রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনী দৌড়ে আছেন সাবেক আমলারাও

নিজামুল হক বিপুল

নির্বাচনী দৌড়ে আছেন সাবেক আমলারাও

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা। এ তালিকায় রয়েছেন সচিব থেকে শুরু করে অতিরিক্ত সচিব, সাবেক রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং পুলিশের একাধিক বড় কর্তা। যারা ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন এবং গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী এমন আমলা অসংখ্য। তবে এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ জনের নাম শোনা যাচ্ছে, যারা নির্বাচনের মাঠে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। সাধারণ ভোটারের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে দলের নেতা-কর্মীদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন তারা। দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন তৃণমূল থেকে দলীয় হাইকমান্ড পর্যন্ত। তবে শেষ পর্যন্ত কতজন আমলা নির্বাচনে অংশ নেবেন তা নিশ্চিত হওয়া যাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়নপত্র জমা হওয়ার পর। আমলাদের বেশিরভাগই প্রার্থী হতে চাইছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে। বিএনপি থেকেও বেশ কয়েকজন প্রার্থী হতে পারেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের যেসব সাবেক আমলা প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কিংবা দীর্ঘদিন ধরে ভোটের মাঠে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন, এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক পরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেওয়া নূর মোহাম্মদ। তিনি নির্বাচন করতে চাইছেন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসন থেকে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকেই তিনি এলাকায় সময় দিচ্ছেন।  গণসংযোগ করছেন কয়েক বছর ধরে। এলাকার মানুষকে নানা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বলতে গেলে কোমর বেঁধে নেমেছেন নূর মোহাম্মদ। তবে গতকাল পর্যন্ত তিনি মনোনয়নপত্র কেনেননি। জানতে চাইলে নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখনো মনোনয়ন কিনিনি। দেখা যাক কী হয়। তিনি বলেন, কনফার্ম না হওয়া পর্যন্ত মনোনয়ন কিনব না। কারণ আমি তো স্বতন্ত্র প্রার্থী হব না।  প্রার্থীর তালিকায় আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। সাবেক এই আমলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সৎ, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে পরিচিত ড. ফরাসউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও আস্থাভাজন। তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী হবিগঞ্জ থেকে। তবে হবিগঞ্জের কোন আসন থেকে তিনি প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।  সিলেট-১ (সিলেট সদর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসন থেকে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেন। যিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই।

 

গত কয়েক বছর ধরে এ কে এ মোমেন এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী না হলে তাকেই সিলেট সদর আসনে দেখা যেতে পারে নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে। সিলেট সদর আসন নিয়ে প্রচলিত মিথ হচ্ছে- এই আসনে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হন সেই দল সরকার গঠন করে। গত দুই টার্ম এ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে বিজয়ী হয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ইতিমধ্যে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন মোমেন। তিনি স্থানীয় পর্যায়ে দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন নিয়মিত। দলের মনোনয়ন পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে গতকাল তিনি মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

প্রার্থী হতে চাচ্ছেন সাবেক সচিব বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা মার্কা নিয়ে নিজ জেলা ফরিদপুরের একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী। সরকারের প্রভাবশালী আমলা থাকা অবস্থায় তিনি এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজ করিয়েছেন। এগুলো এখন তার পুঁজি। এগুলো সম্বল করেই তিনি এলাকায় জনসংযোগ করছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত তিনিও মনোনয়নপত্র কেনেননি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনও মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে। সাবেক এই আমলা তার নিজ এলাকা চাঁদপুরের কচুয়া থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। সচিব এবং এনবিআর চেয়ারম্যান থাকার সময় তিনি এলাকায় অনেক কাজ করিয়েছেন। এখন নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করছেন। দলীয় কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন নিয়মিত। তবে গতকাল পর্যন্ত তিনি মনোনয়নপত্র কেনেননি বলে জানা গেছে।  সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন সিলেটের একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তবে সাবেক এই আমলা কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে চান সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত কুমিল্লার চান্দিনা থেকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন এই চিকিৎসক নৌকার কাণ্ডারি হতে চান।

 এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। তিনি শুক্রবারই মনোনয়নপত্র কিনেছেন।  দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু টাঙ্গাইল থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেষ্টা করছেন। তবে কোন আসন থেকে তিনি প্রার্থী হতে চান সেটা নিশ্চিত না হওয়া গেলে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন সাবেক এই আমলা।  প্রশাসনের প্রভাবশালী আমলাদের একজন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব থাকাকালে রংপুরের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। এবার তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী রংপুর সদর থেকেই। তবে এখনো নিশ্চিত না।

নির্বাচনী দৌড়ে আছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এস এম আবদুল হালিম। তিনি বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক জামালপুরের ইসলামপুর আসন থেকে। সাবেক সচিব ব্যারিস্টার হায়দার আলী শেরপুর থেকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এম এ কাইয়ুম জামালপুরের একটি আসন থেকে এবং নাটোর থেকে নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব আবদুর রশীদ সরকার নির্বাচন করতে চান বিএনপি থেকে।  সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল আবদুল লতিফ বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে চান নওগাঁ থেকে। আরেক সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী ঢাকা কিংবা নিজ জেলা কক্সবাজার থেকে ধানের শীষের কাণ্ডারি হতে চান। এছাড়াও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেষ্টা করছেন সাবেক সচিব হুমায়ুন কবীর, সাবেক সচিব এনএম নিয়াজ উদ্দিন মিয়া ও সাবেক সচিব সুজা উদদৌলা।

সর্বশেষ খবর