রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মই যেন নিয়ম

আকতারুজ্জামান

শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্য, সরকারের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক শাখা ক্যাম্পাস খোলা, বছরের পর বছর আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়া, মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ না থাকাসহ নানা অভিযোগ অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে

 

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই চলছে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো শিক্ষার পরিবেশও নেই। দফায় দফায় আলটিমেটাম দিয়েও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে রয়েছে দ্বন্দ্ব। আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে। সব মিলে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা খাতে। সরকার চেষ্টা করেও সফল হতে পারছে না এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে। শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্য, সরকারের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক শাখা ক্যাম্পাস খোলা, কর্তাব্যক্তি নিয়োগে উদাসীনতা, বছরের পর বছর আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়া, মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ না থাকা, অননুমোদিত কোর্স পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

ইউজিসি সূত্র আরও জানায়, ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়নের পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তত ৫ দফা সময় দেয় সরকার। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়েছে। বাকি ৩১টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্রমতে, অনেক নামসর্বস্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থী টানতে চেষ্টা করে। রঙ-বেরঙের এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে প্রলুব্ধ হয়ে অনেক অননুমোদিত প্রোগ্রামে ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হয়ে বিপাকে পড়ে। ইউজিসি জানায়, অনুমোদন না থাকা অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট বা প্রোগ্রাম থেকে যেসব শিক্ষার্থী পাস করবে, এর সনদের দায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নেবে না। ইউজিসির ওয়েবসাইট দেখে জেনে-শুনেই অননুমোদিত ক্যাম্পাস, প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ ইউজিসি কর্তৃপক্ষের।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের মধ্যে পরিচালিত হলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কোনো তোয়াক্কা করছে না। তারা আইন মানতেও চায় না। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করতে লাখ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। এত টাকা খরচ করে কোনো শিক্ষার্থী যাতে অনুমোদন না থাকা বা অবৈধ কোনো প্রোগ্রামে ভর্তি না হয়। আমরা চাই, কোনো ছাত্রছাত্রী যাতে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে বিপত্তির শিকার বা প্রতারিত না হয়। ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে বছরের পর বছর ক্যাম্পাস পরিচালনা করে। শিক্ষার্থীরা না বুঝে সেসব প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে বিপাকে পড়ে। আইনের মধ্যে পরিচালিত না হলে এসব বিশ্ববিদ্যালয় বেশি দিন টিকবে না বলেও মত দেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন নেওয়ার পর নামসর্বস্ব শিক্ষার মাধ্যমে সার্টিফিকেট বিলিয়ে বাণিজ্যে নামে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্রমতে, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২২টিতে উপাচার্য, ৭৩টিতে উপ-উপাচার্য ও ৫৩টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই। ইউজিসি কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, অনিয়মের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে ও হিসাব নয়ছয় করতেই মাসের পর মাস শীর্ষ পদগুলো ফাঁকা রাখছে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অভিযোগ রয়েছে, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এসব পদে ভারপ্রাপ্তদের রাখে। কারণ এতে অর্থের সাশ্রয় হয়। অনিয়ম করতেও সহজ হয়। এতে একদিকে যেমন প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে তেমনি পড়ালেখার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

 

শিক্ষাবিদরা বলছেন, আইন ভঙ্গ করা, শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করাই অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় একের পর এক অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তবুও একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া থেমে নেই। রাজধানীর আনাচে-কানাচে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অবিলম্বে নিয়ম না মানা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগাম টানার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের।

সর্বশেষ খবর