মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অভিভাবকহীন চট্টগ্রাম বিএনপি

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

অভিভাবকহীন চট্টগ্রাম বিএনপি

চট্টগ্রাম বিএনপি এখন অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রায় তিন সপ্তাহ জেল খেটে সোমবার জামিনে মুক্তি পেলেও এখনো জেলে বন্দী রয়েছেন বর্তমান সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাহবুবের রহমান শামীমও। এ ছাড়া প্রায় দেড় বছর ধরে কারাভোগ করছেন উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শিল্পপতি আসলাম চৌধুরীসহ অন্তত শতাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। এদের মধ্যে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারাও রয়েছেন। ফলে যাদের ঘিরে চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনীতির মাঠ থাকে সতেজ ও কর্মমুখর, তাদের অবর্তমানে এখানে ভোটের ছিঁটেফোঁটা আমেজও নেই। উপরন্তু সাধারণ কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে পেছনের সারির নেতারাও মামলা এবং গ্রেফতার আতঙ্কে থাকায় কর্মীশূন্য হয়ে পড়েছে বিএনপির মাঠ। গত বেশ কয়েক দিন ধরে নগর বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই কোনো নেতা-কর্মীর। বিএনপির এই কার্যালয় ঘিরে পাহারা বসিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। এতে চট্টগ্রাম বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ ভোটার-সমর্থকরা অনেকটা হতাশ বলে জানান কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা। তাই একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও চট্টগ্রামে বিএনপির দুর্গে নেই নির্বাচনী তৎপরতা। তবে অনেকটা আত্মগোপনে থাকা কয়েকজন নেতা জানান— সাধারণ নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার পরিবেশ দিতে হবে। মামলা ও গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। তাহলে বিএনপির চাঙ্গা হতে বেশি সময় লাগবে না।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, ‘উত্তর-দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপি রাজনীতির দীর্ঘদিনের দুই কাণ্ডারি হচ্ছেন, আবদুল্লাহ আল নোমান এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এদের মধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। আর আবদল্লাহ আল নোমান এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কেন্দ্রেই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই আমরা এখন অনেকটা অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে গেছি। এ ছাড়া আমাদের বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চট্টগ্রামের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদককেও। এতে আমরা আরও বেশি বেকায়দায় পড়েছি। জেল-জুলুম বন্ধ করে বর্তমান সরকার যদি মাঠের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করত, তাহলে নির্বাচনকেন্দ্রীক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকত আমাদের সাধারণ নেতা-কর্মী।’ এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান চৌধুরী জুয়েল বছরের বেশিরভাগ সময় ছিলেন কানাডায়। ফলে এখানকার নেতা-কর্মীরাও মাঠের রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছে বলে মনে করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্য নেতারা। তবে বছরব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করে আসা দক্ষিণ জেলা বিএনপির পালেও চলতি জাতীয় নির্বাচনী হাওয়া যতটুকু লাগার কথা ততটুকু লাগেনি। দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘সরকার যে হারে আমাদের নেতাকর্মীদের জেলেপুরে নির্যাতন ও হয়রানি করছে, তাতে নির্বাচনী আমেজ থাকার কথা নয়। তবে ২০ দলীয় জোটসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেহেতু নির্বাচনে যাচ্ছে, তাতে দেশব্যাপী বিএনপির রাজনৈতিক মাঠে নির্বাচনী আমেজ ফিরতে দেরি নেই।’ অন্যদিকে ৭টি নির্বাচনী আসনকে নিয়ে গঠিত সাংগঠনিক অঞ্চল চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বিএনপিও কাণ্ডারিহীন হয়ে পড়েছে গত দুই বছর ধরে। উত্তরের সাত উপজেলার সব কটিতেই সংসদীয় আসন থাকায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই অঞ্চলের রয়েছে আলাদা গুরুত্ব। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী রয়েছেন জেলে। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও চট্টগ্রাম বিএনপির ভোটের রাজনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিএনপির সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা।

সর্বশেষ খবর