রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিস্ময়কর আবহাওয়া বৈচিত্র্য

সাইফ ইমন

বিস্ময়কর আবহাওয়া বৈচিত্র্য

বিশ্বের এক প্রান্তে তীব্র দাবদাহ এবং অন্য প্রান্তে শীত। বর্তমানে পৃথিবীর দক্ষিণ-পূর্বের দেশ অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর-পশ্চিমের দেশ কানাডায় চলছে একেবারে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা। অস্ট্রেলিয়ায় অসহ্য গরম আর কানাডায় হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত। অন্যদিকে তপ্ত সাহারা মরুভূমির বুকও বরফের চাদরে ঢেকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে আবহাওয়ার এমন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এমন বৈচিত্র্যময় স্থান নিয়ে আজকের রকমারি-

 

ইতিহাসের তীব্র গরম অস্ট্রেলিয়ায়

অস্ট্রেলিয়া এমন এক দেশ যা পুরো একটি মহাদেশ কভার করেছে। প্রতিটি মহাদেশেই একের অধিক দেশ রয়েছে। এর আয়তন ৭৬,৮৬,৮৫০ বর্গকিলোমিটার যা ৪৮ রাজ্যের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে সামান্য ছোট এবং ব্রিটেন থেকে ৩১.৫ গুণ বড়। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাংশে গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়া থাকে। এমনকি শীতে দেশটির উত্তরাংশে আবহাওয়া থাকে বেশ উষ্ণ ও শুষ্ক । দক্ষিণ অংশে হালকা শীত থাকলেও উষ্ণই থাকে। কখনো কখনো বৃষ্টি হয়। বর্তমানে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়া। জানুয়ারিতে দেশটিতে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এবারই প্রথম এখানে গড়ে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, জানুয়ারির ওই পাঁচটি দিন অস্ট্রেলিয়াজুড়ে তাপমাত্রা ছিল দৈনিক ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার একটি বড় অংশে জানুয়ারির বেশির ভাগ দিনই আমরা প্রচণ্ড দাবদাহ পরিস্থিতি দেখেছি। যা গড় সময় এবং তাপমাত্রা হিসেবে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ এলাকায় গড়ে বৃষ্টিপাতও কম ছিল। গরমে অনেক অধিবাসীও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে ভর্তির হার বেড়েছে। উচ্চতাপমাত্রার সঙ্গে উচ্চ আর্দ্রতা মিলিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে গরম স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনি।

 গত ৭ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিডনির পেনরিথে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। সেখানে ৪৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। পরবর্তীতে এই তাপমাত্রা ৪৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যায়। গত ৮০ বছরে সিডনিতে এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

 

ইরানের একেক স্থানে একেক রকম

বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ ইরান। এখানে মরুদ্যান যেমন আছে তেমনি আছে পাহাড়-পর্বতের রাশিমালা। এসব পাহাড় পর্বতের পাদদেশগুলো মনোলোভা রং-বৈচিত্র্যের অধিকারী। এ দেশটির একেক স্থানে একেক রকম আবহাওয়া থাকে। দেশটির উত্তর ও পশ্চিম এলাকায় সুউচ্চ পর্বতমালা অবস্থানের কারণে কাস্পিয়ান সাগর, ভূমধ্যসাগর ও পারস্য উপসাগরের আর্দ্র-হাওয়ার দেশটিতে কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। এর ফলে ইরানের বিভিন্ন এলাকার আবহাওয়া বিভিন্ন ও বিচিত্র ধরনের হয়ে থাকে। দেশটির পর্বতমালার বাইরের পাদদেশের আবহাওয়া আর্দ্র আর ভিতরের পাদদেশ থাকে শুষ্ক। কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ তীরবর্তী ইরান এলাকার আবহাওয়া সমভাবাপন্ন এবং এখানে বিশেষ করে কাস্পিয়ানের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত গিলানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এখানে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। পশ্চিম ইরানের আবহাওয়া ভূ-মধ্যসাগরীয়। উপত্যকাসমূহে গ্রীষ্মকালে যখন প্রচণ্ড গরম থাকে একই সময় সেখানকার পার্বত্য এলাকার আবহাওয়া থাকে ভারসাম্যপূর্ণ। আর শীতকালে ওইসব উপত্যকার আবহাওয়া থাকে ভারসাম্যপূর্ণ এবং পার্বত্য এলাকায় তখন প্রচণ্ড শীত পড়ে। দেশের দক্ষিণ এলাকার সর্বত্র আবহাওয়া আর্দ্র থাকলেও সেখানে প্রচণ্ড গরম বিরাজ করে।

 

আবহাওয়া বৈচিত্র্যে ভারত

মৌসুমি শব্দের অর্থ হলো ঋতু । ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে  মৌসুমি বায়ু প্রবাহেরও পরিবর্তন হয় । স্থলভাগ ও জলভাগের উত্তাপের পার্থক্যের ফলে সমুদ্রবায়ু এবং স্থলবায়ুর মতো মৌসুমি বায়ুরও সৃষ্টি হয়। ভারতের জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতে এই মৌসুমি বায়ুর বিরাট প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । এজন্য ভারতকে  মৌসুমি বায়ুর দেশ বলা হয় । ভারতের সিকিম, কুল্লো, মানালি যখন বরফে ঢাকা একই সময় রাজস্থানে প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। ভারতের বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক উপাদানগুলো দেশের জলবায়ুকে অনেকাংশেই প্রভাবিত করে। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান, উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল ও ভুটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও মালয়েশিয়া অবস্থিত। এ ছাড়া ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)। ভারতে চারটি প্রধান ঋতু দেখা যায়। যেমন শীত (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি), গ্রীষ্ম (মার্চ থেকে মে), বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর), এবং শরৎ ও হেমন্ত (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর)। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে সমুদ্রের ওপর দিয়ে আসা মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। ফলে বর্ষাকালে জুন  থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। ভারতে পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশ, আসাম, মিজোরাম, পূর্ব হিমালয়, তরাই অঞ্চল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। আর এই বৃষ্টির পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে দক্ষিণ থেকে উত্তর ও উত্তর পশ্চিমে। একেবারে পশ্চিমে একই সময় কোনো বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকালে ভারতে বৃষ্টিপাত খুব একটা হয় না, কেবল করমণ্ডল উপকূলে ডিসেম্বর মাসে কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা কিছুটা কমে যায়। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে হিমালয় পর্বতসহ ভারতের বিভিন্ন অংশে চিরহরিৎ, পর্ণমোচী এবং সরলবর্গীয় বৃক্ষের গভীর অরণ্যে সৃষ্টি হয়েছে। এসব মিলিয়ে আবহাওয়া বৈচিত্র্যে ভারত সত্যিই এক বিস্ময়কর দেশ।

 

