সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে চার, বিএনপিতে পাঁচ

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

আওয়ামী লীগে চার, বিএনপিতে পাঁচ

তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি ও যমুনা নদীবেষ্টিত চৌহালী উপজেলা নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৫ আসন। আসনটিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির নবীন-প্রবীণ প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। করছেন ব্যাপক গণসংযোগ। বিগত সময়ের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে বাজার, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও জনসমাগম স্থানে ব্যানার ফেস্টুন টাঙিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল শো-ডাউনসহ সভা-সমাবেশ ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন দৃষ্টান্ত তুলে ধরছেন। গঠন করছেন ভোটকেন্দ্রিক কমিটি। অন্যদিকে, বিএনপি প্রার্থীরা প্রশাসনিক জটিলতার কারণে প্রকাশ্যে না নামলেও কৌশলী হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান সরকারের হামলা-মামলা-নির্যাতনসহ বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়ম-সন্ত্রাসসহ নানা চিত্র তুলে ধরে সাধারণ জনগণের কাছে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে আহ্বান করছেন। আসনটিতে বিএনপি থেকে পাঁচ এবং আওয়ামী লীগ থেকে চারজন প্রার্থী প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি দলীয় হাইকমান্ডে লবিং-গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে আবদুল লতিফ বিশ্বাস আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মহাজোট সরকারের মত্স্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে তিনি বেলকুচি ও চৌহালীতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন তার। আবদুল লতিফ বিশ্বাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন দুবার। ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। ২০ বছর বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সভাপতি হিসেবেও ১১ বছর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৫ বছর এমপি না থাকার পরও ছিলেন মাঠে সক্রিয়। দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠিত করেছেন। ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে তার। তৃণমূলের নেতারা বলছেন, এ আসনে লতিফ বিশ্বাসের বিকল্প নেই। তুখোড় পোড় খাওয়া এ নেতা স্থানীয় আওয়ামী লীগের জীবন্ত কিংবদন্তি। ২০১৪ সালে আবদুল লতিফ বিশ্বাস মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও তিনি দল থেকে পিছপা হননি। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা-দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বেলকুচি চৌহালীর উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। নিজ এলাকায় সরকারের উন্নয়নের দৃষ্টান্ত তুলে ধরছেন উঠান বৈঠকে। তুলে ধরছেন তার আমলের উন্নয়নের ফিরিস্তিও। গঠন করছেন নির্বাচনকেন্দ্রিক দলীয় কেন্দ্র কমিটি। আসনটিতে আবদুল লতিফ বিশ্বাস ছাড়াও বর্তমান এমপি আবদুল মজিদ মণ্ডলের ছেলে আবদুল মোমিন মণ্ডল ও বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পেতে মাঠে কাজ করছেন। দুজনই এলাকায় গণসংযোগসহ নানা সামাজিক জনকল্যাণকর কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী মীর মোশারফ হোসেন জানান, ২০০৫ সাল থেকে বেলকুচি-চৌহালীর মাঠে রয়েছি। আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য দলকে পুরোপুরি সংগঠিত করছি। একজন মাঠের মানুষ হিসেবে মনোনয়ন পেলে এই আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে সক্ষম হব।

সাবেক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাস জানান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার নির্দেশনার একচুল বাইরে যাইনি। ভবিষ্যতেও যাব না। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি রক্ষার নির্বাচন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমনের নির্বাচন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে হবে। মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হলে সারা দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত ও বেগবান করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন।

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর মেজর (অব.) মনজুর কাদের ঢাকায় চলে যান। দল নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রকিবুল করিম খান পাপ্পু ও চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলের হাল ধরেন। দলের ভিতর নেতৃত্ব নিয়ে বিভেদ দেখা দিলেও তিনজনই পৃথক পৃথকভাবে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এবার সংসদ নির্বাচনে তিনজনই প্রার্থী হয়ে মাঠে কাজ করার পাশাপাশি লবিং-গ্রুপিং শুরু করেছেন। নেতা-কর্মীদের মতে, আমিরুল ইসলাম খান আলীম ছাত্র রাজনীতির সময় থেকেই বেলকুচি-বিএনপির নেতা-কমীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুঃসময়ে দলের প্রতিটি কর্মসূচি পালন করছেন। রকিবুল করিম খান পাপ্পু তরুণ শিল্পপতি ওরিয়েন্টাল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক। তিনিও দুঃসময়ে দলের হাল ধরে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। বেলকুচি-চৌহালীর অধিকাংশ নেতা-কর্মী তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। অন্যদিকে সাবেক এমপি আনছার আলী সিদ্দিকীর ছেলে চৌহালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন ইতিমধ্যে ক্লিন-ইমেজের প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছেন। দিনরাত এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। চৌহালীর ভাঙনকবলিত মানুষদেক সাধ্যমতো সহায়তা করে তাদের পাশে আছেন। দুই উপজেলার বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ধানের শীষকে বিজয় করতে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও আসনটিতে সাবেক এমপি মেজর (অব.) মনজুর কাদের ও বেলকুচি উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা গোলাম মওলা খান বাবলু মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন।

ছাত্রনেতা আমিরুল ইসলাম খান আলীম জানান, বিএনপির প্রধান কাজ হলো দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা।

সর্বশেষ খবর