নাম শামিম। পেশায় একজন ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কিংবা অফিস-আদালতে বিদ্যুতের কাজ করতেন। ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি রুম ভাড়া করে থাকতেন। শনিবার, ২০ জুন। সকালে ডাক পান এক অফিসে ইলেকট্রিকাল সমস্যা সমাধানের। কাজ সেরে দুপুরে ফিরে আসেন রুমে। রুমমেটকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে যান গলির মাথার এক হোটেলে। খাবার খেয়ে রাস্তায় নামার সঙ্গে সঙ্গে বুকে এসে লাগে বুলেট। লুটিয়ে পড়েন শামিম। স্থানীয়রা হাসপাতালে নিলে ডাক্তার জানান, আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা গুপ্তমুন্সি গ্রামের আবদুল মান্নান হাওলাদারের ছেলে এই শামিম। এসএসসি পাসের পর পরই বাবাকে হারিয়েছেন। চার বোন, দুই ভাই আর মা। অভাবের সংসার। পড়ালেখা করতে পারেননি। দুবেলা দুমুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য কাজে নেমে পড়েন। শেখেন বিদ্যুৎ টেকনিশিয়ানের কাজ। কাজের সন্ধানে আসেন ঢাকায়। থাকতেন মোহাম্মদপুর এলাকায়। ভালোই চলছিল। বোনদের বিয়ে দেন। বিয়ে করেন নিজেও। স্ত্রী এইচএসসি পাস। তিন ছেলের বাবা হন। বড় ছেলের বয়স ১০ আর ছোট ছেলের বসয় তিন বছর। ছোট ছেলে আহমাদের অবুঝ মনের মধ্যে গেঁথে আছে তার বাবাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। নিহত শামিমের মায়ের কান্না এখনো থামছে না। বৃদ্ধা মা বিউটি বেগম জানান, ‘এতদিন হলো তার ছেলে মারা গেছেন। এক দিনের জন্য এসেও কেউ খোঁজ নেয়নি, তারা কেমন আছেন, কী খাচ্ছেন? খেয়ে আছেন নাকি না খেয়ে আছেন?’ ছেলের বউ আর তিন নাতি নিয়ে তিনি কীভাবে বাঁচবেন কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। শামিমের স্ত্রী জানান, আগের দিনও মোবাইলে শামিমের সঙ্গে কথা হয়েছে। বলেছে, দেশের অবস্থা ভালো না। কখন কী হয়ে যায় বলা যায় না। ভয়ে রুম থেকে বের হতে পারছে না। কাজও বন্ধ। তখন তাকে দেশে চলে আসতে বলেছিলাম। শামিম বলেছে, এ বছরই শেষ। আগামী বছর দেশে চলে আসব। বাড়িতে থাকব। পুকুরে মাছ চাষ করব, গরুর খামার দেব। আর কয়েকটা মাস ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন স্ত্রীকে। এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন শামিমের স্ত্রী। স্থানীয় নাজিউর রহমান কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবদুল হালিম বলেন, শামিম পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে পরিবারটি বড় বিপদে পড়েছে। শামিমের স্ত্রী এইচএসপি পাস। তাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে হয়তো সংসারটা চালিয়ে নিতে পারতেন, ছেলেগুলোকে মানুষ করতে পারতেন।