যুক্তরাষ্ট্রের একপাশে বরফ আরেক পাশে মরুভূমি

পৃথিবীর বড় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র। চার ঋতুর দেশ হিসেবে খ্যাত। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা দেশটির একেক স্থানে একেক ঋতু বৈচিত্র্যের দেখা মেলে। স্থান এবং পরিবেশগত দিক থেকে দেশটির ঋতু পরিবর্তন হয়ে থাকে। শরৎ, শীত, বসন্ত আর গ্রীষ্ম এই বর্ণালি চারটি ঋতু নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ঋতুচক্র। অঞ্চলভেদে দেশটির বিভিন্ন স্থানে ঋতুচক্র পরিবর্তিত হয়ে থাকে। শরৎ দিয়ে দেশটির ঋতু গণনা শুরু হয়। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর, এই তিন মাস থাকে শরৎকাল। এ সময় ধীরে ধীরে সূর্যের তেজ কমতে শুরু করে। ক্যালেন্ডারের হিসাবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিÑ এই তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে শীত ঝেঁকে বসতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ৭০.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে আলাস্কায় ২৬.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-৩.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত নেমে আসে। তাপমাত্রা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতাও বাড়তে শুরু করে। চারপাশ সাদা বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে শূন্যের অনেক নিচে তাপমাত্রা নেমে আসে। শীতের দাপট থেকে বাঁচতে পারে না যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিমের রাজ্যগুলোও। শিকাগো, উইসকনসি, ইলিনয়, আইওয়া, মিনেসোটা, নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, কানসাস, মিজৌরি ও নেব্রাস্কায় হিমপ্রবাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি আসতে না আসতে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, পেনসিলভেনিয়াসহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতেও তাপমাত্রা দ্রুত নেমে আসতে থাকে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা নেমে আসে এবং জনপদ রীতিমতো থমকে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে যখন শীতের কাঁপুনিতে কাবু দেশটির বেশ কয়েকটি রাজ্যে তখন চলে গ্রীষ্মের দাবদাহের খেলা। এর মধ্যে ফ্লোরিডা, হাওয়াই, আরাকানাস, ক্যালিফোর্নিয়া অন্যতম। এসব রাজ্যের তাপমাত্রা বছরজুড়ে গ্রীষ্মকালের মতো থাকে। এখানকার গড় তাপমাত্র ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে (২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ওঠানামা করে। মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস চলে ঋতুরানীর অভিষেক। চারদিক ফুলে ফুলে ভরে উঠতে শুরু করে। সবুজের জোয়ার আসে গাছে গাছে। বাতাসে তখন চলে রোমান্সের গন্ধ। এরপরই আসে জুন, জুলাই আর আগস্ট। জুনের শেষ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে গরম বাড়তে শুরু করে। এ সময় বায়ু দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। জুলাই শুরু হতে না হতেই এটি তাপপ্রবাহে রূপ নেয় এবং আগস্ট মাস পর্যন্ত সূর্য দেখায় তার আসল রূপ। তীব্র গরমে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু অঞ্চলের তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যায়। হাওয়াই এবং আলাস্কা ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে বছরে গড় তাপমাত্রা ৫২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। সমুদ্রাঞ্চলে ঘুরে বেড়ানো এবং সাঁতার কাটার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় জুলাই মাস।

 

মালয়েশিয়ায় এক ঋতু

কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি। কখনো ভেলা বা সাদা চাদরের রূপ নেয় মেঘের দল। সারা বছর এমনই একঘেয়ে আবহাওয়া বিরাজ করে এখানে। অর্থাৎ সারা বছর একই তাপমাত্রা থাকে। এটি পৃথিবীর সুন্দরতম দেশ মালয়েশিয়ার আবহাওয়া। এখানে নেই কোনো শরৎ, হেমন্ত ও শীতের মতো ঋতু। সারা বছর এমনই বৈচিত্র্যহীন আবহাওয়া বিরাজ করে মালয় দেশে। এক কথায়, দেশটি সারা বছর এক ঋতুর ফাঁদে আবদ্ধ। হালকা শীত অনুভূত হয় শীতকালহীন কেবল জানুয়ারি মাসজুড়ে। ঠিক হেমন্তের শিশির ভেজা রাতের মতো। তবে, বৃষ্টি কিন্তু সঙ্গ ছাড়ে না। আর ভোরের সোনালি সূর্যোদয়ের পর পরই পাল্টে যায় আবহাওয়া প্রেক্ষাপট। কিছুটা ব্যতিক্রম আবহাওয়া থাকে  মার্চ মাসে। দেশটির কুয়ালালামপুরে মার্চ মাসজুড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৮২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। সারা বছর রোদ-বাদলের খেলা থাকলেও সেপ্টেম্বর মাসে থাকে চড়া রোদ। এ মাসে সর্বোচ্চ দৈনিক  ৮ ঘণ্টা রোদ তার দাপট দেখায়। মালয়েশিয়ায় সারা বছর বৃষ্টি হয়। এখানকার গড় বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় ২৯০ মিলিমিটার। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলোÑ দেশটির স্থানীয়দের মধ্যে কেউই সঠিকভাবে বলতে পারেনি, মালয়েশিয়ায় কয় ঋতু বা নাম কী কী ইত্যাদি। তাই তো বিশ্বজুড়ে মালয়েশিয়া একমাত্র এক ঋতুর দেশ হিসেবে পরিচিত।

 

