১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৬:৩৯

নরসিংদী-২ আসনে ফুরফুরে মেজাজে আ.লীগ, উৎকণ্ঠায় বিএনপি

নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদী-২ আসনে ফুরফুরে মেজাজে আ.লীগ, উৎকণ্ঠায় বিএনপি

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণায় মূখর হয়ে উঠেছে নরসিংদী-২ আসনের পলাশ উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রচার প্রচারণায় মাইকিং আর পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলার অলি-গলি। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে পাল্লা দিয়ে চালানো হচ্ছে মিটিং মিছিল, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক। দলীয় নেতারা একাট্টা হয়ে নৌকার ভোট চেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। 

অন্যদিকে প্রচারণায় নেমেছেন জাতীয় পার্টিও। তবে প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বিএনপি। বিএনপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.আব্দুল মঈন খান প্রচারণায় নামলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পরতে হচ্ছে। গণসংযোগ চালানোর সময় হামলার শিকার হতে হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিএনপি উৎকণ্ঠায় থাকলেও ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে আওয়ামী লীগ। 

তবে ভোটাররা বলছেন, এবারের নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনারের কাছে ভোটারদের দাবি, তারা যেন সুষ্ঠু পরিবেশে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন। 

নির্বাচন কমিশন ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, চারটি ইউনিয়ন, একটি পৌর সভা ও নরসিংদী সদরের তিনটি ইউনিয়নের একাংশ নিয়ে গঠিত নরসিংদী-২ পলাশ উপজেলার নির্বাচনী এলাকা। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ১৯ হাজার ৫৩৯। নারী ভোটার এক লাখ ১৪ হাজার ৮৩৪ জন। মোট কেন্দ্র সংখ্যা ৮৮টি। 

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পযর্ন্ত এই আসনটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের দখলে ছিল। ওয়ান ইলিভেনের পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মঈন খানকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। 

পরবর্তীতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পান জাসদ (ইনু) প্রার্থী জাসদ নেতা জায়েদুল কবির। সে সময় এমপি আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের ছোট ভাই ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আশরাফ খানের কাছে পরাজিত হন মহাজোট প্রার্থী। দুই দফায় দুই ভাই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগকে ডেলে সাজানো হয়। শক্তিশালী করা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনকে। এদিকে ১০ বছর দল ক্ষমতায় না থাকায় দুর্বল হয়ে পড়ে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-২ পলাশ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আজম খান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের হাত পাখা নিয়ে লড়ছেন মো. আরিফুল ইসলাম।

বিএনপির প্রার্থী ড. আব্দুল মঈন খান অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক পক্রিয়ায় এই সরকারের পরিবর্তন চাই। মারামারি কাটাকাটিতে আমরা বিশ্বাশী নই। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন পলাশ উপজেলাকে সন্ত্রাসীদের জনপদ তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দা, চাইনিজ কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে এর কোনো মিল নেই। সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা দিয়ে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

একই অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আজম খান। তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে আমাদের পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। একটা অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবো এবং অনড় অবস্থায় থাকবো। কারণ আমরা ভোটরদের কাছ থেকে ব্যপক সাড়া পাচ্ছি। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে লাঙ্গল বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ বলেন, বিএনপির লোকজনের কমন একটি অভিযোগ হচ্ছে তাদের প্রচারণায় বাধা দেয়ার কথা। বাস্তবে এটি সত্য নয়। বরং বিএনপির লোকজন পলাশের গুচ্ছ গ্রামে আমাদের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। তিনি আরও বলেন, গত দশ বছরে পলাশ উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সসহ সকল ধরনের অবকাঠামোগত  উন্নয়ন হয়েছে। যা এর আগে কোনো দিনও হয়নি। তাই আমরা আশাবাদী এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় হবে।  

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর