বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রচারণায় আধিপত্যমুক্ত ক্যাম্পাসের প্রতিশ্রুতি

মাহবুব মমতাজী

প্রচারণায় আধিপত্যমুক্ত ক্যাম্পাসের প্রতিশ্রুতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। প্রচারণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল প্রায় সব সংগঠনই ভোটারদের আধিপত্যমুক্ত ক্যাম্পাসের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দেখানো হচ্ছে সুন্দর ক্যাম্পাসের স্বপ্ন। সকাল থেকে সন্ধ্যা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বর, একাডেমিক ভবনের বাইরে এবং আবাসিক হলগুলোতে ছুটছেন প্রার্থীরা। নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে লিফলেট হাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কলাভবন, বাণিজ্য অনুষদ, অপরাজেয় বাংলা, হাকিম চত্বর, মধুর ক্যান্টিন, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন এলাকা ছিল তাদের পদচারণায় মুখর। তবে প্রচারের দৌড়ে তুলনামূলক এগিয়ে রয়েছে ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে সংগঠনটির প্রায় এক-চতুর্থাংশ নেতা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে ছাত্রদল লিফলেট নিয়ে প্রচার চালালেও তাদের কোনো শোডাউন ছিল না। ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণায় কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে রয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য সমর্থিত বামজোট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্যসহ অধিকাংশ বাম সংগঠন। ঢাক-ঢোল, স্লোগান আর মিছিলে পুরো ক্যাম্পাসে চলছে তাদের প্রচারণা। পৃথক প্রচারণায় সরব কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ প্রার্থীরাও। আসন্ন এ নির্বাচনে আগ্রহের দিক থেকে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা-বিভক্ত মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে।

প্রচারণায় বাধাদান এবং হলের প্রার্থীদের চাপে রেখে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার কেউ কেউ সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রয়েছে বলেও দাবি করেছে।

আনুষ্ঠানিক প্রচারণা অব্যাহত রাখলেও লিখিত প্রতিশ্রুতি এখনো দেয়নি ছাত্রলীগ মনোনীত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল। এর প্রার্থীরা ভোটারদের বলছেন, কোনো ইশতেহারে নয়, নয় কোনো শব্দের ফুলঝুরি, আপনার স্বপ্ন সাজবে আপনার সুচিন্তিত মতামতে। ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল আধিপত্যমুক্ত ক্যাম্পাসসহ অন্তত ১৫টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ব্যানারে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আসিফুর রহমানের দেওয়া প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে- মেয়েদের এক হলে অন্য যে কোনো হলের মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ, প্রতিটি ছাত্রী হল রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা রাখা, সার্বক্ষণিক ডাক্তার নিশ্চিত করা ও ডিসপেনসারি স্থাপন, একাডেমিক ভবনের প্রতি তলায় মেয়েদের জন্য ওয়াশরুম স্থাপন করা। বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী মনোনীত প্যানেল শিক্ষার্থীদের ওপর সব ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন বন্ধ এবং ক্যাম্পাস এলাকায় যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণসহ ১১টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জাসদ ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেলের দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার, রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলের দখলদারিত্বমুক্ত মুক্তবুদ্ধি, যুক্তি, জ্ঞান ও গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এবং ছাত্র সংগঠনকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার বন্ধসহ অন্তত ১৭টি দাবির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া গণরুম, গেস্টরুমে নিপীড়ন বন্ধ, সব বাণিজ্যিক কোর্স বাতিল ও ক্লাসে উপস্থিতি নম্বর বাতিলসহ ৯টি দাবি তুলে ধরেছে প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য সমর্থিত পরিষদ। জিএস পদপ্রার্থী আসিফুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের প্রচার-প্রচারণা ভালো চলছে। তবে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা-বিভক্ত মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। হলে আধিপত্য ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে মতামত তুলে ধরতে ডাকসু নির্বাচনের দিকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছরের বিরতির কারণে এখনো অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংশয়-সন্দিহান কাজ করছে। তাদের অনেকের আইডি কার্ড রেনু করেনি। হলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপে রাখার অভিযোগ করেন তিনি। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী নুরুল হক নুর বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের ভালো পরিবেশ বজায় রয়েছে। দীর্ঘ সময় নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা রয়েছে। প্রশাসন বিদ্যমান পরিবেশ ধরে রাখতে পারলে শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত তুলে ধরতে পারবে।

সর্বশেষ খবর