শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিপ্লবীদের প্রেম কাহিনী

রণক ইকরাম

বিপ্লবীদের প্রেম কাহিনী

বাঁ থেকে- চিরচেনা জোসেফ স্টালিন, তরুণী প্রেমিকা লিডিয়া এবং তরুণ স্টালিন

অপরিসীম বৈচিত্র্যের আধার মানুষের জীবন। উত্থান-পতন আর অর্জন-বিসর্জনের দোলায় দুলতে দুলতেই পেরিয়ে যায় গোটা আয়ুষ্কাল। এরপরও জীবনে বৈচিত্র্য থাকে। জীবনে যত ঝড়-ঝঞ্ঝা কিংবা বিপত্তিই থাকুক না কেন কোনো না কোনোভাবে প্রেম সেখানে হানা দেবেই। বিশ্ব ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার চিন্তা যারা করেছিলেন সেই বিপ্লবীদের জীবনেও প্রেম এসেছে। কারও কারও ব্যক্তিগত জীবনে সব আদর্শ আর নীতির পাশাপাশি প্রেমের অবস্থান ছিল দারুণ সুসংহত। বিপ্লবের লড়াইয়ে তারা যতটা কঠিন তার চেয়েও অনেক কোমল প্রেমের ক্ষেত্রে। খ্যাতিমান বিপ্লবীদের প্রেম ও ব্যক্তিগত জীবনের নানা দিক নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন-

 

জোসেফ স্টালিন

রুশ সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ জোসেফ স্টালিন [ডিসেম্বর ১৮, ১৮৭৮-মার্চ ৫, ১৯৫৩] ১৯২২ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে এই সময়ে স্টালিনের নেতৃত্বে প্রচলিত রাজনৈতিক মতবাদ ‘স্টালিনবাদ’ নামে পরিচিত। ১৯৩০-এর দশকে স্টালিন নিজের ক্ষমতা শক্ত করার জন্য নিপীড়ন শুরু করেন। যার ফলে কমিউনিস্ট পার্টির শত্রু সন্দেহে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়। স্টালিনের শাসনকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয় এবং নাৎসি জার্মানির পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্টালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বের দুই পরাশক্তির একটিতে পরিণত হয়, যা ৪০ বছর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ব্যক্তিগত জীবনে স্টালিন অত্যন্ত কর্কশ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তার পুরো জীবনের ঘটনাপ্রবাহ এবং দৈনন্দিন রুটিন দেখলে মনে হওয়ার কথা নয় যে, এই মানুষটার মনেও দয়া-মায়া কিংবা প্রেম বলতে কিছু একটা থাকতে পারে। অসীম ক্ষমতাশালী এই মানুষটির জীবনে যুদ্ধ-বিগ্রহ ছাপিয়ে প্রেমও এসেছিল। বলা হয়ে থাকে স্টালিন যখন ৩০ বছরের তরুণ তখন ১৩ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে তার প্রেম হয়েছিল। অবশ্য অন্য একটি সূত্রে দাবি করা হয় মেয়েটি স্টালিন কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছিল। লিডিয়া নামের এই মেয়েটিকে কেন্দ্র করে প্রচলিত এই গল্পটিকে স্টালিনবিরোধী প্রচারণা বলে উড়িয়ে দেওয়া হলেও স্টালিনের ব্যক্তিগত জীবনের দিকে তাকালেও প্রেমের অনেক চিহ্ন নজরে আসবে। ব্যক্তিগত জীবনে স্টালিন দুটি বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ক্যাটরিনা ভ্যানিজ এবং অ্যাডিজডা অ্যালিয়েভা। এর মধ্যে ক্যাটরিনার সঙ্গে মাত্র এক বছরের দাম্পত্য জীবন হলেও দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে মোটামুটি একযুগ সংসার করেন স্টালিন।

 

