলার সিটি, স্পেসএক্স আর টেসলা মোটর নিয়ে তার বক্তব্য, ‘আমি যেসব জিনিস নিয়ে কাজ করি তার পেছনে রয়েছে এক স্বপ্ন। আমার স্বপ্ন এক পরিবর্তিত নতুন পৃথিবীর যা হবে আরও মানবিক।’ তার লক্ষ্য বৈশ্বিক উষ্ণতা কমিয়ে যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদন ও ব্যবহার করা। তিনি কল্পনা করতে ভালোবাসেন। ‘মানব জাতির টিকে থাকার ঝুঁকি’ মোকাবিলায় ভিন্ন গ্রহে বসতি স্থাপন নিয়ে ভাবেন। তার প্রথম লক্ষ্য হলো মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি গড়ে তোলা। ইলন মাস্কের এই স্বপ্ন গোটা বিশ্বে ‘মেকিং লাইফ মাল্টিপ্ল্যানেটারি’ নামে পরিচিত।

মিতব্যয়ী

ছাত্রাবস্থায় তিনি দৈনিক মাত্র এক ডলার করে খরচ করতেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও নিজের আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে তিনি এমন মিতব্যয়ী ছিলেন। তার দৈনিক খাদ্য তালিকায় থাকত কম দামি নুডলস। কলেজের ফি এবং হাতখরচ মেটাতে নিজের রুম ও এক বন্ধুর রুমকে নাইট ক্লাব হিসেবে ভাড়া দিতেন। আজকের এই প্রযুক্তিবোদ্ধা ছোট থেকেই ছিলেন সচেতন ও হিসাবী। তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে তার জীবনের প্রথম গেমটি কোড করেন এবং ৫০০ ডলারে বিক্রি করে দেন। দুই ভাই মিলে যখন প্রথম প্রতিষ্ঠান চালু করেন, তখন একটি অ্যাপার্টমেন্ট নেওয়ার বদলে ছোট্ট একটি অফিস ভাড়া নেন। ঘুমাতেন কাউচে এবং স্নান করতেন ওয়াইএমসিএতে। তাদের পুঁজি এতই কম ছিল যে একটি মাত্র কম্পিউটার দিয়েই কাজ চালাতে হতো। ফলে দিনের বেলায় ওয়েবসাইটটি চালু থাকত আর রাতে সেই ওয়েবসাইটের জন্য ইলন কোডিং করতেন। এভাবেই কাজ করেছেন সপ্তাহে সাত দিন। প্রচুর পরিশ্রম করেছেন শুরু থেকেই। তিনি বিশ্বাস করেন, কর্মীরা সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টায় যে কাজ করে, ১০০ ঘণ্টায় তার দ্বিগুণ সম্ভব।

