রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রশ্ন ফাঁস হয় ছাপাখানা আর কেন্দ্র্র থেকে

মাহবুব মমতাজী

প্রশ্ন ফাঁস হয় ছাপাখানা আর কেন্দ্র্র থেকে

শুধু ডিভাইসে না, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় ছাপাখানা আর পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে। এ তথ্য উদঘাটন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মতে, যে ছাপাখানায় প্রশ্নপত্র ছাপানো হতো সেখানকার এক কর্মচারীর মাধ্যমেই প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করত জালিয়াত চক্র। জানা যায়, সম্ভাব্য প্রার্থী ও দরদাম ঠিক হওয়ার পর জালিয়াতদের সামনে বড় কাজ থাকে প্রশ্ন ফাঁস করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজটা সম্পন্ন করা বেশ কঠিন হলেও তারা নিয়মিতই সেটা করে। বিশেষ করে যেসব কেন্দ্রে পরীক্ষা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে। পরীক্ষা শুরুর তিন চার মাস আগেই সেসব প্রতিষ্ঠানে জালিয়াত চক্রের সদস্যদের সক্রিয় করা হয়। টার্গেট করা প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের সঙ্গে পূর্ব থেকে সখ্য থাকলে সেটা নতুন করে ঝালাই করে নেয়। আর যদি না থাকে তাহলে জালিয়াতিতে সহযোগিতা করতে চায়- এমন তিন থেকে পাঁচজন কর্মচারীকে বাছাই করা হয়। এদের মধ্য থেকে বিশ্বস্ততার বিষয়টি মাথায় রেখে এক অথবা দুজনের সঙ্গে চুক্তি করা হয়।  অর্থাৎ তাদের মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করবে। একই সঙ্গে নির্ধারিত পরীক্ষার্থীদের সিটপ্ল্যান পরিবর্তন করে সুবিধামতো স্থানে বসাবে।এই মূল হোতাদের খুঁজে না পেলেও ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে খান বাহাদুর (২৮) নামে এক প্রেস কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পৌঁছে যেত আরেক চক্রের হোতা পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রকিবুল হাসান ইসামীর হাতে। সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষা শুরুর অন্তত ছয় মাস আগেই শুরু হতো সম্ভাব্য পরীক্ষার্থী নির্ধারণ প্রক্রিয়া। প্রশ্নপত্র যে কোনো একটি কেন্দ্র থেকে ফাঁস করা হলেও সিটপ্ল্যান পরিবর্তন করা হয় অধিকাংশ কেন্দ্রে। আর সিটপ্ল্যান পরিবর্তনের কাজ করে প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা। তারা আগের দিন সিটপ্ল্যান বসানোর কাজে জড়িত থাকে। সিট পরিবর্তনের ফলে পরীক্ষা হলের গার্ডের চোখ সহজেই এড়ানো যায়। কখনো কখনো কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র আসা ও পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করার মাঝখানের সময়ে করা হয়। কারণ কেন্দ্রের ভিতর সিলগালা করা প্রশ্নপত্রে প্যাকেট সাধারণত বহন করেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা। গত দুই মাসে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ছাপাখানার কর্মচারী খান বাহাদুরের সঙ্গে পরিচয় ছিল সাইফুলের। সে এক সময় পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রকিবুল হাসান ইসামীর কাছে প্রশ্নের বিষয়টি জানায়। ইসামীই প্রশ্ন ছাপানো হলে তা দ্রুত সংগ্রহ করে তাকে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়। এভাবেই গড়ে ওঠে প্রশ্ন ফাঁসের চক্রটি।  সরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশের সরকারি পরীক্ষায় সর্বপ্রথম ১৯৭৯ সালে মাধ্যমিক বা এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তীব্রতা লাভ করে আরও পরে। ২০১৪ সাল থেকে পিএসসি, জেএসসি, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো অন্যান্য সরকারি পরীক্ষারও প্রশ্ন ফাঁস শুরু হয়। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোল্যা নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এজন্য আমাদের বেশ কিছু টিম কাজ অব্যাহত রেখেছে।

সর্বশেষ খবর