মাও সে তুং

মাও সে তুং [জন্ম- ডিসেম্বর ২৬, ১৮৯৩; মৃত্যু- সেপ্টেম্বর ৯, ১৯৭৬] চীনা বিপ্লবী মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক নেতা। ১৯৪৯ সালে সমাজতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চীন শাসন করেন। নেতা ছিলেন। তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে তার তাত্ত্বিক অবদান, সমর কৌশল এবং তার কমিউনিজমের নীতি এখন একত্রে মাওবাদ নামে পরিচিত। বিপ্লবী অমর নেতা মাও সে তুংয়ের ব্যক্তিগত জীবনকে দারুণ বৈচিত্র্যে ভরা বলা চলে। তিনি যখন যুবক, তখনই তার বাবা তাকে সৈন্যদলে ভর্তি করানোটাকে লাভজনক মনে করেন। তার আগেই মাওয়ের সঙ্গে এগারো-বারো বছরের একটা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে মাও সে তুং এ বিষয়ে লিখেছিলেন ‘এটা ছিল একেবারে নামমাত্র বিয়ে। আমি কখনোই তার সঙ্গে বসবাস করিনি’। এর বাইরে মাও সে তুংয়ের জীবনে নারীদের আনাগোনা ছিল ভালোই। মাও সে তুংয়ের চার স্ত্রী আর তাদের মোট সন্তানের সংখ্যা ছিল ১০ জন। তারা হলেন : লুও ইক্সিউ [২০ অক্টোবর, ১৮৮৯-১৯১০] তাদের বৈবাহিক জীবন ছিল ১৯০৭ থেকে ১৯১০ পর্যন্ত। দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়াং কাইহুই [১৯০১-১৯৩০]। তার সঙ্গে সংসার হয় ১৯২১ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত। পরের জন ছিলেন হে জিঝেন [১৯১০-১৯৮৪]। বৈবাহিক জীবনের ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কাটে তার সঙ্গে। আর সর্বশেষ জনের নাম চিয়াং চিং [১৯১৪-১৯৯১]। ১৯৩৯ থেকে মাওয়ের মৃত্যু পর্যন্ত মাও সে তুংয়ের সঙ্গী ছিলেন তিনি। এর মধ্যে দুই স্ত্রীর সঙ্গেই মাও সে তুংয়ের প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক বিয়েতে রূপ নেয় বলে মনে করা হয়।

ওপরে বিপ্লবী মাও সে তুং। নিচে বাঁ থেকে- তিন স্ত্রী চিয়াং চিং, হি জিঝেন, ইয়াং কাইহুইয়ের সঙ্গে মাও

 

চের অমর প্রেম

মৃত্যুকে হাতে নিয়ে ছুটে চলা গেরিলা জীবনেও চে প্রেমে পড়েছেন। একবার নয়, একাধিকবার। বিয়েও করেছেন একাধিক। চে ছিলেন একজন রোমান্টিক বিপ্লবী। চে সম্ভবত প্রথম প্রেমে পড়েন ডাক্তারি পড়াকালীন তিতা ইনফানতে নামক এক সহপাঠিনীর। কিন্তু বিপ্লব সেটি হতে দেয়নি। আর তাই চে ডাক্তারি পাস করেও হয়েছেন বিপ্লবী। এরপর গুয়েতেমালায় চের রাজনৈতিক হাতেখড়ি হয়। আর এখানেই তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে হিলদা গাডিয়ার। যার সঙ্গে চে প্রথম প্রণয়ে জড়ান এবং পরবর্তীতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর চে তার দাম্পত্য জীবনে একটুও মনোযোগ দিতে পারেননি। কারণ তখন তার চোখে ছিল কিউবা বিপ্লবের স্বপ্ন। এরপর চে যখন কিউবার লা ভিলাসে গেরিলা যুদ্ধরত তখন তিনি দ্বি^তীয়বারের মতো প্রণয়ে জড়ান কিউবার মেয়ে অ্যালাইদা মার্চের সঙ্গে। অ্যালাইদা ‘২৬ জুলাই দল’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অসম্ভব সাহসী মেয়েটাকে প্রথম দেখায়ই ভালো লেগে যায় চের। তাই অ্যালাইদা যখন প্রস্তাব করেছিলেন চের দলের সঙ্গে যুক্ত হতে, চে তখন সানন্দে সম্মতি দেন। লা ভিলাস থেকে সান্তা ক্লারার যুদ্ধ পর্যন্ত সারাক্ষণই অ্যালাইদা চের পাশে ছিলেন। একটু একটু করে পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছিল তাদের। কিন্তু চে এক মুহূর্তের জন্যও তার প্রথম স্ত্রী হিলদা ও সন্তানের কথা ভুলেননি। অ্যালাইদার সঙ্গে চের এমন কথা হযেছিল যে, ‘বিপ্লবী যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর চে হিলদার কাছে বিবাহবিচ্ছেদের প্রস্তাব তুলবে, হিলদা যদি তাতে সম্মত হয় তবেই সে অ্যালাইদাকে বিয়ে করবে।’ অ্যালাইদা এই প্রস্তাবে পরিপূর্ণভাবে সম্মত ছিল। কিউবার সফল বিপ্লবের পর বিবাহবিচ্ছেদ প্রস্তাবে আপত্তি তোলেনি হিলদা। হিলদাকে পরিত্যাগ করে ১৯৫৯ সালের ৩ জুন অ্যালাইদার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন চে। ‘বিপ্লবের কোনো শেষ নেই’- চের মাঝে এই বিশ্বাস ছিল প্রবল। তাই কিউবার বিপ্লব শেষে চে দেশ ও সংসার ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন বলিভিয়ার উদ্দেশে। একটি নতুন বিপ্লবের স্বপ্নে। বলিভিয়াতে চে যতটা সময় বিপ্লব করতে পেরেছেন সে সময়টা তার সঙ্গে ছিল আরেকজন নারী। তার নাম তানিয়া। তানিয়ার সঙ্গে চের প্রণয়ের বিষয়টা অনেকেই স্বীকার করে নেয় না। অনেকের মতে তানিয়া ও চের প্রণয় ছিল বিপ্লবের প্রয়োজনে একটি অভিনয় মাত্র। আবার অনেকেই চের মৃত্যুর জন্য এককভাবে তানিয়াকেই দায়ী করে থাকেন।

ওপরে বিপ্লবী চে। নিচে বাঁ থেকে- স্ত্রী অ্যালাইদা ও রহস্যময়ী প্রেমিকা তানিয়া

 

হো চি মিন

ভিয়েতনামের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হো চি মিন। তিনি ভিয়েতনামের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াই করেছেন জনগণের মুক্তি, স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য। সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে হো চি মিন বিশ্ববাসীর কাজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে পরিচিত হন। তার জন্ম খেতমজুর পরিবারে। উন্নত বিশ্বের নেতারা যখন ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত। তখন তিনি বজ্রাঘাতের মতো উত্থাপন করলেন আটদফা দাবি সংবলিত এক প্রস্তাব। ভিয়েতনামী জনগণের পক্ষ থেকে ‘জাতিসমূহের অধিকার’ শিরোনামে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হলো। এরপরই পাল্টে যায় হো চি মিনের জীবনের গতিপথ। হো চি মিন ভিয়েতনাম স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা ছিলেন। ১৯৪১ সালের পরবর্তী সময়ে তার নেতৃত্বেই স্বাধীনতা সংগ্রাম বজায় থাকে এবং ১৯৪৫ সালে কমিউনিস্ট শাসিত ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতির পদে আসীন ছিলেন। দক্ষিণ ভিয়েতনামের পতনের পর সেখানকার পূর্বতন রাজধানী সাইগনের নাম পাল্টে হো চি মিন শহর রাখা হয় তার সম্মানার্থে।

হো চি মিনের জীবনে বিচ্ছিন্ন প্রেমের ঘটনা থাকলেও সবকিছু ছাপিয়ে ওঠে আসে একজনের নামই। তিনি তার স্ত্রী তাং তুয়েত মিন। ১৯২৬ সালের অক্টোবরে হো চি মিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।  ১৯২৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তারা দুজন একসঙ্গে বসবাস করেন। হো চি মিন যখন চীনে পলায়ন করেন তখন তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এই বিচ্ছেদ কাটানোর জন্য তারা দুজনই প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নিয়তি তাদের আর এক হতে দেয়নি।

ওপরে হো চি মিন ও নিচে স্ত্রী তাং তুয়েত মিন

 

ফিদেল কাস্ত্রো

ফিদেল কাস্ত্রো বিংশ শতাব্দীর অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক, যিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একাধারে প্রায় চার যুগ বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। একসময়ের বিপ্লবী কাস্ত্রো সুদীর্ঘকাল কিউবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পর অসুস্থতার কারণে ২০০৮ সালের শুরুতে ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। কাস্ত্রো কিউবান বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্বতন একনায়ক রাষ্ট্রপতি ফুলগেনসিও বাতিস্তাকে অপসারণ করেন এবং একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। দারুণ বৈচিত্র্যের এই জীবনে কাস্ত্রো অনেক নারীর সঙ্গেই জড়িয়েছেন। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়া ও লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা কাস্ত্রোর গোপন জীবন নিয়েও কথা রটে। বলা হয়ে থাকে ফিদেলের গোপন জীবনের অনেকটা জুড়েই রয়েছে নারীদের আনাগোনা। এর বাইরে ফিদেল কাস্ত্রোর বিপ্লবকালীন জীবনে আরেকজন বিপ্লবীর সঙ্গে তার প্রেমের মুখরোচক গল্প শোনা যায়। এই বিপ্লবী নারীর নাম সেলিয়া সানচেস মানদুলে। ১৯৫২ সালের ১০ মার্চ বাতিস্তার অভ্যুত্থানের পরই সংগ্রামী হয়ে ওঠেন সেলিয়া। ফ্র্যাঙ্ক পিয়াসের সঙ্গে গড়ে তোলেন নিজস্ব স্কোয়াড। সেলিয়ার কাজ ছিল কিউবার সাউথ-ইস্ট কোস্ট থেকে বিপ্লবীরা যাতে নিরাপদে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেওয়া। এরপর ১৯৫৭ সালের দিকে গেরিলা বাহিনীতে যোগ দেন সেলিয়া। সেখানে একজন বার্তাবাহক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন থেকেই ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা বাড়তে থাকে। সেলিয়া ফুলের মধ্যে করে বার্তা পাঠাতেন। এ কারণে সেই বার্তা কখনো শত্র“পক্ষের হাতে ধরা পড়ত না। বিপ্লবীদের জেনারেল স্টাফের একজন সদস্য হিসেবে চে গুয়েভারা এবং অন্যদের অস্ত্র এবং মাঝে মাঝে খাবার ও ওষুধ সরবরাহের কাজ সফলতার সঙ্গে করতেন সেলিয়া। ধীরে ধীরে তিনি ফিদেল কাস্ত্রোর কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে কাস্ত্রোর চিকিৎসক রেনে ভাল্যাজোর সঙ্গে তার বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল। ১৯৮২ সালে হুট করেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সে বছরই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এর বাইরে ফিদেল কাস্ত্রোর জীবনে আরেকজন প্রেমিকার নাম ঘুরেফিরে বার বার এসেছে।