বিয়ে ও পেশা নিয়ে খেলা

ইলন মাস্ক বরাবরই নিজের ভাগ্য নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন। কী দাম্পত্য জীবন, কী পেশাগত জীবন। ২০০০ সালে এক কানাডিয়ান লেখিকা জাস্টিন উইলসনকে বিয়ে করেন। সে যাত্রায় তার দীর্ঘ দাম্পত্য কাটে। ২০০৮ সালে বিচ্ছেদ ঘটে এই দম্পতির। ৮ বছরের দাম্পত্যে মোট ছয়টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। প্রথম সন্তান মারা যাওয়ায় বর্তমানে আছে ৫ সন্তান। এর ২ বছর পর ২০১০ সালে বিয়ে করেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী তালুলাহ রেইলিকে। কিন্তু দুবছর পরেই বিচ্ছেদে যান ইলন। এবার কিছু দিনের জন্য সঙ্গী হন আরেক অভিনেত্রী ক্যামেরন ডিয়াজ। তখন পর্যন্ত ভুলতে পারছেন না তালুলাহ রেইলিকে। তাই ২০১৩ সালে আবারও তারা বিয়ে করেন। তিন বছর সংসার করার পর সম্পর্কটি ভেঙে যায়। এ ব্যাপারে ইলনের মত, তিনি তার কাজ, প্রজেক্টের জন্য তার ব্যক্তিগত জীবনকে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছেন। এরপর সঙ্গী হয় নামকরা অভিনেতা জনি ডেপের ডিভোর্সড স্ত্রী আম্বার হিয়ার্ড। বর্তমানে সংগীত শিল্পী ক্লেয়ার এলিজ বাউচারের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রকাশ্যে এনেছেন ইলন মাস্ক। ব্যক্তিজীবনে তিনি দীর্ঘসময় একাকিত্বের স্বাদ নিতে আগ্রহী নন। একইভাবে পেশাগত জীবনেও একই অর্জনের স্বাদ দীর্ঘ সময় ধরে নিতে অনাগ্রহী। একের পর এক নতুন আবিষ্কারে তাকে ঝুঁকি নিতে দেখা গেছে। ২০০৮ সালে ইলনের কাছে ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। তিনি এই অর্থের সবটুকুই তিনটি ভিন্ন প্রজেক্টে বিনিয়োগ করে দেন। ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন স্পেসএক্স প্রজেক্টে, ৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন তেসলাতে এবং বাকি ১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন সোলার সিটি প্রজেক্টে। অথচ এই সময়েও বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য তাকে ঋণ নিয়ে চলতে হতো। ইলন মাস্ক নিজের আয়েশের কথা চিন্তা না করে বুঝেশুনে ঝুঁকি নিয়েছিলেন বলেই হয়তো আজ সব কিছুতে সফল।

 

মজার তথ্য

ইলনের বিশ্বাস, স্কুল কখনো মানুষকে জ্ঞানী করতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন সাধনা।

আয়রনম্যান টনি স্টার্ক থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন প্রযুক্তিবিশ্বের বিস্ময় ইলন মাস্ক। এমনকি আয়রনম্যান টু ফিল্মটির কিছু অংশ স্পেস এক্সের ভিতরে দৃশ্যায়িত হয়।

নিজের কোম্পানি তেসলা মোটরসে মাস্কের বার্ষিক বেতন ছিল মাত্র এক ডলার!

মাত্র ১২ বছর বয়সেই মাস্ক একটি ভিডিও গেমস তৈরি করে ৫০০ ডলারে বিক্রি করেন।

মহাকাশ যাত্রাকে মাস্ক এতটাই সস্তা করেছেন যে, এর খরচ এখন আগের থেকে ৯০ শতাংশের মতো কমে গেছে।

মাস্কের বাবা-মায়ের ধারণা ছিল, তাদের ছেলে বুঝি বধির! কারণ, দূর থেকে ডাকলে তিনি সাড়া দিতেন না।

ছোটবেলায় ইলন একবার তার স্কুলের ছাত্রদের কাছে মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি বিশ্বাস করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের সবচেয়ে বড় শত্র“।

তিনটি দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে ইলন মাস্কের।

ছোটবেলায় তিনি প্রচণ্ড অন্ধকার ভয় পেতেন। কিন্তু বই পড়ে তিনি আবিষ্কার করলেন, অন্ধকার হচ্ছে ফোটনের অনুপস্থিতি মাত্র।

এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, আমি চাই তরুণরা ‘কল্পনাপ্রবণ’ হোক, তোমরা কল্পনাপ্রবণ হও। আজ থেকে অনেক বছর পেছনে ফিরে গেলে হয়তো দেখা যাবে, তখন কেউ প্লেন উড়ানোর কথা চিন্তা করলে তাকে হয়তো হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু আজ যদি তোমরা আরও বড় কোনো কল্পনা কর, তবে তেমন কিছু হবে না।

বিজনেস ম্যাগনেট ২০১৬ সালে পৃথিবীর সেরা ১০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ৮৩তম ধনী হিসেবে জায়গা পান।

ইলন মাস্কের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্বের একজন মহৎ বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা।

সর্বশেষ খবর