১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১০:০০

শরীয়তপুর-১ আসনে আ.লীগের বিরোধ থেকেই যাচ্ছে

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুর-১ আসনে আ.লীগের বিরোধ থেকেই যাচ্ছে

শরীয়তপুর-১ (সদর ও জাজিরা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণা চললেও স্থানীয় পর্যায় দলটিতে বিরোধ রয়েছে। আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। বিরোধের বিষয়ে দু‘পক্ষই একে অপরকে দুষছেন। আওয়ামী লীগের মূল দলের নেতারা  শরীয়তপুর ২ও ৩ আসনে সক্রিয় ভাবে মাঠে কাজ করলেও এ আসনটির চিত্র ভিন্ন। এখানে এক সাথে মাঠে নামতে পারছে না জেলা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা করমীরা। বিভিন্ন জাগায় তাদের লাঞ্চিত করার অভিযোগও উঠেছে।

এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। আর ১০ বছর যাবৎ এ এলাকার সাংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। মনোনয়ন নিয়ে এ দু‘নেতার বিরোধ দীর্ঘদিনের। মনোনয়ন চুড়ান্ত হওয়ার আগে এ দু'নেতার পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী জনপ্রতিনিধিরা। প্রচার-প্রচারণা শুরু হলেও বিভক্তি কমছে না।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের স্থানীয় রাজনীতি ও ১ আসনের মনোনয়ন নিয়ে সাংসদ বিএম মোজাম্মেল হকের সাথে ইকবাল হোসেন অপুর বিরোধ দীর্ঘ দিন থেকে। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের সমর্থকদের মাঝে ছোট খাটো সংঘাত ও সংর্ঘষ হত। বিভিন্ন কর্মসূচি আলাদা আলাদাভাবে পালন করত দু'পক্ষ। বিরোধটি চুড়ান্ত রূপ নেয় ২০১৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে। বিরোধের কারণে সম্মেলনের দেড় বছর পর কমিটি অনুমোদন দেয়া হয় কেন্দ্র থেকে। ওই কমিটিতে অপু সমর্থিত বেশিরভাগ নেতারা বঞ্চিত হন।

আওয়ামী লীগ থেকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয় গত ২৬ নভেম্বর। এর তিন-চার দিন আগেই ইকবাল হোসেন অপুর মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। এর পর জাজিরা ও সদর উপজেলার ২১ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর-জাজিরার ৭ জনের মধ্যে ৬ জন এবং বেশ কিছু নেতা মনোনয়ন পরিবর্তনের জন্য মোজাম্মেল হকের পক্ষ অবলম্ভন করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতার কাছে যান। এ খবর পেয়ে ইকবাল হোসেন অপু ক্ষুব্দ হন। ২৭ নভেম্বর রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর পর ১০ নভেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর তিনি প্রচারণা শুরু করেন। কিন্তু মোজাম্মেল হক সমর্থিত নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা এখনো নির্বাচনী মাঠে নামতে পারেননি এক সাথে। এমনকি সাংসদ মোজাম্মেল হকও এখনো নির্বাচনী এলাকায় আসেননি।

শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে বলেন ,আওয়ামী লীগ নৌকার পক্ষে কাজ করছে । তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর সমর্থকরা ও এ এলাকার সাংসদ কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক  বিএম মোজাম্মেল হক এর সমর্থিত  লোকজনদের লানচিত করেছে এমন অভিযোগ রয়েছে।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও চিতলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, আমরা সাংসদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দল মনোনয়ন দিয়েছে আরেক নেতা ইকবাল হোসেন অপুকে। আমরা আওয়ামী লীগ করি, তার সমর্থনে নৌকা প্রতীকের কাজ করতে চাই। দলকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখতে চাই। কিন্তু আমাদের বাধা দেয়া হচ্ছে, কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। তার সমর্থিত নেতা-কর্মীরা বাধা দিচ্ছে। কোথাও কোথাও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। তিনিও আমাদের ডাকেন না। কিন্তু আমরা নৌকার কাজ করছি।

সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউপি চেয়ারম্যান হাবীবুর রহমা ঢালী বলেন, নানা কারণে সাংসদের পক্ষে থাকতে হয়েছে। দল এখন আরেক ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমরা স্বতঃর্স্ফূতভাবে দলের প্রতীকে ওই নেতার পক্ষে কাজ করতে চাই। কিন্তু নির্বাচনী কাজ করতে পারছি না, একা একা নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছি।

জাজিরা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব বলেন, বর্তমান সাংসদের পরিবর্তে দল আরেক কেন্দ্রীয় নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমরা তাকে মেনে নিয়েছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভা করে সকল নেতা-কর্মীকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রচার প্রচারনায় আমাদের অংশগ্রহণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে শরীয়তপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবাল হোসেন অপু বলেন, আমি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছি। সবাইকে নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতীক বিজয়ী করব, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব। আমার পক্ষ থেকে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে। কিন্তু দলের ভেতরের কিছু ষড়যন্ত্রকারী আমাকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। বিভিন্ন অপ্রপ্রচার চালাচ্ছে। সকল ষড়যন্ত্র ভেদ করে নৌকা প্রতীক বিজয়ী করব, আওয়ামী লীগও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে। শেখ হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হবেন।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর