রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পোস্টারে ব্যানারে ছেয়ে গেছে ঢাকা

রাজধানী জুড়ে বইছে নির্বাচনের হাওয়া। পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলি। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও পিছিয়ে নেই পোস্টারিংয়ের দৌড়ে

সাঈদুর রহমান রিমন

পোস্টারে ব্যানারে ছেয়ে গেছে ঢাকা

রাজধানী ঢাকা এখন ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনের দখলে। বড় রাস্তা থেকে শুরু করে অলিগলিসহ সব স্থান দখলে নিয়েছে পোস্টার আর ব্যানার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে রাজধানীতে প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। পাশাপাশি এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নামে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে  ে গছে পুরো নগরী। আছে নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের আহ্বান-সংবলিত পেস্টারের ছড়াছড়ি। পাশাপাশি বিভিন্ন নেতা-নেত্রীর ছবি যুক্ত করে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন ফিরিস্তির নানা ফেস্টুন।

সর্বত্রই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্বাচনী পোস্টার ছিল চোখে পড়ার মতো। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী নিজেদের পরিচয় জানান দিতেই ব্যাপকভাবে পোস্টার-ফেস্টুন লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে পোস্টার সাঁটানোর ক্ষেত্রে বাদ পড়েনি রাজধানীর গণপরিবহনগুলো। লোকাল ও সিটিং বাসগুলোর পেছনে লাগানো হয়েছে এসব পোস্টার। তেঁতুলিয়া পরিবহন ও খাজাবাবা পরিবহনের পেছনে দেখা মেলে এসব নির্বাচনী পোস্টারের। আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যেকের ফেস্টুন ও ব্যানারে সরকারের উন্নয়ন, নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান এবং তাদের এমপি হিসেবে দেখতে চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনের ছড়াছড়ি লক্ষ করা গেছে। মিরপুর-১ গোলচত্বরে ফুটওভারব্রিজে ঝুলছে ঢাকা-১৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার ও ব্যানার। সেখানে মিরপুরের মাজহার আনামের প্রচার-প্রচারণা ব্যাপকভাবে দেখা গেছে। পাশাপাশি বর্তমান এমপি আসলামুল হকের বড় ছবিযুক্ত ফেস্টুনেরও ছড়াছড়ি দেখা যায়। মিরপুর-১৩ ও ১৪ নম্বর এলাকায় বেশি বেশি দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুর ব্যানার ও পোস্টার। তার ব্যানার ও পোস্টারে উল্লেখ আছে ঢাকা-১৫ আসন থেকে এমপি হিসেবে তাকেই দেখতে চান সমর্থকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মিরপুর-১০, শ্যাওড়াপাড়া, আগারগাঁও, ফার্মগেট এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনের দেয়াল, বিভিন্ন দোকানের শাটার, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছে লাগানো হয়েছে নির্বাচনী পোস্টার। নির্বাচনী প্রচারণায় পিছিয়ে নেই ওই এলাকার বর্তমান এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারও। একই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মঈনুল হোসেন খান নিখিলের নামেও বেশ কিছু পোস্টার ও ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।

অন্যদিকে মিরপুর-১১, পূরবী সিনেমা হল ও ইসিবি চত্বর ছেয়ে গেছে নৌকা প্রতীকের ফেস্টুনে। এসব ফেস্টুনে এখলাছ উদ্দিন মোল্লাকে ওই এলাকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেখতে চেয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় তারই ছোট ভাই ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লারও ফেস্টুন দেখা গেছে।  ঢাকা-১৮ আসনের সমগ্র উত্তরাজুড়ে শোভা পাচ্ছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের ছবিযুক্ত পোস্টার আর ব্যানার। সেখানে দক্ষিণখান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, হাবিব হাসান, জয়নাল আবেদীন ও যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আক্তারের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন চোখে পড়ছে।

বাড্ডা এলাকায় এ কে এম রহমতউল্লাহর সমর্থনে থানা যুবলীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাস্তায় সারি সারি দড়ি বেঁধে ঝোলানো হয়েছে পোস্টার-ব্যানার। কোনো বাড়ির দেয়াল বাদ যায়নি। এ ছাড়া ভাটারা, নতুনবাজার, শাহজাদপুর, গুলশান, বসুন্ধরা, কুড়িলের প্রায় প্রতিটি সড়কের দুই ধারে ফেস্টুন ও পোস্টার টানানো হয়ছে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের নামে। এমনকি বড় বড় পয়েন্টে টানানো হয়েছে তাদের ব্যানার। সরেজমিন দেখা যায়, বাড্ডার শাহজাদপুর থেকে কুড়িল চৌরাস্তা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াকিল উদ্দিনের নামে ফেস্টুন টানিয়েছেন তার সমর্থকরা। এতে ঢাকা-১৭ আসনে ‘এমপি হিসেবে দেখতে চাই’ এবং ‘নৌকায় ভোট দিন’ এমনটা উল্লেখ রয়েছে। ‘আর কোনো অতিথি পাখি নয়, এবার লোকাল মানুষকে এমপি পেতে চাই’ এমন লেখাযুক্ত ব্যানার শোভা পাচ্ছে রাস্তাঘাট, অলিগলিতে। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথাও লেখা আছে ব্যানার ও পোস্টারসমূহে। শাহজাদপুর থেকে কুড়িল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে এবং ল্যাম্পপোস্টগুলোতে এই পোস্টার ও ফেস্টুন টানানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এসব এলাকার অলিগলিতেও দেখা গেছে তার পোস্টার। শাহজাদপুর, নতুনবাজার, নর্দ্দা ও কুড়িল এলাকায় ঢাকা-১৭ আসনের এমপি হিসেবে দেখতে চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ফেস্টুন টানিয়েছেন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ এম এ কাদের খানের সমর্থকরাও।

এদিকে রাজধানীর মৌচাক ও মগবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বর্তমান এমপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নামে পোস্টার ও ব্যানার। সেখানে তার সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে সাজিয়েছেন পোস্টার ও ব্যানার। রাজধানী জুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণা লক্ষ্য করা গেলেও কোথাও বিএনপির কোনো নেতার প্রচারণামূলক পোস্টার-ব্যানার নেই বললেই চলে। তবে নৌকা প্রতীকের বাইরে বনানীর কিছু এলাকায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ব্যানারে ববি হাজ্জাজের নামে পোস্টার টানানো হয়েছে। তবে এসব পোস্টার কার পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে তা উল্লেখ নেই।

রাজধানী জুড়ে বইছে নির্বাচনের হাওয়া। পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলি। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও পিছিয়ে নেই পোস্টারিংয়ের দৌড়ে। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আগেভাগে পোস্টার লাগিয়ে অনেকেই আলোচনায় আসার চেষ্টা করছেন। আকর্ষণীয় এসব পোস্টার-ফেস্টুনে নিজেদের ছবির পাশাপাশি দলের প্রতিষ্ঠাতা, দলীয় প্রধানসহ পছন্দের নেতাদের ছবি ঠাঁই পেয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পোস্টার চোখে পড়ছে রাজধানীর বিভিন্ন ফ্লাইওভার, ফুটওভারব্রিজের পিলার, গুরুত্বপূর্ণ দেয়াল কিংবা চলাচলরত বাসে। পোস্টার সাঁটানোর এই প্রতিযোগিতায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই এগিয়ে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের পোস্টার কিছুটা চোখে পড়লেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের পোস্টার কিংবা ব্যানার একেবারেই চোখে পড়ছে না।

ঢাকার বাইরের পোস্টার ব্যানার : এমনকি রাজধানীর বাইরের আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যানারও শোভা পাচ্ছে রাজধানীতে। দলীয় কার্যালয়গুলোর আশপাশে ঢাকার বাইরের নেতাদের পোস্টারিং ও ব্যানার বেশি চোখে পড়ে। রাজধানীর বিজয় সরণির মোড়ে নীলফামারী-৪ আসনের নির্বাচনী প্রচারনার ব্যানার দেখা গেছে বেশ কিছু। বাড্ডার কুমিল্লাপাড়া এলাকায় দেখা গেছে কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এলাকার বিভিন্ন আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পোস্টার। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নামে পোস্টার ব্যানার ছড়িয়ে আছে বাড্ডা-গুলশানের নানা স্থানে। ঢাকাস্থ মতলববাসীর পক্ষে রাসেল মাহমুদ, আল আমীন, জোনায়েদ মিয়াসহ নানা নাম উল্লেখ করে মায়া চৌধূরীর ব্যানারও ঝুলছে মোড়ে মোড়ে। ঢাকার বাইরের আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার ব্যানার ঝুলছে গুলিস্তানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে ঢোকার পথেই। সেখানে পোস্টারে-পোস্টারে ছেয়ে আছে দেয়াল। বিভিন্ন সড়কের মাঝে ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হয়েছে ফেস্টুন-ব্যানার। বেশির ভাগ পোস্টারই ঢাকার বাইরের আসনের। সেসব আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে স্থানীয় নেতারা পোস্টার ব্যানারগুলো লাগিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পার্টি অফিসের প্রবেশ মুখেই রঙবেরঙের অন্তত অর্ধশত ব্যানারও টানানো রয়েছে।

সর্বশেষ খবর