সিঙ্গাপুরে একই হাওয়া

সিঙ্গাপুরকে বলা হয় ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’। পৃথিবীর বুকে সিঙ্গাপুর সত্যিই এক অসম্ভব সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর দেশ। কিন্তু দেশটির আবহাওয়া বেশ কষ্টকর। সারা বছর এখানে গরম এবং বৃষ্টি হয়। অর্থাৎ এখানে বছরজুড়ে থাকে রোদ-বাদলের খেলা। এখানকার তাপমাত্রা সাধারণত ৭৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ৮৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত বিরাজ করে। তবে তাপমাত্রা ৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নিচে নামে কম। একইভাবে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৯২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ওপরে উঠেও কম। তাই বলা হয়, সিঙ্গাপুর বছরজুড়ে একই হাওয়ার দেশ। বছরের পর বছর এমন আবহাওয়া দেখে আসছে সিঙ্গাপুরবাসী। ভৌগোলিক কারণেই নাকি এমনটা হয়ে থাকে। অবস্থানগত দিক থেকে দেশটি এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দেশ। এখানে সারা বছরই তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা দুইই বেশি থাকে। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এখানকার তাপমাত্রা খুব বেশি ঠাণ্ডাও থাকে না। আবার খুব বেশি গরমও থাকে না। অর্থাৎ এই তিন মাসে দেশটির আবহাওয়া থাকে বেশ নাতিশীতোষ্ণ। সিঙ্গাপুরে বর্ষাকাল থাকে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। এ সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। সে সুবাদে দেশটি ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে আদর্শ সময় হলো জুলাই থেকে অক্টোবর মাস।

 

চীনের একপাশে হিমালয় অন্য পাশে সবুজ

হিমালয়ের নাম শুনলেই হয়তো চোখের সামনে ভেসে ওঠে জমাটবাঁধা ঠাণ্ডা বরফে ঢাকা পর্বতরাশি। এখানকার বরফের চেহারা শুধু সাদা পানিতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং ধারণ করে মনোমুগ্ধকর বিচিত্র চেহারা। কোথাও গড়িয়ে নামা পানি পরিণত হয় ধারালো বরফে। হঠাৎ দেখলে যে কেউ ভাবতে পারেন সাদা লেস ঝুলিয়ে কেউ বুঝি নকশা করেছে। দেখতে পাবেন ডোরাকাটা বরফ। এই হিমালয় পর্বতমালা বক্রাকারে ভারত আর নেপাল-সংলগ্ন চীন সীমান্তে ২৪০০ কিলোমিটার ধরে বিস্তৃত। সমুদ্র সমতল থেকে এর গড় উচ্চতা ৬০০০ মিটার। এটি বিশ্বের উচ্চতম ও বৃহত্তম পর্বতমালা। একপাশে যখন বরফে ঢাকা হিমালয় অন্য পাশে চীনের ১৫০০টিরও বেশি নদীর অববাহিকার আয়তন ১০০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি। এসব নদীর চারপাশে রয়েছে মাইলের পর মাইলজুড়ে নানা প্রকৃতির বনাঞ্চল। চীনকে নদীর দেশ বললেও ভুল কিছু বলা হবে না। যে নদীগুলোকে অভ্যন্তরীণ নদী ও বহির্গামী নদী এই দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। সমুদ্রে প্রবাহিত হওয়া বহির্গামী নদীগুলোর অববাহিকার আয়তন চীনের স্থলভাগের মোট আয়তনের ৬৪%। আবার চীনকে একটি পর্বতময় দেশও বলা যেতে পারে। কারণ দেশটির মোট আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশ পর্বত, ছোট পাহাড় এবং মালভূমি নিয়ে গঠিত। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে চীনের ৩৩% উঁচু পর্বত, ২৬% মালভূমি, ১৯% অববাহিকা, ১২% সমতলভূমি এবং প্রায় ১০% পাহাড়। কয়েক মিলিয়ন বছর আগে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি সৃষ্টি হয়। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায় চীনের একপাশে বরফে ঢাকা পর্বত অন্য পাশে অর্থাৎ যতই সাগরের দিকে চোখ যায় ততই সবুজ।

তবে ইদানীং আশঙ্কা করা হচ্ছে দেশটির অবকাঠামো খাতের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ানক প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হারের চেয়ে চীনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ইতিমধ্যে অনেক বেশি। ২০৩৩ সাল নাগাদ চীনে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ক্ষতিকর গ্যাসের বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাবে। চীন বিশ্বের সবচেয়ে দূষণকারী দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অতীত এবং ভবিষ্যতের প্রতিবন্ধকতাগুলোর মুখোমুখি হতে গেলে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। আর প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করতে হবে। প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিতেই হবে।

সর্বশেষ খবর