তিনি হচ্ছেন নাটি রিভোল্টা। সাধারণ কিউবানরা প্রিয় নেতা কাস্ত্রো ও তার প্রেমিকা রিভোল্টার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে বেশি পছন্দ করেন। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো দীর্ঘদিন ধরেই কাস্ত্রোর গোপন জীবনের সঙ্গে প্রেম-নারী ও সেক্সের মুখরোচক গল্প প্রচার করে আসছে। অবশ্য এসব ছাপিয়ে বিপ্লবের মহিমাটাই ফিদেলকে বাঁচিয়ে রেখেছে সবার মনে।

ফিদেল কাস্ত্রো- অপরিসীম সাহসী এক বিপ্লবীর নাম। তার জীবনেও রয়েছে নারীর ছোঁয়া

 

 

ওরতেগা

গ্রেট বিপ্লবীদের তালিকায় সর্বশেষ ও সাম্প্রতিকতম নামটি নিকারগুয়ার সাবেক প্রেসিডেন্টের। তিনি ডেনিয়েল ওরতেগা।

একটি দিনমজুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা, চেষ্টা আর আদর্শ থাকলে কী করে নিজেকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো যায় তার চরম উদাহরণ রেখেছেন ওরতেগা।

১৯৪৫ সালের ১১ নভেম্বর জন্মগ্রহণকারী ডেনিয়েল ২০০৭ সাল থেকে নিকারগুয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।

তার জীবনে অনেক নারীর কথা এলেও সবাইকে ছাপিয়ে বার বার একজনের কথাই এসেছে। তিনিও একজন বিপ্লবী। তবে তার বর্তমান পরিচয় তিনি ডেনিয়েল ওরতেগার স্ত্রী এবং নিকারাগুয়ার ফার্স্ট লেডি। তার নাম রোজারিও মুরিল।

মুরিল ও প্রেসিডেন্ট ওরতেগার মধ্যকার বিপ্লবকালীন প্রেম এবং বর্তমান দাম্পত্য জীবন দেশটির সাধারণ অধিবাসীদের নিত্যদিনের আলাপের খোরাক।

রোজারিওর সঙ্গে ডেনিয়েলের সম্পর্ক দারুণ হলেও মাঝখানে নির্বাচনের আগে ডেনিয়েল একটি বাজে ধরনের সেক্স স্ক্যান্ডালের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখনো তিনি একজন সফল বিপ্লবী হিসেবে টিকে আছেন মানুষের মনে।

ডেনিয়েল ওরতেগা এবং ফার্স্ট লেডি রোজারিও

 

লেনিন

মার্কসবাদী রুশ বিপ্লবী এবং কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ ইতিহাসে লেনিন নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তিনি অক্টোবর এবং মহান নভেম্বর বিপ্লবে বলশেভিকদের প্রধান নেতা ছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান এবং লেনিনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা।

লেবার পার্টি গঠনের সময় ভ্লদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। সাইবেরিয়ার লেনা নদীর নামানুসারে তিনি নিজের নাম রাখেন লেনিন। লেনিনের বৈচিত্র্যভরা জীবনে প্রেমের সুবাতাস বইয়ে দেন আরেক মার্কসবাদী স্কুলশিক্ষিকা নাদিয়া। তার সঙ্গেই লেনিনের প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। ১৮৯৪ সালে নাদিয়ার সঙ্গে পরিচয় ঘটে লেনিনের। তখনো দুজনের কেউই জানতেন না মার্কসবাদ আর বিপ্লবের আড়ালে দুজনের মনে ভালোবাসার সৃষ্টি হচ্ছে। এর পরপরই ১৮৯৮ সালে নাদিয়াকে বিয়ে করেন লেনিন। ১৯৩২ সাল পর্যন্ত তাদের সুখী দাম্পত্য জীবন অক্ষুণ্ন ছিল।

 

< ভ্লাদিমির লেনিন এবং তার প্রেমিকা নাদিয়া

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর